Maryam 19:9
قَالَ كَذَٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَىَّ هَيِّنٌ وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِن قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْـًٔا
তিনি বললেন, ‘এভাবেই হবে, তোমার প্রতিপালক বলেছেন, ‘এটা আমার পক্ষে সহজ। ইতিপূর্বে আমিই তোমাকে সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না।’
Maryam 19:21
قَالَ كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَىَّ هَيِّنٌۖ وَلِنَجْعَلَهُۥٓ ءَايَةً لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّاۚ وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا
সে বলল, ‘এভাবেই হবে, তোমার প্রতিপালক বলেছেন- ‘ওটা আমার জন্য সহজ, আমি তাকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানাতে চাই আর আমার পক্ষ থেকে এক রহমত, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।’
দুটো আয়াত…দুটোই সূরা মারইয়ামের…দুজন ভিন্ন মানুষকে বলা হচ্ছে, তবে তাদের প্রশ্নের কনটেক্সট একই। দুজনেই বিস্ময়াভিভূতভাবে জানতে চাইছেন তাদের কিভাবে সন্তান হবে! দুনিয়ার সমীকরণ দিয়ে সন্তান হওয়া তো তাদের পক্ষে সম্ভব না!!
আল্লাহ জানাচ্ছেন এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে সহজ।
কুরআনের বর্ণনাশৈলী নিয়ে আমি প্রায়ই কথা বলি…বলি যে এমনি অনুবাদ পড়তে গেলে কুরআনের আলোচনাগুলো খাপছাড়া লাগা অস্বাভাবিক না… কিন্তু আসলে যে কুরআনের স্টাইল কী অসাধারণ সেটা যেন নতুন করে উপলব্ধি করলাম সূরা মারইয়াম অধ্যয়ন করতে গিয়ে।
এই সূরার মূল একটা প্রতিপাদ্য হচ্ছে ঈসা (আ:)এর প্রকৃত জন্ম বৃত্তান্ত উপস্থাপন করা। খ্রিস্টানরা কেন উনাকে আল্লাহর ছেলে ভাবে? উনি বাবা ছাড়া জন্ম নিয়েছিলেন বলেই তো? আচ্ছা এটা কি বিশাল একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার? মা আর বাবা দুজন থাকলেই কি একটা প্রাণের দুনিয়াতে আসাটা খুব সহজ, স্বাভাবিক বিষয়?
অবশ্যই না…
স্বামী ও স্ত্রী দুজন থাকলেই প্রাকৃতিক নিয়মে অটোমেটিক সন্তান হবে, এহেন চিন্তা ধারার মূলে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে যাকারিয়া (আ:) এর কাহিনী দিয়ে সূরাটা শুরু করে। মানে মা বাবা উভয়েই থাকলেও সন্তান পৃথিবীতে আসা একটা মিরাক্যল, বাবা ছাড়া আসলে সেটাও মিরাক্যল। কোনোটাই কারও থেকে কম বা বেশী কিছু না যে ঈসা (আ:)কে আল্লাহর ছেলে বানিয়ে দিতে হবে।
সন্তান আসলে পৃথিবীতে কিভাবে আসে?
স্রেফ আল্লাহর ইচ্ছা হলে…
কিভাবে আমার সন্তান হবে এই প্রশ্নের উত্তরে তাই দুজনকেই একই উত্তর দেয়া হল -كَذَٰلِكِ, মানে এভাবেই হবে…আল্লাহর জন্য এটা সহজ।
নারী হিসেবে সন্তান জন্মদানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকায় আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে এত কষ্টকর কেন করলেন! এটা যে কষ্টকর আল্লাহ নিজেই সেটা উল্লেখ করছেন
( ৪৬:১৫)। সত্যি কথা বলতে কী সূরা মারইয়ামের এই আয়াতগুলো পড়ার পর সন্তান ধারণ ও জন্মদানের ব্যাপারটা নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গীই পুরো বদলে গেছে। মেয়েরা আসলে একটা মিরাক্যল ঘটার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত, যেটা খুব সহজ কোনো ব্যাপার না!
মৃত্যু যন্ত্রণা কেন এত কঠিন? কারণ আমরা রুহের এক স্টেজ থেকে আরেক স্টেজে যাই।
গর্ভকালীন সময়টা কেন এত কঠিন?
এখানেও কিন্তু একই কারণ… ভ্রূণটা এক স্টেজ থেকে আরেক স্টেজে প্রবেশ করছে। ঠিক একইভাবে সন্তান জন্মদানের সময় এত তীব্র যন্ত্রনাও হয় এজন্যই যে তখনও আরেকজন মানুষ এক স্টেজ থেকে আরেক স্টেজে প্রবেশ করছে। স্টেজ বলতে আদম (আ:)এর সৃষ্টির পরে রুহ হিসেবে আমাদের যে সৃষ্টি, সেখান থেকে শুরু করে জান্নাত অথবা জাহান্নাম – আমাদের শেষ যে গন্তব্য সেটার মাঝের বিভিন্ন ধাপের কথা বোঝাতে চাইছি।
সূরা মারইয়াম আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে –
যারা কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সন্তান লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন এটা তাদের কোনো ক্রেডিট না।
যারা সুদীর্ঘদিন ধরে মা হতে পারছেন না, এটা তাদের কোনো ব্যর্থতা বা নারীত্বের কমতি নয়।
যারা সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়ায় মিসক্যারেজ কিংবা মৃত সন্তান প্রসবের মতো ভয়ংকর পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
যারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চার মা হওয়ার কারণে সামাজিকভাবে নিগৃহিত হয়েছেন তাদের প্রতিও এক বুক ভালোবাসা।
যারা সুস্থ বাচ্চা পেয়েছেন কিন্তু তাদেরকে আল্লাহর পথে রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, তাদের পথটা মসৃণ হোক এই দুআ করি…
এই যে উপলব্ধিগুলি হলো সেটা কিভাবে প্রতিদিনের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি?
বাচ্চা কবে নিবে? বাচ্চা নিচ্ছো না নাকি হচ্ছে না? তোমার সমস্যা নাকি তোমার হাজব্যান্ডের?…বিয়ের এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিয়ে নিলে তাহলে লাইফ ইনজয় করবে কবে? বিয়ে হচ্ছে না? বাচ্চা হওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে তো… এই যে অসংখ্য তির্যক বাক্যবাণে আমরা প্রতিনিয়ত মানুষকে বিদ্ধ করে চলি সেগুলো যদি বন্ধ করি, তাহলেই সম্ভবত সূরা মারইয়াম পড়া সার্থক।
বিজোড় রাতগুলোর প্রারম্ভে ভালোবাসা আর দুআ প্রতিটা নারীর জন্য, যারা মা হতে পেরেছেন অথবা পারেননি। সেই সাথে নিজের জন্য দুআ যেন আমি সন্তান বিষয়ক কোনো কথার হুল না ফুটাই, আমার কথায় সন্তান নিয়ে কোনো না কোনো ভাবে পরীক্ষা দেয়া নারী যেন চোখের পানি না ফেলে…
আমীন।