Part 1
আলহামদুলিল্লাহ !! আমরা আরেকটি রামাদ্বান পেলাম। কেমন কাটছে আমাদের দিন গুলো?
আমরা কিভাবে রfমাদ্বান মাসকে কাজে লাগাচ্ছি সেটা মনে হয় অনেকটাই নির্ভর করে আমরা একে কোন চোখে দেখি সেটার উপর।
রামাদ্বান কি শুধুই আমাদের কাছে রোজার মাস? রোজা রাখলে আর নিয়মিত নামাজ পড়লেই কি এর হক্ব আদায় হয়ে যায়?
আচ্ছা আল্লাহ কুরআনে রামাদ্বানকে কী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন সেটা কি আমরা জানি?
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কুরআনে রামাদানকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন কুরআন নাযিলের মাস হিসেবে (২:১৮৫)
সেই দিক থেকে রামাদ্বান মাসের প্রথম ও প্রধান কাজ হওয়া উচিৎ কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটা ঝালাই করা।
কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটা কেমন?
আসুন একটা দৃশ্য কল্পনা করি।
এক লোক, যে নানা ধরনের অপরাধের সাথে লিপ্ত, সে একদিন প্রকাশ্যে উচ্চকণ্ঠে বলতে লাগলো ‘আমি এই এই অপরাধ নিয়মিত করি এখন আমার কমপক্ষে ১০ বছরের জেল হওয়া উচিৎ ইত্যাদি…
আমরা সবাই অবাক হয়ে যাবো তাই না? মনে হবে এই লোক এভাবে নিজের কী শাস্তি হওয়া উচিৎ সেটা নিজেই কেন বলছে, নিজের বিরুদ্ধে নিজেই কেন সাক্ষী দিচ্ছে?
যদি বলি এই কাজটাই আমরা সবাই প্রতিদিন কম বেশি করছি?
কিভাবে?
Part 2
কেস স্টাডি ১:
ফেসবুকে জমজমাট একটা লাইভ দেখছিল তনিমা। দারুণ সব শাড়ির কালেকশন এসেছে ঈদ উপলক্ষে। কোনটা ছেড়ে কোনটা অর্ডার দিবে ভেবেই হয়রান। এই করতে করতে ফুড়ুৎ করে কখন জোহরের ওয়াক্ত চলে গেলো, টেরই পেলো না ও। যখন হুশ আসলো, তখন ভাবলো এখন পড়ে ফেলি…রোজার মাসে নামাজটা কিছুতেই মিস করতে চায় না….
নামাজে যখন দাঁড়ালো, তখন নামাজে দাঁড়িয়ে পরে ফেললো সূরা মাউন , একদম ছোট বেলায় হুজুরের কাছে মুখস্থ করা হয়েছিল শেষ দশটা সূরা, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওগুলো দিয়েই নামাজ পড়ে তনিমা।
কেস স্টাডি ২:
এবার রোজায় কুরআন খতম দিচ্ছে নাঈমা, প্রতি রোজাতেই করে। প্রত্যেক নামাজের পর কয়েক পাতা করে পড়ে প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। আজকে পড়লো ২৬ তম পারা, সূরা হুজুরাত তিলাওয়াত করে শেষ করতে না করতেই বেল বাজলো, ভাইয়ের বউ এসেছে পরিবারের সবার জন্য ঈদের গিফট নিয়ে…
বেশিক্ষণ বসলো না ছোট ভাইয়ের বউ, এখান থেকে আবার মার্কেটে যাবে, কেনাকাটা এখনও বাকি…
চলে যাবার পর গিফটের প্যাকেট গুলো খুলতেই মুখটা কালো হয়ে গেলো নাঈমার। কেমন খ্যাত একটা রং শাড়ীটার, বাচ্চাদের কাপড় গুলোও কম দামী লাগছে…
ফোন দিলো বোনকে, এক গাদা নিন্দা করলো ভাইয়ের বউয়ের নামে। এত টাকা রোজগার করে তাদের ভাই অথচ শ্বশুরবাড়ির জন্য গিফট কিনতে গিয়ে ভাইয়ের বউয়ের টাকা যেন বেরই হতে চায় না। ভাইয়াও হয়েছে একটা বউ ভক্ত, সব কিছু বউয়ের উপর ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। নিজের শশুরবাড়িতে কেমনে মুখ দেখাবে এই চিন্তায় অস্থির লাগছে এখন নাঈমার। যাই হোক, ফোন রেখে গেলো জোহরের নামাজ পড়তে, নামাজে পড়লো সূরা হুমাজাহ, এই রোজায় এই সূরাটা নতুন মুখস্থ করেছে, ঠিকমতো পড়তে পেরে ভালোই লাগলো….
তনিমা আর নাঈমা কি জানে যে মাত্রই ওরা কী করলো? পরকালে ওদের কী শাস্তি হওয়া উচিৎ সেটা নিজেরাই ঘোষণা দিলো উচ্চকন্ঠে! একজন নামাজে উদাসীনদের শাস্তি বললো, আরেকজন বললো গীবত করার, সামনে বা পিছনে সমালোচনাকারীর…
আচ্ছা এই কাজগুলো কি আমরাও নিয়মিত করি?
আমরা কি জানি কুরআনে আমাদের এই অভ্যাসের কথা বলা হয়েছে?
কোথায়?
Part 3
প্রায় এক যুগ আগের কথা….End of Music নামে একটা লেকচার শুনছিলাম, বক্তা পশ্চিমা কোনো দেশে লাইভ অডিয়েন্সের সামনে কথা বলছিলেন, আমি সেটার রেকর্ডিং শুনছিলাম। উনি বলতে চাচ্ছিলেন যে মিউজিক যদি আমাদের হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে তাহলে কুরআনের প্রবেশ বাঁধাগ্রস্ত হয়। ব্যাপারটা প্র্যাকটিক্যালি বুঝানোর জন্য উনি শ্রোতাদের তখনকার সময়ের বিখ্যাত একটা গানের প্রথম অংশ বললেন, সাথে সাথেই শ্রোতারা সমস্বরে বাকি অংশ বলে উঠলেন, মানে সবাই জানেন ওই গানটা। তারপর বক্তা একটা ব্রিলিয়ান্ট কাজ করলেন…উনি কুরআনের একটা আয়াতের প্রথম অংশ বললেন, শ্রোতাদের বললেন বাকি অংশ বলতে…এবার অডিটোরিয়ামে পিনপতন নীরবতা.. কেউ জানেনা আয়াতের বাকি অংশ কী…
বক্তা কুরআনের কোন আয়াতের প্রথম অংশ বলেছিলেন জানেন?
রাসূল বলবে- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জাতির লোকেরা এ কুরআনকে পরিত্যক্ত গণ্য করেছিল।’
(সূরা ফুরক্বান: ৩০)
অর্থ্যাৎ কিয়ামতের দিন নবীজী তার উম্মতের এক অংশের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে বলবেন, এরা কুরআনকে পরিত্যাগ করেছিল…
আমি জানি না কেন, লেকচারের ওই অংশটা শুনে আমার সারা শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠেছিল। আমি যেন কল্প চোখে দেখতে পারছিলাম যে আল্লাহর রাসূল আমার দিকে আঙুল তুলে এই কথা বলছেন!
আচ্ছা এই যাত্রায় আমাদের অবস্থান কোথায়? আমরা কি কুরআনকে পরিত্যাগ করি নি? গত পর্বে যে দুটো কেস স্টাডির কথা বলেছিলাম সেগুলো কি মুসলিমদের মাঝে বিদ্যমান খুবই সাধারণ দৃশ্য না?
আজকের আমরা কি খুব আলাদা? আজকে যদি আমি সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করি সাম্প্রতিক সময়ে কোন ভারতীয় ধনকুবেরের ছেলের বিয়ে হল, আমার মনে হয় অধিকাংশই তার নাম বলতে পারবেন, কিন্তু যদি জানতে চাই ইয়াকূব আলাইহিস সালামের বাবা এবং ছেলের নাম কী ছিল, আমরা কয়জন সঠিক উত্তর দিতে পারবো?
কিন্তু এভাবেই কি কাটবে এই জীবন?
মৃত্যুর ফেরেশতা যদি হঠাৎ করেই দুয়ারে এসে দাঁড়ায় তাহলে আমরা কি নিচের আয়াতের মত বলে উঠবো?
‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে আরো কিছুকালের অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদাক্বাহ করতাম আর সৎকর্মশীলদের মধ্যে শামিল হয়ে যেতাম।’ (আল-মুনাফিকুন:১০)
তবে এবারের রামাদ্বান কাটুক কুরআনের সাথে, বদলে যাক জীবনের প্রায়োরিটি?
এক নতুন, অথচ অনন্য সাধারণ যাত্রায় আপনাকে স্বাগতম ।
Part 4
এতদিন তো গেলো কুরআন বুঝে পড়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা। ধরে নিলাম এইসব পোস্ট পড়ে উৎসাহিত হয়ে কেউ হাতে কুরআন তুলে নিলো, পড়া শুরু করলো বাংলা অনুবাদ… অন্যান্য যে কোনো বইয়ের মতই এটাও ধারাবাহিকভাবে পড়া শুরু করলো… সমূহ সম্ভাবনা আছে যে সে দারুণ ভাবে হোঁচট খাবে এবং হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিবে?
হ্যাঁ, তিক্ত সত্য এটাই যে কুরআনের অনুবাদ শুরু থেকে পড়া শুরু করলে কোনো তাল পাওয়া যায় না, কেমন যেন খাপছাড়া লাগে!
এমন কি মনে হয় যে বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে?
সেই কলেজে পড়া অবস্থায় আমি নিজে যখন সূরা বাক্বারা দিয়ে কুরআনের অনুবাদ পড়ার যাত্রা শুরু করেছিলাম, তখন আমার খুব অদ্ভুত লাগতো। মনে হত সেই হাজার হাজার বছর আগে মুসা আলাইহিস সালামের লোকেরা বাছুর পূজা করেছিল, গরু জবাই করতে বলা হলে ধানাই পানাই করছিলো এইসব কাহিনী দিয়ে আমি কী করবো!! একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের শীর্ষ যুগে বসে এগুলা কিভাবে আমার জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক?
আরেকটা চ্যালেঞ্জ যেটা আমি খুব ফেস করতাম, সেটা হল কাহিনীগুলোকে খাপছাড়া মনে হওয়া। কিসের পরে কী আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারতাম না, সূরা বাকারার ৫০ আয়াতে ফিরাউনের পতনের কথা বলছে তো হুট করেই ৫৪ আয়াতে বাছুর পূজার কথা বলছে। এই দুটো ঘটনার কোনটা আগে ঘটেছে?
আমাকে গাইড করার কেউ ছিল না বিধায় আমি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এখন তীব্র আফসোস হয়! মনে হয়, হায়! কেউ যদি আমাকে কুরআনের স্টাইলটা একবার বুঝিয়ে দিতো!
আমি যদি আরো আগে জানতাম যে কুরআনে আল্লাহ আমার, আপনার সাথে কথা বলছেন, সেজন্য এটার স্টাইল কথোপকথনের ভঙ্গীর মত। খুব আপন কারও সাথে কথা বলার সময় আমরা যেমন কোনো ফরমাল সিকোয়েন্স বজায় রেখে কথা বলি না, যখন যে টপিকে কথা হচ্ছে শুধু সেই সম্পর্কিত কথাটুকুই বলি, কুরআনেও এভাবে বলা হচ্ছে!
কুরআন কোনো ইতিহাস গ্রন্থ না যে এটার ১ম অধ্যায়ে আদম আলাইহিস সালামের কাহিনী, ২য় অধ্যায়ে নুহ আলাইহিস সালামের কাহিনী…এভাবে ধারাবাহিকভাবে সাজানো থাকবে!
কুরআনের এই স্টাইলের জন্যই একটি সূরা পড়ে কোনো ঘটনার ব্যাপারে সামগ্রিক চিত্র পাওয়া সম্ভব না।
তাহলে করণীয় কী?
কুরআন পড়ে অপরিসীম আনন্দ পাওয়ার একটা স্টাইলের সাথে আমরা পরিচিত হবো ইনশাআল্লাহ্।
Part 5
বলছিলাম কুরআনের অনুবাদ পড়ে ভালোভাবে বোঝার একটা কৌশলের কথা। যেহেতু কুরআনে কোনো একটা ঘটনা বা টপিক ধারাবাহিকভাবে একসাথে থাকে না, তাই একটি ঘটনা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের প্রথমে সেই সংক্রান্ত আয়াতগুলো সব একসাথে করতে হবে। যদি না করি তাহলেই পড়তে গেলে খাপছাড়া লাগবে অথবা আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবো।
একটা উদাহরণ দেই? ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে এসেছি যে আল্লাহ সব ফেরেশতা, সাথে ইব্লিশকে বলেছিলেন আদম আলাইহিস সালামকে সিজদাহ করতে। ইবলিশ অহংকার করেছিল, সেটা শোনে নাই, ফলে তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। সূরা বাকারার ৩৪ নং আয়াতেও কিন্তু এমনটিই বলা হয়েছে —
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদামকে সাজদাহ কর, তখন ইবলীস ছাড়া সকলেই সাজদাহ করল, সে অমান্য করল ও অহঙ্কার করল, কাজেই সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
শুধু এই আয়াতটা পড়লে কি মনে হতে পারে যে স্রেফ একবার আল্লাহর আদেশ অমান্য করার জন্যই ইবলিশকে এমন চিরস্থায়ী শাস্তি দেয়া হল, ব্যাপারটা বেশি কঠিন হয়ে গেছে? আল্লাহর ব্যাপারে কি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে যে আমাদের রব শাস্তি দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন? এতে কি ইবলিশের প্রতি একটা সফট কর্ণার সৃষ্টি হতে পারে যেখানে মনে হবে বেচারা সামান্য একটা ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি পেল?
তিক্ত সত্যি হচ্ছে যে খুবই সম্ভব। আরো ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে আমাদের মাথায় না আসলেও আমাদের সন্তানদের মাথায় এইসব চিন্তা আসার সম্ভাবনা প্রবল। তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ আর আমাদেরটার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
আমাদের সন্তান যদি এহেন প্রশ্ন নিয়ে আসে আমাদের কাছে? আমাদের উত্তর কী হবে? আমরা কি আস্তাগফিরুল্লাহ বলে বলবো এসব প্রশ্ন করতে হয় না? তাতে কি ওদের মন থেকে প্রশ্নটা মুছে যাবে নাকি উল্টা ইসলামের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমাদেরকে কুরআনই দিয়ে দিচ্ছে!!
কিভাবে?
আসলে আমাদেরকে এই ঘটনাটা শুধু একটা সূরা থেকে নয় বরং অন্য আরো যেসব সূরায় আছে সবগুলো একসাথে করে পড়তে হবে….
Part 6
ইবলিসের আল্লাহর আদেশ অমান্য করার এই কাহিনীটা আসলে কুরআনের কয়েকটি সূরার বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো-
১. সূরা বাক্বারাহ: ৩০-৩৮ নং আয়াত
২. সূরা আরাফ : ১১-২৫ নং আয়াত
৩.সূরা হিজর: ৩২-৪২ নং আয়াত
৪.সূরা ইসরা : ৬১-৬৫ নং আয়াত
৫. সূরা কাহাফ:৫০ নং আয়াত
৬. সূরা সা’দ: ৭১-৮৫ নং আয়াত
যদি আমরা উপরের সবগুলো আয়াত একসাথে করে পড়ি তাহলে ঘটনাটার একটা ভিন্ন চিত্র পাই। যেমন সূরা আরাফের সংশ্লিষ্ট আয়াত গুলো যদি পড়ি তাহলে দেখা যাবে ব্যাপারটা এমন ছিল না যে আল্লাহ সিজদা করতে বললেন, ইবলিশ শুনলো না, ব্যাস আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন…
আমি তো তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি, অতঃপর ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলাম আদামকে সাজদাহ করার জন্য। তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না।(আল্লাহ) বললেন, ‘আমি নির্দেশ দেয়ার পরেও কিসে তোমাকে সাজদাহ থেকে নিবৃত্ত রাখল?’ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম, আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছ কাদা থেকে।’ তিনি বললেন, ‘নেমে যাও এখান থেকে, এর ভিতরে থেকে অহঙ্কার করবে তা হতে পারে না, অতএব বেরিয়ে যাও, অধমদের মাঝে তোমার স্থান।’সে বলল, ‘তাহলে যেদিন সবাই (দুনিয়া ছেড়ে) উঠবে সেদিন পর্যন্ত আমাকে সময় দাও। ’তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তুমি নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। সে বলল, যেহেতু তার কারণেই (পথ থেকে) আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ, কাজেই আমি অবশ্যই তোমার সরল পথে মানুষদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব, তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না। তিনি বললেন, ধিকৃত আর বিতাড়িত হয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাও তাদের মধ্যে যারা তোকে মান্য করবে তোমাদের সবাইকে দিয়ে আমি অবশ্যই জাহান্নাম ভর্তি করব। (সূরা আরাফ ১১-১৮)
উপরের আয়াতগুলো পড়লে আমরা দেখি যে ইবলিশ অবাধ্যতা করার পর আল্লাহ তার কাছে কারণ জানতে চেয়েছিলেন!! আমাদের রব, যিনি রাহমানুর রাহিম তিনি ইবলিসকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছিলেন, এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত আয়ূ পাওয়ার তার যে দুআ, সেটা কবুলও করেছিলেন।
সেই দুআ কবুল হওয়ার পর শয়তানের প্রতিক্রিয়া কী ছিল? সে আল্লাহর সামনে ঘোষণা দিল যে এই আয়ু সে ব্যয় করবে আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করার কাজে!
আর অবাধ্যতা করার কারণ হিসেবে সে কী বলেছিল? সে আগুনের তৈরি আর আদম আলাইহিস সালাম মাটির, অতএব উনাকে সিজদাহ করার আদেশের কোনো মানেই হয় না! তার বক্তব্যের নির্যাস ছিল যে এহেন ফালতু আদেশ দিয়ে আল্লাহই তাকে পথভ্রষ্ট হতে বাধ্য করেছেন!! মানে দোষটা যেন ওর না, আল্লাহর!
