প্রশ্ন:
মূসা (আ:) মিশর থেকে মাদইয়ান পৌঁছালেন ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায়। এই সময় এক কূপের ধারে তিনি দেখলেন একদল লোক তাদের পশুকে পানি পান করাচ্ছে। আর তাদের পেছনে দুজন মেয়ে নিজেদের পশু নিয়ে অপেক্ষা করছে। এটা দেখে মূসা (আ:) তাদের পশুকে পানি পান করিয়ে দিলেন । এরপর তিনি গাছের ছায়ায় বসে আল্লাহর কাছে দুআ করলেন। পরবর্তীতে মেয়ে দুটোর বাবা তাকে ডেকে নেন এবং তার এক মেয়ের সাথে মূসা (আ:) এর বিয়ে দেন।
”সূরা ক্বাসাসের ২৩-২৮ নং আয়াতে উল্লেখিত ঘটনা থেকে আমরা নারী-পুরুষ Interaction এর ব্যাপারে কি কি গাইডলাইন পেতে পারি?”
উত্তর:
সূরা ক্বাসাসে উল্লেখিত এই ঘটনা থেকে আমরা সমাজের একটি বাস্তব চিত্রের ধারণা পাই। সব পরিবারেই যে পুরুষ সদস্যরা বাইরের দায়িত্ব পালনে সর্বদা সক্ষম থাকবে এমনটা নাও হতে পারে। যেমন আলোচ্য ঘটনায় মেয়ে দুটির বাবা বৃদ্ধ ও অসুস্থ। তাই মেয়ে দুটি তাদের পশুদের পানি পান করাতে বাইরে এসেছেন।
আবার ঘরের বাইরে বের হলে যে সবসময় নারী-বান্ধব পরিবেশ পাওয়া যাবে এটা আশা করাও বাস্তবসম্মত নয়। যেমন উল্লেখিত ঘটনায় পুরুষদের ভীড়ের কারণে মেয়ে দুটি তাদের কাজ উদ্ধার করতে পারছিল না। অর্থ্যাৎ সেই পরিবেশটি মোটেও নারীর অনুকূলে ছিল না।
তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতিতে নারী-পুরুষের Interaction কেমন হওয়া উচিত? মূসা (আ:) ও উক্ত নারীদ্বয়ের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আমরা এই সর্স্পকে কিছু গাইডলাইন পেতে পারি। যেমন-
পুরুষদের ক্ষেত্রে
মূসা (আ:) যখন দেখলেন যে, দুজন নারী অন্য পুরুষদের ভীড়ের কারণে তাদের কাজ উদ্ধার করতে পারছে না তখন তিনি তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে গেলেন ঠিকই কিন্তু তাদের সাথে গিয়ে সরাসরি কাজের কথা বললেন । তাদেরকে সালাম পর্যন্ত দিলেন না আবার কাজ শেষ হওয়ার পর ধন্যবাদ পাওয়ার জন্যও অপেক্ষা করলেন না।
এই ঘটনা থেকে পুরুষদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হলো যদিও ছেলেদের উচিৎ নন-মাহরাম মহিলাদের প্রতি নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে চলা তথাপি মেয়েদের যুক্তিসঙ্গত প্রয়োজনে সাহায্য করতে এগিয়ে যাওয়াও একজন বিবেকবান মুসলিম পুরুষের কর্তব্য। তবে সাহায্য করার সময় অতিরিক্ত কথা বলা বা প্রগলভতা দেখানো এবং পরবর্তীতে এই সাহায্যের অজুহাতে তাদের কাছে কিছু প্রত্যাশা করা প্রকৃত চরিত্রবান পুরুষের বৈশিষ্ট্য নয়।
নারীদের ক্ষেত্রে
এখানে দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পশুদের পানি পান করাতে নিয়ে এসেছেন ঠিকই কিন্তু তারা নিজেদের পশুকে পানি পান করানোর জন্য ভীড়ের মধ্যে গিয়ে পুরুষদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করেননি বরং নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন। সুতরাং বাইরে কাজের জন্য বের হলেও নিজেদের সম্মানের হেফাজতের ব্যাপারে নারীকে নিজেরই সচেতন থাকতে হবে।
আরেকটি বিষয় হলো তাদের চালচলন ছিল নম্র ও লাজুক। তবে অপরিচিত নন-মাহরামের সাথে তাদের আচরণ ও কথা-বার্তা ছিল সংযত। অর্থ্যাৎ বাইরে বের হলেই নারীদের আচরণ যেমন উদ্ধত বা অশালীন হয়ে যাবে না তেমনি পুরুষদের সাথে আচরণ ও কথাবার্তার সময় তাদেরকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।
মুসা (আ:) কে পরবর্তীতে এই দুই নারীর বাবা তার এক মেয়ের জন্য বিবাহের প্রস্তাব দেন এবং তার সাথে মুসা (আ:) এর বিয়েও হয়। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, মুসা (আ:) ও দুই নারীর পক্ষ থেকে শরীয়াসম্মত Interaction এর পরও তার ফলাফল বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, কর্মস্থল বা অন্য কোনো জায়গায় নারী/পুরুষ তাদের প্রোসপেক্টিভ সঙ্গী খুঁজে পেতেই পারেন যদি তা রিজিকে থাকে তবে অপ্রয়োজনে কর্মস্থল বা অন্য কোনো জায়গায় নারী/পুরুষের অযাচিত Interaction ইসলামী শরীয়াসম্মত নয়।
তাছাড়া সৎ চরিত্রবান পুরুষের সন্ধান পাওয়া গেলে যে মেয়ে পক্ষ থেকেও বিয়ের প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে এই দৃষ্টান্তও পাই আমরা উল্লেখিত ঘটনা থেকে।