বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতার পিছনে একাকীত্ব , ডিপ্রেশন, স্ট্রেস নিতে না পারার ক্ষমতা, পারিবারিক চাপ, প্রেম নিয়ে ফ্যান্টাসি প্রভৃতি বহুবিধ কারণকে দায়ী করা হলেও আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো বর্তমান সময়ের কিশোর-তরুণদের মাঝে জীবনের লক্ষ্য সম্পকে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। অথচ প্যারেন্ট হিসেবে আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো আমাদের সন্তানদের তাদের জীবনের লক্ষ্য সম্পকে একটা স্বচ্ছ গাইডলাইন দেয়া এবং এই লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়া। প্যারেন্টিং সিরিজের আজকের পর্বতে আমরা সন্তানদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে কি কি গাইডলাইন দিতে পারি সে সম্পকে আলোচনা করবো। তবে সবার আগে একজন মুসলিমের জীবনের লক্ষ্য কি এই কনসেপ্ট ক্লিয়ার হতে হবে আমাদের নিজেদের কাছে, সন্তানদের কাছেও্।
আমাদের শৈশবে আমরা যখন Aim in life রচনা পড়তাম/ লিখতাম তখন সেখানে জানতাম আমাদের জীবনের লক্ষ্য হলো বড় হয়ে ডাক্তার, engineer, শিক্ষক, বিচারক হওয়া। এমনকি লেখাপড়ার উদ্দেশ্য নিয়েও আমরা শিখতাম—”লেখাপড়া করে যে, গাড়ি -ঘোড়া চড়ে সে।” অর্থ্যাৎ জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে গাড়ি চড়ে ঘোরার মতো আথিক স্বচ্ছলতা অর্জন করা। এরপর যখন দ্বীনের বুঝ আসলো, পরকালের চিন্তা মাথায় ঢুকলো তখন মনে হওয়া শুরু হলো যে, এতদিন যে দুনিয়াবী সাফল্যের পিছনে ছুটেছি তার সবই বৃথা, মুমিনের আসল সাফল্য হলো জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া।
এভাবে দুনিয়াবী সাফল্যের জন্য জীবনের সর্বপ্রচেষ্টা নিয়োগ করা কিংবা পরকালীন সাফল্যের জন্য সম্পূর্ণ দুনিয়াবিমুখ হয়ে যাওয়া—এই দুই প্রান্তিক চিন্তাই আসলে একজন মানুষের মনে ভ্যাকুয়াম তৈরি করে, তার জীবনের কর্মকান্ডকে লক্ষ্য, উদ্দেশ্যহীন করে দেয়। দুনিয়ার জীবনকে শুধুই দুনিয়ার জীবন ভাবলে এই জীবনের কোনো একটি ব্যর্থতা কিংবা চরম সাফল্য মানুষের মনে একটা The End এর অনুভূতি তৈরি করে। সে বুঝতে পারে না What to do next। তাই সে তখন নিজেই নিজের জীবনে Full stop দিয়ে দিতে চায়। অথচ আমরা যদি দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র হিসেবে বিশ্বাস করি তবে আমরা বুঝতে পারবো যে, দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি মানেই সব শেষ নয়, বরং দুনিয়ার জীবনে আমরা যে বীজ বপন করবো, যেভাবে তার পরিচর্যা করবো তার ফসল আমরা পাবো অনন্ত পরকালে।
আর দুনিয়া ও পরকালের জীবনের এই Co-ordination টা আমাদের সন্তানদের চিন্তা, চেতনা, মননে প্রোথিত করে দেয়াই এখন আমাদের অভিভাবকদের প্রধান প্রায়োরিটি। তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, There are thousands of ways in this Duniya to reach the ultimate goal of Jannah . As a parent, we will help them to choose /select their own path and give them support to walk on that path in a right way.
এবারে আমরা আলোচনা করবো সন্তানকে একটা হালাল profession select করার ক্ষেত্রে প্যারেন্ট হিসেবে আমরা কিভাবে সাহায্য করতে পারি।
প্রথমত: সন্তানকে তার জীবনের profession বা Career হিসেবে তার ভালো লাগার বিষয় অর্থ্যাৎ যে বিষয়ে তার আগ্রহ এবং মেধা আছে সেই বিষয়কেই বেছে নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। প্যারেন্ট হিসেবে নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নকারী হিসেবে বা নিজের ক্যারিয়ারের উত্তরসূরী হিসেবে সন্তানকে ভিক্টিম বানানো যাবে না। তার নিজের passion এর বিষয়কে (অবশ্যই হালাল) প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, মানুষ যখন তার passion কে profession করার সুযোগ পায় তখন সে আনন্দ নিয়ে কাজ করতে পারে এবং Career এ দ্রুত উন্নতি করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: Career এর subject selection এর পর next step হলো সেই subject এর উপর দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করা। এই লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রাবস্থায়ই আপনার সন্তানদের বিভিন্ন অনলাইন , অফলাইন কোর্স এ enroll করানো যেতে পারে, যা সিভিতে extra value add করে অন্যদের চেয়ে তাদের এগিয়ে রাখবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, অজস্র কোর্স এর ভীড়ে নিজের passion and profession সংশ্লিষ্ট কোর্সগুলোকে বাছাই করে সেগুলোতে enroll করাতে হবে। এক্ষেত্রে focused থাকাটা খুবই জরুরি, নাহলে অপ্রয়োজনীয় কোর্স সময় ও অর্থ দুইয়েরই অপচয় ঘটাবে।
তৃতীয়ত: Career শুরু করার আগে ছাত্রজীবন থেকেই সন্তানদের Future profession related activities এ volunteer হিসেবে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে অন্যদিকে তেমনি সেই field এর মানুষজনের সাথে একটা communication build up হবে যা ভবিষ্যতে good opportunity পেতে help করবে।
চতুর্থত: এত প্রস্তুতি নিয়ে Career শুরু করার পরও career এর সূচনালগ্নেই হয়তো কাঙ্খিত সাফল্য আসবে না —-এই বিষয়ে তাদের mentally prepared রাখতে হবে। Professional life এ jealousy থাকবে, leg -pulling থাকবে, dishonesty, থাকবে, flattering থাকবে, biasness থাকবে—-এই বাস্তবতাগুলো মেনে নেয়ার মাইন্ডসেট থাকতে হবে। নিজের maturity এবং common sense দিয়ে এগুলোকে overcome করে ধীরে ধীরে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই একটা পর্যায়ে গিয়ে সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ্ ।
এবারে এই দুনিয়াবী profession কে কিভাবে পরকালের পাথেয় হিসেবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে সন্তানদের কি কি গাইডলাইন দেয়া যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।