ভূমিকা
খুব কাছের একাধিক বোন মেসেজ দিলেন ফোনে, তারা খুব অস্থির বোধ করছেন, আল্লাহর উপর অভিমান/ রাগের একটা অনুভূতি তারা চাইলেও সরাতে পারছেন না। আবার ভয় হচ্ছে ঈমানের পরীক্ষায় না ফেল করে যান!
কিন্তু কেন?
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে প্যালে*স্টাইনে/র অধিবাসীদের উপর নির্বিচারে চলা গনহত্যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হচ্ছি যে আমরা সবাই! পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চাগুলোর চিৎকার- কান্না, ইলেকট্রিসিটির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় অক্সিজেনের অভাবে ইনকিউবেটরে নবজাতকদের মৃত্যু —এসব ঘটনা আমাদের পাগল করে দিচ্ছে . . .
“আল্লাহ কি দেখছেন না?”
”আল্লাহর সাহায্য কোথায়?”
”ব্যক্তি আমি কী করতে পারি? আমার কি কিছুই করার নেই চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া?”
এই প্রচণ্ড অসহায়ত্বের অনুভূতির সাথে বোনদের মাঝে আমি আরেকটা ট্রেন্ড লক্ষ্য করলাম।
বিভিন্ন জনের লেখা পড়ে/ লেকচার শুনে তারা কনফিউজড।
হামাসের আক্বীদা কি ঠিক আছে?
৭ই অক্টোবরের আক্রমণের মাধ্যমে কি ভালো কিছু হলো নাকি তাদের হঠকারী আচরণের স্বীকার হচ্ছে গাজার ভাইবোনরা . . . ?
কী উত্তর দিলাম আমি আমার বোনদের?
আমার কী আদৌ কোনো যোগ্যতা আছে উত্তর দেয়ার?
অবশ্যই না।
তাই আমি দ্বারস্থ হলাম আমার রবের, কুরআন হাতে তুলে নিলাম, চিন্তা করা শুরু করলাম সীরাহ নিয়ে। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আল্লাহ নবীজীর জীবনটা এমনভাবে ডিজাইন করেছেন যেন তা কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের জন্য গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে।
আরো একটা কাজ করলাম . . . . প্যালেস্টাইনের মানুষদের সাথে কী ঘটছে সেগুলোর ভিডিও দেখার চেয়ে বিভিন্ন আলোচনা, নিউজ প্রতিবেদন এগুলো দেখা/পড়ার পিছনে সময় দেয়া শুরু করলাম।
ফলে আমি আমার অনুভূতিগুলোর মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।
কী সেই পরিবর্তন?
নিজের মুসলিম ভাই-বোনদের উপর চলা জেনোসাইডের এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের নেতাদের সেটার নির্বাক দর্শক হওয়া দেখে প্রথম দিকে অন্য সবার মতো যে প্রচণ্ড অসহায়, বেদিশা অনুভব করছিলাম, সেটা থেকে বের হয়ে আমার মনে হতে লাগলো আমি সৌভাগ্যবান, তাই ইতিহাসের এই সময়টাতে বাস করছি।
খুব অবাক লাগছে?
জ্বী, আসলেই আমার নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হওয়া শুরু হলো। আমি যখন কুরআন খুলে দেখলাম যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা কী অসাধারণভাবে বর্তমান সময়কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে কুরআনে তুলে ধরেছেন তখন আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো যেন!
আমি মনে মনে বললাম, “সদাক্বতা ইয়া রাব্বি, নিশ্চয়ই আপনি সত্য বলেছেন!”
এই অনুভূতিগুলোই ধারাবাহিকভাবে শেয়ার করতে চাই আপনাদের সাথে ইনশাআল্লাহ . . . . তাহলে শুরু করা যাক?
পর্ব – ১
প্রথম যে প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই উঁকি দিচ্ছে সেটা হলো- “আল্লাহ কি দেখছেন না?”
এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর পেয়ে গেলাম সূরা ইব্রাহীমের ৪২ নং আয়াতে।
”যালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কখনও উদাসীন মনে করো না। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত ঢিল দিচ্ছেন যেদিন ভয়ে আতঙ্কে চক্ষু স্থির হয়ে যাবে “
এ তো গেল পরকালের শাস্তির কথা। সেটা তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু দুনিয়ায়?
আল্লাহর সাহায্য কি মুসলিমদের উপর অবতীর্ণ হবে না? কখন আসবে সেই সাহায্য?
এই প্রশ্নের উত্তরে আমার মনে হলো– এটার উত্তর তো নবীজী ও পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী থেকেই ক্রিস্টাল ক্লিয়ার!
আসুন একটু নিজেকে প্রশ্ন করি।
বদরের যুদ্ধে ফেরেশতার আগমন ঘটেছিল কবে? এই মিরাক্যল ঘটার আগে কি ১৩ বছর মক্কায় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়নি মুসলিমদের? মুসলিমরা কি চরম দুর্বল ছিল না?
মুসা আলাইহিস সালামের ক্বওমের জন্য সাগর ফাঁক হয়েছিলো কবে? মুসা আলাইহিস সালামের জন্মের আগে বনী ইসরাইলকে কি ফিরাউনের দ্বারা নির্যাতিত হতে হয়নি? শিশু হত্যা কি নতুন কিছু মানব সভ্যতার ইতিহাসে?
আগুনে পুড়িয়ে বিশ্বাসীদের হত্যার কাহিনী কি আমরা সূরা বুরুজ থেকে জানি না?
কেন তবে আমরা অধৈর্য্য হচ্ছি?
কারণটা সম্ভবত এটা যে, আমরা বুঝতে পারছি না যে কিভাবে আল্লাহ আমাদেরকে কিছু ইউনিক বিষয় দেখাচ্ছেন।
ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, মাঝে মাঝে কুরআনে জান্নাত বা জাহান্নামের বর্ণনা পড়লে আমার মধ্যে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি উঁকি দিয়ে যেতো। জান্নাতের বর্ণনা পড়লে মনে হতো Too good . . . . আর জাহান্নামের বর্ণনা পড়লে দমবন্ধকর একটা অনুভূতি হতো . . . . Too harsh. . . .
প্যালেস্টাইনের ঘটনা আমার এই অনুভুতির মূলে গিয়ে কুঠারাঘাত করেছে। আমি যখন গাজাবাসী আমার ভাইবোনদের দেখেছি সন্তান হারানোর পরও Alhamdulillah বলতে, সকল ভিডিওতে নারীদের দেখছি পূর্ণ পর্দায় থাকতে তখন আমার মনে হয়েছে আমি আমার চোখের সামনে নবীজীর সাহাবীদের দেখতে পাচ্ছি, একসময় মক্কার জীবনে যাদের উপর হওয়া অত্যাচারের বর্ণনা পড়ে আমার কাছে তাদের ঈমানের লেভেল অসম্ভব মনে হতো।
কিন্তু এখন কী মনে হয়?
অনেক সময় আমরা মুভিতে দেখি না যে, ছবির অ্যালবাম খুলে কেউ স্মৃতিচারণ করছে আর চরিত্র গুলো জীবন্ত হয়ে যাচ্ছে? ক্যামেরা নিয়ে যাচ্ছে সাদা -কালো সেই দুনিয়ায়, অতীত বোঝাতে? আমার আক্ষরিক অর্থেই তেমন অনুভূতি হওয়া শুরু হলো।
আমি চোখের সামনে যেন বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, সুমাইয়া এদেরকে দেখতে পাওয়া শুরু করলাম;
যারা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন! আমি চর্মচক্ষু দিয়ে দেখতে পেলাম সেইসব চরিত্রদের যাদের কথা নিচের হাদীসে বলা হয়েছে:
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের নিয়ে বসেছিলেন। এসময় তিনি বললেন,
“শেষ বিচারের দিনে এমন কিছু মানুষকে আনা হবে, যাদের নূর তাদের বুক ও ডান হাতে জ্বলজ্বল করতে থাকবে, তাদেরকে বলা হবে, ‘আজকে তোমাদের জন্য সুসংবাদ, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের কল্যাণ হোক, তোমরা চিরদিনের জন্য প্রবেশ করো জান্নাতে।’ তাদের প্রতি আল্লাহ্তা’আলার এই ভালবাসা দেখে নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত ঈর্ষান্বিত হবেন।”
একথা শুনে সাহাবারা (রাদিআল্লাহু আনহুম) জিজ্ঞেস করলেন, ” ইয়া রাসূলুল্লাহ, এরা কারা?”
রাসূল সা. বললেন, “এরা আমাদের (নবীদের) মধ্য থেকেও না, এরা তোমাদের (সাহাবীদের) মধ্য থেকেও না। তোমরা আমার সঙ্গী, কিন্তু তারা আমার বন্ধু। তারা তোমাদের অনেক পরে আসবে। তারা কুরআনকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাবে এবং সুন্নাহকে মৃত অবস্থায় পাবে। তারা শক্ত ভাবে কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে, এবং পুনরুজ্জীবিত করবে। তারা এগুলো অধ্যয়ন করবে এবং মানুষকে শেখাবে। কিন্তু একাজ করতে গিয়ে তারা তোমাদের চেয়েও ভয়াবহ ও কঠিন নির্যাতনের শিকার হবে। প্রকৃতপক্ষে, তাদের একজনের ঈমান হবে তোমাদের চল্লিশজনের ঈমানের সমান। তাদের একজন শহীদ হবে, তোমাদের চল্লিশজন শহীদের সমান। কেননা তোমরা সত্যের পথে একজন সাহায্যকারী (আল্লাহর রাসূল) পেয়েছ, কিন্তু তারা কোন সাহায্যকারী পাবে না। প্রত্যেক জায়গায় তারা অত্যাচারী শাসক দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে, এবং তাদের অবস্থান হবে বায়তুল মাকদিস এর চারপাশে। তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরাহ (সাহায্য) আসবে, এবং তারা এই বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করবে।”
তারপর তিনি (সা) দু’আ করলেন “হে আল্লাহ, আপনি তাদেরকে সাহায্য দান করুন। জান্নাতে আপনি তাদেরকে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করুন। ” (মুসনাদে ইমাম আহমাদ)
এইভাবে যারা ঘরবাড়ি সব কিছু হারানোর পরও সূরা বাক্বারার ১৫৫ আয়াত তিলাওয়াত করছে, পরিবারের সদস্যদের হারানোর পরও রোগীদের চিকিৎসা দেয়া ছেড়ে দিচ্ছে না…আমাদের রবের কাছে তাদের কী প্রতিদান হওয়া উচিৎ বলে মনে হয়?
হুম, জান্নাতের বর্ণনার ব্যাপারে যে hyperbolism এর অনুভূতি আমার মধ্যে কাজ করতো সেটা আল্লাহ আমার অন্তর থেকে তুলে নিলেন, স্থায়ীভাবে alhamdulillah. আমি বুঝলাম যে বর্ণনার কথা আছে, they deserve it!
আর জাহান্নামের বর্ণনা?
সিএনএন এ নেতানিয়াহুর একটা ইন্টারভিউ দেখছিলাম, সেইসাথে দেখলাম ইসরাইলি একাধিক মন্ত্রী, আমেরিকান সাপোর্টারদের বক্তব্য। দেখে জাহান্নামের বর্ণনার ব্যাপারেও আর কোনো অতিরঞ্জনের অনুভূতিও অবশিষ্ট রইলো না alhamdulillah!
বাকি রইলো কী? বলেন তো?
মুনাফিকদের বর্ণনা…সেটাও পেয়ে গেলাম গাজার ব্যাপারে একাধিক মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান, বক্তব্য থেকে।
সবচেয়ে বড় লাভ হল কি জানেন?
এই পুরো টপিকটা আমার জন্য একটা লিটমাস টেস্টের মতো কাজ করা শুরু করলো।
পরিচিতদের মাঝে যারা কোক বাংলা স্টুডিওর কনসার্টে গেলো, শুধু তাই না, যাওয়ার পক্ষে কুযুক্তি প্রদর্শন করতে থাকলো তখন আমি বুঝলাম কাদের পেছনে আমার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।
আমি দেখলাম বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্র্যাকটিসের চিহ্ন ধারণ করছে না এমন কিছু মানুষ খুব অস্থির বোধ করছেন। আমি বুঝলাম কাদের হৃদয় এখনও পাথর হয়ে যায় নাই।
আবার ইসলাম পালনের ব্যাপারে এমনিতে খুব আন্তরিক মানুষের মাঝে এক ধরণের নিস্পৃহতা লক্ষ্য করলাম। আমি আদার ব্যাপারী, জাহাজের খবর নিয়ে কী করবো অথবা আমার এখানে কী করার আছে যেখানে আরব নেতারাই কোনো ভূমিকা রাখছে না ইত্যাদি টাইপের মন্তব্যও শুনতে থাকলাম অনেক।
বুঝলাম যে এনাদেরকে বুঝাতে হবে ইসরাইল প্যালেস্টাইনের সংঘর্ষ দুনিয়ার আর দশটা রাজনৈতিক ঘটনাবলীর মত না। রোহিঙ্গা, কাশ্মীরি বা চীনের উইঘুরদের উপর চালানো অত্যাচার আমাদেরকে যদি আন্দোলিত না করে তাহলে সেটা আমাদের মুসলিম আত্মপরিচয়ের জন্য হুমকি স্বরূপ এমনটা হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু আল আকসা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই এটার ব্যাপারে আমাদের গাফেল হওয়া যাবে না একেবারেই। খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, সন্তানকে মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, হালাল উপার্জনেই হয়তো ব্যস্ত আছি, সেটা দিয়েই বাড়ি করা, গাড়ি করা, সন্তানদের জন্য ধন-সম্পদ রেখে যাওয়া এগুলোই হয়তো আমার লাইফের টার্গেট- এমন ছাপোষা জীবন যাপন যে এখন আর পরকালের মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয় প্যালেস্টাইনের ভাই-বোনরা আমাদের সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
একাধিক ইসলামী ব্যক্তিত্বের গাজার টপিকটি নিয়ে নিশ্চুপতা দেখে বুঝলাম, কারা এখনও এক উম্মাহর কনসেপ্ট ধারণ করতে পারে নাই…
সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করার এমন কষ্টিপাথর, সাথে কাকে কিভাবে দাওয়াত দিতে হবে সেটার গাইডলাইন এভাবে হঠাৎ করেই হাতে পেয়ে যাওয়ায় আমার মনে হল আমি যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে গেছি। সামনের দিন গুলো কত সহজ হয়ে গেলো বলুন তো!
আলহামদুলিল্লাহ!
পর্ব – ২
প্রথম পর্বে বলেছি যে এই ঘটনা কিভাবে ব্যক্তি আমাকে বদলে দিয়েছে। আজকে বলবো কিভাবে এই ঘটনা পুরো পৃথিবীতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
আমরা সবাই নিশ্চয়ই এক কথায় স্বীকার করবো যে This time is different! সেই ছোটবেলা থেকেই তো টিভি নিউজ প্যালেস্টাইন-ইসরাইল সংঘর্ষের কথা শুনে আসছি, প্রতি রোজায় গাজায় আক্রমণের খবরও তো নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবারের মতো করে তো অনুভব করিনি! এত বিশাল মাত্রায় আলোড়নও দেখা যায়নি, বিশেষ করে অমুসলিমদের মধ্যে।
কেন এবার এমন হচ্ছে?
কারণটাও নিশ্চয়ই আমরা সবাই বুঝতে পারছি।
সোশ্যাল মিডিয়া।
এতদিন কী ছিল?
এতদিন মিডিয়া বলতে ছিলো বিবিসি, সিএনএন, ফক্স নিউজ ইত্যাদি যারা সম্পূর্ণভাবে যায়োনিস্টদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এরা এতদিন সফলভাবে একটা প্রোপ্যাগান্ডা মেশিন চালিয়ে এসেছে যেখানে প্যালেস্টিনিয়ানদেরকে sub human হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যারা ইসরাইলের অস্তিত্বের জন্য একটা হুমকি স্বরূপ।
ফলাফল?
ইসরাইল যা কিছু করছে সব কিছু আসলে নিজেকে বাঁচানোর জন্য করছে। এককথায় ইসরাইল এতদিন ভিক্টিম রোল প্লে করে এসেছে যেটার ভিত্তি ছিল Israil has a right to defense!
এই জায়গায় এসে আমাদেরকে একটা ফর্মুলা বুঝতে হবে- ”যে কোনো সামরিক যুদ্ধের আগে সঙ্ঘটিত হয় বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ।” Occupation of mind is more dangerous than occupation of land. আমাদের নিজেদেরকে দিয়েই দেখুন, ব্রিটিশদের থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি সেই কবে, অথচ আজও ফর্সা গায়ের রং কেই আমরা সৌন্দর্যের মাপকাঠি ভাবি।
কেন?
কারণ ,আমাদের একসময়ের প্রভুদের গায়ের রং ছিল সাদা! Occupation of mind বলতে কী বুঝাচ্ছি এটা বোঝাতে পেরেছি আশা করি।
এখন আপনি যদি কোনো বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর সাথে ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে চান, প্রথমে আপনাকে এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে ওই জাতিগোষ্ঠী কত খারাপ। যেমন আমাদের ছোটবেলায় আমরা অনেকে শুনে এসেছি যে, শিবির গলা কাটে। ফলে দেখবেন জামাত শিবিরের সাথে কোনো অন্যায় হলে সেটার প্রতিবাদ করতে অনেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিমরাও অস্বস্তিতে ভোগে। আবার খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের প্রায় পুরো প্রজন্ম গল্পে পড়েছে রাজাকার মানেই দাঁড়ি টুপি পরা কেউ।
এভাবে কী হয়েছে? ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের মাঝে একটা অদেখা বিরোধ তৈরি হয়েছে। ফলে যারা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম, তাদেরকে স্বাধীনতা বিরোধী, দেশের জন্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বিশ্বকাপে হেরে যাওয়াতে কেউ খুশী হলেও সেটাকে স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, মাদ্রাসা শিক্ষার ফলাফল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে (সূত্রঃ তথাগত রায়, তসলিমা নাসরিনের টুইট)।
সমীকরণটা অনেকটা এরকম- আপনি ভারতকে ঘৃণা করেন কারণ আপনি হিন্দুদের ঘৃণা করেন কারণ আপনি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম/ ধর্ম শিক্ষা করেছেন।
এইভাবে লম্বা সময় ধরে ভারত যদি এদেশীয় মুসলিমদেরকে ওদের জন্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করে ব্রেন ওয়াশ করতে থাকে তাহলে আমাদের সাথে কোনো অন্যায় করা ওদের জন্য সহজ হবে নাকি কঠিন?
আচ্ছা এই কৌশল কি নতুন কিছু?
নাহ, যুগে যুগে এটা প্রয়োগ করা হয়েছে।
কিভাবে বুঝলাম?
কুরআন থেকে!
ফিরাউন যে বনী ইসরাইলের ছেলে শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছিলো সেটার কথা তো আমরা সবাই জানি। আমরা ভাবি যে হয়তো একবারই সে এই কাজ করেছিল, মুসা আলাইহিস সালামের জন্মের এবং এর আগের বছর গুলোতে।
কিন্তু না, মুসা আলাইহিস সালামের সাথে যাদুকরদের প্রতিযোগিতায় যখন যাদুকররা ঈমান আনলো তখন ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ফিরাউন আবারও বনী ইসরাঈলের নারী ও শিশুদের উপর নির্বিচার গণহত্যা চালিয়েছিল।
আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে এহেন অমানবিক কাজ সে কিভাবে করলো?
কেউ কি প্রতিবাদ করলো না?
কুরআনেই আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন সেটা।
হ্যাঁ, ফিরআউনও তার প্রোপ্যাগান্ডা মেশিন চালিয়েছিলো যেখানে সে নিজেকে ভিক্টিম এবং মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীদেরকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছিল।
সে কী কী বলতো?
১) মিথ্যাবাদী’ রেফারেন্স- কুরআন (২৮:৩৭)
২) ’যাদুকর’ রেফারেন্স- কুরআন (২০:৫৭)
৩) মিশরীয়দেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে চায়, সুন্দর জীবন ধ্বংস করতে চায়
রেফারেন্স -কুরআন (৭:১০৯-১১০, ২০:৬৩, ২৬:৩৫)
৪) ”পূর্বপুরুষদের ধর্ম/ রীতি বিনষ্টকারী’ রেফারেন্স -কুরআন ১০:৭৮
এখন ফিরাউনের জায়গাতে ইসরাইল আর মুসা আলাইহিস সালামের অনুসারীদের জায়গায় হামাসকে বসাই একটু?
হঠাৎ করেই কি মনে হতে থাকে না যে বর্তমান সংঘর্ষ নিয়েই পড়ছি?
দেখবেন যে ইসরাইল বারবার সিভিলিয়ান হত্যার সংখ্যা অস্বীকার করছে। কী বলে? যখনই বলা হচ্ছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এইসব তথ্যের উৎস তখনই ওরা সেটাকে হামাস নিয়ন্ত্রিত বলে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। তারপর হামাসকে সন্ত্রাসী, ইহুদী বিদ্বেষী এইসবও বলছে!
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইতিহাসে প্রথমবারের মত মানুষ ইসরাইল এর এসব প্রোপাগান্ডাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে পালটা প্রশ্ন করছে। যেমন হসপিটালগুলো যে হামাস সামরিক বেস হিসেবে ব্যবহার করছে সেটার প্রমাণ কী, হামাস কোন পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছে ইত্যাদি।
কিভাবে বদলে গেলো সব কিছু?
শুরুতে যেটা বলেছি যে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা গাজাবাসীর অবস্থা চর্মচক্ষু দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি তো সেটাকেই বিশ্বাস করা যা সে নিজের চোখে দেখছে!
ফলে কী হলো?
বিবিসি, সিএনএন এর মতো পক্ষপাতমূলক কর্পোরেট মিডিয়া আমাদেরকে এতদিন যা বলে এসেছে আর আমরা নিজের চোখ দিয়ে যে সত্য প্রত্যক্ষ করছি তার মাঝে আকাশ -পাতাল পার্থক্যটা নগ্নভাবে প্রকাশিত হলো।
এ যেন কিয়ামতের সেই দিনের মতো যেদিন কন্যা শিশুর কাছে জানতে চাওয়া হবে কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল কিংবা ঈসা আলাই সালামকে জিজ্ঞেস করা হবে উনি তার অনুসারীদেরকে উনার ইবাদত করতে বলেছিলেন কিনা….সেরকম। অর্থাৎ দুনিয়াতে যার কোন ভয়েস ছিল না পরকালে তার বক্তব্যও আমরা শুনতে পাবো- পরকালের এই বৈশিষ্ট্যটা সোশ্যাল মিডিয়া ধারণ করায় একটা গোপন রুদ্ধ দ্বার যেন হঠাৎ করেই আমাদের সামনে খুলে গেল।
ফলাফল?
আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম সেইদিনটা যেদিন ফিরাউনের সামনে ওর জাদুকররা মুসা আলাইহিস সালামের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল। আল্লাহ বলছেনঃ
’প্রকৃত সত্য প্রকাশ হয়ে গেল, তারা যা সাজিয়েছিল তা নিস্ফল হয়ে গেল।’ কুরআন (৭:১১৮)
মানে এতদিন ধরে ফিরাউন কোটি কোটি টাকা খরচ করে মুসা আলাইহিস সালামকে থ্রেট আর নিজেদেরকে মিশরের রক্ষাকারী হিসেবে উপস্থাপন করছিলো, সেটা যেমন অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল, ঠিক সেভাবে বছর ধরে ইসরাইল সেভাবে Israil has a right to defense, হামাসকে ইসরা*ইলের জন্য existential threat হিসেবে তুলে ধরছিল, সেগুলো সব হাস্যকর মিথ্যায় পরিণত হলো মানুষ যখন গাজাবাসীর অবস্থা নিজ চোখে দেখল আর বুঝতে পারল যে কোন পরিস্থিতিতে হামাস সৃষ্টি হয়েছে।
তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহও কৌশল করেন। আল্লাহই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।কুরআন (৮:৩০)
বুঝাতে পারছি কিভাবে সাম্প্রতিক ঘটনায় কিভাবে ’কুরআন জীবন্ত’ হয়ে উঠছে আমার কাছে?
পর্ব – ৩
গত পর্বে একটা বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে, কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালানোর প্রথম ধাপ হচ্ছে তাদেরকে dehumanize করা যেন তাদের উপর করা নির্যাতনকে সঠিক, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে জরুরী হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। কুরআন থেকে ফিরাউনের উক্তি তুলে ধরে দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম এই কৌশল যুগে যুগেই প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন যদি বিপরীত দিক থেকে চিন্তা করি, তাহলে বুঝবো যে অত্যাচারী শাসনযন্ত্রের পতন আসন্ন এটা বোঝা যায় যখন তাদের তৈরি করা প্রোপ্যাগান্ডা মেশিন বিকল হয়ে যায়।
এই অসাধারণ ব্যাপারটাই এবার ঘটেছে আলহামদুলিল্লাহ।
জাদুকররা ঈমান আনার মাধ্যমে যেমন ফিরাউন তার আদর্শিক যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল, ঠিক সেভাবে ৭ই অক্টোবরের ঘটনার উসীলায় ইসরাঈল মিডিয়া যুদ্ধে ন্যাক্কারজনকভাবে পরাজিত হয়েছে।
কিভাবে ইসরাইলের এত বছর ধরে সযত্নে রচিত প্রোপ্যাগান্ডার পাহাড় এক লহমায় এবার ধসে পড়লো?
প্রথমত : সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ গাজাবাসীর বক্তব্য এবং অবস্থা সরাসরি শুনতে ও দেখতে পাচ্ছে। ফলে তাদের অভাবনীয় কষ্ট, তাদের ঈমানের দৃঢ়তা, সাহসিকতা সব কিছু মানুষের বিবেকের মূলে গিয়ে আঘাত করেছে।
দ্বিতীয়ত: সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ যা দেখছে সেটার প্রেক্ষিতে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে মেইন স্ট্রিম কর্পোরেট মিডিয়া প্রো-প্যালেস্টেনিয়ান অতিথি আনতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে মিশরীয় প্রাক্তন হার্ট সার্জন Bassem Yousuf, UK র প্যালেস্টিনিয়ান আম্ব্যাসেডর Husam Zomlot,
আশ শিফা হসপিটালে শহীদ হওয়া ডাক্তার Dr. Hammam Alloh এর ইন্টারভিউগুলো যত দেখেছি ততো মুগ্ধ হয়েছি। ইহুদীদের নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার লিস্ট দেখে হীনমন্যতায় ভোগা মুসলিমদের মুখে যেন এরা চপেটাঘাত করছে! স্রোতের বিপরীতে, জীবনে অজস্র প্রতিকূলতার মুখেও এরা কী দারুণ সব মানব সম্পদ তৈরি করেছে!
আচ্ছা! আপনার, আমার জীবনের পরীক্ষা গুলো কি কোনোভাবে এদের চেয়ে বেশী? এই ঘটনার পর থেকে গাজাবাসীরা আমার রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জীবনের সকল পরিস্থিতিতে যখনই প্রোডাক্টিভিটি থমকে যেতে ধরে, আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমার জায়গায় একজন গাজাবাসী থাকলে কী করতো? আমার নিজের ট্রায়ালগুলোকে তখন তুচ্ছ মনে হয় আলহামদুলিল্লাহ।
এইসব বক্তাদের সবচেয়ে কোন ব্যাপারটা ভালো লেগেছে জানেন? এরা কথোপকথনের কুরআনিক স্টাইল অসাধারণভাবে অনুসরণ করেছে।
কী সেই স্টাইল?
যখন একটা প্রশ্ন করা হয় তখন পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া– যদি প্রশ্নটাই অযৌক্তিক হয়। কুরআনে বহু জায়গায় আমরা এটার উদাহরণ পাই। এই মুহুর্তে মনে পড়ছে ২:৯১ আয়াতের কথা যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সময়ের ইহুদীদের কথা বলা হচ্ছে যারা নবীজির প্রতি ঈমান না আনার যুক্তি হিসেবে বলছিলো যে ওরা ঈমান আনে শুধু ওদের উপর যা অবতীর্ণ হয় সেটার উপর। পরোক্ষভাবে ওরা বলতে চাইছিলো যে নবীজি বনী ইসরাইল না হওয়ার কারণে ওরা উনার উপর ঈমান আনছিলো না।
আল্লাহ তখন ওদের সেই যুক্তিকে খণ্ডন করার জন্য ওদের প্রশ্ন করছেন যে নিজেদের মধ্যে থেকে নবী আসলেই যদি ওরা ঈমান আনে তাহলে আগে বনী ইসরাঈলের ভেতর থেকে আগত নবীদের (যেমন যাকারিয়া আলাইহিস সালাম, ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম) ওরা কেন হত্যা করেছিলো?
একই প্রশ্ন করা হয়েছে ৩:১৮৩ আয়াতে। সূরা জুমুআ তে (৬২:৬) প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়ার ভঙ্গীতে ইহুদীদের দাবীর অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে যেখানে ওরা নিজেদেরকে আল্লাহর একমাত্র আউলিয়া মনে করতো। আল্লাহ বলছেন ওরা তাহলে মৃত্যু কামনা করে না কেন! কেউ যদি বলে বেড়ায় সে/তারা হচ্ছে আল্লাহর খুবই প্রিয় বান্দা তখন তারা কেন ভুল— সেটা প্রমাণ করা একটা স্টাইল, আরেকটা শক্তিশালী স্টাইল হচ্ছে এমন কিছু বলা যেটা থেকে ওদের বাগাড়ম্বিতা যে অন্তঃসারশুন্য সেটা একদম স্পষ্ট হয়ে যায়।
কেন কুরআন এই বাচনভঙ্গী অনুসরণ করছে? কারণ এটার মাধ্যমে কথোপকথনের কর্তৃত্ব বা বক্তব্যের প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকবে। নিজের বক্তব্যকে আত্মবিশ্বাসের সাথে তুলে ধরছে, দর্শক শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেয়ার জন্য যেটা খুবই জরুরী।
যারা ইসরাইল- প্যালেস্টাইন সংক্রান্ত নিউজ ফলো করেছেন তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন প্রথমদিকে সব ইন্টারভিউ শুরুই হতো এই প্রশ্ন দিয়ে- Do you condemn Hamas? এই প্রশ্নের মাধ্যমে সামনে বসা অতিথিকে প্রথমেই একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলে দেয়া হয়।
কারণ এটার উত্তর হ্যাঁ বা না- যাই বলেন না কেন আপনি আপনার বক্তব্য ঠিক মতো উপস্থাপন করতে পারবেন না। আলহামদুলিল্লাহ, প্রো প্যালেস্টিনিয়ান বক্তারা কেউই এই ফাঁদে পা দেন নাই। আমি কমেন্টে দুইটা লিংক দিচ্ছি যেখানে বক্তারা পালটা প্রশ্নের মাধ্যমে স্পষ্ট বলেছে যে এই প্রশ্নটাই অযৌক্তিক একটা প্রশ্ন! তারপর তারা বলে চলেছেন তাদের উপরে এত বছর ধরে চলে আসা অত্যাচার, নির্যাতন আর বঞ্চনার ইতিহাসের কথা যা মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে এক্কেবারে অনুচ্চারিত ছিলো এতকাল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়া রিয়েল টাইম ভিডিও সমূহ, সাথে এইসব প্রো প্যালেস্টিনিয়ান অতিথিদের বাগ্মীতার ফলস্বরূপ আমি দেখি Israil Defense Force (IDF) এর দেয়া তথ্যে যে গড়মিল আছে সে কথা সিএনএনকে প্রচার করতে। সেই সাথে একজন আমেরিকান নার্স যে কিনা গাজাতে আটকে পড়েছিল, তার ইন্টারভিউ প্রকাশ করতে যেখানে তিনি গাজাবাসীকে হিরো হিসেবে তুলে ধরেছেন।
পৃথিবীর বুকে প্যালেস্টাইন বলে যে একটা জায়গা আছে যেটার মানুষেরা গত এক শতাব্দীর বেশী সময় ধরে ইসরাইল নামক বিষফোঁড়ার আঘাতে গুমড়ে মরছে নিজেদের কোনো অপরাধ ছাড়াই সেটা তো আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম, ৭ই অক্টোবরের ঘটনার পর যেন নতুন আলোয় পুরো বিশ্ববাসীর কাছে এটা পৌঁছে গেল!
এই পর্যন্ত পড়ে আপনাদের অনেকের হয়তো মনে হচ্ছে যে ইসরাইললের এই আদর্শিক পরাজয় কি এত দামী যে এজন্য হাজার হাজার গা*জা*বাসীকে জীবন দিতে হল? বর্তমানে যে যু%দ্ধবিরতি চলছে সেটার শর্তগুলোও হতাশাজনক মনে হয়েছে আমাদের অনেকের কাছে।
হ্যাঁ, আপাত দৃষ্টিতে এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি যে নবীজীর জীবনে একদম কাছাকাছি একটা ঘটনা আছে যেখানে যা ঘটেছিলো সেটা মুসলিমদের জন্য খুবই হতাশাজনক বিষয় ছিল কিন্তু আল্লাহ সেটাকে ‘সুস্পষ্ট বিজয়হিসেবে উল্লেখ করছেন?
জ্বী, আমি হুদাইবিয়ার সন্ধির কথা বলছি। যাদের এই চুক্তি সাক্ষরের সময়ের, সেটার আগের ঘটনাবলী বিস্তারিত জানা আছে তারা অনুভব করতে পারবেন যে সাহাবীদের জন্য কী হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো তখন (সাহাবী আবু জান্দালকে চুক্তির শর্ত মোতাবেক মুশরিক বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কাহিনী যতবার পড়ি, আমার চোখে পানি চলে আসে)। অথচ এর ফলে কী হয়েছিলো?
খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এসেছিলো-
প্রথমতঃ কুরাইশরা মুসলিমদেরকে ওদের কাছাকাছি একটা পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিল যাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা যায়। এতদিন ওদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। এটাকে আমরা বলতে পারি কূটনৈতিক বিজয়।
আমাদের সময়ে এটার তুলনা কী? প্যালেস্টিনিয়ান অতিথিদেরকে টক শো গুলোতে আমন্ত্রণ জানানোর অর্থই হচ্ছে ওদেরকে একটা পক্ষ হিসেবে স্বীকার করা যাদের বক্তব্য শোনাটা জরুরী!
দ্বিতীয়তঃ কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে কুরাইশদের যে একটা সম্মান ও মর্যাদার অবস্থান ছিলো সেটা নড়বড়ে হয়ে গেলো যখন বহির্বিশ্বে এটা প্রচার হয়ে গেলো যে এক দল নিরস্ত্র মানুষকে ওরা উমরাহ করতে দেয়নি।
ইসরাইল নিজেকে হলোকাস্টের ভিক্টিম হিসেবে উপস্থাপন করে এতদিন ধরে যে মায়াকান্না করতো, সবার কাছে সহানুভূতি কাড়তো, সেটার ভিত্তিও নড়বড়ে হয়ে গেলো এবার নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ ও বাচ্চাদের উপর নির্বিচার বোম্বিং করা দেখে।
তৃতীয়তঃ শান্তিচুক্তির সময় মদীনাতে ইসলামিক রাষ্ট্রে মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের মেলামেশা, ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছু বেড়ে গেলো, ফলে ইসলামকে একটা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে বাস্তবে দেখে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইলো না, দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে লাগলো।
আমাদের সময়ে কী হলো সেটা আশা করি কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। গাজাবাসীর ঈমান কত খ্রিস্টান, ইহুদী, নাস্তিককে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে সেটা তো আমরা সবাই জানি আশা করি।
সেইসাথে সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধবন্দীদের সাথে হামাসের ব্যবহার ও ইসরাইলের জেলে নারী ও শিশুবন্দীদের অভিজ্ঞতার আকাশ পাতাল পার্থক্য কত মানুষকে যে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছে তার হিসাব আমাদের পক্ষে রাখাটা কঠিন বৈ কি!
তাই আবারো আলহামদুলিল্লাহ যে নবীজীর জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ সময়ের কাছাকাছি একটা ঘটনা নিজের জীবদ্দশায় দেখার সৌভাগ্য হলো।
এই ভিডিওগুলো দেখতে পারেন
১. Husam Zomlot এর বিবিসিকে দেয়া ইন্টারভিউঃ https://x.com/hzomlot/status/1711387200804315348?s=20
২. Bassem Yousuf ও পিয়ার্স মরগ্যানের ইন্টারভিউঃ https://www.youtube.com/watch?v=4idQbwsvtUo
৩. Dr. Hammam Alloh এর ইন্টারভিউঃ https://www.youtube.com/watch?v=MfOyMz9pJjg
স্কাই নিউজের একটা ইন্টারভিউ যেখানে প্যালেস্টিনিয়ান অতিথি উপস্থাপকের শব্দ চয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন https://www.tiktok.com/@canadia…/video/7292779078808128774
পর্ব – ৪
গত পর্বে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি যে কিভাবে হাজার হাজার গা*জাবাসী তাদের জান, মাল, সন্তান সব কিছু কুরবানী দিয়ে ঈমান আর ধৈর্য্যের এক অদ্ভুত পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করলো আমাদের সামনে, বিনিময়ে ঘটলো এক অভাবনীয় ঘটনা-এতদিন ধরে পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট ইসরা/ঈল মানবিকতা, মূল্যবোধ, গণতন্ত্র ইত্যাদি যেসব বড় বড় কথা বলতো সেগুলো যে কতবড় ভ_ণ্ডামি সেটা পুরো বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে এতে লাভ কী হল, ইস*রাঈল বা পশ্চিমাদের মিথ্যার বেসাতি তো কমতে দেখলাম না আমরা, গা?জাবাসীর উপর বোম্বিং তো চালিয়ে গেলো।
এটার উত্তর পাওয়ার জন্যও আমাদের কুরআনের দিকে ফিরে যেতে হবে। চলুন ফিরে যাই কয়েক হাজার বছর আগে, জাদুকরদের ঈমান আনার মাধ্যমে ফিরাউনের প্রোপ্যাগান্ডা মেশিন যখন বিকল হয়ে গিয়েছিল তখনকার সময়ে। তখন আসলে ঠিক কী কী ঘটেছিল?
১) জাদুকর, যারা আগে ছিলো ফিরাউনের কাছের লোক তারা ঈমান এনেছিলো।
২) ফিরাউনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের খুব প্রভাবশালী একজন প্রকাশ্যে ঈমান আনে নি, কিন্তু মুসা আলাইহিস সালামের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলেছিলো (৪০:২৮-৪৫)
৩) মিশরের বহু মানুষ সত্যকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলো কিন্তু ফিরাউনের ভয়ে সত্যের পক্ষাবলম্বন করতে পারে নাই।
আমরা এবার দেখবো বর্তমান সময়েও কিভাবে এর প্রত্যেকটি ঘটেছে।
প্রথমত অবশ্যই বহু পশ্চিমা মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে যেমনটা আমরা দেখেছি। গা/জাবাসী তাদের জান, মাল সব কিছু দিয়ে বহু মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
দ্বিতীয়ত, বিশাল সংখ্যক মানুষ যারা আগে ইসরাঈলের সাপোর্টার ছিলো তারা এখন নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে। এই লিস্ট বেশ লম্বা। পশ্চিমা দেশগুলোতে যেসব প্রো প্যালেস্টিনিয়ান র্যালী হয়েছে সেগুলোতে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলো ই?হুদী, যাদের অনেকেই আবার নিজেরা হলো?কাস্টের স্বীকার বলে প্যালেস্টাইনে জেনোসাইডের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে এক দল আবার আছে যারা ওদের ধর্ম গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স টেনে দেখাচ্ছে যে কেন ইসরাঈল যা করছে সেটা ওদের বই দ্বারা স্বীকৃত না। আরও আছে Norman Finkelstein, Ilan Pappe, Gabor Mate দের মত বুদ্ধিজীবি যারা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ইসরাইলের বিরোধিতা করে যাচ্ছে। এরা আমাকে মনে করিয়ে দেন ৩:৭৫ আয়াতের কথা যেটা থেকে আমরা বুঝি ইসলামে ঢালাওভাবে কোনো গোত্রের সবাইকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই।
শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল এবার একটা ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছেনঃ “The Hamas attacks of October 7 did not happen in a vacuum. The Palestinian people have been subjected to 56 years of suffocating occupation.”
যদিও জাতিসংঘ সবসময় ইসরাঈলের মাথার উপর বিশ্বস্ত ছায়ার ভূমিকা পালন করেছে এবং এবারো গণহত্যা থামাতে কার্যকর কোনো ভুমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, তবু প্রকাশ্যে এহেন বক্তব্য ইসরাইলের মুখে একধরণের চপেটাঘাত বৈ কি।
আর একটা পুরো প্রজন্ম যাদেরকে ব্যস্ত রাখা হয়েছিলো টিকটক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি দিয়ে, যাদেরকে War on terror এর বুলি দিয়ে ব্রেন ওয়াশ করা হয়নি, হঠাৎ করে সেই টিকটকের মাধ্যমেই গাজার খবর, ওসামা বিন লাদেনের চিঠি ওদের কাছে পৌঁছে যাওয়া পশ্চিমা শক্তিদের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্নের মত! হার্ভার্ড, MIT, Yale এইসব শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে এইবার প্যালেস্টাইনের পক্ষে সমাবেশ করতে দেখা গেছে।
তৃতীয়ত, এবারো বহু মানুষ সত্য চিহ্নিত করতে পেরেছে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের চাকরি, ব্যবসা, সম্মান এগুলো খোয়ানোর ভয়ে মুখ খুলতে পারে নি। এই দলের উদাহরণ খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ছে টুইটার (বর্তমান X) এর মালিক এলন মাস্কের কথা। এলন মাস্ক প্রথমে কিন্তু গাজার গণহত্যার বিপক্ষেই ছিল কিন্তু যখন যায়োনিস্টদের তোপের মুখে দেখলো যে নিজের ব্যবসা বাঁচানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তখন ইসরাঈল ঘুরে এসে একদম সুর পালটে ফেললো।
আচ্ছা এই যে আদর্শিক একটা পরাজয় ঘটলো, এতে ফিরাউনের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
ফিরাউন কি স্বীকার করে নিয়েছিলো ওর এতদিনের মিথ্যা?
নাহ!
কী কী করেছিলো সেটা আগে দেখি, তারপর বর্তমান ইসরাঈলের প্রতিক্রিয়ার সাথে মিলাবো ইনশাল্লাহ।
প্রথমত জাদুকরদের ঈমান আনার ঘটনার সে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে গিয়েছিলো এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে হত্যা করেছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো যারা ওদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ঈমান আনার চিন্তা করছে তাদেরকে সিগন্যাল পাঠানো যে ফলাফল কী হতে পারে।
দ্বিতীয়ত ফিরাউনের চোখে যারা সমস্যার উৎস, অর্থ্যাৎ বনী ইসরাঈলীয়দের ব্যাপারে ওর প্রচার করা মিথ্যা আরো তীব্রভাবে আঁকড়ে ধরেছিলো এবং পাগলা হাতির মত বনী ইসরাঈলের উপর আরেক দফা গণহত্যার স্টিম রোলার চালানো শুরু করেছিলো। নিচের আয়াতে এই ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছেঃ
ফির‘আওন গোষ্ঠীর সরদারগণ বলল, ‘আপনি কি মূসা আর তার জাতির লোকেদেরকে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য ছেড়ে দেবেন আর দেবেন আপনাকে আর আপনার মা’বূদদেরকে বর্জন করতে?’ সে বলল, ‘আমি তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করব আর তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব, আমরা তাদের উপর অপ্রতিরোধ্য। Al-A’raf 7:127
অর্থ্যাৎ আদর্শিক পরাজয়ের পর ফিরাউনের অন্যায় কর্মকাণ্ড থামার বদলে আরো লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছিলো। এটা যদি বুঝতে পারি তাহলে নেতানিয়াহুর এত লম্বা সময় ধরে ন্যাক্কারজনক আচরণ চালিয়ে যাওয়া দেখে আমরা আর বিস্মিত হব না ইনশাল্লাহ। ইন ফ্যাক্ট, ওদের দোসরদের কোনো কাজকর্মই আমাদের আর অবাক করবে না। আমি যখন হিলারি ক্লিনটনের একটা শর্ট ক্লিপ দেখছিলাম যেখানে সে বলছে যারা cease-fire এর কথা বলছে তারা হামাসকে চেনে না, এটা হবে হা&মাসের জন্য উপহার, ওরা cease fire এর সময়টা কাজে লাগাবে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার জন্য ব্লা ব্লা… মানে আবার সেই চর্বিত চর্বন যে হামাস হচ্ছে থ্রেট তখন আমার খালি উপরের আয়াতটার কথা মনে পড়ছিল!
খেয়াল করলে দেখবো যে ফিরাউন বা ওর আধুনিক ভার্সনের চালানো প্রোপাগাণ্ডার মধ্যে স্ববিরোধিতার ছাপ সুস্পষ্ট। ফিরাউন বনী ইসরাইলকে একবার পুরো মিশরীয়দের জন্য হুমকি তো আরেকবার ছোট্ট একটা দল হিসেবে উপস্থাপন করতো (২৬:৫৪)। আজকেও আমরা ইসরাঈলকে দেখি যে মিডিয়াতে প্রচার করছে ইস/রাইল-হা?মাস যুদ্ধ, মানে হা*মাস একটা ছোট্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন যারা প্যালেস্টাইনদেরকে প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং ওরা প্যালেস্টিনিয়ানদেরকে Human Shield হিসেবে ব্যবহার করছে ইত্যাদি……আবার অন্যদিকে এটা থেকে মনে হবে হামা*সের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নাই, ইস&রাইলের মত নিউক্লিয়ার অস্ত্রধারী একটা দেশকে পুরোপুরি যুদ্ধে নেমে পড়তে হয়েছে হা&মাসকে নির্মুল করার জন্য!
এখানে উল্লেখ্য যে আমাদের সময়ে পশ্চিমাদের মধ্যে যারা গা*জাবাসীকে দেখে ইসলাম গ্রহণ করছে তারা ইসরা*ঈলের সরাসরি নাগালে নেই, তারা সংখ্যাতেও অসংখ্য। তাই ফিরাউন যেভাবে স্বল্প সংখ্যক যাদুকরদের হত্যা করে ফেলেছে ইসরা&ঈল সেটা করতে পারছে না। তবে কিন্তু মুসা আলাইহিস সালাম (পড়ুন প্যালে*স্টাইনের) পক্ষাবলম্বন করলে ফলাফল যে ভালো হবে না সেই সিগন্যাল একদম স্পষ্ট। কয়েকটা বিষয় খেয়াল করিঃ
১) জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের বক্তব্যের পর ইসরা&ঈল জাতিসংঘের কর্মীদের ইসরাঈলে ভিসা দেবে না বলেছে, উনার অপসারণ দাবী করেছে সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগে! সত্যি বলতে আমার কাছে প্রতিক্রিয়াটা একদম হাস্যকর লেগেছে, যেন বাচ্চা রাগ করে বলছে যে আর খেলবো না!
২) আমেরিকান কংগ্রেসের একমাত্র প্যালেস্টাইনিয়ান আমেরিকান রাশিদা তালিব প্যালে*স্টাইনের পক্ষে কথা বলায় তাকে সেন্সর করা হয়েছে যেটার মানে হচ্ছে আমেরিকার সিনেট এটার কোনো প্রতিনিধির কাজের তীব্র সমালোচনা করছে। তবে আশার কথা হচ্ছে এতে ১৮৮ বনাম ২৩৪ ভোট পড়েছে, মানে ১৮৮ জন কংগ্রেস প্রতিনিধি এই মর্মে ভোট দিয়েছেন যে রাশিদা তালিবকে সেন্সর করা অনুচিত, যেটা আমেরিকার ইতিহাসে আগে কখনো হয় নি!
৩) anti-semitic লেবেল দিয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মত জায়গায় জায়নিস্টরা ওদের প্রকৃত চেহারা দেখিয়ে দিয়েছে, যারা প্যালেস্টাইনের পক্ষে কথা বলবে তাদের চাকরি হবে না/ কোটি ডলারের ফান্ড উঠিয়ে নিলো ইত্যাদি। আর এমনিতে ফেসবু&ক, ইনস্টাগ্রাম এই সবগুলোতে মার্ক জুকারবার্গ কিভাবে তথাকথিত বাক স্বাধীনতার গলা টিপে ধরেছে সেটা আশা করি আমাদের কারও অজানা নেই।
তবে সবসময় যে ফিরাউন বা তার উত্তরসূরিরা ভয় দেখিয়ে কাজ আদায় করতে চেয়েছে তা কিন্তু না। তারা লোভও দেখিয়েছে- আমেরিকাতে যখন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মুসলিম বিক্ষোভ হল সেটার বিপরীতে প্রো-ইসরাইল সমাবেশে অংশ নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে ২৫০ ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এমনকি রাশিদা তালিবের পক্ষ থেকে সরে আসার জন্য দুইজন কংগ্রেস প্রতিনিধিকে ইহুদী লবি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অফার করেছিল বলে প্রকাশ হয়ে গেছে। আর এলন মাস্কের সুর পাল্টানোর ভেতরের কাহিনী তো আমরা জানিই না……
এগুলো দেখে আমার কোন কথা মনে পড়েছে জানেন? ঈমান আনার আগে জাদুকররা যখন ফিরাউনের দলের ছিলো তখন জানতে চেয়েছিল যে যদি তারা জিতে তাহলে পুরষ্কার পাবো তো! (২৬:৪১)
অবাক লাগছে মিলগুলো দেখে?
আমার লাগে নি কিন্তু, কারণ আমি সব সময় বিশ্বাস করি যে আল্লাহ এমনি এমনি ফিরাউনের কাহিনী এত বিস্তারিত কুরআনে বলেন নাই! তবে এখানেই শেষ নয় কিন্তু……সামনের পর্ব গুলোতে আমরা আরো কিছু বিষয়ে তুলে ধরবো ইনশাল্লাহ আর দেখবো কিভাবে খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে, সুবহানাল্লাহ!
হিলারি ক্লিনটনের শর্ট ক্লিপ– https://youtu.be/AGQzm-by4Vs?si=mRQhb4cMeHMb7WbD
জাতিসংঘের বক্তব্যের রেফারেন্সঃ https://www.aljazeera.com/news/2023/10/25/what-has-the-un-done-on-the-israel-palestine-conflict
এলন মাস্ক প্রথমে কী বলেছিলঃ https://youtu.be/W2myO-slp7w?si=iagUcMMvc49pzvYb
ইসরাঈল ঘুরে আসার পর সুর পালটে কী বলছেঃ https://www.youtube.com/watch?v=iR6U4o_nD-U
পর্ব – ৫
কথা হচ্ছিলো বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্রের কাজকর্মের সাথে ফিরাউনের মিলগুলো নিয়ে। সবচেয়ে বড় মিল কোনটা বলে মনে হয় আপনাদের কাছে?
আল্লাহ ভালো জানেন তবে আমার কাছে মনে হয় শিশুদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ। আগের পর্বে উল্লেখ করেছি যে , জাদুকররা ইসলাম গ্রহণের পর ক্রোধে উন্মত্ত ফিরাউন আবারো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বনী ইসরাইলের ছেলে শিশু সন্তানদের হত্যা করার।
কিন্তু বাচ্চা কেন?
বাচ্চারা কী দোষ করেছে?
এই ব্যাপারটা দুই ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
প্রথমত: সামরিক কৌশল হিসেবে। আমরা সবাই বুঝি যে, সন্তান মানুষের দুর্বলতম জায়গা। তাই সেখানে আঘাত করে ওরা এই সিগন্যাল দিতে চায় যে আমার, অর্থাৎ ফিরাউন/ ইসরাইলের বিরুদ্ধাচরণের ফলাফল কী হতে পারে। ভবিষ্যতে ৭ই অক্টোবরের মতো এভাবে আগ বাড়িয়ে ইসরাঈলের উপর আক্রমণ করার আগে প্যালেস্টিনিয়ানরা যেন একশবার চিন্তা করে, ভয় পেয়ে যেন এমন কাজ পুনরাবৃত্তি করার কথা স্বপ্নেও না ভাবে।
মোদ্দা কথা Palestinians should be more terrified than they hate I/sra/il.
কিন্তু এটা কি একটা কার্যকরী কৌশল? হুম, ফিরাউনের সময় কাজ করেছিলো বটে কিছু মানুষের উপর। আল্লাহ জানাচ্ছেন-
“মূসার উপর তার জাতির মধ্য হতে গুটিকয়েক লোক ব্যতীত কেউ ঈমান আনেনি ফিরাউন ও তার প্রধানদের নির্যাতনের ভয়ে। বাস্তবিকই ফিরআউন দুনিয়াতে খুবই উদ্ধত ছিল, আর সে ছিল অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” (১০:৮৩)
কিন্তু এমন কী কেউ ছিলো যাদের উপর এই কৌশল কাজ করে নাই?
অবশ্যই!
সদ্য ঈমান আনা জাদুকররা। ফিরাউন যখন হুমকি দিয়েছিলো তাদের সবাইকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করবে তখন যাদুকররা মুখের উপর সেটা জানিয়ে দিয়েছিল ফিরাউনের দৌড় কতদূর!
“কাজেই তুমি যা করতে চাও তাই কর। কেননা তুমি কেবল এ পার্থিব জীবনেই কর্তৃত্ব খাটাতে পারো”। (২০:৭২)
আচ্ছা কিভাবে ওরা এই লেভেলের সাহসিকতা দেখাতে পেরেছিলো? চিন্তা করলে বুঝবো যে এটার কারণ ছিলো মৃত্যুর সংজ্ঞা বদলে যাওয়া!
মৃত্যুর সংজ্ঞা কী ছিলো ওদের কাছে?
তারা বললো,
‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাব।’ (৭:১২৫)
আর ওদের আকাঙ্ক্ষা কী?
”আমরা আশা করি যে, আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে ক্ষমা করবেন; কারণ আমরা বিশ্বাসীদের মধ্যে অগ্রণী।” (২৬:৫১)
এখন আপনারাই বলুন যে প্যালেস্টিনিয়ানরা কোন দলের অন্তর্ভুক্ত বলে আপনার ধারণা? বর্তমান সময়ে গাজাবাসী যে ইস্পাতসম ঈমানী দৃঢ়তা দেখিয়েছে সেটা আমাকে নিচের আয়াতের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, প্যালেস্টিনিয়ানরা যেন ইসরাঈলকে বলছে-
“বল, ‘তোমরা আমাদের জন্য যে জিনিসের অপেক্ষা করছো তা দুটো ভালোর একটি ছাড়া আর কিছুই না (শাহাদাত কিংবা বিজয়) আর আমরা অপেক্ষা করছি এজন্য যে, আল্লাহ নিজেই তোমাদেরকে শাস্তি দেন অথবা আমাদের হাত দিয়ে দেয়ান। কাজেই অপেক্ষায় থাকো, আমরা তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।” (৯:৫২)
গাজাবাসীদের ঘর বাড়ি, সন্তান সন্ততি সব কিছু হারানোর পরও আল্লাহর প্রশংসা করার অজস্র ভিডিও দেখার পর ইদানিং একটা কথা আমার খুব মনে হয়……ওরা হচ্ছে আসল মুক্ত মানুষ, আর আমরা দুনিয়ার ফাঁদে আটকা পরা অসহায় প্রাণী। একটু চারপাশে তাকাই, আশেপাশে মানুষকে কিসের পেছনে ছুটতে দেখি? সন্তান, সম্পত্তি, বাড়ি গাড়ি, স্ট্যাটাস, ডিগ্রী এগুলোইতো?
গাজাবাসীকে দেখেন, ওরা প্রতিমুহুর্তে এই অমোঘ সত্যটা বুকে ধারণ করে যে ডাক চলে আসতে পারে যে কোনো সময়, তাই আল্লাহর সাথে কোন অবস্থায় আমার দেখা হচ্ছে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! আল্লাহর সাথে দেখা হওয়ার ব্যাপারটা পছন্দ করা-এর চেয়ে বড় বিজয় আর মুক্তি কী হতে পারে?
সামরিক কৌশল ছাড়াও শিশু হত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণটা কী ছিলো জানেন?
ভয়!
এই যে বনী ইসরাঈলের উপর এত নিষ্ঠুরতা দেখানো চরম ক্ষমতাধর ফিরাউন যে আসলে ওদেরকে ভয় পেতো সেটা কুরআন আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে!
“বস্তুতঃ ফিরাউন দেশে উদ্ধত হয়ে গিয়েছিল আর সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে দুর্বল করে রেখেছিল, তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করতো আর তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখতো; সে ছিল ফাসাদ সৃষ্টিকারী। দেশে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার ইচ্ছে করলাম, আর তাদেরকে নেতা ও উত্তরাধিকারী করার (ইচ্ছে করলাম)। ইচ্ছা করলাম দেশে তাদেরকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ফিরআউন হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তাদের নিকট হতে ওরা আশঙ্কা করত।” (২৮:৪-৬)
সূরা ক্বাসাসের এই ৬ নং আয়াতটা ভালো মতো খেয়াল করি – আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলেন যে ফিরাউন যা ভয় করতো সেটাই সত্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফিরাউন কী ভয় করতো?
বনী ইসরাইল একসময় ওর ক্ষমতা কেড়ে নিবে!
ঠিক একই ভয় ইসরাঈল করে। ওরা ভয় করে ওদের মিথ্যা পুরো পৃথিবীর কাছে ধরা পরে যাবে, এতদিন ধরে যেসব অন্যায় ওরা করে এসেছে প্যালেস্টাইনের আগামী প্রজন্ম সেটা আর সহ্য করবে না, কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, আর সেজন্যই ওরা শিশু হত্যার মাধ্যমে ভবিষ্যত যোদ্ধা তৈরির দ্বার রুদ্ধ করতে চায়।
তাই আশ শিফা হসপিটালে, UN স্কুলে, সব জায়গায় ওরা যখন নির্বিচারে বোম্বিং করেছে, আমার খুব বেশী অবাক লাগে নি।
আমরা যারা এত এত মুসলিমদের মৃত্যু দেখে প্রচণ্ড অসহায় বোধ করছি ভাবছি যে আল্লাহ কেন এসব ঘটতে দিচ্ছেন, তাদের জন্যও উত্তর আছে নিচের আয়াতেঃ
“(জয়-পরাজয়ের) এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করে থাকি যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে চিনে নিতে পারেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন, বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না।” (৩:১৪০)
এখানে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছেন যে কেন এমন সময় আসে যখন মুসলিমরা নিহত/পরাজিত হয়।
আচ্ছা প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যাপারে নাহয় স্বান্তনা পেলাম যে তারা শহীদ হচ্ছে কিন্তু নিষ্পাপ শিশুদের লাশ দেখে কি আমাদের মাথা নষ্ট অবস্থা? ভাবছি যে ওরা কিভাবে পারছে এতটা নিষ্ঠুর হতে?
আসুন একটু দেখে নেই যে ওরা প্যালেস্টিনিয়ানদের ব্যাপারে কী ভাবে
https://www.facebook.com/100064918710744/posts/745551914285426/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে ওদের এই স্বভাবের কথা আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই কুরআনে বলে দিয়েছেন!
“আহলে কিতাবের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে যে, যদি তাদের নিকট স্বর্ণের স্তুপ গচ্ছিত রাখো, তবে তোমাকে তা ফেরত দেবে, পক্ষান্তরে তাদের কেউ কেউ এমন যে, একটি দিনারও যদি তাদের নিকট গচ্ছিত রাখ, তার পেছনে লেগে না থাকলে সে তোমাকে তা ফেরত দেবে না, এটা এজন্য যে, তারা বলে, ‘নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই’, বস্তুতঃ তারা জেনে শুনে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যে বলে।” (৩:৭৫)
মানে প্যালেস্টিনিয়ানদের সাথে করা যে কোনো অন্যায়কে ওরা কিছু মনে করে না কারণ ওরা ইহুদী না!
আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে বর্তমান ইসরাঈলীয়দের সবচেয়ে বড় অপরাধ কী, আমি বলবো তারা আল্লাহ কেমন এই কনসেপ্টটাকে কলুষিত করেছে। ওদের বিকৃত ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে যে ওদের এইসব কাজকর্ম ঐশী বাণী দ্বারা সমর্থিত, ওরা আল্লাহর Chosen people এবং এই ভূমির প্রতি ওদের অধিকার কারণ এটা Promised Land। ওরা আল্লাহকে সাম্প্রদায়িক, এক চোখা হিসেবে উপস্থাপন করেছে যিনি এক দল মানুষকে যা খুশী করার লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে। ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে কিন্তু! এজন্যই উপরের আয়াতে আল্লাহ দ্ব্যর্থহীণভাবে বলছেন যে ওরা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলে!
আচ্ছা আমাদের কি আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা আছে? বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রতি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করাটাই আমার কাছে খুব জরুরী একটা ইবাদত মনে হয়। করছি কি সেই ইবাদত?
পর্ব – ৬
গত পর্বে আলোকপাত করেছিলাম নির্বিচারে শিশু হত্যার পেছনের সামরিক ও মনস্ত্বাত্তিক কারণ নিয়ে। কিন্তু শুধুই কি শিশু হত্যা? নাহ, ফিরাউন পাগলা হাতির মত আচরণ করছিলো। নিচের আয়াতটা দেখিঃ
“আর ফির’আউন বলল, ‘আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার রবকে আহবান করুক। নিশ্চয় আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে যমীনে বিপর্যয় ছড়িয়ে দেবে।” (৪০:২৬)
এই আয়াতটার ভাষা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ফেরাউন এমন কাজ করতে চাচ্ছিলো যেটাতে ওর দলের মানুষেরাই এতদিন বাঁধা দিচ্ছিল, কিন্তু কেন? মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যায় বাঁধা কোথায়?
আমাদের বুঝতে হবে যে মুসা আলাইহিস সালাম কিন্তু ছিলেন Royal Citizen, ফিরাউনের নিজের প্রাসাদে বড় হওয়া একজন, যার মিশরীয় নাগরিকত্ব আছে, অর্থাৎ ‘নিজেদের লোক’। তাই ওনাকে হত্যা করা হলে “বনী ইসরাঈল National Threat কারণ তারা বহিঃশত্রু” ইত্যাদি নাটকীয় বক্তব্য ভেস্তে যাবে।
বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্রের সাথে এটা কিভাবে যায়?
যারা এ সংক্রান্ত সংবাদ নিয়মিত শুনছেন/ পড়ছেন তারা হয়তো জেনে থাকবেন যে নেতানিয়াহু তার শুভাকাংখীদের অধিকাংশ কথাই শুনছে না, একগুঁয়ে আচরণ করছে। যেমন –
১) খবরে প্রকাশ যে আমেরিকা চেয়েছিলো ইসরাঈল যেন হাসপাতাল, জাতিসঙ্ঘের স্কুলগুলোতে আক্রমণ না করে, তাতে ইসরাঈলের ইমেজ স্থায়ীভাবে নষ্ট হবে। কিন্তু ইসরাঈল শোনে নি, দাবী করেছে এগুলো নাকি হামাস ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। যদিও প্রকাশ্যে আমেরিকা একই সুরে সুর মিলিয়েছে কিন্তু প্রথমবারের মত বিবিসির মত মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে এই দাবীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
২) আমেরিকা আরো চেয়েছিলো পশ্চিম তীরে (প্যালেস্টাইনের আরেক অংশ যেখানে হামাসের নিয়ন্ত্রণ নাই, ইয়াসির আরাফাতের দল ফাতাহ, যারা সশস্ত্র প্রতিরোধে বিশ্বাসী নয় তারা এটা নিয়ন্ত্রণ করে) ইসরাঈল যেন এখন কোনো আক্রমনাত্মক মোডে না যায়, কারণ তাহলে “একমাত্র হামাসই শত্রুপক্ষ, তাদের ধ্বংস করাই লক্ষ্য” – এই প্রোপাগাণ্ডা ধরে রাখা মুশকিল হয়ে যাবে। অথচ ইসরাঈল পশ্চিম তীরে Settlement বাড়িয়েই চলেছে, এ পর্যন্ত সেখানে ৩০০ র কাছাকাছি প্যালেস্টিনিয়ানকে হত্যা করা হয়েছে।
৩) খোদ ইসরাঈলের জনগণের একাংশ শুরু থেকে চাইছে গাজায় কার্পেট বোম্বিং না করা হোক, কারণ তাতে জিম্মীদের নিহত হবার সুযোগ আছে, কিন্তু নেতানিয়াহু বারবার বলছে হামাসকে নির্মুল করাই তার প্রধান লক্ষ্য।
অর্থাৎ নেতানিয়াহু এমন কাজ করছে যেটা করতে তার মিত্ররাই তাকে নিষেধ করছে। ফিরাউনের সাথে পার্থক্য হচ্ছে ফিরাউন শেষ পর্যন্ত মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করেনি, বলা যায় করতে পারেনি কিন্তু নেতানিয়াহু নিজে যা ভালো বুঝছে সেটা করেই যাচ্ছে।
কেন এহেন অর্বাচীনের মত আচরণ?
আগের পর্বে বলেছি, আবারো বলছি এর পেছনে প্রধান মনস্ত্বাত্তিক কারণটা হচ্ছে ‘ভয়’।
এই যে নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, এটার পিছনে একটা ব্যক্তিগত এজেন্ডা হচ্ছে ও নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে চাচ্ছে। যুদ্ধ চলছে বলেই ওর ব্যর্থতাগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ, ওর সরকারের পতন সব কিছু ঠেকিয়ে রাখতে পারছে। একবার যুদ্ধ থামলেই ওকে তোপের মুখে পড়তে হবে এটা নেতানিয়াহু খুব ভালো করেই জানে।
আর ইসরাইলের বাইরে ইহুদী লবিরা কী করছে? নবীজী বা কুরআন অবমাননার যে কোনো টপিকে বাক স্বাধীনতার বুলি ফুটতো যাদের মুখে, তারা সব মুখোশ ছুঁড়ে ফেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সব ধরণের বিধি নিষেধ আরোপ করছে প্যালেস্টাইনের পক্ষের কণ্ঠ রোধ করতে। এখানেও একই অনুভূতি কাজ করছে-ভয়!
কিসের?
আসুন একটা জিনিস একটু চিন্তা করি। দাড়ি, টুপি, জোব্বা বা ক্ষেত্র বিশেষে পাগড়ি পরা কাউকে সন্ত্রাসী হিসেবে মানুষের ব্রেনে, মনে গেঁথে দিতে পশ্চিমা সমাজ কত হাজার হাজার ডলার খরচ করেছে আমাদের কি কোনো ধারণা আছে? অথচ খালেদ নামের সেই প্যালেস্টিনিয়ান দাদা যে রিম ও তারেক নামের দুই নাতি নাতনীকে হারিয়েছে, তার ছোট্ট একটা ভিডিও ওদের এতদিনের শ্রম, অর্থ, সময় সব কিছুকে নিছক পণ্ডশ্রমে পরিণত করে এই পোশাকের মানুষদের উপস্থাপন করেছে একজন স্নেহশীল পিতামহের রূপে! এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে ইসরাঈল কি আর পারবে প্যালেস্টাইনের মুক্তি আন্দোলনকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করতে? সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে এইসব মেসেজ যাচ্ছে একদম তরুন প্রজন্মের কাছে যারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভোটার হবে। একদম আম জনতার সেন্টিমেন্ট যদি প্যালেস্টাইনের পক্ষে থাকে তাহলে এমন সরকার কি ক্ষমতায় আসতে পারবে যারা ইসরাঈলের অন্ধ সমর্থক?
আবার হার্ভার্ড, এমআইটি, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া এগুলো হচ্ছে আমেরিকার শীর্ষ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার গ্র্যাজুয়েটরাই পরে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হয়, নীতি নির্ধারণী পদগুলো দখল করে। এইসব বিদ্যাপীঠের পাদদেশ থেকে যদি প্যালেস্টাইনের পক্ষের সোচ্চার কণ্ঠ শোনা যায় তাহলে ভবিষ্যতে আমেরিকাকে কি আর পাশে পাবে ইসরাঈল?
এই ব্যাপারগুলো বুঝতে পারছে দেখেই নেতানিয়াহু বোম্বিং চালিয়েই যাচ্ছে, ভাবছে এই সুযোগে গাজা দখল করে নেই, অদূর ভবিষ্যতে আবার নতুন করে কোনো অজুহাত বের করা খুবই কঠিন হবে। কিন্তু ইসরাঈলের এহেন আচরণের ফলাফল কী হচ্ছে?
১) জিম্মীদের স্বজনরা যেটা আশংকা করছিলো সেটাই হচ্ছে, ইসরাইলী সৈন্যদের হাতেই ওদের তিনজন জিম্মী নিহত হয়েছে সর্ব সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ। এর ফলে কী বোঝা গেল? ইসরাঈল যতই দাবী করুক যে ওরা ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে হামাসের ঘাঁটিগুলোতেই খালি আক্রমণ করছে বা এই পর্যন্ত বহু হামাস সৈন্য হত্যা করেছে ইত্যাদি, এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে নিজেদের লোককে আলাদা করার সক্ষমতাই ওদের নেই বরং ওদের সেনাবাহিনী কী পরিমাণ ভয় পায় হামাসকে!
২) খুব ধীরে ধীরে ইসরাঈল ও ওর এতদিনের মিত্রদের মধ্যে ফাটল ধরছে। হ্যাঁ, এখনও আমেরিকা প্রকাশ্যে ইসরাঈলকে সমর্থন করে যাচ্ছে, এখনও অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে কিন্তু নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে ওদের মাঝে বিরোধ বাড়ছে, যেটা নিয়ে পত্র পত্রিকায় খবর আসা শুরু করেছে মাত্র। জো বাইডেন বলছে যুদ্ধের পর গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, আবার ইসরাঈলও এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু নেতানিয়াহু বলছে অবশ্যই গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইসরাঈল।
শুধু আমেরিকা আর ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে সেটা না, অক্টোবর ৭ এর ঘটনার পর ইসরাইলের রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝের মতানৈক্য একদম দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরাঈলী জনতা বিক্ষোভ করেছে- যুদ্ধ শুরুর পর War Cabinet গঠন করতেও নেতানিয়াহুর অনেক সময় লেগেছে, তার বিরোধী পক্ষের অনেকে রাজি হচ্ছিলো না যুদ্ধের সিদ্ধান্তে।
অবাক করা ব্যাপার হল, এই সব কিছু যেন সূরা হাশরের একটা আয়াতেই সারাংশ করে তুলে ধরা হয়েছে!
“তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সমর্থ নয়, সুরক্ষিত জনপদে বা দেয়ালের আড়ালে অবস্থান ছাড়া। তাদের নিজেদের মধ্যেই আছে ভীষণ শত্রুতা। তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে কর কিন্তু তাদের অন্তরগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এর কারণ এই যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।” (৫৯:১৪)
যারা আগে বা বর্তমানে ইসরাঈলী সেনাবাহিনী সংক্রান্ত নিউজ পড়েছেন তারা জানবেন যে আয়াতের প্রথম অংশটা কী নিদারুণ সত্য। ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন অজস্র ছবি পাওয়া যাবে যেখানে একজন প্যালেস্টিনিয়ান নারীকে আটকে রেখেছে ৫/৬জন ইসরাঈলী সেনা। কিংবা ট্যাংকের উপরে দাঁড়ানো ইসরাইলী সেনা বন্দুক তাক করে আছে শুধু পাথর হাতে ধরা প্যালেস্টাইনি শিশুর দিকে……
তবে ইসরাইলী সৈন্যবাহিনী যে কতটা দুর্বল সেটা অক্টোবর ৭ এর ঘটনা থেকে একদম স্পষ্ট হয়ে গেছে। ওইদিন আদতে কী ঘটেছিলো সেটা নিয়ে আমি যখন ভালোভাবে পড়াশোনা করলাম তখন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সূরা হাশরের আরেকটা আয়াতঃ
“কিতাবধারীদের অন্তর্ভুক্ত কাফিরদেরকে আক্রমণের প্রথম ধাপেই তিনিই তাদের বাড়ী থেকে বের ক’রে দিলেন। তোমরা ধারণাও করনি যে, তারা বের হবে। আর তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ (’র কবল) থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে এমন দিক থেকে পাকড়াও করলেন যা তারা ভাবতেও পারেনি। তিনি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করলেন। তারা তাদের নিজেদের হাত দিয়েই নিজেদের ঘরবাড়ী ধ্বংস করল, আর মু’মিনদের হাতেও (ধ্বংস করাল)। অতএব হে দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (৫৯:২)
উপরোক্ত আয়াতটা নাযিল হয়েছিলো মদীনার উপকণ্ঠে যে তিনটা ইহুদী গোত্র ছিলো তাদের মাঝে ২য় গোত্র তথা বনু নাযিরকে বহিঃষ্কারের প্রেক্ষিতে। কিন্তু এটা এমনভাবে বর্তমান ঘটনাকে তুলে ধরেছে যে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়।
কেন বলছি এমন কথা?
কী হয়েছিলো অক্টোবরের ৭ তারিখে?
ইসরাঈল যে বারবার বলছে প্রায় ১২০০ ইসরাইলী মারা গেছে যাদের অনেকে ছিলো সাধারণ নাগরিক তাদের সবাইকে কি হামাস মেরেছে?
অনেক মুসলিম প্রভাবশালী ব্যক্তি যে দাবী করছে এটা Inside Job ছিল মানে ইসরাঈলের সমর্থনেই ঘটেছে সেটা কি সত্যি? হামাসের আক্বীদা, তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে যে অনেকে সন্দেহ পোষণ করছেন সেটার ব্যাপারটা কী? একজন বিখ্যাত দা’ঈকে দেখলাম মুখোশ উন্মোচনের দুআ করার উপদেশ দিলেন……এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কী?
হামাস এইভাবে অর্বাচীনের মত আক্রমণ করে সাধারণ প্যালেস্টিনিয়ানদের জীবনে দুর্যোগ ডেকে আনলো এটা কি আসলে ভুল কৌশল ছিল?
আগামী পর্বগুলোতে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্!
পর্ব – ৭
গাজার ভৌগলিক অবস্থান ও অপারেশন আল-আকসা ফ্লাডের সূচনাপর্ব
৭ই অক্টোবর কী ঘটেছিলো সেটা জানার আগে আমরা একটু প্যালেস্টাইনের ম্যাপটা দেখে নিবো যেটা না জানলে বর্তমান পর্ব থেকে শুরু হওয়া বিশ্লেষণগুলো বোঝা কঠিন হবে।
উপরের ম্যাপে আমরা গাজা উপত্যকা দেখতে পাচ্ছি, যেটা ২৫ মাইলের মতো লম্বা। অবিশ্বাস্য রকমের ছোট্ট এই জায়গাটার একদিকে পুরোটাই ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূল আর স্থলদিকের সীমানার পশ্চিমে মিশর আর পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ইসরাঈল।
১৯৪৮ সালে ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় আরব-ইসরাঈল যে যুদ্ধ হয় তাতে ইসরাঈল জয়ী হয় এবং গাজা ও পশ্চিম তীর বাদে পুরো ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। তখন গাজা উপত্যকা মিশরের এবং পশ্চিম তীর জর্ডানের অধীনে আসে। তারপর ১৯৬৭ সালে ৬ দিন ব্যাপী আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে জয়ী হওয়ায় গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরও ইসরাইলের দখলে চলে আসে।
সুদীর্ঘধীন ধরে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকার পর ১৯৯৩ সালে ইসরাঈল ও PLO (Palestinian Liberation Organization)’র মাঝে অসলো শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার মাধ্যমে প্যালেস্টাইন অথোরিটি গাজা ও পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় সীমিত আকারে।
২০০০ সালে ২য় ইন্তিফাদা (ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনের সাধারণ জনগণের গণবিদ্রোহ) শুরু হয় যেটা শেষ হয় ২০০৫ সালের দিকে। ইসরাইলী ট্যাংকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পাথর ছুঁড়ে মারতে থাকা প্যালেস্টিনিয়ান শিশুদের সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত ইসরাইলী সৈন্যরা অবশেষে গাজা উপত্যকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। মানে গাজার ভিতরে আর ইসরাঈলের সামরিক উপস্থিতি ছিলো না।
তারপর ২০০৬ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ২০০৭ সাল থেকে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হামাসের হাতে। আর পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে ফাতাহ, ইয়াসির আরাফাতের রাজনৈতিক দল। ঘটনাগুলো আবার একটু ছক আকারে দেখি যেন ব্রেনে গেঁথে যায়?
তাহলে আমরা দেখছি যে ২০০৭ সাল থেকে গাজার ভিতরে ইসরাঈলের কোনো প্রত্যক্ষ্য সামরিক উপস্থিতি নেই।
কিন্তু বর্ডারে?
এখানেই আসল টুইস্ট! হামাসের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকে ইসরাঈল গাজার উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। ফলে ইসরাইলের নজরদারী ছাড়া কোনো কিছুই গাজায় প্রবেশ করতে পারে না। না মানুষ, না পণ্য। ইসরাঈলের সাথে সীমানায় ইরেজ ক্রসিং নামে একটাই ক্রসিং আছে যেটা দিয়ে মানুষ ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারে যেটার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরাঈলের হাতে। এমনকি ইসরাঈল হিসাব করেছে যে গাজাবাসীর প্রতিদিন ন্যুনতম কতটুকু ক্যালরি দরকার, সেটার চেয়ে সামান্য একটু বেশী পরিমাণ খাবারবাহী ট্রাক ঢোকার অনুমোদন দেয় ইসরাঈল যেন গাজাবাসী না খেয়ে মারা না যায়, এতটুকুই। সুষম বা পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার অধিকার তাদের নেই। এবার যুদ্ধের সময় আমরা নিশ্চয়ই টের পেয়েছি যে গাজাবাসীর পানি, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সব কিছুর নিয়ন্ত্রণই ইসরাঈলের হাতে। দিনের মাত্র অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকে, আর এহেন অবস্থার মাঝে ওখানে বাস করে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ! গাজা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা!
এ তো গেলো স্থল সীমানা। জলভাগ? ২০০৯ সাল থেকে গাজার সমুদ্রতীরও নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাঈলের নৌবাহিনী এবং সেখানে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ। গাজার মাছ ধরার ট্রলার তীর থেকে মাত্র ৬ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যেতে পারে।
আচ্ছা ইসরাঈল গাজাবাসীর সাথে এমন করে সেটা না হয় মেনে নেয়া গেলো কিন্তু ম্যাপে নিশ্চয়ই দেখেছি যে গাজার সাথে আরেকটা দেশেরও বর্ডার আছে। কোন সেই দেশ এবং কেমন ধারা তাদের আচরণ?
হুম, মিশর, একটি মুসলিম দেশ যেটা আরব দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম ইসরাঈলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সেই ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি নামে ইসরাঈলের সাথে শান্তি চুক্তি সাক্ষর করেছে।
সূর্যের চেয়ে বালি গরম বলে একটা কথা আছে না? তিক্ত সত্য হচ্ছে গাজাবাসীর সাথে মিশরের আচরণ ক্ষেত্র বিশেষে ইসরাঈলের চেয়েও রুঢ়। ইসরাঈলের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে গাজার সাথে সীমানায় তারা বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করেছে, মিশর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি গাজায় প্রবেশ করতে পারবে না এই নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়েছে। ফলে মিশর থেকে কিছু ঢুকতে হলে সেটাও ঢোকে ইসরাঈলের চেক পয়েন্ট ক্রস করে কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে। রাফাহ ক্রসিং, যেটা গাজা এবং মিশরের বর্ডারে অবস্থিত, সেটা দিয়ে শুধু মানুষ চলাচল করতে পারে, সেখানেও গাজাবাসীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে দুর্বিষহ ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
মিশরের সীমানায় এই বিশ্রী আচরণের একমাত্র ব্যতিক্রম কখন ছিলো আমরা কি কেউ জানি?
২০১২ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডের মুহাম্মাদ মুরসি যখন ক্ষমতায় আসেন মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তার অতি সংক্ষিপ্ত শাসনকাল গাজাবাসীর জীবনে নিয়ে এসেছিলো অসামান্য আশির্বাদ! বহু বছর ধরে নির্বাসিত হামাস নেতাদের অনেকেই তখন নিজের মাতৃভূমি ভ্রমণ করতে যেতে পেরেছিলেন।
তাই ২০১৩ সালেই তাকে যখন ক্ষমতাচ্যুত করা হল আমি খুব বেশী অবাক হই নি, মনে হয়েছিলো ইসরাঈল তো কখনোই প্যালেস্টাইনের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন কাউকে ক্ষমতায় থাকতে দিবে না। তবে আমাকে সুতীব্র কষ্ট দিয়েছিলো কোন বিষয়টি জানেন?
মিশরের সালাফী আক্বীদার নুর পার্টি স্বৈরশাসক সিসির সাথে হাত না মিলালে এই উৎখাত সম্ভব হত না। তখন বাংলাদেশে দেখেছিলাম মুরসির আক্বীদার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং আলোচনা যে উনার উৎখাতে মানুষের খুশী হওয়া। তখন বুঝেছিলাম যে মুখে মুখে যাই বলি না কেন, আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বা উপসংহারে পৌঁছানোর সমীকরণে কোথাও আমাদের ফিলিস্তিনের ভাইবোনরা নেই। সহীহ আক্বীদার প্রতি ভালোবাসা আমাদেরকে কোন পথে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে এই প্রশ্ন তখন থেকেই আমাকে বিদ্ধ করে চলেছে বারবার।
যাই হোক, ফিরে আসছি পয়েন্টে। গাজার বর্ডারের সংক্ষিপ্ত চালচিত্র তুলে ধরার পর আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন যে কেন একে বিশ্বের সবচেয়ে বড় Open Air Prison বলা হয়?
এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো আদতে কী ঘটেছিলো ৭ই অক্টোবর।
১৯৭৩ সালে সংগঠিত ৪র্থ আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ঠিক ৫০ বছর পর গত ৭ অক্টোবর ভোরে, হামাসের নেতৃত্বে, ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে দক্ষিণ ইসরাইলের সাথে গাজার সীমানায় হামলা চালায় ফিলিস্তিনের রেজিস্ট্যান্স ফোর্স। ইসরাইলের বিলিয়ন ডলারের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আয়রন ডোম প্রায় বিকল করে দিয়ে, হামাসের ছোঁড়া ৩০০০ রকেট আঘাত হানে ইসরাইলের বিভিন্ন মিলিটারি বেজ ও অন্যান্য স্থাপনায়।
রকেট ছোঁড়ার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা জল, স্থল ও আকাশপথে একযোগে ইসরাইলে প্রবেশ করে এবং গাজার সীমানা থেকে প্রায় ১৫ মাইল দূর পর্যন্ত প্রায় ২২টি ইসরাইলি নগর, কিব্বুৎজ ও মিলিটারি বেজে হামলা চালায়। এই হামলায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমপক্ষে ৩৫০ জন সদস্যসহ প্রায় ১২০০ ইসরাইলি প্রাণ হারায়। এছাড়া কমপক্ষে ২৫০ ইসরাইলিকে (সেনা ও সিভিলিয়ান) বন্দী করে হামাসের শাসনাধীন গাজায় নিয়া আসা হয়। নিচের ম্যাপে দেখা যাচ্ছে বর্ডারের কোন কোন জায়গায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়েছিল-
যেকোন বিবেচনায় এই হামলা ছিল ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সবচাইতে বড় হামলা। ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন মিডিয়া ও নেতারা এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে, একে হলোকাস্টের পর ইহুদিদের উপর সবচে ভয়াবহ আঘাত হিসেবে প্রচার করে। ইসরাইলের কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা এই হামলাকে আখ্যায়িত করেন ‘আমাদের ৯/১১’ হিসেবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এমন অসম্ভব ঘটনা ঘটলো? বিস্তারিত জানবো আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ্।
[এখানে উল্লেখিত আরব ইসরাঈল যুদ্ধ এবং শান্তিচুক্তি, এইসবগুলো মেজর ঘটনা নিয়ে আমরা সামনে আরো বিস্তারিত জানবো ইনশাআল্লাহ্।
আয়রন ডোম হচ্ছে ইসরাঈলের মিসাইল প্রতিরক্ষা সিস্টেম যেটা ডিজাইন করা হয়েছে শর্ট রেঞ্জে ছোঁড়া রকেট তার লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই পালটা মিসাইল ছুঁড়ে তাকে অকার্যকর করে দেয়ার জন্য।
কিব্বুৎজ হল সমবায় কৃষি স্থাপনার মত যেখানে ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ একক নয় বরং যৌথ মালিকানায় থাকে।
৯/১১ হল ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে আমেরিকার টুইনটাওয়ারে হামলার ঘটনা, যেটার প্রেক্ষিতে War on Terror এর নামে আমেরিকা আফগানিস্তানে আক্রমণ করে যেটার জের আজো পুরো পৃথিবীর মুসলিমরা বয়ে চলেছে।]
পর্ব – ৮
অপারেশন আল-আকসা ফ্লাডের ইতিবৃত্ত
আজকে আমরা ৭ই অক্টোবরে আদতে কী ঘটেছিলো সেটা জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্। ঘটনার দিন একদম ভোরে, মানে স্থানীয় সময় সকালে ৬.৩০টার দিকে একযোগে দক্ষিণ ইসরাঈলকে লক্ষ্য করে হাজার হাজার রকেট ছোঁড়া হয় যার ফলে বেজে ওঠা সাইরেনের আওয়াজ এত তীব্র ছিলো যে সেটা তেল আবিব পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিলো। এই রকেট আক্রমণকে কাভার হিসেবে ব্যবহার করে সকাল ৭.৪০টার মধ্যে শত শত ফিলিস্তিনি যোদ্ধা গাজা ইসরাঈল বর্ডারের নিরাপত্তা প্রাচীর ভেদ করে ইসরাঈলের মিলিটারী স্থাপনা ও সীমানা সংলগ্ন ইসরাইলী নগরগুলোতে এক যোগে আক্রমণ করে এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আগেই বলেছি যে এই হামলায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমপক্ষে ৩৫০ জন সদস্যসহ প্রায় ১২০০ ইসরাইলি প্রাণ হারায়। এছাড়া কমপক্ষে ২৫০ ইসরাইলিকে (সেনা ও সিভিলিয়ান) বন্দী করে হামাসের শাসনাধীন গাজায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বুহ্যকে কিভাবে কাবু করলো ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকারী যোদ্ধারা যারা কিনা বেড়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগারে (Open Air Prison) যেখানে একটা মাছিও ঢুকতে পারে না ইসরাঈলের নজরদারী ছাড়া?
এখানে কয়েকটা ফ্যাক্টর কাজ করেছে।
প্রথমত: প্যালেস্টাইনের রেসিস্ট্যান্স ফোর্স আক্রমণ চালিয়েছে Simchat Torah নামে Jewish holiday র দিনে। গত বছর, মানে ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ ছিলো ইয়াম কিপ্পুর যেটা ইহুদীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিন। ইয়াম কিপ্পুর এর পর থেকে এই Simchat Torah এই পুরো সময়টাই ইহুদীদের নানা ধরনের উৎসবের সময় যখন সবখানে একটা আনন্দের, ঢিলে ঢালা আমেজ বিরাজ করছিলো। উৎসব উপলক্ষে সামরিক স্থাপনাগুলোতে অনেকেই ছিলো ছুটিতে।
দ্বিতীয়ত: ছুটিতে ছিলো না এমন সৈন্যদের একটা বড় অংশ আবার গাজার সীমান্ত থেকে সরিয়ে আল আকসা মসজিদের কাছে এবং পশ্চিম তীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন গাজার সীমান্তকে এহেন অবহেলা? আসলে গাজার সীমানায় ইসরাঈল মূলত নির্ভর করেছিলো প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিরক্ষার উপর। ২০১৪ সালে হামাস ভূগর্ভস্থ টানেল দিয়ে আক্রমণ করেছিলো বলে ইসরাঈল বিলিওন ডলার খরচ করে মাটির নিচে প্রায় ৪০ মাইল লম্বা বিশাল এক দেয়াল নির্মাণ করে যেখানে আছে শতাধিক ক্যামেরা, সেন্সর, রাডার ইত্যাদি। আর মাটির উপরেও ক্যামেরা, অটোমেটিক রাইফেল, স্মার্ট ফ্যান ইত্যাদি নানা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু সেগুলো ঠিক সময় মত প্রয়োগ করার জন্য মানুষ তো লাগবে! সেটাই যথেষ্ট পরিমাণে ছিলো না, মাত্র দুই বা তিনটা ব্যাটেলিয়ন ছিলো, যেটারই সুযোগ নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা!
একদম ভোরবেলা যখন অতর্কিত এই হামলা হয় তখন হতবাক ইসরাঈলী সৈন্যরা এতটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় যে তাৎক্ষণিক ভাবে পালটা আক্রমণ চালাতে ব্যর্থ হয়। শুধু তাই না যেসব ইসরাইলীয়রা তাদের পুলিশ ও আর্মির সাহায্য চেয়েছিল তাদের কাছে পৌঁছাতে ওদের অনেক দেরী হয়েছিলো, ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় ১৫-১৬ ঘণ্টা!
কিন্তু এত বড় একটা হামলা নিশ্চয়ই হঠাৎ করে হয়নি, এটার জন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে, এটা কিভাবে সম্ভব যে ইসরাঈলের বিশ্বসেরা গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেট এটা টেরই পেলো না? আল জাজিরা তার এক প্রতিবেদনে বলছে যে কিছু তরুণ, নারী সৈন্যরা গাজার একটা সেকশনের সবার চলাচল ক্যামেরা দিয়ে মনিটর করে। তারা বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছিলো যা অবিলম্বে তারা সিনিয়র অফিসারদেরকে জানায় কিন্তু তারা ব্যাপারটাকে গ্রাহ্য করেনি! প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে নারী বলেই কি তাদের পর্যবেক্ষণকে পাত্তা দেয়া হয় নাই? মানে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য এবং উপাত্ত ইসরাইলের সংগ্রহে ছিলো, যেটার ঘাটতি ছিল সেটা হচ্ছে এগুলোকে পর্যালোচনা করে হামাসের আক্রমণের ব্যাপারে আন্দাজ করা এবং সেই অনুযায়ী সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া। মূল যে বিষয়টা এখানে কাজ করেছে সেটা হচ্ছে ফিলিস্তিনের রেজিস্ট্যান্স ফোর্সকে এরা এতটাই অবহেলা করেছে যে এমন একটি চতুর্মুখী আক্রমণ ওদের কল্পনার বাইরে ছিল।
আচ্ছা আক্রমণ করলো সেটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু এই যে এত বেসামরিক জনগণ হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ হামাস চালিয়েছে বলে বলা হচ্ছে সেটার ঘটনা কী আসলে? যারা নিজেদেরকে মুজাহিদ হিসেবে দাবি করছে তাদের দ্বারা কি এ ধরনের কাজকর্ম শোভা পায়? এগুলো কি ইসলামসম্মত?
এটা বুঝতে হলে আমাদের ঘটনার আরো গভীরে যেতে হবে। ইসরাইলী মিডিয়াগুলো নিজেরাই প্রকাশ করছে যে ঘটনার দিন যখন সামরিক স্থাপনা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে, তখন সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবার জন্য ইসরাঈলী সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে ইরেজ ক্রসিং, এলাকায় নিজেদের সীমানায় আকাশ পথ থেকে আক্রমণ করার অনুরোধ করে। Apache Attack helicopter এর একাধিক পাইলট বিবৃতি দিয়েছে যে কোনো ইন্টেলিজেন্স সহায়তা ছাড়াই সে নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছিলো। একদম হেলিকপ্টারের সব গুলী খরচ করে, রিলোড করে আবার একই কাজের পুনরাবৃত্তি করছিলো। ওদের টার্গেট ছিলো ইসরাঈল থেকে যেসব গাড়ি গাজায় প্রবেশ করছিলো সেগুলো, যদিও ওদের পূর্ণ ধারণা ছিলো যে এই গাড়িগুলোতে হামাস যোদ্ধার পাশাপাশি বেসামরিক ইসরাঈলী নাগরিক থাকতে পারে যাদেরকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! ওরা নিজেরাই বলছে যে ওরা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করেনি নিজেদের সীমানায় ওরা কখনো এমন বোমা/ গুলি বর্ষণ করবে!
সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে কিব্বুৎজ বেরীতে সংঘঠিত একটা ঘটনা। সেখানে একটা বাড়িতে প্যালেস্টিনিয়ান যোদ্ধারা বেশ কিছু ইসরাইলী নাগরিককে জিম্মি করে। ওদের উদ্দেশ্য ছিলো ওদেরকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যাওয়া, ইয়াসমিন পোরাত নামে বেঁচে যাওয়া একজন নারী ইসরাইলী মিডিয়ায় দেয়া তার সাক্ষ্যাৎকারে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। তিনি বলেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা তাদের সাথে মানবিক ব্যবহার করেছে এবং নিরাপদে গাজায় ফেরত যাওয়ার চ্যানেল হিসেবে ওদেরকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলো। সাহায্য চাওয়ার বহু ঘণ্টা পর ইসরাইলী পুলিশ এবং সেনাবাহিনী যখন ওই বাড়িতে পৌঁছায় তখন সমঝোতায় পৌঁছানোর বদলে ওরা ইসরাইলী নাগরিক সহ ওখানে উপস্থিত সব ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদেরকে হত্যা করে, বাড়িটা ধ্বংস করে দেয় কামান ও ট্যাংকের গোলার আঘাত দিয়ে।
কিব্বুৎজ বেরীর অদূরেই একটা খোলা মাঠে সঙ্ঘঠিত হচ্ছিলো নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। বলেছিলাম না এটা ইহুদীদের উৎসবের মৌসুম? সেই প্রাঙ্গনে প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই অনুষ্ঠান থেকে বেঁচে যাওয়া এক নাগরিক, Danielle Rachiel নাম, সাক্ষ্য দিয়েছে যে কিভাবে ইসরাইলী মিলিটারি নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল, হাত উঠিয়ে হিব্রুতে কথা বলার পর গুলিবর্ষণ থামে এবং সে বেঁচে যায়। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে গেছে যা অন্য বহু বেসামরিক নাগরিকের ক্ষেত্রে ঘটে নাই। Adi Ohana নামের একজনকে ইসরাইলী পুলিশ ফিলিস্তিনি গরিলা ভেবে হত্যা করে।
Thegrayzone.com শীর্ষক পত্রিকায় Max Blumenthal নাম্মী আমেরিকান সাংবাদিক যে বিশ্লেষণ ধর্মী প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন তাতে উনি আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ইসরাঈলের নগরগুলোতে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া, পোড়া লাশ সাথে একদম মাটির সাথে মিশে যাওয়া বাড়িঘরের যেই ছবি উপস্থাপন করা হচ্ছে হামাসের নৃশংসতার প্রমাণ হিসেবে সেগুলো দেখতে হুবহু গাজার মাটির সাথে মিশে যাওয়া বাড়ি ঘরের মত যেটা থেকে স্পষ্ট যে একই ধরণের অস্ত্র, ট্যাংক, যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করে এক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসরাঈলের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত Gilad Erdan হামাসের বর্বতার প্রমাণ হিসেবে যেসব ছবি প্রকাশ করেন সেগুলো ভালোভাবে দেখলে বোঝা যায় ওগুলো আসলে ইসরাঈলী মিসাইলের আঘাতে নিহত হামাস যোদ্ধা ও ইসরাঈলী নাগরিকের। ফলে গুগল ড্রাইভে আপলোডের মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে সে এগুলো সরিয়ে ফেলে।
আগের পর্বে বলেছি যে ইসরাঈলের নজরদারী ছাড়া মাছিও গাজায় ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে এমন ভারী অস্ত্র শস্ত্র, ট্যাংক, গোলা এইসব গাজায় কিভাবে ঢুকবে? ফিলিস্তিনের রেসিসট্যান্স যোদ্ধারা ভূগর্ভস্থ টানেল দিয়ে বড়জোর মেশিনগান, গ্রেনেড ইত্যাদি পাচার করতে পারে। আর রকেট ছোঁড়ার সক্ষমতা বা আরো অনেক কিছু তাদের স্বনির্মিত অস্ত্র যেগুলো ইসরাঈল তাদের উপর বোম্বিং বা গুলি বর্ষনের সময় পাওয়া অস্ত্র বা অন্যান্য বস্তু কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বানানো। সামান্য রিসোর্স দিয়ে বড় কিছু বানিয়ে উদ্ভাবনী ক্ষমতার এক অসামান্য নিদর্শন গাজাবাসী সবসময় দেখিয়েছে/দেখাচ্ছে এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। যারা ইসরাঈলের দেখানো ছবি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে ভাবছিলেন হামাসের এটা Inside Job, তারা আশা করি এখন প্রকৃত ঘটনাটা বুঝতে পেরেছেন।
আচ্ছা ফিলিস্তিন যোদ্ধারা কি ফেরেশতা? বেসামরিক জনগণের কাউকেই কি ওরা হত্যা করে নাই? অবশ্যই না, তবে এখানে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে- গাজার সীমান্তে ইসরাঈলী নগরীগুলোতে যারা বাস করে তারা মূলত অবৈধ দখলদার। তাই হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান একটা সাক্ষ্যাৎকারে বলছিলেন যে তারা বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে নাই হত্যা করেছে অস্ত্রধারী সেটলারদেরকে। তবে এই কথাকে আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে পারছি না কারণ নোভা মিউজিক উৎসবে যারা এসেছিলো তারা ইসরাঈলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওখানে সমবেত হয়েছিলো আর হামাসের যোদ্ধারা ওখানে প্রথমে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে সেটার ভিডিও প্রমাণ আছে। তাই আমরা কখনোই বলছি না যে ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের হাতে কোনো বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় নি, তবে অবশ্যই ওদের প্রাথমিক টার্গেট ছিলো সামরিক স্থাপনা এবং বেসামরিক হতাহতের ঘটনা যা ঘটেছে তা খুবই কম সংখ্যায় হত যদি না ইসরাঈল দেদারসে নিজেদের নাগরিকদের হত্যা না করতো।
আচ্ছা আমরা কোন প্রেক্ষিতে অপারেশন আল আকসা ফ্লাডের ইতিবৃত্ত বলা শুরু করেছিলাম মনে আছে? সূরা হাশরের কোন আয়াত আমাকে গভীরভাবে আন্দোলিত করেছিল?
. . . . . . . .
আল জাজিরার প্রতিবেদনের লিংকঃ https://www.aljazeera.com/features/2023/12/9/did-israels-overreliance-on-tech-cause-october-7-intelligence-failure
ইরেজ ক্রসিং হল একমাত্র ক্রসিং যেখান দিয়ে ইসরাঈল থেকে গাজায় মানুষ ও পণ্যবাহী ট্রাক ঢোকে।
Apache Attack helicopter হল Boeing AH-64 Apache যেটা ভারী অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা সজ্জিত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান যেটা স্থলসৈন্যদের সাহায্য করার জন্য খুব নিচ থেকে ব্যবহার করা হয়।
আজকের পর্বের মূল তথ্যগুলো আমি নিয়েছি এই আর্টিকেল থেকে যেখানে সুস্পষ্ট রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে রেফারেন্সগুলোর প্রায় সবই হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত ইসরাঈলী পত্রিকার।
সাক্ষ্যাৎকার ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে ইলেক্ট্রনিক ইন্তিফাদা
https://electronicintifada.net/content/israeli-forces-shot-their-own-civilians-kibbutz-survivor-says/38861
Max Blumenthal র একটা ইন্টারভিউ দেখতে পারেন এই লিংকে –
হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদানের ইন্টারভিউ দেখতে পারেন এখানে –
পর্ব – ৯
সূরা হাশর ও অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড
আলোচনার এই পর্যায়ে এসে আমরা আবার স্মরণ করবো কুরআনের সেই দুটো আয়াত যেগুলোর প্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম যে মনে হচ্ছিলো আয়াত দুটো যেন অক্টোবর ৭ এর ঘটনাকেই বর্ণনা করছে। প্রথমে দেখি সূরা হাশরের ২য় আয়াতটা
“কিতাবধারীদের অন্তর্ভুক্ত কাফিরদেরকে আক্রমণের প্রথম ধাপেই তিনি তাদের বাড়ী থেকে বের করে দিলেন। তোমরা ধারণাও করোনি যে, তারা বের হবে। আর তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ (’র কবল) থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে এমন দিক থেকে পাকড়াও করলেন যা তারা ভাবতেও পারেনি। তিনি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করলেন। তারা তাদের নিজেদের হাত দিয়েই নিজেদের ঘরবাড়ী ধ্বংস করল, আর মুমিনদের হাতেও (ধ্বংস করালো)। অতএব হে দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।” (৫৯:২)
উপরের আয়াতটা আবার পড়ি আর নিচের ভিডিওটা দেখি যেখানে
হাজার হাজার ই/স/রা/ঈ/লি নাগরিক অক্টোবর ৭ এর ঘটনার পর বেন গুরিওন এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে ই*স*রা*ঈল ছেড়ে পালানোর জন্য। অবৈধ দখলদাররা যেখানে প্যা*লে*স্টা*ইনের সীমানার মধ্যে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে নতুন করে জায়গা দখল করেই যাচ্ছে সেখানে ফি*লি*স্তি*নি যো&দ্ধাদের আ*ক্রমণের প্রথম ধাপেই ওরা স্বেচ্ছায় দলে দলে ই*স*রা*ঈল ছেড়ে পালাচ্ছে এটা কি অবিশ্বাস্য ঘটনা না?
সেইসাথে নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর ধ্বংস করেছে যেমনটা গত পর্বে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
গত পর্বের রেফারেন্সগুলো ঘাঁটলে দেখবেন ই*স*রা*ইলী যু%দ্ধবিমান চালকরা নিজেরাই বলছে যে তারা কখনো স্বপ্নেও চিন্তা করে নাই যে নিজেদের সীমানায়, নিজেদের লোক মারা পড়তে পারে জেনেও এভাবে বো&মা আর গু%লি বর্ষণ করতে হবে। এটার কারণ কী হতে পারে বলে মনে হয়?
আমাদের রাব এক কথায় জানিয়ে দিচ্ছেন- আল্লাহ ওদের অন্তরে ত্রাস সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন! কী অভূতপূর্ব একটা কথা, তাই না?
সূরা হাশরের আরেকটা আয়াতের কথা উল্লেখ করেছিলাম আগের একটা পর্বে
“তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সমর্থ নয়, সুরক্ষিত জনপদে বা দেয়ালের আড়ালে অবস্থান ছাড়া। তাদের নিজেদের মধ্যেই আছে ভীষণ শত্রুতা। তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করো কিন্তু তাদের অন্তরগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এর কারণ এই যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।” (৫৯:১৪)
আজকে কথা বলবো শুধু আয়াতের এই প্রথম অংশ নিয়ে। সরাসরি যু%দ্ধ করতে সমর্থ নয় বলেই ই*স*রা*ইলী সে&নাবা&হিনী আকাশ পথে মি&সাইল বর্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো নিজেদেরই সীমানায়। আবার নিজেদের বাড়িঘর ট্যাং&কের গো%লার আঘাতে ধ্বংস করে দেয়াই ওদের কাছে সহজ, সেটাই ওরা করছে। গা&জাতেও দেখবো যে আকাশ পথে হা%মলার ব্যাপারে ওদের দারুণ আগ্রহ। স্থল অভিযানে নামার পর ই*স*রা*ইলী সৈন্যরা যে প্যা*লে*স্টা*ইনি রেসিস্ট্যান্স ফোর্সের কাছে ভালো মত পর্যুদস্ত হচ্ছে এটা এখন আর কোনো নতুন ঘটনা নয়। ই*স*রা*ঈ*লী সৈন্যদের ব্যাপারে একদম প্রতিষ্ঠিত একটা বক্তব্য হচ্ছে ওরা কখনো ট্যাং%ক থেকে নিচে নামে না।
অপরদিকে ফি*লি*স্তি*নি যো&দ্ধারা ট্যাং%কের একদম কাছাকাছি গিয়ে এক্স%প্লো%সিভ রেখে আসে! এই ধরণের আ%ক্র%মণকে বলে জিরো ডিস্টান্স অ্যা&টাক। ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিও দেখলাম যেখানে যে ট্যাং&কটা ধ্বং%স করা হয়েছে সেটা মার%কাভা ফোর্থ জেন, এর চেয়ে উন্নত প্রযুক্তির ট্যাং&ক প্রায় নেই। এতে অ্যান্টি মি*সা*ইল ইভেন অ্যান্টি ড্রো%ন টেকনোলজি আছে। মোবিলাইজেশনে জুড়ি নেই, ৬৪কিমি রেঞ্জে ছুটতে পারে। এইসব নানা চটকদার বৈশিষ্ট্যের কথা বলে ই*স*রা*ঈল এসব মার%ণাস্ত্র বহির্বিশ্বের কাছে বিক্রির বিজ্ঞাপন চালায়। সেই ট্যাং%কে জিরো ডিস্টান্স অ্যা%টাক কিভাবে সম্ভব? সৈন্যের তো ২০০ গজের মধ্যেই যাওয়ার কথা ছিল না, ইন&ফ্রা&রেড আছে।
আসলে ব্যাপার যেটা হয়েছে, এত উন্নত প্রযুক্তি কেবল অ&স্ত্রের জন্য। মার&কাভা মানুষ গেলে তা চিহ্নিত করতে পারে না, আসলে এর এত কাছে যে শত্রু যেতে পারে, এটা মাথাতেই রাখা হয় নি। কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভবপর হল? কিভাবে ওদের এত বুকের পাটা হয়?
উত্তরটা আমি পেয়েছি ইলেক্ট্রনিক ই*ন্তি*ফা*দার একটা ভিডিও থেকে যেখানে সাংবাদিক Jon Elmer ২য় ই*ন্তি*ফা*দার সময় প্যা*লে*স্টি*নিয়ানদের সাথে রিফিউজি ক্যাম্পে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছেন যে ছোট ছোট বাচ্চারা ট্যাং&কের উপরে উঠে ই*স*রা*ইলী সৈন্যদের হাত থেকে মেশিন গা&ন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করতো।
সেটা দেখে স্তম্ভিত Jon Elmer বাচ্চাগুলোর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে তোমরা এগুলা কী করছে? বাচ্চাগুলো ততোধিক বিস্ময়ে উনাকে উত্তর দিয়েছিলো যে তুমি দেখতে পাচ্ছো না কী করছি? ট্যাং&কের উপর উঠে মেশিনগা&ন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছি! Jon Elmer মন্তব্য করছিলেন যে পুরো পৃথিবী ফি*লি*স্তি*নি যোদ্ধাদের ট্যাং&কের এত কাছে যাওয়া দেখে বিস্মিত হলেও ই*স*রা*ঈলিদের হওয়া উচিৎ না কারণ ওরাই সবচেয়ে ভালো জানে যে ট্যাং&কের ব্যাপারে খুঁটিনাটি জ্ঞান ফি*লি*স্তি*নি শিশুদেরই নখদপর্ণে। ট্যাং&কের যত কাছে যাওয়া হবে তত নিরাপদ এটা ওরা ওদের শৈশব থেকেই জানে।
২য় ই*ন্তি*ফা*দা দেখে দেখে যাদের শৈশব ও কৈশোর বড় হয়েছে অবশ্যই তারাই আজকের সম্মুখ সারির যো&দ্ধা এবং তারা খুব ভালো করেই জানে ই*স*রা*ইলী সৈন্যদের দৌড় কতটুকু। পুরো পৃথিবী আজকে জানলো ওদের নপুংসতা আর বাগাড়ম্বর, যেটার কথা আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন প্রায় ১৪০০ বছর আগে। আর সেজন্যই ই*হু*দী গর্ব মার&কাভা এবং অন্যান্য মার&নাস্ত্র যেগুলোর কার্যকারিতা ওরা গা%জাবাসীর উপর নিয়মিত বিরতি দিয়ে পরীক্ষা করতো, সেগুলোর মার্কেট এখন ধ্বসে পড়েছে, অনেক দেশ এগুলো কেনার চুক্তি বাতিল করেছে!
একই ভিডিওতে Jon Elmer একদম ভিডিওর অংশবিশেষ পিন পয়েন্ট করে দেখাচ্ছেন যে কিভাবে ফি*লি*স্তি*নি যো%দ্ধা হাতে করে এক্স&প্লো&সিভ নিয়ে যাচ্ছে এবং একদম ট্যাং%কের তলায় সেটা রেখে সাফল্যের সাথে ফেরতও আসছে! যেহেতু ই*স*রা*ইলি সৈন্য কখনো ট্যাং&ক থেকে নামে না, তাই একদম শেষ মুহুর্তের আগ পর্যন্ত সে টেরই পায় নি যে তার পিছনে হা/মা/স সৈন্য মার&নাস্ত্র নিয়ে এসেছে!!
এ তো গেল মনস্তাত্ত্বিক কারণ, সাম%রিক কৌশল হিসেবে যদি চিন্তা করি তাহলে ই*স*রা*ঈল কেন ৭ই অক্টোবর এভাবে নিজেদের নাগরিক হত্যা করলো?
সেজন্য আমাদেরকে জানতে হবে Hannibal Directive সম্পর্কে। এটা একটা ই*স*রা*ইলি সাম%রিক পলিসি যেটার থিম হচ্ছে যে কোনো মূল্যে ই*স*রা*ইলী সৈন্যদের জি&ম্মি হিসেবে শত্রুপক্ষের হাতে আটক হওয়া ঠেকাতে হবে, সেটার জন্য যদি নির্বিচারে গু%লি করতে হয় এবং সৈন্যকে হ&ত্যাও করা লাগে, সেটাও ঠিক আছে।
কিন্তু কেন এমন পলিসি?
কারণ ই*স*রা*ইলী সৈন্য প্যা*লে*স্টি*নি*য়ানদের হাতে বন্দী হবার ফলাফল ই*স*রা*ঈলের জন্য কখনোই সুখকর ছিলো না। ২০০৬ সালে Gilad Shalit নামের একজন ই*স*রা*ইলী সৈন্য হা/মা/সের হাতে আটক হয়। পাঁচ বছর আটক থাকার পর ব&ন্দী বিনিময় চুক্তির আলোকে সহস্রাধিক প্যা*লে*স্টি*নিয়ান ব&ন্দীর বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয় হা/মা/স। একই ভাবে ১৯৯৭ সালে জর্ডানের মাটিতে হা/মা/সের রাজ&নৈতিক ব্যুরোর সাবেক প্রধান খালিদ মিশালকে যখন হ&ত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায় মো%সা%দ, তখনও ওদের দুইজন চর খালিদের ব্যক্তিগত দেহর&ক্ষীর হাতে ধরা পড়ে, তাদের মুক্তির বিনিময়ে অনেক প্যা*লে*স্টি*নিয়ান ব&ন্দীকে মুক্তি দেয়া হয় যাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন আহমেদ ইয়াসিন, হা/মা/সের সাবেক প্রধান। আহমেদ ইয়াসিন মুক্ত হয়েই হা/মা/সকে সুসংগঠিত করেন, ফলে ই*স*রা*ঈল এটাকে একটা কৌশলগত পরাজয় হিসেবে আখ্যায়িত করে। এভাবে ফি*লি*স্তি*নি ব%ন্দীদের মুক্তির ব্যাপারটা ই*স*রা*ইলের কাছে জাতিগতভাবে লজ্জাজনক বিষয় হয়ে দাড়ায়। তখন থেকেই মৌখিকভাবে ই*স*রা*ইলী কমাণ্ডারদেরকে এই নির্দেশনা দেয়া থাকে যে যে কোনো মূল্যে ই*স*রা*ইলী সৈন্যদের প্যা*লে*স্টি*নি*য়ানদের হাতে আটক হওয়া ঠেকাতে হবে। ২০১৪ সালে হা/মা/স Lieutenant Hadar Goldin কে আটক করে। ফলশ্রুতিতে ই*স*রা*ঈল ৫০ দিন ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গা&জার উপর বো&মা বর্ষণ করে, ওই সৈন্য মারা যায় যার লা&শও সনাক্ত করা সম্ভব হয় নি।
৭ই অক্টোবর নিরবচ্ছিন্নভাবে নিজেদের সীমানায় আক্রমণ করার পিছনে অবশ্যই এই সাম&রিক নির্দেশ কাজ করেছে। ওরা গু&লি করে হ%ত্যা করে হলেও ই*স*রা*ইলী নাগরিক নিয়ে গা&জায় ফেরত যাওয়া আটকাতে চাইছিলো। পরবর্তীতেও আমরা দেখলাম যে জি&ম্মি নাগরিকদের জীবন নিয়ে ই*স*রা*ঈলের খুব বেশী মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না, ওরা গা&জাতে কার্পেট ব&ম্বিং করতেই বেশী উৎসাহী কারণ হা/মা/সের হাতে জি&ম্মি থাকা মানেই আলোচনার টেবিলে ওদের হাতে শক্তিশালী অ&স্ত্র থাকা যেটা নিঃসন্দেহে নে&তানিয়া&হু চায় না।
নিজেদের সীমানায় ব্যাপকহারে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পেছনে মূল কারণ তো অবশ্যই এটাই ছিলো ওরা সাম&রিক স্থাপনা ও ই*স*রা*ইলী নগরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে এলোপাতাড়ি কাজ করেছে, তবে আরো একাধিক কৌশলগত কারণ ছিল।
প্রথমত: ওরা হা/মা/সকে ভয়ংকর স&ন্ত্রা&সী ও অমানবিক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছিলো। শুধু ই*স*রা*ইলী সৈন্য মারা গেলে ওরা ব্যাপারটাকে পাশবিক হিসেবে তুলে ধরতে পারতো না।
দ্বিতীয়ত: ওরা ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ বেশী দেখাতে চাচ্ছিলো যাতে গা&জাকে একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার অজুহাত পাওয়া যায়। একে বলা যায় Converting threat into opportunity.
তৃতীয়ত: ই*স*রা*ঈলী সৈন্যরা যে এত দেরীতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বা নিজেরাই নিজেদের উপর গু&লি চালিয়েছে সেটার কোনো চাক্ষুষ প্রমাণ ওরা রাখতে চাচ্ছিলো না। একজন দুজন যারা বেঁচে গেছে তারাই তো সর্বনাশটা (ওদের দৃষ্টিকোণ থেকে) করেছে যা দেখা যাচ্ছে। আরও বেঁচে থাকলে তো সত্য প্রকাশ হতে এত দেরী হতো না! সর্বোপরি, ই*স*রা*ঈল জি&ম্মি হিসেবে নিয়ে যাওয়া যতটা সম্ভব ঠেকাতে চেয়েছে, যেটা এতক্ষণ বিস্তারিত বলা হলো।
তবে যেটা ওরা স্বপ্নেও চিন্তা করে নি সেটা হলো উপযুক্ত জবাব দিতে গিয়ে যে নৃশংসতা ওরা দেখিয়েছে সেটাই ওদের আদর্শিক পরাজয়ের ভিত্তি স্থাপন করেছে! ওদের প্রতিটি বক্তব্য, প্রোপ্যাগান্ডা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে খণ্ডন করা হয়, পুরো পৃথিবী এখন জানেন যে ই*স*রা*ঈল কী পরিমাণ মিথ্যা কথা বলে!
এ তো গেল ইসরাঈলের দিক থেকে আচরণের ব্যাখ্যা। হা/মা/স কেন এহেন দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিলো? ওরা কি জানতো না যে ই*স*রা*ঈল এভাবে ভয়ংকরভাবে প্রতিশোধ নিবে, গা%জাবাসীর জীবনে নেমে আসতে যাচ্ছে দুঃস্বপ্নময় দিন? ওদের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ ফি*লি*স্তি*নি জনগণের যে জীবন যাচ্ছে সেটার দায়ভার কি হা/মা/সের না?
উত্তর খুঁজবো সামনের পর্বে ইনশাআল্লাহ্।
জিরো ডিস্টান্স অ্যাটাক এর ভিডিও
ইলেক্ট্রনিক ইন্তিফাদার বিশ্লেষণমূলক ভিডিও
https://www.youtube.com/watch?v=RsagMYwVOZY
Hannibal Directive সম্পর্কে জানা যাবে আল জাজিরার এই প্রতিবেদন থেকে https://www.aljazeera.com/features/2023/11/3/whats-the-hannibal-directive-a-former-israeli-soldier-tells-all
পর্ব – ১০
নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনের দায়ভার কার?
গত পর্বে আমরা একটা প্রশ্ন উল্লেখ করেছিলাম যেটা হয়তো আমাদের অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে-৭ই অক্টোবরে হামলার ফলে এই যে সাধারণ ফি লি স্তি নি জনগণের জীবন যাচ্ছে সেটার দায়ভার কি হামাসের নয়?
আজকের পর্বে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্। তার আগে একটু দেখি এই প্রশ্নের উৎপত্তি কোথা থেকে।
খুব আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, এই প্রশ্ন এসেছে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্যাম্প থেকে।
এক গ্রুপ হচ্ছে- আমাদের স্থানীয় কিছু সম্মানিত আলিম, যারা প্রকাশ্যে হামাসকে দোষারোপ করেছেন সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণের এহেন দুর্ভোগের জন্য (যারা সেই ভিডিও দেখেন নি, আলহামদুলিল্লাহ, আমি সেটার প্রচার ও প্রসার চাই না দেখে রেফারেন্সে লিংক দিচ্ছি না)।
আরেক গ্রুপ হচ্ছে- পশ্চিমা মিডিয়া, যারা প্রথম দিকে সকল ইন্টারভিউ শুরু করতো এই প্রশ্ন দিয়ে- Do you condemn Hamas?
প্রশ্নটার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কী?
৭ই অক্টোবরের হামলা এবং এটার কারণে যা যা হচ্ছে সেটার জন্য কি তুমি হামাসের সমালোচনা করবে/হামাসকে দোষী মনে করো? Piers Morgan যেমন ওর শো তে একাধিকবার বলেছে যে হামাস তো জানতো যে ইসরাঈল এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তারপরও কেন আক্রমণ করার দুঃসাহস দেখালো? আবার ইসরাইলী সরকারের মুখপাত্রদেরকে যতবার বেসামরিক নাগরিক হত্যার কথা বলা হয়েছে, ততোবার তারা বলেছে হামাস নিরীহ মানুষদেরকে ‘Human Sheild’ হিসেবে ব্যবহার করছে। মানে হামাসের দোষ যে তারা সাধারণ জনগণের সাথে মিলেমিশে অবস্থান করে, তাই হামাসকে ধ্বংস করতে হলে বেসামরিক জনগণকে হত্যা করা ছাড়া উপায় নেই!
এটা একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার না যে ইসলামিক স্কলার এবং পশ্চিমা মিডিয়া দুটোই হামাসকে দোষারোপ করছে?
কেন এটা হচ্ছে?
পশ্চিমা মিডিয়া কেন করছে সেটা একদম স্পষ্ট, ওরা ইসরাঈলকে ভিক্টিম হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে। ওরা পুরো পৃথিবীর সামনে ঘটনাটা এমনভাবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে যে ইসরাঈল ধোয়া তুলসী পাতা, হামাসই আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করেছে! ঠিক যেভাবে ফিরাউন মুসা আলাইহিস সালামের সাথে তার প্রাথমিক কথোপকথনের সময় মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো!
ফিরাউন, যার হাত কী না শত শত বনী ইসরাইলী শিশুদের রক্তে রঞ্জিত, সে মুসা আলাইহিস সালামকে মনে করিয়ে দিচ্ছে অনিচ্ছাকৃতভাবে করা একটি হত্যার কথা, তাও পরোক্ষভাবে, ইনিয়ে বিনিয়ে –
“ফেরাউন বলল, আমরা কি তোমাকে শিশু অবস্থায় আমাদের মধ্যে লালন-পালন করিনি? এবং তুমি আমাদের মধ্যে জীবনের বহু বছর কাটিয়েছ। তুমি সেই-তোমরা অপরাধ যা করবার করেছ। তুমি হলে কৃতঘ্ন।” (২৬:১৭-১৯)
এখানে এটা স্পষ্ট যে, ফিরাউন মুসা আলাইহিস সালামের সাথে স্রেফ একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলছিল যেটার উদ্দেশ্য ছিলো নবী মুসার ফোকাস নষ্ট করে দেয়া। প্রথমে সে মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি করা উপকারের, তারপর উনার অপরাধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলো।
কী অদ্ভুত মিল তাই না?
মুসা আলাইহিস সালাম কিভাবে উত্তর দিয়েছিলেন?
“মূসা বলল, আমি সে অপরাধ তখন করেছি, যখন আমি ভ্রান্ত ছিলাম। অতঃপর আমি ভীত হয়ে তোমাদের কাছ থেকে পলায়ন করলাম। এরপর আমার পালনকর্তা আমাকে প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং আমাকে পয়গম্বর করেছেন। আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা বলছ, তা এই যে, তুমি বনী-ইসরাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছ।” (২৬:২০-২২)
মুসা আলাইহিস সালামের উত্তরের ব্রিলিয়ান্স বুঝতে হলে আমাদের আগের আয়াতগুলো পড়তে হবে এবং বুঝতে হবে যে আল্লাহ উনাকে কোন বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন-
“অতএব তোমরা ফেরাউনের কাছে যাও এবং বল, আমরা বিশ্বজগতের পালনকর্তার রসূল। যাতে তুমি বনী-ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও।” (২৬:১৬-১৭)
এবার দেখি ফিরাউনের উস্কানীমূলক কথার বিপরীতে কিভাবে মুসা আলাইহিস সালাম ফোকাস ধরে রেখেছিলেন। অনিচ্ছাকৃতভাবে করা হত্যার ব্যাপারে উনি স্বীকার করে নিলেন যে, এটা উনি ভুল করেছিলেন; সেইসাথে সূক্ষ্মভাবে আল্লাহকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসলেন এভাবে যে এটা হয়েছিলো আল্লাহ উনাকে হিদায়াত দেয়ার আগে! পরোক্ষভাবে এটাও বলে নিলেন যে, এখন আর ফিরাউনকে ভয় পান না। আগে ভয় পেতেন বলেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। আর ফিরাউন যখন রাজপ্রাসাদে বেড়ে ওঠার কথা স্মরণ করিয়ে দিলো, তখন মুসা আলাইহিস সালাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করলেন এটার নেপথ্যের কারণ- ফিরাউন বনী ইসরাঈলের শিশু সন্তানের হত্যা করছিলো বলেই তো উনার মা শিশু মুসাকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন ফলশ্রুতিতে উনার আশ্রয় হয় ফিরাউনের প্রাসাদে, মানে আবারো উনি মূল পয়েন্টে ফোকাসড থাকলেন, বনী ইসরাঈলের টপিক উল্লেখ করার মাধ্যমে!
কী দারুণ না?
আমাদের বর্তমান আলোচনার সাথে এটা কিভাবে প্রাসঙ্গিক?
আমি যতগুলো প্যালেস্টিনিয়ান অতিথিকে Do you condemn Hamas প্রশ্নের সম্মুখীন হতে দেখেছি, তাদের প্রায় প্রত্যেকে দারুণ বুদ্ধিমত্তার সাথে এটার উত্তর দিয়েছেন। তারা প্রশ্নকর্তাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন কোন প্রেক্ষিতে ৭ই অক্টোবরের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল ঠিক যেভাবে মুসা আলাইহিস সালাম ফিরাউনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে কেন উনি রাজপ্রাসাদে বড় হয়েছেন। এই মূহুর্তে মনে পড়ছে Piers Morgan এর শো তে Bassem Yousuf এর প্রথম ইন্টারভিউটার কথা যেখানে বাসেম যুগান্তকারী প্রশ্নটা করেছিলেনঃ Where was the world on October 6th? মানে পৃথিবী কি জানে যে গাজাবাসী কিসের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল অক্টোবর ৭ এর আগে?
ইসলামিক স্কলাররা যারা হা/মা/সকে দোষারোপ করছেন, তাদেরকেও সম্ভবত একই প্রশ্নটা করা উচিৎ। তারা কি জানেন যে অক্টোবর ৭ এর আগে পৃথিবীটা কোন দিকে যাচ্ছিলো? গাজা ও পশ্চিম তীরে আমাদের ভাইবোনরা কিসের মধ্যে একেকটা দিন অতিবাহিত করেন? যদি জানতেন তাহলে বুঝতেন যে গাজাবাসীর সামনে খোলা অপশন দুইটা- কিছু না করে মারা যাওয়া অথবা নিজেদের জান মাল দিয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া। একজন বুঝদার মুসলিম কোনটা বেছে নিবে/ নেয়া উচিৎ বলে আমাদের মনে হয়?
সবচেয়ে বড় কথা, গাজাবাসী স্বয়ং ৭ই অক্টোবরের আক্রমণ নিয়ে কী ভাবে সেটা নিয়ে আমরা জল্পনা কল্পনা না করে ব্যাপারটা ওদের মুখে শোনাই কি ভালো না?
এখন প্যালেস্টিনিয়ান জনগণের প্রতিটা ব্যক্তিই একেকজন সাংবাদিক। এই যে এত শত শত ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে গত তিন মাসে যেখানে গাজাবাসী তাদের অবস্থা তুলে ধরেছে, কেউ কি একটা ভিডিও দেখেছেন যেখানে ওরা ফিলিস্তিনের রেসিস্ট্যান্স ফোর্সকে দোষারোপ করেছে? বরং Palestinian Center for Policy and Survey Research (PSR) ২২ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর ০২, ২০২৩ এর মধ্যে চালানো একটা জরিপে দেখা গেছে উত্তরদাতাদের মধ্যে পশ্চিম তীরের ৮২% এবং গাজাবাসীর ৫৭% মনে করেন এটা একটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল এবং এই ঘটনার পর পশ্চিম তীরে হামাসের জনপ্রিয়তা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে! এখানে উল্লেখ্য যে পশ্চিম তীরে কিন্তু হামাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এখানে আমাদের একটা বিষয় খুব খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে-সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া ইসরাঈলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই এই দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপারে প্যালেস্টাইনের জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। পাঠকরা যদি মনোযোগ দিয়ে বর্তমান সিরিজটা পড়ে থাকেন তাহলে দেখবেন আমি অপারেশন আল আক্বসা ফ্লাডের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করার সময় ‘ফিলিস্তিনি যোদ্ধা, প্যালেস্টিনিয়ান রেজিস্ট্যান্স ফোর্স এইসব শব্দই মূলত ব্যবহার করেছি, হামাস যোদ্ধা টার্মটা ইচ্ছা করেই কালেভদ্রে ব্যবহার করেছি কারণ যারা এ সংক্রান্ত খোঁজখবর নিয়মিত রাখেন, তারা জানবেন যে ২০০৭ সালে গাজার দখল নেওয়ার পর থেকে, হামাস ধীরে ধীরে গাজায় একটা ঐক্যবদ্ধ রেজিস্ট্যান্স ফোর্স গড়ে তুলতে থাকে। লোকাল মিলিশিয়ারা নানা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত ছিল। হামাস এদের মোটামুটি একত্র করে একটা ঐক্যবদ্ধ শক্তির আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকে। ২০০৬ সালেই প্রতিষ্ঠিত হয় Palestinian Joint Operation Room. এইটা ছিল একটা সশস্ত্র ঐক্য, যার আন্ডারে হামাস, পিআইজে, পিএফএলপি, ডিএফএলপিসহ আরো অনেক লোকাল মিলিশিয়া গ্রুপ ইজরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়।
২০১৮ সালে এই সশস্ত্র জোটটাই আবার ক্রিয়াশীল হয়। বর্তমানে এর আন্ডারে সদস্য সংখ্যা ১২। এগুলো হলো: ইজ্জুদ্দিন আল কাসসাম ব্রিগেড (হামাস), আল কুদস ব্রিগেড (PIJ), আবু আলি মোস্তফা ব্রিগেড (পিএফএলপি), ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড (ডিএফএলপি), নাসের সালাহউদ্দিন ব্রিগেড (পিআরসি), মুজাহেদিন ব্রিগেড (PMM), আল আকসা মার্টার্স ব্রিগেড (এক্স-ফাতাহ), জিহাদ জিবরিল ব্রিগেড (পিএফএলপি-জিসি), আল আনসার ব্রিগেড (প্যালেস্টাইন ফ্রিডম মুভমেন্ট), আয়মান জাওদা স্কোয়াড (এক্স ফাতাহ), আব্দুল কাদের হুসাইনি ব্রিগেড (এক্স ফাতাহ) ও আল আসেফা আর্মি (এক্স ফাতাহ)। অর্থ্যাৎ ইসলামিস্ট বা বাম দলগুলা ছাড়াও, গাজার কিছু লোকাল মিলিশিয়া গ্রুপও এর সদস্য, যাদের বেশিরভাগই এক্স-ফাতাহ মিলিশিয়া গ্রুপ; যারা দ্বিতীয় ইন্তেফাদার পর আর ফাতাহ বা পিএলওর সাথে থাকে নাই।
অপারেশন আল আকসা ফ্লাডও এদের যৌথ প্ল্যান ছিল, একদম শুরু থেকেই। ফলে এই যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে, এই সশস্ত্র ঐক্যের সবগুলা গ্রুপই, মাঠে আছে এবং রেজিস্ট্যান্স যুদ্ধে ভূমিকা রাখছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সবাই মিলে এভাবে দুঃসাহসিক অভিযান কেন চালালো?
[উল্লেখিত আয়াতগুলোতে ফিরাউনের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের কথোপকথন থেকে জীবন ঘনিষ্ঠ, অসাধারণ কিছু শিক্ষা পাই। যেমনঃ নতুন ইসলাম প্র্যাকটিস শুরু করার পর আমরা অনেকেই সেক্যুলার পরিবার থেকে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ, বাক্যবাণের স্বীকার হই। খুব কমন কথা হচ্ছে আমাদের অতীত জীবনের পাপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। মুসা আলাইহিস সালামকে অনুসরণ করে আমরাও স্বীকার করে নিতে পারি, বলতে পারি এসব করেছি হিদায়াত পাওয়ার আগে। এখন আলহামদুলিল্লাহ হিদায়াত পেয়েছি, দুআ করবেন যেন ভবিষ্যতে এহেন কাজ আর না করি। এভাবে ভুল স্বীকার করে নিয়ে দুআ চাইলে সাধারণত অপর পক্ষ আর খুঁচানোর কিছু খুঁজে পায় না।]
জরিপের বিস্তারিত জানা যাবে এখান থেকে https://pcpsr.org/en/node/961
Palestinian Joint Operation Room এর ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে https://en.m.wikipedia.org/wiki/Palestinian_Joint_Operations_Room থেকে
পর্ব – ১১
অপারেশন আল-আকসা ফ্লাডের নেপথ্যে (১)
আজকের পর্বে আমরা ৭ই অক্টোবরের হামলার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা চালাবো ইনশাআল্লাহ্। এক্ষেত্রেও জল্পনা- কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে আমরা দেখবো হামাস স্বয়ং এই আক্রমণের কারণ কী বলছে। এই পর্বটা যখন লিখছি তখনই হামাস মিডিয়া অফিস তাদের বক্তব্য Our Narrative… Operation Al-Aqsa Flood শিরোনামে পাবলিকলি প্রকাশ করায় আমার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে গেল আলহামদুলিল্লাহ। জানি না পাঠকরা এটা পড়েছেন নাকি, আমি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। তথ্য মোটামুটি সবই জানা ছিল আলহামদুলিল্লাহ, আমাকে বিস্ময়াভিভূত করেছে শব্দ চয়ন এবং লেখার সামগ্রিক বিন্যাস। সত্যি কথা বলতে কুরআন হাদীসের রেফারেন্স বা ইসলামের কোনো কথা না বলে পুরো সংগ্রামটাকে যে ওরা লিবারেশন মুভমেন্ট হিসেবে উপস্থাপন করেছে এটা খুবই স্মার্ট approach। এর মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধানী যে কেউ পুরোটা পড়তে উদ্বুদ্ধ হবে, এমনকি যার ইসলাম নিয়ে এলার্জি আছে তারও।
হামাস একটা সন্ত্রাসী সংগঠন, ISIS এর সাথে ওদের ক্রমাগত যে তুলনা পশ্চিমা মিডিয়ায় চলছে সেটার মুখে চপেটাঘাত করেছে এই এপ্রোচ। আবেগী না হয়ে এখানে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, পুরো পৃথিবীর কাছে ফিলিস্তিনিদের মুক্তিযোদ্ধা, যারা কলোনিয়ালিজম এর বিরুদ্ধে লড়ছে এভাবে উপস্থাপন করাটা খুবই জরুরী, তাহলে আমরা এমন মানুষদের পাশে পাবো যারা খুব প্রভাবশালী কিন্তু ধর্মীয় ব্যাপারে উৎসাহী না, যেমন খেলোয়াড়, হলিউডের অভিনেতা, অভিনেত্রী ইত্যাদি। জনমত গঠনে এদের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ইন ফ্যাক্ট, বিজয় যে সন্নিকটে এটার প্রমাণ আমার কাছে মনে হয়েছে ওদের এই পরিপক্ক আচরণ, যারা পৃথিবীর মানুষের হৃদস্পন্দন বুঝে সেই অনুযায়ী একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে অপারেশন আল আক্বসা ফ্লাড যে শুধু হামাস না, ফিলিস্তিনের গণ মানুষের হাহাকারের রেসপন্স, সেটাও উঠে এসেছে।
যাই হোক, প্রতিবেদনটাতে কী বলা হয়েছে ৭ই অক্টোবরের হামলার কারণ হিসেবে?
প্রায় একই বক্তব্য যেটা হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান TRT World এর সাথে ইন্টারভিউতে বলেছিলেনঃ আল আক্বসা ফ্লাডের নেপথ্যে একাধিক কারণ ছিল।
রাজনৈতিক কারণ ছিলো ইসরাঈলের আগ্রাসনের বিষয়টা পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরা, তাদেরকে বোঝানো যে প্যালেস্টিনিয়ানরা এখনও মরে যায় নি, তারা বেঁচে আছে।
সামরিক কারণ ছিল দুনিয়ার সামনে এটাও বোঝানো যে ইসরাইলী সৈন্যবাহিনী কতটা মেরুদণ্ডহীন যে শুধু নারী, শিশু আর বেসামরিক নাগরিক, স্থাপনা এগুলোকেই টার্গেট করতে পারে, রেসিস্ট্যান্স ফোর্সের সাথে যুদ্ধে পারে না।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা এই দুই উদ্দেশ্যেই সফল হয়েছে যেটার সাথে আমিও একমত। সুবহানাল্লাহ, যত দিন যাচ্ছে, ইসরাইলী আর্মিদের নপুংসকতার ব্যাপারটা এমনভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে যে ওদের এতদিন শক্তিশালী ভাবতাম। এই ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক ইন্তিফাদা ( Electronic Intifada) অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছে, রেসিস্ট্যান্স ফোর্সের প্রকাশিত ভিডিওগুলো এত সুন্দর করে বিশ্লেষণ করে যে মুগ্ধ হতে হয়, আগ্রহীরা ওদের ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে দেখতে পারেন। আর এবার এই যে রেসিস্ট্যান্স ফোর্স নিয়মিত ওদের আক্রমণের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে যাচ্ছে, এটাও পৃথিবীর কাছে ওদের বার্তা পৌঁছে দেয়ার একটা অভিনব উপায় মনে হয়েছে আমার কাছে। এসব ভিডিও দেখে আমি ওদের সামরিক কৌশল দেখে মুগ্ধ হবো কী, মুগ্ধ হচ্ছি ওদের ভিডিও নির্মাণ ও এডিটিং দক্ষতা দেখে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলা কারাগারে থেকে এইভাবে নিজেদের তৈরি করেছে আর আমরা কত আরাম আয়েশে থেকেও কত অদক্ষ এটা ভেবে খুবই লজ্জা লেগেছে।
আর এইভাবে প্রায় প্রতিদিন ভিডিও আপডেট দেয়ার ফলে আরো গুরুত্বপূর্ণ দুইটা লাভ হচ্ছে-
প্রথমত: হামাসকে মূলোৎপাটনের যে লক্ষ্য ইসরাঈল তাবৎ দুনিয়ার সামনে বলে বেড়াচ্ছে সেটা যে একটা অসম্ভব ব্যাপার সেটা একদম স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এত হাজার হাজার নিরপরাধ জনগণকে হত্যা করেও ইসরাঈল হামাসের টিকিটাও ছুঁতে পারে নি, ওদের ভূগর্ভস্থ টানেল সিস্টেম যে প্রতিনিয়ত খোঁড়া হচ্ছে, সেটারও ওরা কিছুই করতে পারে নাই এগুলো এখন মোটামুটি সবারই জানা।
দ্বিতীয়ত: IDF এখন গাঁজাখুরি কোনো বক্তব্য দিয়ে আর পার পাচ্ছে না, থলের বিড়াল বের হয়ে আসছে। আজকের পর্ব যখন লিখছি, তার দুইদিন আগেই ইসরাঈল একদিনে ওর ২৪ জন সৈন্যকে হারিয়েছে যেটাকে বলা হচ্ছে কঠিনতম দিন। সেটা যে ইসরাঈলের নিজেদের পোঁতা এক্সপ্লোসিভই হামাস বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, আক্রমণ করা ট্যাংকের কাছে উদ্ধারকারী দল যখন পৌঁছাতে পারছিলো না, হামাস ওদেরকে ঘিরে ফেলেছিলো তখন ইসরাঈল যে আকাশ পথে মিসাইল দিয়ে হামলা করে আবারো নিজেরাই নিজেদের ট্যাংক ধ্বংস করে দিয়েছে সেটাও এখন আর গোপন নেই।
অপারেশন আল আকসা ফ্লাডের ব্যাপারে হামাস তার প্রতিবেদনে দ্ব্যর্থহীণ ভাষায় জানিয়েছে যে শুধু মাত্র সামরিক স্থাপনায় হামলা করে ইসরাইলী সৈন্যদের বন্দী হিসেবে নিয়ে আসাই ওদের মূল লক্ষ্য ছিলো। এসব জিম্মীদের বিনিময়ে ওরা ইসরাঈলের কারাগারে বিনা কারণে বন্দীদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিলো। হামাসের দ্বারা বেসামরিক নাগরিক হত্যার কোনো ঘটনা যে একেবারেই ঘটে নাই সেটা বলা যাবে না, হামাস নিজেও সেটা স্বীকার করছে, তবে বলছে যা ঘটেছে সেটা অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনাঃ
Maybe some faults happened during Operation Al-Aqsa Flood’s implementation due to the rapid collapse of the Is ra eli security and military system, and the chaos caused along the border areas with Gaza.
উপরের লাইন পড়ে এবং এই ব্যাপারে বিভিন্ন সোর্স ঘাঁটাঘাঁটি করে আমার নিজস্ব উপলব্ধি হচ্ছে আক্রমণের দিন সবকিছু পুরোপুরি হামাসের পরিকল্পনা মোতাবেক হয় নাই, ওরা ভাবে নাই যে ইসরাইলী সেনাবাহিনী এতটা দিশেহারা হয়ে যাবে। শত্রুকে এতটা বেসামাল অবস্থায় দেখে অনেকেই মূল কমাণ্ড অনুসরণ করে নি, বেসামরিক জনগণের উপর আক্রমণ করে ফেলেছে।
আরো যেটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে সীমান্ত বেড়া খোলা পেয়ে অনেক সাধারণ জনগণও ঐ পাশে গিয়ে উল্লাস প্রকাশ করা শুরু করে, তাদের দ্বারা কোনো অনভিপ্রেত কোনো ঘটনা ঘটা অসম্ভব কিছু না। এখানে একটা ব্যাপার লক্ষণীয়। ইসরাঈলকে যখন বেসামরিক লোকজন হত্যার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তখন ওরা নির্লজ্জের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে পারমাণবিক হামলা অথবা ISIS এর সাথে যুদ্ধের রেফারেন্স টেনে আনছে তখন একবারো স্বীকার করছে না যে এমনটা হামাসের হামলার ক্ষেত্রেও হতে পারে। আর অধিকাংশ ইসরাইলী জনগণ যে ওদের নিজেদের ফোর্স দ্বারাই মারা গেছে সেটা তো আগে বিস্তারিত বলেছিই!
তবে হ্যাঁ, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা বলে দায় এড়িয়ে যাওয়ার কিন্তু কোনো সুযোগ নেই। হামাসের দ্বারা যদি একজন নিরপরাধ মানুষেরও জীবন যায় কিংবা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আনার এই ব্যাপারটা কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমরা নির্দ্বিধায় নিন্দা জানাবো কারণ আমরা সেই রাসূলের উম্মাত যিনি খালিদ বিন ওয়ালিদের দ্বারা যখন সীমালংঘন হয়েছিলো তখন নিজের আর্মির লোক বলে সেটার পক্ষ নেন নাই।
আমরা অনেকেই হয়তো কাহিনীটা জানি যে, জাধিমা গোত্রের কাছে নবীজী যখন খালিদ বিন ওয়ালিদকে পাঠিয়েছিলেন তখন ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পর ওরা ঠিকমত বলতে পারছিলো না যে আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি, বরং বলছিলো আমরা এক ধর্ম থেকে বের হয়ে আরেকটাতে প্রবেশ করেছি। এহেন স্বীকারোক্তির পরও খালিদ তাদের কয়েকজনকে হত্যা এবং কয়েকজনকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক করেছিলেন যেটা ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ, মুসলিম হওয়ার পর কাউকে হত্যা বা যুদ্ধবন্দী হিসেবে গ্রহণ করা যায় না! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এই ঘটনা শোনার পর আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে দুআ করেছিলেন এবং খালিদের কাজের থেকে দায়মুক্তি চেয়েছিলেন।
এখন এই যে বললাম যে ৭ই অক্টোবর সবকিছু হামাসের পরিকল্পনা মত হয় নাই, এটা আমাকে নবীজীর জীবনের কোন ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে জানেন?
বদরের যুদ্ধ!
কিন্তু কেন?
যারা বদরের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট জানি, তারা হয়তো জানি যে কুরাইশদের সাথে এইরকমের অসম একটা যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছা বা প্রস্তুতি কোনোটাই মুসলিমদের ছিলো না, তারা শুধু চেয়েছিলো আবু সুফিয়ান যে বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে যাচ্ছে সেটাতে আক্রমণ করতে। প্রথমে কুরাইশদের সাহায্য চাইলেও পরে আবু সুফিয়ান বিকল্প রাস্তা দিয়ে নিরাপদে পার হতে পারায় বলেছিল আর দরকার নেই সামরিক সাহায্যের। কিন্তু আবু জাহল তখন বলেছিলো যে একবার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে পিছু ফেরা কাপুরুষতা, মুলত তার উৎসাহেই বদরের যুদ্ধ সঙ্ঘঠিত হয়েছিলো।
লেখার এই পর্যায়ে আমি পাঠকদের অনুরোধ করবো তারা যেন নবীজীর জীবনের এই অংশটুকু সম্পর্কে ভালোমত জেনে নেন , তারপর সূরা আনফাল অর্থ সহ মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেলেন। সূরা আনফাল নাযিল হয়েছিলো বদরের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে।
৭ই অক্টোবরের সাথে বদরের যুদ্ধের তুলনাটা কি আদৌ যৌক্তিক?
কেন এই তুলনা আমার মাথায় আসলো?
পাঠকরা কি আন্দাজ করতে পারছেন?
Our Narrative… Operation Al-Aqsa Flood পড়া যাবে এই লিংক থেকে https://static.poder360.com.br/2024/01/Hamas-documento-guerra-Gaza-21jan2024.pdf
এই ছবিটা দেখুন, এ ধরণের একেকটা ছবি হাজার হাজার বক্তব্যের চেয়ে বেশী শক্তিশালী। আমাদেরকে এ ধরণের communication শিখতে হবে
ওসামা হামদানের এই চমৎকার ইন্টারভিউ দেখতে পারেন এখানে
Electronic Intifada সেই ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আর সবার মত আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম, ওদের কাজ গুলোর সাথে আগে পরিচয় ছিল না
বিস্তারিত জানা যাবে এই ভিডিও দেখে
আরেকটা ইন্টারভিউতে ওসামা হামদান একই কথা বলেছেন যেটার লিংক আগেও দিয়েছি
Our Narrative… Operation Al-Aqsa Flood এর পৃঃ৯ দ্রষ্টব্য
একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইসরাইলী ট্যাংকের উপর দাঁড়িয়ে প্যালেস্টিনিয়ানদের জাতীয় পতাকা হাতে উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে এই প্রতিবেদনের ছবিতে
https://www.aljazeera.com/features/2023/10/11/analysis-why-did-hamas-attack-now-and-what-is-next
খালিদ বিন ওয়ালিদের ঘটনার রেফারেন্স পাওয়া যাবে এখানে https://sunnah.com/bukhari:4339
ঘটনাটা আমি শুনেছি Sami Hamdi র লেকচার থেকেঃ
পর্ব – ১২
অপারেশন আল-আকসা ফ্লাডের নেপথ্যে (২)
আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করবো যে কেন ৭ই অক্টোবরে সংগঠিত অপারেশন আল আকসা ফ্লাড ও এর অব্যবহিত পরের ঘটনা আমাকে বদরের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এটার প্রথম কারণ হচ্ছে প্রেক্ষাপটের মিল। বদরের যুদ্ধের সময় মুসলিমরা যেমন ভাবে নাই ওদেরকে এমন একটা All out যুদ্ধে জড়াতে হবে কুরাইশদের সাথে, হামাসও ভাবে নাই ঘটনা এত দূর গড়াবে, ইসরাঈলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এভাবে বালির প্রাসাদের মত ভেঙ্গে পড়বে এবং ওদেরকে ইসরাঈলী সৈন্যবাহিনীর সাথে এভাবে চার মাসের বেশী সময় ধরে যুদ্ধ চালাতে হবে। আবারো বলছি, ওরা ভেবেছিলো সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ করে কিছু সৈন্য জিম্মি করে নিয়ে আসবে এবং এর বিনিময়ে প্যালেস্টিনিয়ান বন্দীদের মুক্ত করে আনবে।
হ্যাঁ, ইসরাঈল প্রতিশোধ নিতে হামলা চালাবে এটা তো জানা কথাই ছিলো যেহেতু ইসরাঈলের বর্বরতার সাথে গাজাবাসীর পরিচিতি বহু পুরানো, প্রতি রামাদ্বানেই ওরা গাজাবাসীর উপরে ওদের বানানো নতুন নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করে, আর Battle field Tested এই ট্যাগ লাগিয়ে বিশ্বের অন্যত্র এগুলো বিক্রি করে। কিন্তু সেটার তীব্রতা যে এমন ভয়াবহ হবে এটা কেউই আশা করে নাই।
প্রেক্ষাপটের আরেকটা মিল হচ্ছে, যুদ্ধের ব্যাপারে শক্তিশালী পক্ষের তীব্র আগ্রহ। যারা বদর যুদ্ধ নিয়ে পড়েছেন তারা হয়তো জানেন যে মূলত আবু জাহলের আগ্রহেই যুদ্ধটা হয়েছিল, ঠিক এখানেও নেতানিয়াহুর কারণেই যুদ্ধ থামছে না। গত সপ্তাহে তো দেখলাম যে মিশরে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিতে ইসরাঈলের প্রতিনিধিই পাঠানো হয়নি। যুদ্ধে ইসরাঈলী সৈন্যবাহিনীর বেহাল দশাতেও ওর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, নিজের ইগোকে প্রাধান্য দিচ্ছে সব কিছুর উপরে।
তবে বদরের যুদ্ধের সাথে তুলনা মাথায় আসার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সত্য ও মিথ্যা আলাদা করার
কষ্টি পাথর হিসেবে ৭ই অক্টোবরের ভূমিকা। সূরা আনফালের ৪১ নং আয়াতে বদরের যুদ্ধের দিনটিকে আল্লাহ তায়ালা ’ইওয়ামুল ফুরক্বান অর্থ্যাৎ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টকারী’ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
৭ই অক্টোবর কী কী করেছে? আগে বিচ্ছিন্নভাবে এগুলো সবই উল্লেখ করেছি, এখন সেটা একটা লিস্ট আকারে বলতে চাচ্ছি-
প্রথমত: পশ্চিমাদের বাক স্বাধীনতার বুলি যে কী ভয়ংকর রকমের শঠতাপূর্ণ সেটা চরম নগ্নভাবে প্রকাশিত হলো। প্রতিটা সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে প্যালেস্টিনিয়ান কণ্ঠরোধ করতে উঠে পড়ে লাগলো, আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার বসানোতে সাউথ আফ্রিকাকে যে হামাসের সহযোগী হিসেবে আখ্যায়িত করা শুরু করলো, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগে বাধ্য করা হলো, MSNBC মেহেদী হাসান শো বন্ধ করে দিলো, UK তে হিজবুত তাহরীরের প্রেসিডেন্ট যিনি একজন ডাক্তার, তাকে চাকরীচ্যুত করা হলো, ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকার সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হলো প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সমবেত হলো প্যালেস্টাইনের পক্ষে অথচ একটা মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও সেটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলো না—— এই প্রতিটি ঘটনা বিবেকের দরজায় কড়া নাড়ে।
অথচ মনে আছে, আমাদের নবীজিকে নিয়ে যখন আপত্তিকর কার্টুন প্রকাশ করেছিলো তখন সেটা হয়ে গিয়েছিলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা? যারা সত্যান্বেষী তারা ঠিকই পুরো ব্যাপারটার মাঝের ফাঁকি ধরতে পেরেছে।
দ্বিতীয়ত: পশ্চিমাদের মানবিকতার বুলি যে কী পরিমাণ পক্ষপাতদুষ্ট সেটা যেন কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো! জাতিসংঘের এত কর্মী এর আগে কখনো হত্যা করা হয় নাই, ওদের স্কুল যেগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো সেগুলোর উপর সমানে বোমা ফেলা হচ্ছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেই যাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক আইন লংঘিত হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে, ICJ ঘোষণা দিলো যে এটা জেনোসাইড হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে, তারপরও ইসরাঈলের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, রাফাহতে আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ করেই যাচ্ছে! অথচ ৭ই অক্টোবরে যে কয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে তাদেরকে নিয়ে কত আহাজারি!
তৃতীয়ত: মুসলিমদের, বিশেষ করে প্যালেস্টিনিয়ানদের জীবন যে কতটা সস্তা সেটা বুঝলাম! মানে সস্তা সেটা তো কিছুটা জানাই ছিলো, কিন্তু ব্যাপারটা যে ফ্রি পর্যায়ের সেটা বুঝে দম আটকে আসতে চায়। আর এটা কারা বুঝালো জানেন?
নাহ, ইসরাইলীরা না, ব্যাপারটা বুঝালো মুসলিম দেশের নেতারা। অক্টোবরের ২৮ তারিখ যখন ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ সব কিছুর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ইসরাঈল রাতের অন্ধকারে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছিল, মক্কা ও মদীনার রক্ষণাবেক্ষণকারীরা তখন কিসে ব্যস্ত ছিলো মনে আছে আমাদের?
হুম, পপ গায়িকা শাকিরার গানের কনসার্টে! সত্যি বলতে কী প্রথম দিকে পুরো ব্যাপারটাতে যেটুকু নির্লিপ্ততা দেখিয়েছে, খুব একটা অস্বাভাবিক লাগেনি, মনে হয়েছে মুসলিম নেতারা এমনই তো সবসময় করেছে প্যালেস্টিনিয়ানদের সাথে, কিন্তু আজ প্রায় ৫ মাস পরও যখন কেউ কিছুই করছে না বরং উলটা পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করছে তখন কেমন লাগা উচিৎ?
ইয়েমেনের মতো যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশ যখন আমেরিকা ও ইসরাইলী জাহাজ লোহিত সাগর দিয়ে পার হতে বাঁধা দিয়ে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তখন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে যে জর্ডান, সৌদি আরব স্থলপথ দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছে ইসরাইলী মালবাহী ট্রাককে, আর মিশরের রাফাহ ক্রসিং এ শত শত ট্রাক আটকে আছে, ফলে গাজাবাসী আক্ষরিক অর্থেই না খেয়ে মরার উপক্রম – এগুলো দেখে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে।
একটা টক শোতে দেখলাম From the River to the Sea, Palestine will be free এই শ্লোগান নিয়ে আপত্তি, কারণ সেটাতে Genocidal Intention প্রকাশ পাচ্ছে, অথচ চোখের সামনে লাইভ যে গণহত্যা চলছে, সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই! গাজাবাসী যদি কিয়ামতের দিন আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে ভেবেছি কি একবারো?
প্রশ্ন উঠতে পারে যে এইসব কিছু কিভাবে সম্ভব হলো? সেটাও বুঝলাম ৭ই অক্টোবরের কারণে। আমি যেন ঘুম থেকে জেগে উঠে নতুনভাবে উপলব্ধি করলাম কোন পৃথিবীতে আমি বাস করি। এই পৃথিবীতে মুসলিমরা নপুংসক এক জাতিতে পরিণত হয়েছে, যাদের অধিকাংশের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে এই দুনিয়ার জীবনে ভোগ বিলাসে লিপ্ত থাকা। পক্ষান্তরে ইহুদীরা দীর্ঘদিন ধরে, সুপরিকল্পিতভাবে এবং সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করে এমন শক্তিশালী একটা গ্রুপে রূপান্তরিত হয়েছে যাদের হাতে মিডিয়া, অর্থব্যবস্থা সব কিছুর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। সেইসাথে আমরা যা খাই, ভোগ করি সবকিছুর সরবরাহকারীও তারা। তাই ইসরাইলী পণ্য বর্জন করতে গিয়ে আমাদের ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় অবস্থা।
আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ইহুদী লবি পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে যার ফলে নির্বাচনের বছরেও বাইডেন ইসরাঈলের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না! সেই প্রথম দিনে 40 Beheaded Baby, তারপর হামাস দ্বারা ইসরাইলী জিম্মিদের যৌন হয়রানি, গাজার হসপিটালগুলো হামাসের কন্ট্রোল এবং কম্যান্ড সেন্টার—–একটার পর একটা প্রোপ্যাগান্ডা কোনো প্রমাণ ছাড়াই সমানে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত হতে দেখা গেলো। সর্বশেষ দেখলাম কিভাবে অদ্ভুত এক অভিযোগ টেনে United Nations Relief and Works Agency for Palestine Refugees in the Near East (UNRWA) র অর্থায়ন বন্ধ করে দিলো প্রধান প্রধান পশ্চিমা দেশগুলো! সেটা করলো কবে? ঠিক যেদিন ICJ ঘোষণা দিলো যে ইসরাঈলের কেস কোর্টে চলবে, তার কয়েক ঘণ্টা পর এই অবস্থা দেখে আমি হঠাৎ করেই নিচের হাদীসটা চোখের সামনে দেখতে পেলাম-
আবদুর রহমান ইব্ন ইবরাহীম (রহঃ) …. ছাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সা:) বলেছেন, ”অদূর ভবিষ্যতে অন্য জাতির লোকেরা তোমাদের উপর বিজয়ী হবে, যেমন খাদ্য গ্রহণকারী বড় পাত্রের দিকে আসে। তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে, আমাদের সংখ্যা কি কম হবে? তিনি বলেন, না, বরং সে সময় তোমরা সংখ্যায় অধিক হবে। কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে সমুদ্রের ফেনার মত। আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দূর করে দেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে অলসতার সৃষ্টি করে দেবেন। তখন জনৈক সাহাবী বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! অলসতার সৃষ্টি কেন হবে? তিনি বলেন, দুনিয়ার মহব্বত ও মুত্যু ভয়ের জন্য।” (সুনান আবু দাউদঃসহীহ)
আল্লাহ শত্রুদের অন্তর থেকে ভয় দূর করে দিয়েছেন এই কথাটা যে কী ভয়ংকর রকমের তিক্ত সত্যি! সে জন্য আমরা দেখি যে প্রকাশ্য দিবালোকে, সাদা পতাকা বহনকারী বেসামরিক নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা ব্রিটিশ গণমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়া, গাজায় হসপিটাল থেকে বের হতে থাকা ব্যক্তিকে বিনা কারণে হত্যা, পশ্চিম তীরের জেনিনে হসপিটালে ডাক্তারদের ড্রেস পরে ঢুকে চিকিৎসাধীন তিনজন প্যালেস্টিনিয়ানকে গুলি করে হত্যা করে সগর্বে বের হয়ে যাওয়ার কাহিনী সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়ার পরও ইসরাঈলের কারো কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই!
হ্যাঁ, অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, আদর্শিক পরাজয় ঘটেছে, মিডিয়ায় ওদের লাগামহীন আধিপত্যের দিন শেষ, সবই ঠিক আছে কিন্তু এতদিন ধরে যে এসব করতে পেরেছে সেটা উপলব্ধি করে বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেছি! ৭ই অক্টোবরের উসীলায় সবচেয়ে যে বড় উপকার হয়েছে সেটা হচ্ছে পুরো বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া প্যালেস্টিনিয়ানদের মুক্তির আর কোনো উপায় নেই।
কথাটা শুনে অবাক লাগছে?
মনে হচ্ছে যে অপারেশন আল আক্বসা ফ্লাডের কারণেই তো প্যালেস্টিনিয়ানদেরকে এভাবে কষ্ট পেতে হচ্ছে। তাহলে আবার এর স্বপক্ষে কথা বলা কেন!
এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো সামনের পর্বে ইনশাআল্লাহ।
সত্যান্বষী অমুসলিমরা কিভাবে সত্য চিহ্নিত করতে পারছে সেটার প্রমাণ এই ভিডিওটি-
https://www.facebook.com/1214301407/posts/10232910698289091/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
প্যালেস্টাইনের শরনার্থীদের জন্য আলাদা সংস্থা গঠনের পিছনেও আছে শুভংকরের ফাঁকি, বিস্তারিত জানা যাবে এই লেকচার থেকে
সাদা পতাকা বহনকারী বেসামরিক নাগরিককে গুলির ঘটনা দেখা যাবে এখানে-
হসপিটাল থেকে বের হওয়ার সময় ইসরাইলী স্নাইপার দিয়ে হত্যার খবর শেয়ার করছে সিএনএন –
https://www.facebook.com/reel/969156134769174
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ –
https://www.facebook.com/reel/1764526734027412
পর্ব – ১৩
অপারেশন আল-আকসা ফ্লাডের নেপথ্যে (৩)
এই সিরিজের একদম শুরুতে বলেছিলাম যে সূক্ষ্মভাবে গাজার ঘটনাবলী বিশ্লেষণের পর নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে কারণ আমরা আসলে এখন ঐতিহাসিক একটা সময় পার করছি। একটা কারণ তো বলেছিলাম যে ইসরাঈলের আদর্শিক পরাজয় সচক্ষে দেখার সুযোগ পাচ্ছি, আরেকটা কারণ হচ্ছে আজকের সময়টা এমন যখন বিকল্প সব পদ্ধতি প্রয়োগ করা শেষ, প্যালেস্টিনিয়ানরা বুঝে গেছে যে সশস্ত্র সংগ্রাম একমাত্র সমাধান।
আজকে একটু পর্যালোচনা করবো যে প্যালেস্টিনিয়ানদের হাতে বিকল্প কী কী অপশন ছিল?
১) ইসরাইলী আগ্রাসনের মুখে নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যাওয়াঃ
সেই ১৯৪৮ সালেই ওরা এটা করেছে, আজও ফিরে আসতে পারেনি, সব ইসরাইলীদের দখলে চলে গেছে। এবারও যুদ্ধের শুরুতে ইসরাঈল, আমেরিকা বারবার মিশরকে অনুরোধ করছিলো যেন সীমান্ত খুলে দেয়া হয়। ওদের উদ্দেশ্য ছিলো গাজাবাসীকে মিশরে ঠেলে দিয়ে গাজার দখল নেয়া। মিশরের অনড় অবস্থান আমাদের কাছে হৃদয়বিদারক মনে হলেও আদতে এটা ইসরাঈলের পরিকল্পনাকে প্রাথমিকভাবে ভেস্তে দিয়েছিলো। তারপর ওরা কী করলো? ওরা একই পরিকল্পনা নিয়ে অন্য পথে আগালো, মানে কূটনৈতিকভাবে না এগিয়ে সামরিক পথে আগালো। কিভাবে?
আমরা যদি প্যালেস্টাইনের ম্যাপ দেখি এবং ইসরাঈলের গ্রাউন্ড অপারেশনের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো যে প্রথম দিকে ইসরাঈল দাবী করেছে যে দক্ষিণ গাজা নিরাপদ, উত্তর গাজা থেকে আগে হামাসকে নির্মুল করবে, বেসামরিক নাগরিকরা যেন দক্ষিণ দিকে চলে যায়। নর্থ গাজা ধ্বংস স্তূপে পরিণত করে ওরা শুরু করলো খান ইউনুসে আক্রমণ……মানুষকে ঠেলতে ঠেলতে তারা কোথায় নিয়ে এসেছে? রাফাহ……যেটা একদম মিশরের সীমান্তে। সেই সাথে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে রাফাহতে গ্রাউন্ড অপারেশনের……কেন? রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু করলে মিশরের পক্ষে কি সম্ভব হবে সীমান্ত আটকে রাখা?
যেন তেন উপায়ে গাজা খালি করে সেটার দখল নেয়ার মাধ্যমে নিজেদের সীমান্ত সম্প্রসারণ করাই যে ওদের মূল লক্ষ্য এটা যে কেউই বুঝতে পারবে যে কী না ইসরাঈলের মিশন সম্পর্কে জানে।
ই*স*রা*ইলের মিশন কী?
৭ই অক্টোবরের পর থেকে আমরা অনেকেই হয়তোবা From the river to the sea, Palestine will be free এই স্লোগানের সাথে পরিচিত হয়েছি, প্যালেস্টাইনের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশে এটা উচ্চারিত হতে শুনেছি। এটা শুনলে ইসরাইলিদের মাথায় আগুন ধরে যায়, তাদের বক্তব্য হল এটার মাধ্যমে Genocidal Intent প্রকাশিত হয়, এর মাধ্যমে ইসরাঈলের রাষ্ট্রের ধ্বংস কামনা করা হয়। তাই টক শো গুলোতে দেখবেন এটা নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা চলে।
আমরা কি কখনো ভেবেছি যে এই স্লোগানের উৎপত্তি কিভাবে?
From the river to the sea মূলত ইসরাঈলের টার্গেটকৃত সীমানা যেটার মধ্যে আছে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, পুরা ট্রান্সজর্ডান ও সিনাই উপত্যকা। ১৯৩৭ সালে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত একটা পার্টিশন প্ল্যানের ব্যাপারে লেবার পার্টি নেতা ও ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন বলেন:
“পার্টিশন মেনে নেয়া মানেই এই না যে, আমরা ট্রান্সজর্ডানের (জর্ডান) দাবি ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকার করছি। কেউ কারুর কাছে তার ভিশন ছেড়ে দেয়ার দাবি জানাতে পারে না। আজ যে সীমানা নির্ধারিত হচ্ছে, সেই সীমানায় একটা রাষ্ট্র আমাদের আপাতত মেনে নিতে হবে; কিন্তু জায়োনিস্ট কল্পনায় (ইহুদিদের ভূমির) যে নির্ধারিত সীমানা, সেটাই ইহুদীদের প্রধান লক্ষ্য; আর বাইরের কোন শক্তিই এই লক্ষ্যকে সীমিত করতে পারবে না।”
প্রতিষ্ঠাকালের এই জায়োনিস্ট লক্ষ্য ও অঙ্গীকার থেকে ইসরাইল রাষ্ট্র একচুলও সরে নাই এবং ওদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাঝে যেটুকু মতপার্থক্য আমরা দেখি সেটা শুধুই কৌশলগত, যে কোনো ছুতায় নাতায় ওরা ভূমি দখল করতে চায় আর প্যালেস্টাইনের অধিবাসীরা এটা খুব ভালো করে জানে দেখেই জান -মাল কুরবানী দিয়ে হলেও ভূমি আঁকড়ে ধরে থেকে যেতে চায়।
২) শান্তিপূর্ণ বিদ্রোহ করাঃ
এটাও প্যালেস্টিনিয়ানরা বহুবার করেছে। ১৯৮৭ সালে, প্যালেস্টাইনে সংঘটিত হয় প্রথম ইন্তেফাদা বা বিদ্রোহ যেটার ধরণই ছিলো গান্ধীর অহিংস বিদ্রোহ টাইপ। স্ট্রাইক, অবরোধ, ব্যারিকেড, পাবলিক বিক্ষোভ, বয়কট, ট্যাক্স প্রদানে অস্বীকৃতি ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে এই বিদ্রোহ চালাতে থাকে প্যালেস্টাইনের একদম সাধারণ জনগণ।
ফলাফল?
ইসরাইল ৮০ হাজার সেনা মোতায়েন করে এই বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে, ইসরাইলি সেনারা বিদ্রোহী জনগণকে নির্বিচারে খুন করা শুরু করে। এই পদক্ষেপের সমালোচনার জবাবে ঠিক আজকের মতো ইসরাইল বলে যে, প্যালেস্টিনিয়ানদের ভায়োলেন্সের কারণেই এ ধরনের প্রতিক্রিয়া করছে ইসরাইল। কার ভায়োলেন্স কতটুকু ছিল? বিদ্রোহের প্রথম বছরে ১২ জন ইসরাইলির বিপরীতে খুন হয় ৩৩২ জন প্যালেস্টিনিয়ান; এরমধ্যে ৫৩ জনের বয়স ছিল ১৮’র নিচে। বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর ৬ বছরে ইসরাইল প্রায় ১২শ প্যালেস্টিনিয়ানকে খুন করে।
পরিসংখ্যানের প্যাটার্ণ কি চেনা চেনা লাগছে? ৭ই অক্টোবর ১২০০ ইসরাইলীয় যদি নিহত হয়েও থাকে (কতজনকে ইসরাঈল নিজে হত্যা করেছে তা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হবে) তাহলে সেটার বিপরীতে কতজনকে হত্যা করলো ইসরাঈল গত ৫ মাসে? এজন্যই Bassem Yousuf পিয়ার্স মরগ্যানের সাথে প্রথম শোতেই জানতে চেয়েছিল What is the proportionate response!
১৯৮৭ সাল যদি বহু আগের ঘটনা মনে হয় তাহলে পাঠকদের মনে করিয়ে দিবো ২০১৮ সালে সঙ্ঘঠিত The Great March of Return এর কথা যেখানে প্যালেস্টিনিয়ানরা প্রতি শুক্রবার কাঁটাতারের বেড়ার কাছাকাছি গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করতো। সেখানে নিরীহ জনগণের উপর নির্বিচারে কিভাবে ইসরাঈল স্নাইপার আক্রমণ করতো সেটা হতবাক করেছে মার্কিন সাংবাদিক Abby Martin কে। প্রায় ১ঘন্টা ২৩ মিনিট ব্যাপী একটা ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছেন উনি যেটা পুরোটা আমি দেখেছি, সেখানে সে বলছিলো যে আমি ইরাক, সিরিয়াতে যুদ্ধাবস্থা কাভার করেছি কিন্তু গাজার মত এহেন পরিস্থিতি দেখি নাই। যারাই মনে করেন যে প্যালেস্টিনিয়ানরা কেন শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ করে না তাদের Gaza Fights from Freedom নামের এই ডকুমেন্টারি দেখা উচিৎ।
৩) ইসরাঈলের সাথে ধাপে ধাপে শান্তি চুক্তিতে আসাঃ
গাজার বর্তমান অবস্থা দেখে অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও হামাস কেন ছাড় দিয়ে ইসরাইলের সাথে চুক্তিতে রাজি হচ্ছে না, কেন ওরা ইসরাঈলের সেনা উপস্থিতি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের দাবীতে অনড় থাকছে!
কারণটা হচ্ছে ইসরাঈলীদের চরিত্র প্যালেস্টিনিয়ানদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। গত ৬ মাসে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ইসরাঈলের কাছে নিজেদের জিম্মিদের জীবনেরই কোনো মূল্য নেই, তারপরও যেটুকু বাঁধা আছে সেটা জিম্মি থাকার কারণেই আছে। ইসরাঈলের সাধারণ জনগণ যেখানে প্যালেস্টাইনে মানবিক সাহায্য ঢোকার বিরোধিতা করছে সেখানে একবার যদি হামাস সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে সব বন্দীদের ছেড়ে দেয় ইসরাইল গাজার নিশানা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে কোনো দ্বিধাবোধ করবে না। পুরো পৃথিবী এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা স্বত্ত্বেও নে&তানিয়াহু যেখানে রাফাহতে স্থল অভিযানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে না এমনকি ত্রাণ নিতে আসা মানুষদের উপর গুলি বর্ষণ করে Flour Massacre এর মত জঘন্য কাজ করে যাচ্ছে, সাথে রয়েছে নপুংসকের মত নিরীহ জনগণের উপর আকাশ থেকে অব্যাহত বোমা বর্ষণ, এগুলো থেকে ইসরাঈল যে আসলে কী করতে পারে, কতদূর যেতে পারে সেটা নিয়ে বিশ্ববাসীরও এখন আর কোন সন্দেহ নেই। সেজন্যই বহু আগেই ধাপে ধাপে শান্তি প্রক্রিয়ায় আসা প্রসঙ্গে হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান এক ইন্টারভিউতে স্পষ্ট বলেছে যে এগুলোর অভিজ্ঞতা প্যালেস্টাইনের আগে থেকেই আছে। সে মূলত অসলো শান্তি চুক্তির কথা বলেছে।
আচ্ছা আমরা কি এই চুক্তির ব্যাপারে জানি?
আমরা আসলে প্যালেস্টাইনের ইতিহাস কতটুকু জানি?
(চলবে)
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ আজকের এবং আগামী পর্বে উল্লেখিত ইসরাঈলের ইতিহাস সংক্রান্ত বেশ কিছু আলোচনা আমি তুহিন খান ভাইয়ের ‘ফিলিস্তিনের নয়া সশস্ত্র ঐক্যের প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য ফলাফল’ শীর্ষক আর্টিকেল থেকে নিয়েছি, উনার অনুমতিক্রমেই।
বেন গুরিয়নের বক্তব্য New Outlook (তেল আবিব) পত্রিকায় ছাপা হওয়া ১৯৩৭ সালের ভাষণ, এপ্রিল, ১৯৭৭, বেন গুরিয়নের Memoirs থেকে সংগৃহীত।
Abby Martin নির্মিত ডকুমেন্টারি –
মানবিক সাহায্য ঢুকতে বাঁধা দেয়ার লিংক –
https://www.facebook.com/watch/?v=7067316069982327
Flour Massacre এর ভিডিও –
https://www.facebook.com/imamomarsuleiman/videos/444474667909438
(চলবে ইনশাআল্লাহ)