তওবা করার জন্য যথেষ্ট অবকাশ পাওয়া সত্ত্বেও ইবলিশের দাম্ভিকতাপূর্ণ আচরণের পূর্ণচিত্র আমরা পাই সূরা আরাফে।
Part 7
কথা হচ্ছিলো একটি ঘটনা কুরআনের যত জায়গায় উল্লেখিত হয়েছে সবগুলো একসাথে পড়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়ার ব্যাপারে। এভাবে যদি সূরা বাক্বারা আর সূরা আরাফ পড়ি এবং পুরো ঘটনাটা নিয়ে চিন্তা করি তাহলে বুঝবো যে শয়তানের অপরাধ মূলত এটা ছিল না যে সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল, বরং সে আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, তার বক্তব্য ছিল যে একটা অযৌক্তিক আদেশ দিয়ে আল্লাহই ওকে পথভ্রষ্ট করেছেন!!
খেয়াল করলে দেখবো যে এ ধরনের কথা আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই বলে থাকে – আল্লাহ হিদায়াত দিলে নামাজ পরা /পর্দা করা শুরু করবো অথবা আল্লাহই তো আমাকে এমন বানাইছেন সেজন্য আমার পাপ কাজ করতে এত ভালো লাগে। অর্থ্যাৎ নিজেদের অপকর্মের দায়ভার তারা বেমালুম আল্লাহর উপর চালিয়ে দেয়। উপরের আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা করলে দেখতাম এহেন কথা প্রথম বলেছিল ইবলিশ!!
আমি যখন ইবলিশের দাম্ভিকতাপূর্ণ কথার বিস্তারিত জানতে পারি সূরা আরাফ থাকে তখন আমি এমন এক আল্লাহকে খুঁজে পাই যিনি তার বান্দার বক্তব্য শোনেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন।
আমরা কি জানি যে এই সুযোগ মানুষ পরকালেও পাবে এবং সেটার অপব্যবহার করবে? মানে পরকালে নিজের কৃতকর্মের পরিণতিকে চোখের সামনে দেখে মানুষ সমানে মিথ্যা কথা বলতে থাকবে। তখন কী হবে?
আজ আমি তাদের মুখে সীল মোহর লাগিয়ে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে, আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পাগুলো সাক্ষ্য দেবে। (Ya Sin 36:65)
কী ভয়ংকর না? আচ্ছা এগুলো পড়লে কি হতাশ লাগে? বিশেষ করে সূরা আরাফের আয়াতগুলো যেখানে শয়তান প্রতিজ্ঞা করছে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করে সিরাতুল মুস্তাকিম এ থাকার পথ কঠিন করে তোলার ব্যাপারে?
হুম। তখন আমি আশার আলো খুঁজে পাই কুরআনের অন্য অংশে যেখানে এই একই টপিক আরেকটু ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে সূরা বনী ইসরাঈলের ৬১-৬৫ আয়াত। কী বলা হয়েছে ওখানে?
Part 8
কথা হচ্ছিল একটা ঘটনা কুরআনে যত জায়গায় বলা হয়েছে সেগুলো একসাথে করে পড়ার সুবিধার ব্যাপারে। ইবলিশের সিজদাহ না করার ব্যাপারটা শুধু সূরা বাকারা থেকে পড়লে আল্লাহর ব্যাপারে একটা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। আবার শুধু সূরা আরাফ থেকে পড়লে শয়তানের ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জের কথা পড়লে খুব হতাশ লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই কথোপকথনের আরেকটা দিক আমরা পাই সূরা বনী ইসরাঈলে। সেখানে ইবলিশের ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জের বিপরীতে আল্লাহ কিন্তু পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন। উনি বলছেন:
তাদের মধ্যে তুমি যাকে পার উস্কে দাও তোমার কথা দিয়ে, তোমার অশ্বারোহী আর পদাতিক বাহিনী দিয়ে তুমি আক্রমণ চালাও, আর তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদিতে ভাগ বসিয়ে দাও আর তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও।’ শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তাতো ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়।আমার বান্দাহদের ব্যাপার হল, তাদের উপর তোমার কোন আধিপত্য চলবে না।’ কর্ম সম্পাদনে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। (আল-ইসরা: ৬৪-৬৫)
আমি জানি না এই আয়াত গুলো পড়লে আপনাদের কেমন লাগে কিন্তু আমার আকুল হয়ে একটা দুআ আসে…ইয়া রাব্বি, তুমি আমাকে তোমার সেইসব বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো যাদের উপরে শয়তানের কোনো আধিপত্য থাকবে না!!
