’কুরআনের বর্ণণাশৈলী বোঝার পদ্ধতি’ কোর্স এর ২য় এসাইনমেন্ট

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

বর্তমান সময়ে আমরা প্রত্যেকেই সোশাল মিডিয়ায় প্রাত্যহিক জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করি। কিন্তু এই ’সোশাল মিডিয়া’ বস্তুত একটা ফাঁদের মতো। কেউ কেউ যেমন এই মিডিয়া ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে, নিজেকে সমৃদ্ধ করছে অন্যদিকে কেউ আবার অযথা শো-অফ করে কিংবা অন্যের পোস্টে কমেন্ট, পাল্টা কমেন্ট করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে।

কিভাবে আমরা সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারি—– এ সম্পর্কে কুরআন থেকে গাইডলাইন পেলে কেমন হয়? ’কুরআনের বর্ণনাশৈলী বোঝার পদ্ধতি’ কোর্স এর শিক্ষাথীদের ২য় এসাইনমেন্টের বিষয় ছিল-

ক) মুসা(আ:) ও ফেরাউনের কথোপকথনের ঘটনাক্রম কুরআনের রেফারেন্স সহ বর্ণনা করুন।

খ) মুসা (আ:) এর সাথে ফিরাউনের কথাপোকথনের সময় মুসা (আ:) যেসব কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন তা থেকে আমরা সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে কি গাইডলাইন পেতে পারি?

নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে সংক্ষেপে লিখুন।

উত্তর: ক) মুসা (আ:) ও ফেরাউনের কথোপকথনের ঘটনাক্রম রেফারেন্স সহ বর্ণনা করা হলো : –

১. মুসা (আ:) সরাসরি এজেন্ডা বললেন। একদম টু দা পয়েন্টে।

রেফারেন্স (২০:৪৭-৪৮), (২৬:১৬,১৭),(৭:১০৪-১০৫)

২. ফেরাউন এতে মনোযোগ না দিয়ে মুসা (আ:) ফোকাস নষ্ট করতে চাইল ।ছোটবেলায় লালন পালনের কথা ,লজ্জাজনক অতীত মনে করিয়ে দিল।

রেফারেন্স (২৬:১৮-১৯)

৩. মুসা (আ:) মেজাজ হারালেন না। সুন্দর করে আবার মূল টপিক নিয়ে আসলেন ।(আল্লাহ ও বনী ইসরাইল)।

রেফারেন্স (২৬:২০-২২),(৭:১০৪-১০৫)।

৪. উপায়ান্তর না দেখে ফেরাউন ওই পয়েন্টেই ফোকাস করতে বাধ্য হলো। “তোমার রব কে ?—এটা জানতে চাইলো।

রেফারেন্স (২৬:২৩), (২০:৪৯),।

৫. মুসা (আ:)  সুন্দর করে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় ব্যাখ্যা করলেন।

রেফারেন্স (২৬:২৪),(২০:৫০,৫৩) ।

৬.  ফেরাউন সবাইকে মুসা (আ:)এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে জাতীয় পর্যায়ে স্পর্শকাতর টপিক আনল। (পূর্বপুরুষদের কি হবে?)

রেফারেন্স (২৬:২৫,২৬),(২০:৫১)

৭. মুসা (আ:) তা এড়িয়ে গিয়ে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।

রেফারেন্স (২০:৫২)

৮. তাতেও কাজ না হওয়াতে মুসা (আ:) কে  অপবাদ দিলেন। (পাগল সাব্যস্ত করলেন)

রেফারেন্স (২৬:২৭)

৯. উনাকে নিয়ে মজা করতে লাগল। দেখি মুসার রবকে দেখা যায় কিনা?

রেফারেন্স (২৮:৩৮)

১০. কিছুতেই যখন কাজ হলো না তখন ক্ষমতা প্রয়োগ করে মূসা (আ:) কে কারাগারে নিক্ষেপ করতে চাইলো।

রেফারেন্স (২৬:২৯)

১১. মুসা (আ:) দুইটা নিদর্শন দেখালেন।

রেফারেন্স (২৬:৩০-৩৩),(৭:১০৬-১০৮)।

১২. সেটা দেখে ফেরাউনের মনে হলো মুসা  (আ:) জাদুকর এবং জাদুরবশে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিতে চান।

রেফারেন্স (২০:৫৭)(২৬:৩৪,৩৫),(৭:১০৯,১১০)।

১৩. ফেরাউনের সভাসদরা অবকাশ দিতে চাইলো এবং জাদুকরদের সাথে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাইলো।

রেফারেন্স (৭:১১১-১১২),(২৬:৩৬-৩৮)।

খ) আমরা যদি উপরোক্ত রেফরেন্স অনুসারে  কুরআন থেকে আয়াতগুলো ধারাবাহিকভাবে পড়ি তবে মুসা (আ:) এর সাথে ফিরাউনের কথাপোকথনের সময় মুসা (আ:) যেসব কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন তা থেকে আমরা সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু  গাইডলাইন পেতে পারি। যেমন-

নিজে পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে– মূল ইস্যু তে ফোকাসড থাকা অর্থাৎ কি উদ্দেশ্য নিয়ে পোস্ট করছি তা যেন লেখার মাধ্যমে ফুটে ওঠে।

কুরআন, হাদিস বা অন্য কোনো উৎস থেকে তথ্য দিলে তার যথাযথ রেফারেন্স দেয়া, যেন পাঠকের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়।

অন্যের লেখা পোস্ট এর ক্ষেত্রে- পোস্টের বিষয় বিতর্কিত হলে অথবা এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে কোন প্রকার সংশয় থাকলে বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের জ্ঞান কম থাকলে অযথা  নিজের আইডি থেকে শেয়ার না করা এবং যথাসম্ভব সেটা এড়িয়ে যাওয়া।

নিজে কমেন্ট করার ক্ষেত্রে- যৌক্তিক কারণ ছাড়া অন্যের লেখা পোস্ট এ কমেন্ট করে অপ্রোয়জনীয় আলাপে না জড়ানো।

অন্যের কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার ক্ষেত্রে– কেউ ট্রল বা বুলি করলে রিঅ্যাক্ট না করা এবং মেজাজ না হারানো।

ইচ্ছাকৃতভাবে কথা অন্য প্রসঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেই কমেন্টের উত্তর না দেওয়া।

কেউ কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়ার সময় ভারসাম্য বজায় রাখা। এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা যাতে কেউ অপমানিত ফিল করবে না, আবার কাউকে অহেতুক খুশি করার জন্য চাটুকারিতার আশ্রয়ও নেয়া যাবে না।

নিজের জীবনের উদাহরণ: ( ২জন শিক্ষাথীর এসাইনমেন্ট এর উত্তর থেকে নেয়া হয়েছে)

 ১) ফেসবুকে একবার মুহাম্মদ(সা:)এর সাথে বিবি আয়েশা (রা:) এর বিয়ে নিয়ে এক অমুসলিমের সাথে বিতর্ক করতে হয়েছিল। ঐ অমুসলিম আমাদের রাসুল (সা:)কে পেডোফাইল বলছিল।

আমি উত্তরে বলছিলাম, ইসলামে একটা মেয়ে সম্মতি না দিলে বিয়ে হয় না। রাসুল (সা:) যদি পেডোফাইল হন (নাউযুবিল্লাহ) তাহলে আয়েশা (রাঃ) বিয়েতে সম্মতি কিভাবে দিল? উনাকে তো বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।

তখন ঐ অমুসলিম বলল, ৯ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের পক্ষে ‘বিয়ে’ কি তা বুঝা সম্ভব নয়, সে সম্মতি দিলেও তা বুঝে দেয় নি। আমি তখন তাকে ইন্টারনেট থেকে খুঁজে বেশ কয়েকটি ভিডিও দিলাম, যেখানে পশ্চিমা ৮-৯ বছরের ছেলে-মেয়েরা একজন আরেকজনকে বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছে, এক মেয়ে হলিউডের এক নায়ককে (যার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি) বিয়ে করতে চাচ্ছে। এমনকি এত ছোট বয়সের ২টা বাচ্চা ছেলে মেয়ে লুকিয়ে একসাথে বাস করা শুরু করে দিয়েছিল, পরে তাদের অভিভাবক তাদের উদ্ধার করে। আমি ঐ লোককে তারপর জিজ্ঞেস করলাম, এরা বিয়ে না বুঝলে এসব কিভাবে সম্ভ? সে এরপর আর কোন উত্তর দেয়নি।

ঐ পোস্টে আরও অনেক অমুসলিম (বিভিন্ন দেশের, কোন ধর্মের জানি না) আমাদের রাসুল (সা:), ইসলাম ধর্ম, মুসলিমদের নিয়ে খুব বাজে ভাষায় ট্রল, হাসি -ঠাট্টা, গালাগালি করছিল। কয়েকজন মুসলিম তাদের কথার উত্তর দিচ্ছিল, তাদের দেব-দেবীকে গালাগালি করছিল। কমেন্ট বক্সের পরিবেশ খুবই নোংরা হয়ে গিয়েছিল।

আমাকে মেনশন করেও কটূক্তি করছিল কেউ কেউ। গাধা,মাথামোটা এসব বলছিল। আমার যুক্তি দেখানো কমেন্টে হাহা রিঅ্যাক্ট দিচ্ছিল সবাই মিলে। আমার খুবই খারাপ লাগলেও মাথা গরম করিনি, তাদের কারো কথারই উত্তর দেইনি, সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছি।

২) প্রতিবছর “শবে বরাত” আসলেই আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিমরা দিনটি ভাব গাম্ভীর্যের সাথে পালন করে। অনেকেই বিশ্বাস করে এটা “ভাগ্য নির্ধারণের রজনী”। কিন্তু আমি নিজে যখন জানলাম, মুসলিমদের ভাগ্য নির্ধারিত হয় ’লাইলাতুল কদর’ এর রাতে, তখন ঠিক করলাম শবে বরাত নিয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ফেসবুকে পোস্ট দিব।

তো পরিকল্পনা মাফিক এটা নিয়ে নির্ভরযোগ্য আলেমদের ইজতিহাদ ও ভিডিও লিংক বের করে ফেসবুকে শেয়ার করলাম। ভাগ্য রজনী বলতে কুরআনে যে ’লাইলাতুল কদরকে’ বোঝানো হয়েছে সেই আয়াত খুঁজে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম।

ফলস্বরূপ দেখা গেল, আমার ফ্রেন্ডলিস্টের কয়েকজন অসন্তোষ প্রকাশ করলো, এলোমেলো মন্তব্য করলো।  কিন্তু একপর্যায়ে তাদেরকে যখন আলেমদের ইজতিহাদ এবং কুরআনের রেফারেন্স ভালো করে মিলিয়ে দেখতে বললাম, কুরআনের সেই আয়াতের তাফসীর এর স্ক্রিনশট শেয়ার করলাম তখন তারা আমার মূল ফোকাস বুঝতে পেরে সেটার বিরুদ্ধে আর কোনও প্রশ্ন তুলেনি।


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন