পর্ব – ১
# হঠাৎ করেই একের পর এক দেশের সাবেক, বর্তমান শীর্ষস্থানীয় পদের অধিকারীদের বিরাট অংকের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়া, বি.সি. এস এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার প্রমাণ পাওয়া।
# একই সময়ে কোটা পুনর্বহাল এর রায় আসা, যা ছাত্রসমাজকে উত্তেজিত করবে অনুমান করা কঠিন নয়, সেই সাথে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একই সময়ে পেনশন স্কিম পরিবর্তনের দাবিতে কর্মবিরতিতে যাওয়া।
# ছাত্র এবং সাধারণ জনতাকে যখন মেরে, পিটিয়ে গৃহবন্দী করা হলো তখনই এক রাতের মধ্যে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলার রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোতে একযোগে হামলা, অগ্নিসংযোগ— যা করার জন্য পূর্বপরিকল্পনা, অভিজ্ঞ লোকবল এবং আর্থিক সক্ষমতা দরকার।
—————–এসব গুলো ঘটনাকে পরপর সাজিয়ে আসুন চিন্তা করি এগুলো কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি একই সূত্রে গাঁথা?
দেশের সরকারের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ্যে এনে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে সেই সুযোগ নিয়ে দেশকে টালমাটাল করে দেয়া,দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ক্ষতি করে, গত কয়েকদিনে দেশের সবধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখতে বাধ্য করে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করে দেশকে আবারও একধাপ পিছিয়ে দেয়া——-এসবকিছুই একটি বৃহৎ চিত্রনাট্যের ধারাবাহিক পর্ব নয়তো?
কে সাজালো এই চিত্রনাট্য? কি লাভ হলো এতে?
বি.এন. পি/ জামাত?
সরকারের মুখস্থ বুলির মতো আমরাও কি এই কথাই বিশ্বাস করবো?
নাকি নিজেরা চিন্তা করে দেখবো আমাদের আসল শত্রু কে?
আসুন চিন্তা করি।
পর্ব – ২
গত পর্বে বলেছিলাম, “আমাদের আসল শত্রু কে?”– তা আমাদের জানতে হবে।
অনেকেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি কোন শক্তির প্রতি ইঙ্গিত করতে চেয়েছি। আবার অনেকেই হয়তো কনফিউশনে আছেন এই শক্তি তো সবসময় আমাদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, এমনকি আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রেও তাদের অবদান অনেক, তাহলে তারা আমাদের শত্রু হলো কিভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে আবারও চিন্তাশীল হতে হবে। আমাদের দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।
১৯৭১ এর ১৪ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের ঠিক ২ দিন আগে দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, যেন ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন হলেও আমাদের সেরা মেধাবীদের হারিয়ে আমরাএকটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করতে না পারি।
একইভাবে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারি তথাকথিত ‘বিডিআর বিদ্রোহে’র নামে দেশের সেরা আর্মি অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল যেন এরপর দেশে অরাজক অবস্থা তৈরি হলেও আর্মিরা কখনও দেশের ক্ষমতা দখল করে দেশকে উদ্ধার করতে এগিয়ে না আসে । এরপর ক্রমান্বয়ে দেশের সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ সহ প্রতিটি বাহিনীতে নিম্ন পর্যায়ে থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত মেরুদণ্ডহীন চাটুকারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যেন তারা দেশপ্রেমের পরিবর্তে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে সম্পদশালী ও ক্ষমতাধর হওয়াকে প্রাধান্য দেয়।
আর সর্বশেষ ঘটনা ঘটলো ২০২৪ সালের ১৬ এবং ১৮ জুলাই। এই দুই দিনে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এর ফলে একদিকে যেমন দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সেরা মেধাবীদের আমরা হারালাম তেমনি নতুন প্রজন্ম যেন ভবিষ্যতে আর কোনো ইস্যুতে প্রতিবাদ করার সাহস না পায় তাদের মনে সেই ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
এমনিতেই নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারা যেন সম্মানজনক চাকরি পাওয়ার মতো যোগ্য না হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার উপর মেধাবী শিক্ষার্থীদের হত্যা আমাদের আরও এক ধাপ পিছিয়ে দিল ।
এখন মনে হতে পারে, কেন এই বন্ধুরূপী শত্রু একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বারবার আমাদের দেশের বিভিন্ন সেক্টরের মেধাবীদের হত্যা করে?
কারণ আমরা জানি মেধাবীরাই হচ্ছে একটি দেশের মস্তিষ্ক যারা বুঝতে পারে কে আমাদের আসল শত্রু আর কে আমাদের বন্ধু । তারা শুধু নিজেরা বুঝতে পারে তাই নয়, তারা শত্রুদের ষড়যন্ত্রের কথা অন্যদেরও বোঝাতে পারে, তাদের মোটিভেট করতে পারে। তাই মেধাবীদের প্রতি তাদের এই ক্ষোভ ও নির্মমতা।
একটা সাধারণ উদাহরণ দেই। একটি বাগানে যখন মূল গাছের পাশাপাশি আগাছাও বেড়ে ওঠে তখন নির্দিষ্ট সময় পর পর সেই আগাছা কেটে না ফেললে একসময় তা মূল গাছগুলোর চেয়ে বড় হয়ে যায়। তখন মূল গাছগুলোর অস্তিত্বই হুমকির সম্মুখীন হয়ে যায়। তাই কিছুদিন পর পর আগাছাগুলোকে উপড়ে ফেলতে হয়। একইভাবে যারা আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ব্যবসা, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রে শোষণ করতে চায় তারা আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কিছুদিন পর পর আগাছার মতো উপড়ে ফেলার পরিকল্পনা করে এবং দেশীয় ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতায় তাতে সফলও হয়।
২০২৪ এর ১৬ এবং ১৮ জুলাইয়ের ছাত্র হত্যার সাম্প্রতিক ঘটনা এর আরেকটি জলজ্যান্ত উদাহরণ।
তবে কি আমরা বারবার এভাবে হেরে যাবো?
আমরা কি কোনোদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো না?
সত্যিকারের শত্রুদের চিনতে পারার পরও কি ঘৃণা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের?
পর্ব – ৩
গত দুই পর্বে বলেছিলাম, আমাদের আসল শত্রু কে তা চিহ্নিত করা এবং তারা কেন বারবার এমন করে তার পেছনের কারণ বোঝার চেষ্টা করা সম্পর্কে।
এবারের পর্বে আমি বলবো, এই শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের কি করণীয় সেই সম্পর্কে।
অনেকেরই মনে হতে পারে, আমি একা ক্ষুদ্র মানুষ হয়ে একটি দেশের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করবো?
কিংবা আমি সহজ- সরল মানুষ, রাজনীতির এত মারপ্যাচ বুঝি না।
এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, রাজনীতি করা আর রাজনীতি সচেতন হওয়া এক ব্যাপার নয়। রাজনীতি করা একটি পেশা এবং এই কাজ কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের প্রতিটা মানুষকে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। কারণ আল্টিমেটলি রাজনীতি আমাদের জীবনে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, যা আমরা এবারের ঘটনা থেকে বুঝতে পেরেছি।
এবার আসি আমাদের কি করনীয় সেই প্রসঙ্গে।
ব্যক্তি হিসেবে আমাদের যা করণীয় আছে তা হলো, আমাদের শত্রু দেশের সবকিছু নিজে বর্জন করা এবং নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকেও বর্জন করতে উৎসাহিত করা।
এই তালিকার রয়েছে–
# ওদের উৎপাদিত পণ্য যেমন খাদ্য দ্রব্য, পোশাক, জুয়েলারী, ব্যাগ, জুতা, কসমেটিকস কেনা বন্ধ করা, তা যত সস্তা বা ভালো মানেরই হোক না কেন।
# ওদের দেশের টিভি সিরিয়াল, মুভি, খেলা (বিশেষ করে IPL) , গান সবকিছু শোনা ও দেখা বন্ধ করা।
# ওদের দেশে বেড়াতে না যাওয়া ।
# ওদের দেশে চিকিৎসা করতে না যাওয়া।
এক কথায় আমাদের নিজেদের অর্থ যেন কোনভাবে ওদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে না পারে সেই চেষ্টা করা। এভাবে একজন , দুজন করে অনেক মানুষ একসাথে ওদের সবকিছুকে বয়কট করলে ওদের অর্থনীতিতে অবশ্যই চাপ পড়বে। মনে রাখতে হবে আমরা ওদের দেশের পণ্যের বিরাট বড় একটা বাজার।
তবে এই বর্জনের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় উপকারটা হবে নিজের।
মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব দায়িত্ব রয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককেই তাঁর ’খলিফা’ বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন । এজন্য তিনি আমাদেরকে মেধা দিয়েছেন, বৃদ্ধি দিয়েছেন ।আর অবশ্যই আমরা এই বিবেকবোধ কিভাবে কাজে লাগালাম তার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। আমরা যদি সবকিছু জানার পরও নিজের দেশের শত্রু যারা বিধর্মীয়ও বটে. তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ না জানাই তবে আমরা পরকালে কি জবাব দেব?
তাই আসুন আজকে থেকেই এই বর্জন শুরু করি, যেন আল্লাহকে বলতে পারি,
I did my job according to my opportunity.