আপনি যখন ১০০% হালাল ইনকাম করবেন তখন এই যুগে আপনাকে অবশ্যই আপনার লাইফস্টাইল স্যাক্রিফাইস করতে হবে। আপনি নামী ব্র্যান্ডের পোশাক পড়তে পারবেন না, দামী রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন না, দেশ-বিদেশের দর্শনীয় জায়গায় ঘুরতে পারবেন না। আপনাকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেই হিমশিম খেতে হবে– এটাই স্বাভাবিক।
সেই সাথে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আপনার মতামতের কোনো মূ্ল্য থাকবে না–এই নির্মম বাস্তবতাটাকেও আপনাকে মেনে নিতে হবে। আপনাকে নিয়ে আপনার মা-বাবা অন্যদের কাছে গর্ব করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা আপনাকে পাত্তা দিবে না, অন্য ছেলে-মেয়েদের সাথে বৈষম্য করবে।
এখন প্রশ্ন হলো আপনি কি ১০০% হালাল ইনকামের এই সাইড এফেক্টগুলো মেনে নিতে প্রস্তুত? নাকি পরিবার, সমাজে আপনার এই অবস্থান নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগেন?
তবে তার আগে ক্লিয়ার করে নেই, ১০০% হালাল ইনকাম বলতে আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি!!
আপাতদৃষ্টিতে সরকারী চাকুরী একটি হালাল পেশা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই সরকারী চাকুরীতে কর্মরত ব্যক্তিদের নামেই প্রচুর দুর্নীতির অভিযোগ আসছে।
আবার শিক্ষকতাও একটি হালাল পেশা। কিন্তু ইদানীং অনেকে শিক্ষক হওয়ার প্রক্রিয়াই শুরু করছেন হারামভাবে, তদবীর বা তোষামোদী করে। এরপর এই পেশায় অর্জিত ইনকাম কি আর হালাল থাকবে?
এককথায় শুধু পেশা টা হালাল হলেই হবে না সেই পেশায় কাজ করার সময় শতভাগ সততা বজায় রাখতে পারাটাও হালাল ইনকামের পূর্বশর্ত।
এছাড়া কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কেমন সেটাও আমার দৃষ্টিতে অন্যতম সূচক ‘হালাল ইনকামে’র। কর্মক্ষেত্রে আপনি কি পর্দার সাথে সাংঘর্ষিক পোশাক পড়তে বাধ্য হন কি না, নারী-পৃুরুষ মিক্সিং এর ক্ষেত্রে সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন কিনা এবং সর্বোপরি নামাজ, রোজার মতো ফরজ ইবাদতগুলো করার মতো অনুকূল পরিবেশ পান কিনা—-এসবকিছু সরাসরি ইনকাম হালাল হওয়ার সাথে জড়িত না হলেও এগুলো আপনার আমলনামায় নেগেটিভ পয়েন্ট যুক্ত করে। অর্থ্যাৎ জীবিকা নির্বাহের জন্য আপনি যে কাজ করছেন তা আপনার আমলনামাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আবার আপনার পেশার পিছনে আপনাকে দিনের কতটুকু সময় ব্যয় করতে হয়,পরিবার,আত্মীয়-স্বজনকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন কিনা, তাদের আনন্দ ও বিপদের সময় পাশে থাকতে পারেন কিনা এটাও হিসাব করা দরকার। কারণ এই বিষয়গুলো বান্দার হকের সাথে জড়িত। তাই ইনকাম করতে গিয়ে আপনি যদি বান্দার হক নষ্ট করেন তবে সেটাও কিন্তু আপনার আমলনামায় নেগেটিভ পয়েন্ট যুক্ত করছে।
এখন এই সবগুলো সূচকে আপনি যদি পাশ মার্ক পান তবে মনে রাখবেন আপনার আয় কম হলেও, দুনিয়াবী জীবনযাত্রার মান Up to the mark না হলেও, পরিবার, সমাজের কাছে সম্মানিত না হলেও আপনি সঠিক পথে আছেন।
অনেকেই হয়তো বলবেন,এত কিছু মেইনটেইন করে এ যুগে বেঁচে থাকা কঠিন । কথা সত্য।
সাথে এটাও সত্য যে, এই দুনিয়াটা Unjust. এখানে খুব কম মানুষই তার সততার, নৈতিকতার পূর্ণ প্রতিদান পায়। তাই দুনিয়াবী প্রতিদান পাবেন না—এটা মাথায় রেখেই ইনকাম শতভাগ হালাল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে।
নিশ্চয়ই একজন সর্বদ্রষ্টা আপনার এই কষ্টটা দেখছেন এবং যেহেতু তিনি ন্যয়বিচারক সেহেতু তিনি আপনার এই কষ্টের প্রতিদান পরকালে দিবেন ইনশাআল্লাহ।