আরেকটা কাজ করা যায় এই আয়াতগুলো পড়লে। শয়তানের যে কৌশল গুলোর কথা আল্লাহ উল্লেখ করেছেন সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা যায় যে আমাদের জীবনে এটার প্রয়োগ কী। হতে পারে কেউ হারাম পথে উপার্জন করে এমন বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন যে বের হতেই পারছেন না। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে ইবলিশ তার ধন সম্পত্তিতে অংশীদার হয়ে গেছে। এভাবে নিজের জীবন টাকে ভালো মত বিশ্লেষণ করা দরকার যে কোন ব্যাপারে শয়তানের ধোঁকায় আমরা আল্লাহর থেকে দূরে চলে গেছি অনেক।
এভাবে যদি কুরআন পড়ি, তাহলে একসাথে দুইটা কাজ হবে-১. কুরআনের আয়াত গুলো পড়ে সেখান থেকে দুআ বানানোর অভ্যাস হবে অর্থ্যাৎ আল্লাহর সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতা হবে ২. কুরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। এই কাজটা করতে গিয়ে প্রথমে হয়তো খুব কঠিন লাগতে পারে, মনে হতে পারে যে তার চেয়ে আগে যেভাবে শুধু তিলাওয়াত করে যেতাম সেটাই বোধহয় ভালো ছিল, কিন্তু না….কুরআনের অর্থ না বুঝলে আমরা কিভাবে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেই সেটা শুরুতেই বলেছি। তাছাড়া আল্লাহ কুরআনে বলছেন –
তারা কি কুরআন সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করে না, না তাদের অন্তরে তালা দেয়া আছে? (মুহাম্মদ:২৪)
অর্থ্যাৎ কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করার মানে আমাদের অন্তর তালাবদ্ধ হয়ে আছে!
আর একবার কুরআন বুঝে পড়ার, সেটা দিয়ে দুআ বানানোর মজা যদি পেয়ে যাই, তাহলে জীবনটাই অন্যরকম হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যাত্রা জারি রাখবো কিভাবে। শয়তানের অবাধ্যতার ঘটনা কুরআনে কোথায় কোথায় আছে সেটা না হয় আমি বলে দিলাম…অন্যান্য ঘটনাগুলো কোনটা কোন সূরায় আছে কিভাবে জানবো?
এই সমস্যার আংশিক সমাধান করতে আমি একটা রিসোর্স গাইড বানিয়েছি যেখানে মুসা আলাইহিস
সালামের জন্ম থেকে শুরু করে ঈসা আলাইহিস সালামকে তুলে নেয়া পর্যন্ত কাহিনী গুলো ধারাবাহিকভাবে সাজিয়েছি, সেইসাথে উল্লেখ করেছি কোন কোন সূরায় একেকটা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই রিসোর্স টা পাওয়া যাবে নিচের লিংকে:
https://drive.google.com/file/d/1v9zYzMQi_UXgTnweougbKdZDBVIueWYI/view?usp=drivesdk
Part 9
গত পর্বে দেয়া রিসোর্সটা খুলে দেখার সুযোগ হয়েছিলো? খেয়াল করলে দেখবো যে ওখানে মুসা আলাইহিস সালামের জীবনটাকে ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে সাজানো হয়েছে তারপর ঐ ঘটনা সংক্রান্ত সবগুলো আয়াত একসাথে করা হয়েছে। যেমন:
১) মুসা আলাইহিস সালামের জন্ম
২) মূসা(আ:) এর মিশর ত্যাগ
৩) মূসা(আ:) এর বিয়ে
৪) আল্লাহর সাথে মূসা(আ:)এর কথোপকথন
৫) ফিরাউনের সাথে মূসা(আ:) এর কথোপকথন
৬) যাদুকরদের সাথে মূসা(আ:) এর প্রতিযোগিতা
৭) মিশরবাসী ও বনী ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া
৮) মিশরবাসীর উপর আযাব ও তাদের প্রতিক্রিয়া
৯) ফিরাউনের পতন
ইত্যাদি……
এই খণ্ডিত অংশগুলো আমরা যদি ধারাবাহিকভাবে পড়া শুরু করি তাহলে প্রথমেই আসবে মুসা আলাইহিস সালামের জন্ম সংক্রান্ত কাহিনী। এই সব কাহিনী যখন আমরা পড়বো তখন সবার আগে আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে। ব্যাপারটা এমন না যে এসব কাহিনী বহু পুরান যুগের কথা, বরং এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কী রকম?
আশা করি আমরা সবাই বর্তমান ইসরাইল প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের আদ্যপান্ত নিয়ে কমবেশি অবহিত। গত প্রায় ছয় মাসে যে ৩২০০০ এর বেশী প্যালেস্টিনিয়ানদেরকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রায় ১৩০০০ ই হচ্ছে শিশু! নিষ্পাপ শিশুদের সাথে এই নির্বিচার বর্বরতা দেখে বুকটা যখন ভেঙে যেতে ধরে, তখন আমাকে আশা জাগিয়েছে মুসা আলাইহিস সালামের জন্ম কাহিনী!
আমি বুঝতে পেরেছি যে এধরণের নৃশংসতা পৃথিবীর বুকে এবারই প্রথম এমন নয়, আর ফিরাউন অসংখ্য শিশুদের বীভৎসভাবে হত্যা করলেও একজন মুসা ঠিকই বেঁচে থাকবে যে কী না ফিরাউনের তথা আমাদের সময়ের ইসরাইলের ধ্বংসের কারণ হবে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমি যখন সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো পড়া শুরু করলাম, কুরআনের সাথে আমার সম্পর্কই বদলে গেলো আলহামদুলিল্লাহ।
কিভাবে?
Part 10
আমার দেয়া রিসোর্সটা খুলে দেখলে দেখবো যে মুসা আলাইহিস সালামের জন্মের কাহিনী কুরআনে মাত্র দুইটা জায়গায় আছে, সূরা ক্বাসাস (৭-১৩ নং আয়াত) এবং সূরা ত্বাহা (৩৮-৪০ নং আয়াত)। সব মিলিয়ে মাত্র ৭/৮ টার মত আয়াত। কিন্তু এইটুকু পড়লেই একটা ঘটনা নিয়ে সবটুকু জানা হয়ে যায় এই বোধটুকু আমাকে খুব উজ্জীবিত রাখে, মনে হয় যেন হাটি হাটি পা করে আমি এগিয়ে যাচ্ছে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে।
মুসা আলাইহিস সালামের মা ওনাকে একটা বাক্সে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এই গল্প আমরা সম্ভবত সবাই ছোটবেলায় শুনেছি। এটার মানে একদম সত্যি প্রতিক্রিয়া দিতে বললে আমরা সবাই হয়তো বা স্বীকার করবো যে আমাদের ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হয়। মনে হয় আরে উনি তো নবীর মা ছিলেন, আমাদের মত সাধারণ কেউ না! এক কথায় উনাকে দূর আকাশের তারা মনে হয় যে কী না ধরা ছোঁয়ার বাইরে কেউ।
কিন্তু আসলে কি তাই?
এ সংক্রান্ত আয়াতগুলো পড়লে আমরা সবিস্ময়ে খেয়াল করবো যে মুসা আলাইহিস সালামের মায়ের আসলে ভয়ংকর কষ্ট হয়েছিল!! আল্লাহ উনার মানসিক অবস্থা আমাদের জানাচ্ছেন!
মূসার মায়ের অন্তর বিচলিত হয়ে উঠল। সে তো তার পরিচয় প্রকাশ করেই ফেলত যদি না আমি তার চিত্তকে দৃঢ় করতাম যাতে সে আস্থাশীল হয়। (Al-Qasas 28:10)
কিসের ব্যাপারে আস্থাশীল?
আল্লাহর ওয়াদা!
আমি মূসার মায়ের প্রতি ওয়াহী করলাম যে, তাকে স্তন্য পান করাতে থাক। যখন তুমি তার সম্পর্কে আশঙ্কা করবে, তখন তুমি তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে, আর তুমি ভয় করবে না, দুঃখও করবে না, আমি তাকে অবশ্যই তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব আর তাকে রসূলদের একজন করব। (Al-Qasas 28:7)
অর্থ্যাৎ পানিতে ভাসিয়ে দেয়া সত্বেও এই সন্তান সহী সালামতে থাকবে এবং তাকে মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
কিন্তু ওই যে মায়ের মন বলে কথা!! মায়ের মন কিছুতেই মানছিল না বলে আল্লাহ উনার অন্তর শক্ত করে দিলেন।
এটার একাধিক মানে হতে পারে-
১) সদ্যজাত সন্তানকে বাক্সবন্দী করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার মতো ভয়ংকর কঠিন কাজটা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে করার তৌফিক দিলেন।
২) উনাকে আল্লাহ কী নির্দেশ দিয়েছেন বা সন্তানটিকে উনি কী করেছেন তা পরিবারের বাইরে আর কারও কাছে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকলেন।
৩) ভাসিয়ে দেওয়ার পর বাক্সবন্দী বাচ্চাটির কী পরিণতি হল তা দেখার জন্য নিজেই ছুটে বেরিয়ে গেলেন না বরং নিজের নাবালক কন্যা সন্তানকে পাঠালেন। বনি ইসরায়েল গোত্রের একজন প্রসূতি মা যদি নদীতে ভাসতে থাকা বাক্স অনুসরণ করতে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে তা ফেরাউনের সৈন্যদের চোখ এড়াবে না। কিন্তু একটা বাচ্চা মেয়ে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরে বেড়ালে সেটা হয়তো সন্দেহের উদ্রেক করবে না।
অথবা এই সবগুলোই…নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালো জানেন!
