’কুরআনের বর্ণণাশৈলী বোঝার পদ্ধতি’ কোর্স এর ১ম এসাইনমেন্ট

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

কুরআনের বর্ণণাশৈলী বোঝার পদ্ধতি’ কোর্স এর শিক্ষার্থীদের ১ম এসাইনমেন্টের বিষয় ছিল আদম (আ:) কে সৃষ্টি, তাঁকে কেন্দ্র করে ইবলিশ ও মহান আল্লাহতাআলার কথোপকথন সম্পর্কিত কুরআনের বিভিন্ন সূরায় যে আয়াতগুলো রয়েছে সেগুলোকে একসাথে করে একটি সামগ্রিক চিত্র তৈরি করা এবং এরপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর লেখা।

আমাদের শিক্ষার্থীরা এসব প্রশ্নের উত্তরে দারুণ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন , যা থেকে আমাদের সবার জন্যই চিন্তার খোরাক রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্টের সম্পাদিত অংশ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই পর্বটি।

১। আদম(আঃ) এর সৃষ্টি থেকে দুনিয়াতে আগমন পর্যন্ত ঘটনাক্রম বর্ণনা করুন রেফারেন্সসহ।

উত্তর: আদম(আঃ) এর সৃষ্টি থেকে দুনিয়াতে আগমন পর্যন্ত ঘটনাক্রম রেফারেন্সসহ বর্ণনা করা হলো-

সৃষ্টির পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নঃ সুরা বাকারাহর ৩০ নং, সুরা আ’রাফের ১১ নং এবং সুরা সাদের ৭১ ও ৭২ আয়াত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের জানিয়ে দিলেন যে তিনি পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছেন। কিছুটা কৌতুহল কিংবা আশংকা নিয়ে ফেরেশতাগণ আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলেন হঠাৎ করে আল্লাহর এমন ইচ্ছে কেন হল।  তারা আশংকা করছিলেন, আল্লাহর এই খলিফারা আবার না যমীনে অরাজকতার সৃষ্টি করে। আবার তাঁরা হয়ত ভীত হয়ে পড়েছিলেন যে, আল্লাহর তাসবীহ পাঠে তাঁদের কোনো ত্রুটি হয়ে যাচ্ছে কি না, যার জন্য আল্লাহ নতুন সৃষ্টির সূচনা করতে যাচ্ছেন। কাদামাটি থেকে আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করলেন আদম(আঃ)কে, তাঁর মাঝে সঞ্চার করলেন রুহ, আর তারপর এলো ফেরেশতাদের কৌতুহল মেটানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন কতটা চমৎকার এক সৃষ্টি আল্লাহ তা’আলা প্রেরণ করতে যাচ্ছেন যমীনের বুকে।

আদম(আঃ) কে শিক্ষা প্রদানঃ  আল্লাহ তা’আলা আদম(আঃ) কে সমস্তকিছুর নাম শিখিয়েছিলেন। আল্লাহ তা’আলা যা জানেন,তার সমস্ত কিছু জানার সাধ্য কোনো সৃষ্টির নেই। আল্লাহ তা’আলা সেই ক্ষমতা দেননি। তিনি আসমান, জমীনের সমস্ত কিছুর জ্ঞান রাখেন। জ্ঞান রাখেন এমন ব্যাপারে যা আমরা প্রকাশ করি কিংবা গোপন করি। সুরা বাকারাহর ৩১,৩২ এবং ৩৩ নং আয়াত নিয়ে চিন্তা করলে বোঝা যায়, আদম (আঃ) এমন জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন,যা ফেরেশতাদের ছিল না। এরপর আল্লাহ তা’আলা সমস্তকিছু তাঁদের সামনে হাজির করে সেগুলোর নাম জানতে চেয়েছিলেন। ফেরেশতাগণ তা জানাতে পারেননি এবং আদম (আঃ) পেরেছিলেন।

আদম(আঃ)কে সিজদাহর ঘটনাঃ ফেরেশতাদের সামনে আদম(আঃ) এর বিশেষত্ব তুলে ধরার পর আল্লাহ তা’আলা তাঁদের আদেশ দিয়েছিলেন আদম(আঃ)কে সিজদাহ করতে। উল্লেখ্য যে, এই ঘটনার সময় সেখানে ইবলিশও উপস্থিত ছিল। আল্লাহর আদেশ পেয়ে ফেরেশতাগণ সকলেই আদম(আঃ)কে সিজদাহ করলেন। ইবলিশ আল্লাহ  তা’আলার এই আদেশ অগ্রাহ্য করল। যার ফলে সে পরিণত হল একজন কাফিরে। কুর’আনের বেশ কয়েক জায়াগায় আল্লাহ তা’আলা এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন। যেমন ,সুরা বাকারাহর ৩৪ নং আয়াত, সুরা আ’রাফের ১১ নং আয়াত, সুরা আল-হিজরের ৩২ নং আয়াত। কুর’আনে এই ঘটনার পরবর্তী ঘটনাসমূহের যে ক্রম বর্ণিত হয়েছে,তাতে খুব সূক্ষ্মভাবে আল্লাহ তা’আলার মহানুভবতা আর ইবলিশের ঔদ্ধত্য ফুটে উঠেছে যা ক্রমান্বয়ে আমাদের নিয়ে যাবে দুনিয়াতে আদম(আঃ), হাওয়া(আঃ) এবং ইবলিশের আগমনের ঘটনার দিকে।

ইবলিশকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ প্রদানঃ  সুরা সাদের ৭৫-৭৬, সুরা ইসরার ৬১, সুরা হিজরের ৩৩ এবং সুরা আ’রাফের ১২ নং আয়াতে আমরা দেখি যে,সিজদাহ না করার ঘটনায় আল্লাহ তা’আলা সাথে সাথে ইবলিশকে শাস্তি দিলেন না। তাকে সুযোগ দিলেন আত্মপক্ষ সমর্থনের। ইবলিশের কাছে সুযোগ ছিল ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজের ভুলকে শুধরে নেওয়ার। কিন্তু আল্লাহর আদেশ অমান্য করে ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ইবলিশের ভিতর লুকিয়ে থাকা অহংকার এবার বেরিয়ে আসতে লাগল ঔদ্ধত্যের সাথে।

সুরা আরাফের ১২ নং, সুরা হিজরের ৩৩, সুরা আল-ইসরার ৬১ নং এবং সুরা সাদের ৭৬ নং আয়াত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আগুনের তৈরি ইবলিশের ভীষণ আপত্তি ছিল কাদামাটি থেকে তৈরি আদম(আঃ) কে সিজদাহ করতে। তার এমন অহংকার আল্লাহ তা’আলা মেনে নিলেন না।  জান্নাত থেকে বিতাড়িত হিসেবে ঘোষণা করলেন ইবলিশকে। কিন্তু এতে করে শয়তান অনুতপ্ত হলো না। আবার আল্লাহর অশেষ দয়ার কথা তার অবিদিত ছিল না। তাই বিতাড়িত হিসেবে ঘোষণার পরেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে সে আরো ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে লাগল। আদম(আঃ)কে শত্রুজ্ঞান করে আল্লাহর কাছে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত  অবকাশ চাইলো সে, যেনো যেভাবে ইচ্ছা আদম(আঃ) এবং তার বংশধরদের পথভ্রষ্ট করতে পারে। দয়াময় আল্লাহ তা’আলা অহংকারী, অপরাধী শয়তানের এই দুয়া কবুল করলেন। কিন্তু তওবার দরজা খোলা রাখলেন তাঁর প্রিয় বান্দা আদম(আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের জন্য। শয়তানকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করার সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা আদম ও হাওয়া (আঃ)কে জান্নাতে থাকার অনুমতি দিলেন।

আদম ও হাওয়া(আঃ) এর ভুল এবং তওবা; অতঃপর দুনিয়াতে আগমনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম ও হাওয়া (আঃ)কে জান্নাতে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন, অনুমতি দিয়েছিলেন তাদের যা ইচ্ছে হয় উপভোগ করার। নিষেধ ছিল শুধু একটিমাত্র গাছের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু আদম(আঃ) এর ক্ষতি করার ইচ্ছে নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকা ইবলিশ নানান ছল ছুতো করে আদম ও হাওয়া(আঃ)কে ভুলিয়ে দিয়েছিল আল্লাহর আদেশ। সুরা আল-আ’রাফের ২১ নং আয়াতে আমরা দেখি, ইবলিশ তাঁদের বিশ্বাস করাতে সক্ষম হল যে, সে তাঁদের একজন কল্যাণকামী। অবশেষে সফল হয়েছিল ইবলিশ। আল-আরাফের ২২ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে আদম(আঃ) ও হাওয়া (আঃ) সেই গাছের ফল খেলেন, যার ফলশ্রুতিতে তাদের শরীর অনাবৃত হয়ে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ পেয়ে গেলো। আল্লাহ তা’আলা এবার তাদেরও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলেন এবং তারা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন। সুরা বাকারাহর ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেছেন, তাঁর কাছ থেকে পাওয়া শব্দগুচ্ছ দিয়ে আদম(আঃ) তওবা করলেন আল্লাহর নিকট। আর আল্লাহ তা’আলা কবুল করলেন সে তওবা। কিন্তু তাদের নামিয়ে দিলেন পৃথিবীর বুকে। সাথে নামিয়ে দিয়েছেন ইবলিশকে।কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ইবলিশ আর আদম(আঃ) এর বংশধরদের এক লড়াই চলতে থাকবে। সে লড়াইয়ে তারাই জয়ী হবে যারা আল্লাহর দেখানো পথে থাকবে। পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়ার সময় সে কথাও আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, যা আমরা পাই সুরা বাকারাহর ৩৮ নং আয়াতে।

২। আদম (আঃ) কে সিজদাহ না করার ঘটনা কোন কোন সুরায় আছে রেফারেন্স সহ লিখুন। এগুলো একসাথে পড়ে আপনার কেমন লেগেছে? আল্লাহ সম্পর্কে কেমন ধারণা হয়েছে? কোনো ভুল ধারণার অবসান হয়েছে? সংক্ষেপে লিখুন।

উত্তর:  ইবলিশ কর্তৃক আদম (আঃ) কে সিজদাহ না করার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যেসব সূরায় সেগুলো হলো-

সুরা আল-বাকারাহঃ আয়াত ৩০-৩৮

সুরা আল-আ’রাফঃ আয়াত ১১-২৫

সুরা আল-হিজরঃ ৩২-৪২

সুরা আল-ইসরাঃ ৬১-৬৫

সুরা আল-কাহফঃ ৫০

সুরা সাদঃ ৭১-৮৫

এই আয়াতগুলো একসাথে পড়ার পর আমার আল্লাহর প্রতি সুধারণা বেড়েছে। সেই সাথে অবসান হয়েছে আজন্ম লালন করে আসা একটি ভুল ধারণার। আর তা হলো, ইবলিশ একটা সিজদাহ করেনি বলেই আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন—ব্যাপারটা আসলে তা নয়।

কেবল  সিজদাহ না করার কারণে ইবলিশকে বহিষ্কার করা হয়নি। আমাদের রব এমন নন, যিনি বাইরে থেকে দেখে বিচার করেন। বরং ইবলিশের মাঝে লুকিয়ে থাকা অহংকার সেদিন বেরিয়ে এসেছিল, সেদিন সে দেখিয়েছিল আল্লাহর আদেশ লংঘন করার স্পর্ধা, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েও তওবা করার পরিবর্তে অহেতুক আস্ফালন করে তার পথভ্রষ্ট হওয়ার দোষ চাপাতে চেয়েছিল আল্লাহর উপরেই। মূলত ঔদ্ধত্যপূর্ণ এইসব অপরাধেই অপরাধী ছিল ইবলিশ, যার জন্য সে বিতাড়িত হয়েছিল জান্নাত থেকে। এই সহজ কথাটার সহজ ব্যাখ্যা জেনেছি এই আয়াতগুলো পড়ে।

৩। শয়তানের সাথে আল্লাহর কথোপকথনের আয়াতগুলোতে শয়তানের কী কী কৌশলের উল্লেখ করা হয়েছে? রেফারেন্স সহ উল্লেখ করুন। আমাদের সময়ে এসব কৌশলের প্রয়োগ লিখুন।

উত্তর: শয়তানের সাথে আল্লাহর কথপকথনের আয়াতগুলোতে শয়তানের বিভিন্ন কৌশলের উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-

  • সুরা ইসরার ৬৪ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে শয়তানের কন্ঠস্বরের কথা, যা দ্বারা সে ওয়াসওয়াসা দেয় মানবমনে। আল্লাহর বান্দাদেরকে উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত করতে থাকে, তাদেরকে পাপকার্যে উৎসাহিত করে। এছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে শয়তানের পক্ষে লড়াই করা পদাতিক বাহিনী, অশ্বারোহী বাহিনীর কথা। আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার যে প্রতিজ্ঞা নিয়ে ইবলিশ জান্নাত থেকে বেরিয়ে এসেছিল সে প্রতিজ্ঞা পূরণে সে সুকৌশলে প্রবেশ করে আমাদের পরিবারে, আমাদের সন্তান সন্ততিতে, আমাদের ধন-সম্পত্তিতে।

 আমাদের ধন সম্পত্তিতে শয়তান অংশীদার হওয়ার উদাহরণ হলো- সুদী ব্যাংকিং সিস্টেমের ব্যাপক প্রচলন করা। ব্যাংক ছাড়া আজকাল কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন হয় না অথচ ব্যাংকগুলো পরিচালনা করা হয় সুদী এক চক্রের মাধ্যমে।

সন্তান সন্ততিতে শয়তানের শরীক হওয়ার উদাহরণ হলো-  ব্যভিচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেয়া, অজ্ঞতা বশতঃ পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের ভুল নাম রাখার মাধ্যমে তাদের ইয়াহূদী, খৃস্টান, মাজুসী ইত্যাদি বানিয়ে দেয়া ইত্যাদি।

  • সুরা আ’রাফের ১৬ নং আয়াতে আল্লাহ আমাদের আরও জানিয়ে দিয়েছেন শয়তান তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ওঁত পেতে থাকবে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে। শুধু তাই  নয়, আমাদের হতবিহ্বল করে রাখার সমস্ত চেষ্টা সে করবে।
  • সুরা আ’রাফের ১৭ নং আয়াতেই আল্লাহ তা’আলা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন শয়তান আমাদের ওপর আক্রমণ চালাবে সামনে থেকে, পেছন থেকে, বাম দিক থেকে, ডান দিক থেকে। যেকোনো উপায়ে তার চেষ্টা থাকবে মানুষকে অকৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে উপস্থাপন করা।

ডানদিক থেকে শয়তানের আক্রমণ করার উদাহরণ হলো, ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে সে আমাদের অলস করে দেয়,ভালো কাজ করার আগ্রহ কমিয়ে দেয়। সে যদি সরাসরি মন্দ কাজ করাতে না পারে তবে ভালো কাজ করার সক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। যেমন- অলসতার কারণে ফজর মিস করা,ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কুরআন না পড়া। এভাবেই ভালো কাজ করা থেকে সে আমাদের মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়।

শয়তানের একটা অন্যতম বড় চক্রান্ত হলো একটা নেক কাজ করার সময় আরেকটা

কাজের গুরুত্ব তুলে ধরা। যেমন- আরবি শিখছে এমন কারো কাছে তাজবীদের গুরুত্ব তুলে ধরা,একটার পর একটা কোর্সে এনরোল করা,সালাত পড়ার সময় কুরআন/তাফসির পড়ার কথা বারবার স্মরণ হওয়া এবং যেইমাত্র নামাজ শেষ তৎক্ষনাৎ কুরআন পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া। এই চক্রান্তে পড়লে মানুষ যে ভালো কাজ করছিল সেটাতো ভালোভাবে করতে পারেই না বরং যেটা করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছিল সেটাও করতে পারে না। কারণ সেটা করতে গেলে আবার আরেকটা কাজকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরে। এমনটি করলে আসলে কিছুই করা হয় না,হতাশা চলে আসে।

ডান পাশ থেকে শয়তানের আরেকটি আক্রমণ কৌশল হলো,সে ভালো কাজগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমাদেরকে বিনয়ী হওয়ার পরিবর্তে অহংকারী করে তুলতে চায়।

উদাহরণঃ কেউ হজ্জ করে আসার পর চায় মানুষ তার নামের আগে আলহাজ্ব বলুক। ভালো কাজের স্বীকৃতি পাওয়ার কামনা অন্তরে বাসা বাঁধে।

কোনো শায়েখের ভুল কেউ সংশোধন করে দিলে সে প্রচন্ড অপমানবোধ করে বলতে থাকে,”তার কী যোগ্যতা আছে আমাকে শুধরানোর? আমি দ্বীনের জন্য এত এত কাজ করেছি..”

নিজেকে অনেক বেশি জ্ঞানী ও প্র্যাকটিসিং মনে হওয়ার ফলে আল্লাহর কথা অন্তরকে নাড়া দেয় না;কুরআন শুনেও চোখ থেকে পানি ঝরে না কারণ তখন মনে হয় আমি তো এসব আগে থেকেই জানি(এসব নাসিহা অমুক অমুক ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য)। এভাবে শয়তান চায় আমাদের বিনম্রতার অনুভূতি যেন হারিয়ে যায়।

 ৪। কুর’আনের তিনটি আয়াত খুঁজে বের করুন যেখানে ইবলিশ আল্লাহর কাছে কী দুয়া করেছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে।

যে তিনটি আয়াত পাবেন, সেখান থেকে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিনঃ

ক)          শয়তান আল্লাহর কাছে কী দুয়া করেছিল?
খ)           এই আয়াতগুলো থেকে আমরা দুয়া করার কী আদব শিখতে পারি?
গ)           এই আয়াতগুলো পড়ে আপনার মনে খুব দাগ কেটেছে এমন দুইটি বিষয় উল্লেখ করুন।
ঘ)           এই আয়াতগুলো পড়ার পর আপনার মনে কী দুয়া এসেছে?

উত্তর: ইবলিশ আল্লাহর কাছে দুয়া করেছিল এই বিষয়ে তিনটি আয়াত হলো —

  • সূরা আরাফ, আয়াত ১৪
  • সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৬২
  • সূরা হিজর, আয়াত ৩৬

ক) ইবলিশ আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলো,”হে আমার রব আমাকে শেষ দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব।”

খ) এই আয়াতগুলো থেকে আমরা দুআ করার যে আদবগুলো শিখতে পারি তা হলো-

১. কুরআনের অসংখ্য জায়গায় নবি-রাসূলগণ আল্লাহকে রব্বি বা রব্বানা বলে সম্বোধন করে দুআ করেছেন। ইবলিশও আল্লাহর কাছে দুআ করার সময় ‘হে আমার রব’ বলে দুআ শুরু করেছেন। আমরাও সম্বোধনের দ্বারা মনোযোগ আকর্ষণ করে দুআ শুরু করতে পারি।

২. ইবলিশ যেমন একা জাহান্নামে যেতে চায় না, সে চায় সমস্ত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে জাহান্নামে নিয়ে যেতে। আমরা তেমনি শুধু নিজের কল্যাণের জন্য দুআ করব না বরং আমার  আত্নীয়সজন,বন্ধুবান্ধব,প্রতিবেশী,শুভাকাঙ্ক্ষী সবার জন্য দুআ করব যেন তাদের আমি তাদের জান্নাতে যাওয়ার উসিলা হতে পারি।

গ) এই আয়াতগুলো একসাথে পড়ার পর আমার মনে যে বিষয়গুলো দাগ কেটেছে তার মধ্যে ২ টা হলো-

১) দুআ করার ব্যাপারে কখনও পিছপা না হওয়া

শয়তান কিছুক্ষণ আগেও প্রচন্ড দাম্ভিকতার সাথে নিজের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহকেই দোষারোপ করছিল এবং আল্লাহ যখন তাকে বের হয়ে যেতে বললেন তখন  সে মাথা নিচু করে বের হয়ে যায়নি বরং দুয়া করেছে।

যাস্ট এতটুকু যদি আমরা কানেক্ট করতে পারি তখন আর দুয়া করার ব্যাপারে পিছপা হবো না। এটা ভাববো না যে আমি তো অনেক গুনাহ করেছি আল্লাহ কি আমার দুয়া কবুল করবেন? বরং এটা ভেবে আশান্বিত হবো যে,আল্লাহ যদি শয়তানের দুয়া কবুল করতে পারেন তাহলে আমার দুয়াও কবুল করতে পারবেন। আর শয়তানের দুয়া কবুল দেখে আল্লাহ যে রহমানুর রহীম সেটাও বুঝতে পারি।

 ২) কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া

সূরা আ’রাফে শয়তান যখন আল্লাহকে বলছে, সে আদম সন্তানকে সামনে থেকে পেছন থেকে ডান দিক থেকে ও বাম দিকে থেকে আক্রমণ করবে, অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ অবস্থায় পাওয়া যাবে না।

এখানে শয়তান কিন্তু বলেনি সলাত কায়েমকারী হিসেবে পাওয়া যাবে না অথবা অন্য কিছু। তাহলে আমরা আমাদের জীবনে যত ইবাদত করি, তার পাশাপাশি কৃতজ্ঞ থাকাটাও আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ!  কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার মাধ্যমে আমরা শয়তানকে পরাজিত করি। আল্লাহর বান্দাদের উপর যে শয়তানের কোনো ক্ষমতা নেই, সেই বিষয়টিও নিজেদের মাঝে ধারণ করতে পারি কৃতজ্ঞ থাকার মাধ্যমেও।

ঘ) এই আয়াতগুলো পড়ার পর আমার মনে যেই দুয়াগুলো এসেছে তা হলো-

  • হে আল্লাহ! আমাকে তোমার সেই সকল অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো যাদের উপর শয়তানের কোনো কৌশল কাজ করে না।
  • হে আল্লাহ !তুমি তো  বান্দার মনের গহীনের সুক্ষ্ম চিন্তার ব্যাপারেও বেখবর নও, আমার অন্তরে যদি বিন্দু পরিমাণ অহংকার থেকে থাকে তাহলে তা দূর করে দিও।
  • হে আল্লাহ! যে কোনো ভুল করার পর সাথে সাথে যেন তোমার কাছে তাওবা করতে পারি সেই তাওফিক দিও।

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন