About Us
গল্পের শুরু আজ থেকে প্রায় ৩০+ বছর আগে ঢাকার বেইলী রোডের সরকারী কলোনীর ১৫ নং বিল্ডিং এর তিন তলার একটি বাসায়। একদিন হাবিবা নামের ৭ বছরের একটি মেয়ে ও তার ছোট ভাই জানতে পারল, তাদের পরিবারে একজন নতুন অতিথি আসতে যাচ্ছে। সেই নতুন অতিথি ভাই হবে না বোন, তা নিয়ে হাবিবা ও তার ভাইয়ের কৌতুহলের সীমা ছিল না। অধীর আগ্রহে তারা অপেক্ষা করছিল সেই ভাই/ বোনের জন্য । এর মধ্যে পরিচিতজন, প্রতিবেশীরা ছোট হাবিবার মনে এই কুমন্ত্রণা দিল যে, “যদি তোমার বোন হয় তবে তো তোমার আদর কমে যাবে, সবাই ছোট বোনকেই বেশী আদর করবে।“ এসব কথা শুনে ছোট হাবিবার মনে আসলেই আশংকা তৈরি হলো আদর ভাগাভাগি হযে যাওয়ার। (এভাবেই বোধহয় বড়রা নিজেদের অজান্তেই ছোট শিশুদের মনে ভাই-বোন সম্পর্কে হিংসার বীজ বপন করে দেয়।) তবে ১৪ই এপ্রিল যেদিন হাবিবার ছোট বোনের জন্ম হলো সেদিন ওর ফুটফুটে গোলাপী চেহারা দেখে হিংসা তো দূরের কথা, হাবিবার মনে পরম মমতার জন্ম নিল। হাবিবা ও তার দাদীর নামের সাথে মিল রেখে ওর নাম রাখা হলো ‘হামিদা মুবাশ্বেরা’। সেই থেকেই শুরু হলো দুই বোন হাবিবা মুবাশ্বেরা ও হামিদা মুবাশ্বেরা’র পথ চলা। স্বভাবগত দিক থেকে অমিল থাকা স্বত্তেও তাদের সম্পর্ক টা হয়ে উঠল যতটা না বোনের তার চেয়েও বেশি বন্ধুত্বের, রক্তের চেয়েও বেশি আত্মার।
নাম নিয়ে বিড়ম্বনার শুরু:
হামিদার যখন স্কুলে ভর্তির সময় হলো তখন হাবিবা রাজধানীর একটি নামকরা স্কুলের সপ্তম শ্রেনির ছাত্রী। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হওয়ার সুবাদে শিক্ষকদের কাছে সে তখন সুপরিচিত নাম। তবে হামিদা যে বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলো সেই বছর হাবিবা বার্ষিক পরীক্ষায় অসুস্থতাজনিত কারণে অংশ নিতে পারল না। কিন্তু রেজাল্টের দিন অডিটোরিয়ামে ঠিকই উচ্চারিত হলো মুবাশ্বেরাদের একজনের নাম, তা হলো হামিদা মুবাশ্বেরা। যদিও সে হাবিবার মতো প্রথম হতে পারেনি, তৃতীয় হয়েছিল, তবুও ছোট বোনের কৃতিত্বে সেদিন হাবিবা প্রথমবার গর্ব অনুভব করেছিল। হামিদার জন্য অবশ্য এরপরের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না। পরবর্তীতে সে যত ভালো ফলাফলই করুক না কেন, শিক্ষকরা সবসময় তাকে জিজ্ঞেস করত, “ তুমি কি হাবিবা মুবাশ্বেরার ছোট বোন?” ব্যাপারটা এমন যেন হাবিবা ভালো ছাত্রী বলে By default হামিদাও ভালো ছাত্রী হয়ে গেছে। ( যদিও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হামিদার একমাত্র গৃহশিক্ষক ছিল হাবিবা, তাই ওর ভালো রেজাল্টের কৃতিত্ব তার কিছুটা হলেও প্রাপ্য)। তবু হামিদা বাসায় এসে প্রায়ই অভিযোগ করতো, “আমার কি নিজস্ব কোন identity, কৃতিত্ব নেই? সব সময় কি হাবিবা মুবাশ্বেরার বোন – এই পরিচয়টাই বয়ে বেড়াতে হবে?”
নাম নিয়ে এই বিড়ম্বনা হামিদাকে সহ্য করতে হয়েছিল আরও কয়েক বছর যতদিন না হাবিবা একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বেরিয়ে যায়।
শেষ হইয়াও হইল না শেষ:
কথায় বলে, ‘ইতিহাসের অনেক ঘটনাই ফিরে ফিরে আসে ’। প্রায় ২০ বছর পর হাবিবা ও হামিদার জীবনেও যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে তা কি ওরা কেউ জানতো? বিয়ের পর হাবিবা তার সংসার, চাকরি আর মেয়ে সামিনকে (হামিদার childhood version) বড় করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে হামিদা ততদিনে পড়াশোনার পাশাপাশি তার চমৎকার লেখনী দিয়ে অনলাইনে রীতিমতো সেলিব্রেটিতে পরিণত হয়েছে । ফেসবুকে তার লেখার শত শত Fan, Follower। হাবিবা কিন্তু ব্যস্ততার জন্য তার বোনের লেখা পড়ার সময়ই পায় না। এমনকি তার বোন যে এত সেলিব্রেটি লেখিকা এই বিষয়ে তার ধারণাও নেই।
এরপর এলো ‘কাহিনী মে টুইস্ট’, ইলমার জন্মের পর হামিদা ব্যস্ত হয়ে গেল জ্ঞানার্জনের practical experience নিতে (মানে ইলমা কে প্রতিপালন করতে)। আর এদিকে সামিনকে ‘নিজের কাজ নিতে করতে পারার’ মতো বড় করে হাবিবা এখন মোটামুটি অবসর সময় হাতে পায় । একদিন হামিদা , হাবিবাকে বলল, “ জীবনেতো অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলি আপা। এবার এগুলো নিয়ে লিখে ফেল। অন্যরাও কিছু জানতে পারুক তোর লেখা থেকে।” এভাবে হামিদার অনুপ্রেরণাতেই হাবিবা একদিন লিখে ফেলল তার প্রথম লেখা “ আমার আপডেট হওয়া’। যেহেতু ফেসবুকে এতদিন হাবিবা তেমন active ছিল না তাই হাবিবার তেমন কোন ফ্রেন্ড নাই, রিলেটিভরা ছাড়া। লেখাটাও তাই প্রথমে বেশি কেউ পড়েনি। কিন্তু হামিদা লেখাটা শেয়ার দেয়ার পর থেকে প্রচুর মানুষ লেখা পড়ে লাইক দিল। শুধু তাই না, অপরিচিত অনেক আইডি থেকে friend request আসতে লাগল হাবিবার কাছে। এভাবে অনলাইন জগতে হাবিবার পরিচয় হয়ে গেল ‘হামিদা আপুর বড় বোন’ ! ইতিহাসের কি করুণ পুনরাবৃত্তি!!
হামিদা যদিও ব্যাপারটিকে ‘মধুর প্রতিশোধ’ হিসেবে উল্লেখ করে হাবিবাকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করে তবে হাবিবা এই ঘটনায় একটুও বিব্রত হয় না। কারণ খেলোয়াড় যখন বিখ্যাত হয়ে যায় তখন তার পরিচয়ে পরিচিত হতে সব কোচই গর্ববোধ করে।
সর্বশেষ:
প্রায় ৩ বছরের পথচলায় Mubashera sisters পেইজের কার্যক্রম বর্তমানে শুধু হাবিবা ও হামিদা— এই দুই বোনের লেখালেখি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবেই সীমাবদ্ধ নেই আলহামদুলিল্লাহ।
পাঠকরা যেন শুধু দুই বোনের লেখা পড়তে পড়তে বিরক্ত না হয়ে যান, এজন্য বিভিন্ন সময়ে অতিথি লেখকদের গল্প, প্রবন্ধ এবং অনুবাদ প্রকাশ করা হয়েছে এই পেইজে।
এছাড়া মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং পাঠকদের সহযোগীতায় বিগত ২ বছর যাবৎ এই পেইজ থেকে নিয়মিত ‘সাদাকাহ প্রজেক্ট’ পরিচালনা করা হচ্ছে।
বর্তমানে এই পেইজের তত্ত্বাবধানে ওয়েবিনার এবং অনলাইন কোর্স আয়োজন করা হচ্ছে।
Mubashera sisters পেইজের এই বহুমুখী কার্যক্রম সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে। আশা করি এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আমাদের পাঠকরা উপকৃত হবেন।
মহান আল্লাহ যেন আমাদের সকল প্রচেষ্টাকে কবুল করে নেন। আমীন।
হামিদা মুবাশ্বেরা
অর্থনীতিতে পিএইচডি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ে । এর আগে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (IIUM) থেকে ইসলামিক ফিন্যান্সে মাস্টার্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ (IBA) থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ইসলামিক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় (IOU) থেকে। সেখানে ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক সন্তানের জননী।
লেখালেখি তার কাছে এক ধরনের নেশার মতো। চারপাশে যা দেখেন, শোনেন, তা নিয়ে নিজের উপলব্ধি কীবোর্ড বন্দী করতে খুব ভালো লাগে।
২০২০ বইমেলায় সমকালীন প্রকাশন থেকে ‘শিকড়ের সন্ধানে’ নামে তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হাবিবা মুবাশ্বেরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। কর্মজীবনে তিনি ‘ডেমোক্রেসী ওয়াচ’ নামক একটি এন.জি.ও তে ২ বছর উন্নয়নকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এবং ‘ফিলোসোফিয়া বাংলা মিডিয়াম’ স্কুলে ৬ বছর শিক্ষকতা করেছেন।
বর্তমানে তিনি Ilma Emporium নামে একটি অনলাইন শপ পরিচালনা করছেন। এছাড়াও তিনি Mubashera Sisters নামক ফেসবুক পেইজ , শিকড়ের সন্ধানে রিডিং গ্রুপ এবং E-hutt নামক ফেসবুক গ্রুপের এডমিন হিসেবে কাজ করছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক সন্তানের জননী।