কিন্তু কিভাবে সম্ভব হল এই আপাত অসম্ভব ব্যাপারটা?
শেষ পর্ব:
আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে মুসা আলাইহিস সালামের মা কোনো মহামানবী ছিলেন না যার জন্য নিজের সদ্যজাত সন্তানকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া খুব সহজ কিছু ছিল। উনি আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন এবং এজন্যই আল্লাহ উনাকে আমাদের সামনে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
আমাদের সাথে উনার পার্থক্য হয়তো বা এটাই যে কঠিনতম অবস্থাতে আল্লাহর ওয়াদার উপর উনি ভরসা রাখতে পেরেছিলেন, আল্লাহ উনার কাছ থেকে যা আশা করছেন, সেটা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। উনি যখন এই প্রথম স্টেপ নিয়েছিলেন, আল্লাহ তখন রহমতের চাদরে উনাকে আবৃত করে দিয়েছিলেন যেটার প্রথম ধাপ ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে উনার অন্তর দৃঢ় করে দেয়া, যেটার কথা গত পর্বে বলেছি!
এখন এই ঘটনাটা আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কিভাবে একীভূত করতে পারি?
অসংখ্য উপায়ে!
জীবনের যে কোনো কঠিন মুহূর্তে আমরা মুসা আলাইহিস সালামের মায়ের রেফারেন্স দিয়ে দুআ করতে পারি যে আল্লাহ তুমি উনার অন্তর যেভাবে দৃঢ় করে দিয়েছিলে, আমাকেও সেভাবে ঈমানের সাথে এই পরিস্থিতি সামলে নেয়ার তৌফিক দাও।
আমরা যদি জীবনে কোনো মিরাকল আশা করি তাহলে শিশু মুসা আলাইহিস সালামকে যেভাবে উনার মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সেভাবে অবিশ্বাস্য কোনো উপায়ে আমার পরিস্থিতি বদলে দাও – এভাবে দুআ করতে পারি।
যদি আমরা বর্তমান চরম প্রতিকূল পরিবেশে সন্তানদের প্রশিক্ষণ নিয়ে চিন্তিত থাকি, তাহলে এভাবে দুআ করতে পারি যে ইয়া রাব্বি, মুসা আলাইহিস সালামকে যেভাবে বাক্সের মধ্যে নীল নদের ঢেউ ও অন্যান্য সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলে, আমার সন্তানকেও সেভাবে সুস্থ ও নিরাপদ রাখো, ঈমানের উপর অবিচল রাখো…
And the list can go on and on..
এমনিতে সন্তানদের নিরাপত্তা, অবিশ্বাস্য ভাবে পরিস্থিতির পরিবর্তন, কঠিন পরিস্থিতি সহজ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা দুআ তো আমরা করতেই পারি, কিন্তু যখন দেখবো যে কুরআনের ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে এভাবে দুআ করছি তখন কুরআনের চরিত্র গুলো আর দূর আকাশের তারা মনে হবে না, বরং একদম পাশের বাসার মেয়েটির মত আপন লাগবে ইনশাল্লাহ।
এভাবে দুআ বের করতে গেলে কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হবে, কুরআন প্রতিদিনের জীবনে জীবন্ত হবে ইনশাল্লাহ।
রামাদ্বান এর ক্রান্তিলগ্নে তাই আল্লাহর কাছে চাওয়া যে এই রামদ্বানে যে কুরআন আমরা হাতে তুলে নিয়েছিলাম, সেটা যেন হাত থেকে আর না নামে, যত দিন যায়, আমাদের জীবনের সাথে যেন একীভূত হয়ে যায়। আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই, যাদের দিকে অভিযোগের তীর তুলে নবীজী বলবেন… আমার ক্বওম কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে…
রাব্বিগ ফির লী
বি: দ্র: ঘটনা ভিত্তিক কুরআনের যে রিসোর্সটা আমি শেয়ার করেছি, সেখানে উল্লেখিত প্রতিটা ঘটনার রেফারেন্স টেনে কিভাবে দুআ করা যায় সেটার উপর আমার টেলিগ্রাম চ্যানেলে আমি Deep Reading Series শিরোনামে অডিও লাইব্রেরী বানিয়েছি একটা। চ্যানেলটা আপাতত শুধু মেয়েদের জন্য, যারা আগ্রহী, তাদেরকে সাবস্ক্রাইব করার আমন্ত্রণ রইলো।
Collected from টেলিগ্রাম চ্যানেল: কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা। লিংক: https://t.me/Quran_niyeBhabna (শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য)