এখন ওরা ভালো আছে….

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

.
কান পেতে শোনো বাতাসের কথা,
চিৎকার করছে দেখো কত না বলা কথা!’ –
এই টুনটুনি কী বলছিস রে এসব? কদিন ধরে তোর খুব কবি কবি ভাব গজিয়েছে দেখছি!
কেনো কী বলছি কথা শুনতে পাচ্ছিস না? দেখ না ঝাঁকে ঝাঁকে শালিকের দল আবার কোথ্যেকে এসে জুটছে সব! –
তাই তো দেখছি। কাহিনীটা কী ঘটছে বল তো? দুষ্টু ছেলেগুলোকে আর দেখছি না।
যারা গত দু-বার আমার ডিমগুলো চুরি করেছিলো। এবার অনেকটা নিশ্চিন্তে ডিমগুলো বাসায় রাখতে পারবো। খাবার খোঁজার সময় চিন্তিত হয়ে ঘুরতে হবে না। – আমার ছানাগুলো তো ইতোমধ্যে উড়তে শিখে গেছে। ওদের নিয়েও ভয় নেই। আকাশটা দেখ কত সুন্দর গাঢ় নীল হয়ে থাকে। ধুড়ুম ধাড়ুম করে ইয়া বিশাল দৈত্যগুলো উড়ে আসে না। –
যা বলেছিস! দৈত্যের মত পাখিগুলো ভেতরে আবার মানুষও থাকে! আচ্ছা ওরা কেনো আমাদের উড়ার জায়গায় আসে? মাটিতে উড়তে পারে না বলেই? তারপর দেখ না! মাটি থেকেও কেমন সবসময় লম্বা খাম্বার মাথা দিয়ে কালো কালো ধোঁয়া উড়ায়। আমার যে কী কষ্ট হতো সেসব ধোঁয়ায়! ধোঁয়ার কারণে বুলবুলি সমাজের কত পাখি যে অসুস্থ্য হয়েছে আর মারা গেছে! কিন্তু ব্যাপারটা কী বল তো? ধোঁয়ার নল আর ইটগুলো সব খালি পড়ে আছে কেনো? মানুষগুলো সব কোথায়? –
তাই তো দেখছি! মানুষগুলো সব কোথায়? আকাশের দৈত্য পাখিগুলো গেলো কই? বাতাসটা এতো নির্মল হয়ে উঠলো কিভাবে? এতোদিনে বুঝি আমরা একটু শান্তিতে থাকতে পারবো! সবসময় ভয়ে ভয়ে, অল্প নিরাপদ জায়গায় উড়তে হবে না। –
ঠিক বলেছিস রে টুনটুনি! তোর মতো এখন আমারও কবিতা আবৃত্তি করতে মন চাচ্ছে–
‘বাঁধনহারা মন রে আমার বাঁধনহারা মন
পাখনাগুলো মেলে রে চায় উড়তে সারাক্ষণ!
আজ বুঝি আর নেই কোনো ভয় আকাশ সীমাহীন
নির্ভয়ে আজ গাই চল গান তাক ধিনা ধিন ধিন!’

.
মা দেখো দেখো কী সুন্দর বালি আর বালি! আমাদের কত বড় খেলার জায়গা তাই না মা? –
হ্যাঁ রে! তোরা অনেক বড় খেলার জায়গা পেলি। তবে তোদের আগের ভাইবোন-গুলো এতোটা পায়নি কখনো। সারাক্ষন মানুষের আনাগোনা আর রাতে হোটেলের ঝিকমিক আলোয় এ জায়গায় নির্ভয়ে ডিম পাড়তে আসতে পারতাম না। যাও পাড়তাম সেগুলোও প্রচুর চুরি হয়ে যেতো। তারপর তাড়াহুড়ো করে জলে চলে যাওয়া। ছানারা নির্ভয়ে একটু খেলতেও পারতো না বালিতে। –
তাহলে এখন ওরা কোথায় সবাই মা? চারদিক তো খাঁ খাঁ করছে! কী সুন্দর এই সেন্টমার্টিন দ্বীপটা! ওদেরকে বলে দাও না মা ওরা যেনো আর ফিরে না আসে! আমাদের জায়গায় কেনো ওরা আসবে বলো? আমরা কি ওদের জায়গায় গিয়েছি? –
সে তো আমিও বুঝতে পারছি না-রে মানুষগুলো সব কোথায় গেলো। ওদের ভয়ে তো শান্তিতে দিনের বেলা একটু দ্বীপে আসতে পারতাম না। দেখলেই কাছিম কাছিম চিৎকার করে লোক জড়ো করে ফেলতো। আমাদের বুঝি ভয় করে না? যাক যাই হয়ে থাকুক, ওরা যেনো আর ফিরে না আসে। একটু নিশ্চিন্তে ডিম পাড়তে পারবো। ছানাদের জন্য আর ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না।

.
– তুই কি খেয়াল করেছিস ডলফিন? বেশ কদিন ধরে যে জেলেদের জালগুলো আর আমাদের ধরতে আসছে না?
– হ্যাঁ রে! ওদের জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে তো শান্তিতে একটু উপরের দিকে উঠতেও পারতাম না। চল আজ পাড়ের দিকে একটু দেখে আসি ব্যাপারটা কী।
– হ্যাঁ চল।
– আরে! সৈকত দেখছি পুরোই ফাঁকা! আমি ভেবেছিলাম খালি নৌকার জেলেগুলোই আসছে না! এখন দেখছি পাড়েও কোনো মানুষ নেই! আমাদের তবে আর ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না এখন থেকে। কী মজা! চল আরো ডলফিনদের ডেকে নিয়ে আসি।
– হ্যাঁ। আজ আমরাও দলবেঁধে সৈকত দেখবো। আজ আর কোনো ভয় নেই।

.
– বনের বাইরে কেমন একটু দেখে আসি মা?
– যাস না ছানা আমার! সুন্দর হরিণ দেখলেই ওরা খাঁচায় বন্দি করতে চায়। আমার আরো দুটো ছানাকে সেই যে নিয়ে গেলো! আর ফেরত এলো না।
– কিন্তু ওদিকে তো কেউ নেই মা! গতকাল বিছে হরিণটা দিব্যি সমুদ্র সৈকতে স্নান করে এলো! কেউ নাকি ছিলো না!
– বলিস কী? সবসময় যেখানে মানুষের ভীড় লেগে থাকে সেখানে কেউ নেই? ব্যাপারটা কী?
– হ্যাঁ গো মা! তা না হলে আর বলছি কী? আমার বন্ধুরা সবাই সাগরে স্নান করেছে। আজ আমিও যাই না মা! দয়া করে মানা করো না!
– তবে চল তোর সাথে আমিও যাবো। দেখতে হচ্ছে তো ব্যাপারটা!
– কী মজা কী মজা! চলো চলো!
– আরে! মানুষগুলো সব গেলো কোথায়? ওদের ভয়ে তো শান্তিতে দু-দন্ড ঘুরতে পারতাম না।
– আজ আমিও সাগরে স্নান করবো মা! তারপর ওদের গিয়ে খুব করে ভেংচি কাটবো। গতকাল আমাকে ছাড়াই ওরা স্নান করেছে। কী দুষ্টু! মা দেখো! কী সুন্দর পানিগুলো আমার দিকে ছুটে আসছে! কী মজা কী মজা!!
– কর বাবা কর। খুব স্নান কর। তবে বেশি গভীরে যাস না যেনো!
—————————— ——————————————–
এমন সময় ডলফিনগুলোও হরিণছানার কাছাকাছি এসে নাচতে লাগলো। কচ্ছপগুলোও একবার পানির বাইরে একবার ভেতরে উঁকি দিতে লাগলো। ঝাঁকবেঁধে অনেক কাছিম বেলাভূমিতে ঘুরতে লাগলো। উপর দিয়ে মাছরাঙা আর ডাহুকগুলোও পৃথিবীর এক নতুর রূপ দেখতে লাগলো। বদলে গেছে পৃথিবী। আগে যে পৃথিবীটা শুধু স্বার্থপর মানুষদের ছিলো, আজ সে পৃথিবীটাকে তাদের খুব নিজের মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো এতোদিনে বুঝি সত্যিই তারা বাঁচার মত বাঁচতে পারছে। 


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন