The techniques of becoming a good student and its impact on whole life

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

ইদানীং একটা কথা প্রায়ই শোনা যায় জীবনে সফল হওয়ার জন্য ভালো রেজাল্ট করা জরুরী নয়। এক্ষেত্রে অনেক সফল মানুষদের উদাহরণ দেওয়া হয় যারা স্টুডেন্ট লাইফে ড্রপ আউট করেছে কিন্তু পরবর্তীতে ক্যারিয়ারে সফল হয়েছে। এটা ঠিক যে, একাডেমিক ক্যারিয়ার সবার জন্য নয়। সবাইকে যে টপ রেজাল্ট করে শিক্ষক, গবেষক হতে হবে এমনটাও নয়। আবার এটাও ঠিক নয় যে, কেউ শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করবে না বলে স্টুডেন্ট লাইফ এ পড়াশোনাকে সিরিয়াসলি না নিয়ে যেনতেনভাবে সময় কাটিয়ে দেবে।

বস্তুত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষকে বিভিন্ন রোলকে প্রায়োরিটি দিতে হয়। স্টুডেন্ট লাইফে টপ প্রায়োরিটি হওয়া উচিত পড়াশোনা- যা তাকে সারা জীবনের জন্য এই লেসন দেবে যে, জীবনে যখন যে Role play করতে হবে সেটাই dedication নিয়ে করতে হবে। এখানে dishonestyর কোনো স্থান নেই। স্টুডেন্ট লাইফে পড়াশুনা না করে সিজিপিএ বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের তোষামোদী করা, সিনিয়রদের নোট, গবেষণা কপি-পেস্ট করা যেমন dishonesty তেমনি প্রেম, আড্ডাবাজি বা রাজনীতি করে সময় নষ্ট করাও এক ধরনের dishonesty .

আমি ব্যক্তিগতভাবে তাই স্টুডেন্ট লাইফে পড়াশোনাকে প্রায়োরিটি দেওয়া এবং ভালো রেজাল্ট করার জন্য যে টেকনিকগুলো জানা দরকার সেগুলোর চর্চা করার পক্ষপাতী, কারণ এই টেকনিকগুলো এক ধরনের life skill যা পরবর্তীতে পারিবারিক জীবন, কর্মজীবন, সামাজিক জীবন এবং সবোপরি পারলৌকিক জীবনে সাফল্য পেতে সাহায্য করে।

আজকের লেখায় আমি স্টুডেন্ট লাইফে পড়াশোনা করার সময়, পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময়, পরীক্ষা চলাকালীন সময় এবং পরীক্ষা দেয়ার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে কি কি টেকনিক ফলো করলে ভালো রেজাল্ট করা যায় সে সম্পকে আলোচনা করবো।

পড়াশোনা করার সময়:

প্রথমত: যে কোন টপিক পড়ার সময় সেটা মনোযোগ দিয়ে রিডিং পড়া, গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দাগিয়ে রাখা এবং সেই দাগানো অংশগুলোকে প্রশ্ন আকারে সাজিয়ে মুখস্থ করা—-এগুলো হলো প্রাথমিক টেকনিক। মুখস্থ করার ক্ষেত্রে আমি জোরে জোরে পড়া –এই পদ্ধতিকে সমর্থন করি, কারণ জোরে পড়লে একই সাথে আমাদের চোখ, ঠোঁট , কান মস্তিষ্ক– অনেকগুলো অঙ্গ ইনভল্ভ হয় যেটা দ্রুত মুখস্থ হওয়া এবং তা মনে রাখার ক্ষেত্রে হেল্প করে।

 মুখস্থ হয়ে যাওয়ার পর কঠিন বানানগুলো শেখা এবং প্রশ্নের উত্তরগুলো লিখে ফেলা সবচেয়ে ফলপ্রসু। ’দশবার পড়ার চেয়ে একবার লিখে ফেলা’ অনেক কার্যকরী একটি পদ্ধতি। আর যদি একান্তই লেখা সম্ভব না হয় তবে অন্য কাউকে মুখস্থকৃত অংশটুকু পড়া দিতে হবে। তাহলে পড়াটা আদৌ কতটুকু ব্রেইনে ঢুকলো তা যাচাই হয়ে যাবে এবং কোনো ভুল থাকলে সেটাও ধরা পড়বে।

দ্বিতীয়ত:  একই টপিক Multiple source থেকে পড়তে হবে। মূল বিষয়বস্তু এক থাকলেও ভিন্ন ভিন্ন লেখকের বর্ণনা ভঙ্গি, শব্দচয়ন, ভাষার ব্যবহার এবং  বিষয়বস্তু সম্পকে তার দৃষ্টিভঙ্গীতে ভিন্নতা থাকে।  

তাই একই টপিকে Multiple লেখকের লেখা পড়লে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে সেই টপিককে বিশ্লেষণ করা যায়, Concept clear  হয় এবং যদি পরীক্ষার সময় সেই টপিক থেকে গতানুগতিক প্রশ্ন নাও আসে তবে সেই clear concept কাজে লাগিয়ে নিজের মতো করে উত্তর লিখে আসা যায়।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি একই টপিকের multiple resource থেকে চৌম্বক অংশ নিয়ে  নিজের মতো করে একটা নোট রেডি করা যায়। এই নিজের তৈরি করা নোট ব্রেনে এমন ভাবে গেঁথে যায় যে, পরীক্ষার আগে দ্রুততম সময়ে রিভিশন দেওয়া যায় এবং নিজস্বতা থাকে বলে নম্বরও বেশি পাওয়া যায়।

তৃতীয়ত: প্রতিদিন পড়াশোনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। Regular study is a practice এবং এই practice টা একজন স্টুডেন্ট এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’আমার তো সারাবছর পড়া লাগে না, পরীক্ষার আগে পড়লেই হয়”—এটা একটা ফাঁকিবাজি এপ্রোচ। যারা সারাবছর পড়াশোনা করে আর যারা শুধু পরীক্ষার আগে কিছু সাজেশন গলাধরণ করে পরীক্ষার খাতায় তা উগড়ে দিয়ে আসে তাদের জ্ঞানের গভীরতা কখনও এক হতে পারে না।

তাই প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য স্টুডেন্ট লাইফে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় পড়াশোনা করার কোনো ‍বিকল্প নেই।

পরীক্ষা পূর্ববর্তী প্রস্তুতি

 পরীক্ষার রুটিন পাওয়ার সাথে সাথে পরীক্ষার আগে যে কয়েকদিন বাকি আছে সেই সময়গুলোতে কোন সাবজেক্ট কবে/কতদিন পড়তে হবে সেটার একটা নিজস্ব রুটিন করে নিতে হবে। যেসব সাবজেক্টের  পরীক্ষার আগে ছুটি আছে সেগুলোর জন্য কম সময় রাখতে হবে, যেসব  সাবজেক্টের পরীক্ষার আগে ছুটি নেই বা যেটার প্রস্তুতি কম নেওয়া হয়েছে সেগুলোর জন্য বেশি সময় রাখতে হবে।

 পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার পর একটা পরীক্ষা দিয়ে এসে পরবতী পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য খুব বেশী সময় থাকে না, তাই এই সময়টুকু শুধূ রিভিশন দেয়ার জন্য রাখতে হবে।

এভাবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বে  নিজস্ব রুটিন তৈরি করে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষা চলাকালীন সময় চাপ কম পড়বে এবং সব বিষয়েই ভালো ফলাফল করার সম্ভবনা থাকবে।

পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে করণীয়

পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার পর যতদিন পরীক্ষা চলবে ততদিন পর্যন্ত একজন ভালো স্টুডেন্ট এর ফার্স্ট প্রায়োরিটি হবে পড়াশোনা। প্রত্যেক স্টুডেন্টের ডেইলি রুটিন এ কিছু Must Do কাজ থাকে এবং কিছু Flexible কাজ থাকে । খাওয়া,গোসল, ঘুম , ইবাদত এই অপরিহার্য কাজগুলো পালন করে বাকী সময় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে।

মোবাইল/ টিভি দেখা, আড্ডা দেয়া—এসব ফ্লেক্সিবল কাজগুলোকে এই সময় অফ রাখতে হবে, কারণ এসব থেকে যে ইনপুট ব্রেনে ঢুকবে তা পরীক্ষার পড়াশোনাকে ব্রেন থেকে বের করে  দিবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ব্র্রেনের একটা নিজস্ব ধারণক্ষমতা আছে। পরীক্ষার সময় যেহেতু একটি সাবজেক্টের পুরো সিলেবাসকে ব্রেনে ধারণ করতে হয়, তাই এই সময় অনাবশ্যক জিনিস ব্রেনে ঢুকালে তা ব্রেন থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় বের করে দিবে।

তাই্ পরীক্ষার সময় শুধু পড়া, পড়া, পড়া—এটাই হওয়া উচিত।

পরীক্ষা কেন্দ্রে করণীয়

সারা বছর ভালোভাবে পড়াশোনা করা এবং পরীক্ষার জন্য যথাযথ  প্রস্তুতি নেওয়ার পর ফাইনাল ফিনিশিং হলো পরীক্ষা কেন্দ্রে ঠিকমতো পরীক্ষা দেয়া্ । এজন্য পরীক্ষা দেয়ার সময় কিছু টেকনিক ফলো করতে হবে।

প্রথমত: প্রশ্ন হাতে পাবার পর প্রথমেই যে প্রশ্নগুলো কমন পড়েছে এবং যেগুলোর উত্তর ভালোভাবে জানা আছে সেগুলো আগে মার্ক করে ফেলতে হবে। তারপর সেগুলোর উত্তর আগে লেখা শুরু করতে হবে। তাহলে নিজের মধ্যে একটা কনফিডেন্স গ্রো করবে এবং এই কনফিডেন্স থেকে পরের দিকে যেসব প্রশ্নের উত্তর ভালো জানা নেই সেগুলোও মোটামুটি ভাবে লিখে ফেলার একটা Flow চলে আসবে।

দ্বিতীয়ত: পরীক্ষার সাবজেক্ট অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তরগুলোর দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করতে হবে।

বাংলা, সমাজ, ইতিহাস প্রভৃতি বর্ণনামূলক বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তর যতই ডিটেইলস লেখা হোক না কেন এসব সাবজেক্টে কখনই ফুল মার্কস দেয়া হয় না। তাই সব প্রশ্নের উত্তর যেন নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে লেখা যায় সেটা হিসেব করে সব প্রশ্নের উত্তর একটা এভারেজ দৈর্ঘ্য মেইনটেইন করে লিখতে হবে। তাহলে সবগুলোতে এভারেজ নম্বর পেলেও In total ভালো নম্বর আসবে।

অন্যদিকে Math, Science, Accounting এর মতো বিষয়গুলোতে যে কয়টা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়  সেগুলো Accurately দিতে পারলে ফুল মার্কস পাওয়া যায়।  তাই এক্ষেত্রে সব প্রশ্নের উত্তর

 আধাখ্যাচড়া ভাবে না দিয়ে বরং যে কয়টা Answer করবে সেগুলো perfectly লিখতে হবে। তাহলে In total ভালো নম্বর আসবে।

তৃতীয়ত:  পরীক্ষা দেয়ার সময় Full concentration দিতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর লেখার দিকে, অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দেয়া যাবে না।

ডিউটিরত টিচাররা কোন টপিকস এ গল্প করছে, আশেপাশের পরীক্ষার্থীরা কে কোনটা পারছে/ পারছে না, রুমের ফ্যান ঠিকমতো বাতাস দিচ্ছে কিনা, বসার সিট আরামদায়ক না—– এসব বিষয়ে আমলে নেওয়া যাবে না ।পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন নিজের সামথ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে হবে সবোত্তম পরীক্ষা দেয়ার।

মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার খাতা দেখার সময়  কিন্তু পরীক্ষক কেন্দ্রের সিচয়েশন কেমন ছিল তা জানবেন না। তা্ই বাকী সব বিষয় ইগনোর করে নিজের উত্তরপত্রের দিকে ফোকাস ধরে রাখতে হবে।

আগামী পর্বগুলোতে আমরা ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার এই টেকনিকগুলো কিভাবে পরবতী জীবনে কাজে লাগে তা নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

(চলবে)


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন