’কুরআনের বর্ণনাশৈলী বোঝার পদ্ধতি’ কোর্সটি সম্পর্কে রিভিউ#৪

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

লিখেছেন- সাদিয়া হোসেন

২০২০ সালে কোভিডে প্রচন্ড ভোগার পর আমার চিন্তাভাবনায় এক নিদারুণ পরিবর্তন আসে। আমি ইসলামকে নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে শিখি, আল্লাহকে নতুনভাবে চিনতে শিখি। ছোটবেলা থেকেই পড়ুয়া ছিলাম, তাই কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম শব্দ ‘ইক্বরা’ কে একদম আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করেছিলাম।

কিন্তু কুরআন পড়তে গিয়ে বুঝলাম কুরআন শুধুই পড়া আর তার মধ্যকার মেসেজটা ধরতে পারার মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আপনি যদি কুরআন শুধু পড়ার জন্য পড়েন, এর ভাষাগত ও বর্ণণার বৈচিত্র আপনাকে আকৃষ্ট করবে কিন্তু আল্লাহ যে বারবার বলছেন – এখানে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, ঈমানদারদের শেখার অনেক কিছু রয়েছে, এই শেখা বা বোঝার বিষয়গুলো  ধারাবাহিকভাবে লিখিত না থাকায় মূল মেসেজটা বোঝা ও জীবনে প্রয়োগ করা কষ্টকর।

কুরআনকে বোঝার প্রচেষ্টা যখন মোটামুটি চলছে তখন একদিন ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইটা পড়লাম। অনেকদিন ধরেই ইহুদি খ্রিষ্টান আর মুসলিমরা কিভাবে কানেক্টেড, কিভাবে আমরা এতভাগে বিভক্ত হয়ে গেলাম, এই প্রশ্নগুলো মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বিভিন্ন লেকচার শুনলেও পুরো ঘটনাটা একসাথে করতে পারছিলাম না কোনোভাবেই। বই পড়ে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলাম। এতটাই ভালো লাগলো, পরিচিত সবাইকে এই বই পড়ার জন্য উৎসাহ দিতে থাকলাম। যখন কোর্সের এনাউন্সমেন্ট দেখলাম, সাথে সাথে রেজিষ্ট্রেশন করলাম।

আমার আশা ছিল যে ’শিকড়ের সন্ধানে’ বইয়ে যেভাবে কুরআনের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেভাবে সেখান থেকে আমরা কি শিখি সেগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হয়েছে – সেরকম কিছু শিখব। জানব, কিভাবে বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াত একসাথে যুক্ত করা যায়। কোর্স থেকে যা শিখেছি তা আসলে আমার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

ক্লাস স্ট্রাকচার ও বিষয়াবলী ছিল অনন্য। যে কাহিনী কুরআনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা ধারাবাহিকভাবে বোঝা, বিকৃত হবার পরেও কিভাবে আজো ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্ট থেকেই কুরআনের সত্যতা জানা যায়, কেন আল্লাহ বারবার বনী ইসরাইলকে আমাদের ফোকাসে আনতে চেয়েছেন – এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একে একে বুঝতে পেরেছি। এগুলো নিয়ে স্টাডি করতে শিখেছি, বিভিন্ন এংগেল থেকে একটা ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেছি, বুঝতে চেয়েছি এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের কি জানাতে চেয়েছেন। কিভাবে ছোট ছোট ঘটনা ইতিহাসকে বদলে দিয়েছে, তা আজো কিভাবে আমাদের চেনা জানা পৃথিবীটাকে চালনা করছে আর কিভাবে আমরা আস্তে আস্তে এক অনিবার্য ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর এই ভবিষ্যতে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কি – এগুলো জেনেছি আর সেই জ্ঞান আমার সামনে নতুন এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে এই কোর্স করার সুযোগ দিয়েছেন।

এই কোর্সে আমার সবচাইতে প্রিয় দিক ছিল – হামিদা আপু যে কোনো ঘটনা পড়ার পর সেখান থেকে কোনো না কোনো একটা দুয়া বের করতে শিখিয়েছেন। আদম (আ) ও শয়তানের কাহিনী অগণিতবার পড়েছি কিন্তু যেদিন আপু আমাদেরকে চিন্তা করতে বললেন যে এই ঘটনা থেকে কি কি দুয়া বানাতে পারি আমরা, তখন আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম এই ঘটনার প্রতিটা অংশ থেকে দুয়া বানানো যায়, তা জীবনে প্রয়োগ করা যায়। এটাই কুরআনের এক অনবদ্য বৈশিষ্ট্য, যে কোনো ঘটনা যে কোনো সময়ে যে কোনো মানুষের জীবনে কোনো না কোনো ইমপ্যাক্ট ফেলতে সক্ষম।

নিজের জীবন থেকে ছোট্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি। কোর্স চলাকালীন আমি আমার জীবনের সবচাইতে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হই। সেই নাজুক সময়টাতে যখন সম্পূর্ণ ভেংগে পড়ার উপক্রম, তখন আল্লাহর কাছে দুয়া করলাম – ”হে আল্লাহ! আপনি মূসা (আ) এর মায়ের অস্থির মন যেভাবে দৃঢ় করে দিয়েছিলেন তেমনি ভাবে আমার মনকেও আপনি শক্ত করে দিন যাতে আমি এই বিপদের মুকাবিলা করে আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারি।” দুয়া করার পরই এক অপার্থিব স্বান্তনায় আমার মন ভরে যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সে কঠিন পরীক্ষার প্রতিটা মুহূর্ত অবর্ণনীয় কষ্ট ছিল কিন্তু প্রতিমুহূর্ত এক অন্যরকম রহমত অনুভব করেছি আর আশাবাদী মু’মিনের মত আল্লাহর পুরষ্কারের আশায় ধৈর্য ধরতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ্‌। কোর্সটির ইন্সট্রাকটর হামিদা মুবাশ্বেরা আপুকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন এবং কোর্সের জ্ঞানকে যেন উত্তরোত্তর আরো কাজে লাগাতে পারি এই দুয়া করি। আমীন।


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন