সুপারিশ নিয়ে ভুলচিন্তা যেভাবে শিরকের দিকে নিয়ে যেতে পারে, ইসলামে যে ধরনের সুপারিশ জায়েজ….

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

প্রশ্ন:

’শিকড়ের সন্ধানে’ বই এর ১৩১ নং পৃষ্ঠায় আমরা সূরা নাসের উদাহরণ দিয়েছি যে কিভাবে এটা আমাদের সবার মুখস্থ থাকা সত্ত্বেও এতে উল্লেখিত একটা মৌলিক বিষয়ের উপর আমরা আমল করি না। এরকম আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে আয়াতুল কুরসী। আমরা মোটামুটি সবাই আয়াতুল কুরসী পারি। কিন্তু এটার উপর কি আমল করি? এখানে একটি সুপারিশ সংক্রান্ত আয়াত রয়েছে। এই আয়াত থেকে কী বোঝা যায়? এখানে সুপারিশ সংক্রান্ত যে নির্দেশনা দেয়া আছে সেটা বুঝলে কি আমরা অনেক শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারতাম? ব্যাখ্যাসহ উদাহরণ দিন। (একটু চিন্তা করলে আমরা দেখবো যে, যত শিরক হয় তার বেশিরভাগই সুপারিশ সংক্রান্ত)।

ক) সুপারিশ নিয়ে ভুল চিন্তা কিভাবে আমাদের শিরকের দিকে নিয়ে যেতে পারে?

খ)  কোন ধরনের সুপারিশ জায়েজ? জায়েজ সুপারিশের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?


 উত্তর: আয়াতুল কুরসীর সুপারিশ সংক্রান্ত আয়াতটি হলো-


“এমন কে আছে যে, তাঁর সামনে কারও সুপারিশ করতে পারে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত?”

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় সুপারিশ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কর্ত্বত্বাধীন। তিনি যাকে অনুমতি দিবেন সে সুপারিশ করতে পারবে, এমনকি সে কার জন্য সুপারিশ করবে সেটাও আল্লাহর অনুমোদন সাপেক্ষ। অর্থ্যাৎ সুপারিশকারী এবং যার জন্য সুপারিশ করা হবে—উভয়ের প্রতিই আল্লাহর সম্মতি ও সন্তুষ্টি থাকতে হবে।

ক) সুপারিশ নিয়ে ভুল চিন্তা কিভাবে শিরকের দিকে নিয়ে যেতে পারে—এটা বোঝার জন্য  প্রথমেই আমাদের শিরক বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। প্রধানত দুই ভাবে শিরক করা হয়।
প্রথমত: যখন আল্লাহর কোনো মহিমান্বিত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির উপর আরোপ করা হয়।


যেমন- মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, গায়েবের জ্ঞান বা অদৃশ্যের জ্ঞান আল্লাহতায়ালার একচ্ছত্র বৈশিষ্ট্য। এতে কারও অংশীদারীত্ব নেই। কোনো সৃষ্টি এমনকি ফেরেশতা, জ্বীন, নবী-রাসূলদেরও গায়েবের জ্ঞান নেই (আল্লাহ যেটুকু জানিয়েছেন তা ব্যতীত)। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
” আল্লাহ ছাড়া আসমানসমূহে ও যমীনে যারা আছে তারা গায়েব জানে না।” ((সূরা আল নমল:৬৫)

এখন কোনো সৃষ্টি যদি দাবী করে যে, সে গায়েব জানে এবং অন্য কেউ সেটা বিশ্বাস করে তবে তা উভয়কেই শিরকের দিকে নিয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- কেই যদি দাবী করে যে সে ’আয়না পড়ার’ মাধ্যমে হারানো বস্তু উদ্ধার করে দিতে পারবে তবে সে প্রকারান্তরে এটাই বোঝাতে চাইছে যে, সে গায়েবের জ্ঞান জেনে গেল। এক্ষেত্রে তার কথা বা কাজকে বিশ্বাস করা শিরকের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু একজন ডিটেকটিভ যদি বিভিন্ন ক্লু থেকে হারানো বস্তু উদ্ধার করে তবে সেটা শিরক হবে না , কারণ সে স্বীকার করে নিচ্ছে যে, সে গায়েব জানে না এবং সে বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে।

দ্বিতীয়ত: যখন আল্লাহর উপর সৃষ্টির কোনো দুর্বলতা আরোপ করা হয় ।


যেমন- সৃষ্টির একটি দুর্বলতা হলো, সে সুপারিশের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অন্য কোনো পার্থিব লোভ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর ফলে সে অনেক সময় অন্যায্য সুপারিশও করতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ এই দুর্বলতার ঊর্ধ্বে । তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারক। তিনি প্রতিটি বান্দাকে মূল্যায়ন করেন তার নিজস্ব আমলের ভিত্তিতে। তিনি নিজেই কুরআনে বলেছেন-
”তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন বন্ধু নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তারাই তাদের আমলের বিনিমিয়ে পাবে বহুগুণ প্রতিদান। ”(সূরা সাবা:৩৭)

অর্থ্যাৎ এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় হচ্ছে তাঁর উপর ঈমান আনা ও নিজে সৎকর্ম করা। অন্য কারও সাথে আল্লাহর সুসম্পর্ককে পুঁজি করে তার সুপারিশের উসিলায় নিজে নাযাত পাওয়া যাবে এটা বিশ্বাস করা মানে আল্লাহর উপর সৃষ্টির দুর্বলতা আরোপ করা, যা মানুষকে শিরকের দিকে নিয়ে যায়।

উদাহরণস্বরূপ- ঈসা (আ:) কে আল্লাহর পুত্র মনে করা, ( নাউযুবিল্লাহ) এবং এই সম্পর্কের ভিত্তিতে আল্লাহ ঈসা (আ:) এর সুপারিশ অনুযায়ী তার সকল অনুসারীদের পাপ-পূণ্যের বিচার ছাড়াই পরকালে নাযাত দিয়ে দেবেন এটা বিশ্বাস করা সুস্পষ্ট শিরক।

সৃষ্টির আরেকটি দুর্বলতা হলো, সে যখন ক্ষমতাসীন হয়ে যায় তখন সে সাধারণ মানুষের সাথে একটি দূরত্ব তৈরি করে ফেলে। তার কাছে কোনো প্রয়োজন পেশ করার জন্য তখন তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যায় না। বিভিন্ন ‘মাধ্যম’ পার হয়ে তার কাছে পৌঁছাতে হয়, এই সুযোগে মাধ্যমরাও নিজেদের ক্ষমতাশালী মনে করা শুরু করে এবং সাধারণের কাছে বিভিন্ন ভুল মেসেজ দেয়।

অপরদিকে মহান আল্লাহর সাথে তার সকল বান্দার সম্পর্ক সরাসরি, কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ শ্রেণি, পেশা, বর্ণ, জাতি ,নিির্বশেষে তার সকল বান্দার ডাকে সাড়া দেন।

তিনি নিজেই কুরআনে বলেছেন-

“আর যখন আমার বান্দারা আপনাকে আমার সম্পর্ক এ জিজ্ঞেস করবে ,তাদেরকে বলুন, আমি তো কাছেই, আমি প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে।” (সূরা বাক্বারা: ১৮৬)

এছাড়া মহানবী (সা:) বলেছেন-

”আমাদের কল্যাণময় ও সু্উচ্চ রব, প্রতি রাতের শেষ-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকবে যে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব, কে আমার কাছে চাইবে যে, আমি তাকে দিব?” ( বুখারী: ১১৪৫)

অর্থ্যাৎ কুরআন ও হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট যে, জাগতিক কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য কিংবা আখিরাতে মুক্তির আশায় আল্লাহর কাছে নিজের নিবেদন পেশ করতে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। অথচ দেখা যায় অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে পীর, আউলিয়া, দরবেশ এরকম কারও মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। এভাবে পরোক্ষভাবে বিশ্বাস করা হচ্ছে যে মহান আল্লাহ তাদের উসিলায় তার মুরিদদের প্র্রতি পক্ষপাতিত্ব করবেন। ফলে আল্লাহর উপর তার সৃষ্টির দুর্বলতা আরোপ করা হচ্ছে, তাকে সৃষ্টির পর্যায়ে নামিয়ে আনা হচ্ছে (আস্তাগফিরুল্লাহ) । এভাবেই পীর, আউলিয়া, দরবেশ প্রমুখের ক্ষমতার উপর অন্ধবিশ্বাস মানুষকে শিরকের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

খ)

সুপারিশ সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত হলেও দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহ তা’আলা বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে সুপারিশ করার অনুমোদন দিয়েছেন। যেমন-

দুনিয়াবী ক্ষেত্রে:

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“কেউ কোন ভালো কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে। আল্লাহ সবকিছুর উপর নজর রাখেন”। (সূরা নিসা:৮৫)

অর্থাৎ কেউ যদি কারও উপকার করার জন্য শাসক,সম্পদশালী, ক্ষমতাশালী কিংবা ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে, তবে তা সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হবে। তবে সুপারিশ করার আগে জায়েজ সুপারিশ সম্পকে ধারণা থাকতে হবে। এই বিষয়ে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো-

• যার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে তাকে অবশ্যই সেই কাজের যোগ্য হতে হবে। অন্যথায় যোগ্য ব্যক্তির হক্ক নষ্ট হবে। যেমন- চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির ব্যাপারে যদি শুধুমাত্র ক্ষমতাশালী কারও সাথে আত্মীয়তার সুবাদে অযোগ্য কারও জন্য সুপারিশ করা হয় তবে প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তি বঞ্চিত হবে,তাই এ ধরনের সুপারিশ জায়েজ হবে না।

• যে কাজের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে সেই কাজটা যেন হারাম না হয় বা হারামের সাথে সর্স্পকিত না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। হালাল কাজের ক্ষেত্রে যার ন্যায্য অধিকার আছে তার জন্য সুপারিশ করা জায়েজ। যেমন- কোনো ব্যক্তি হালাল উপায়ে সততার সাথে দোকান পরিচালনা করছে, তার দোকান থেকে পণ্য কিনে সন্তুষ্ট হয়ে যদি অন্যদেরকেও তার কাছ থেকে কেনা-কাটা করতে সুপারিশ করা হয় তবে তা জায়েজ সুপারিশ। কারণ এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির রোজগার বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে এবং সে হালাল উপায়ে জীবনধারণে উৎসাহিত হয়।

• কোনো কাজে সুপারিশ করার আগে সেখানে কোনো নিয়মনীতি লঙ্ঘন হয়েছে নাকি সেটাও চেক করে নেয়া উচিৎ। ধরুন আপনি কারো দুরবস্থার জন্য টাকা তুলছেন, অন্যকে সুপারিশ করছেন টাকা ডোনেট করার জন্য, আপনার উচিৎ কেসটা ফ্রড কী না সেটা যাচাই করা (ফেসবুক শেয়ারের যুগে এটা মাথায় রাখা জরুরী)। আবার আপনি হয়তো কোনো সরকারী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, আপনার সুপারিশ দরকার কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য, বাজেট পাশের জন্য। এটা দেখা আপনার নৈতিক দায়িত্ব যে প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে নাকি বা ভুয়া কাঁচামাল ব্যবহার করা হচ্ছে নাকি ইত্যাদি। মনে আছে নারায়ণগঞ্জের মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের কথা? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যদি মসজিদ হচ্ছে, এটাতো ভালো কাজ- এখানে সুপারিশ না করার কী আছে না ভাবতেন, বরং চেক করতেন যে কোনো অনিয়ম হচ্ছে নাকি, তাহলে হয়তো অবৈধ সংযোগ নিয়ে করা মসজিদটা আলোর মুখই দেখতো না!

• যেসব সুপারিশ আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে সেসব সুপারিশ জায়েজ নয়। যেমন–উরওয়া থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন,

“মাখযূম গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার প্রতি হদ্দ প্রয়োগের ব্যাপারে কুরাইশগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। তাঁরা বলল, কে এই ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে? তখন তাঁরা বললেন, এ ব্যাপারে উসামা রাদিয়াল্লাহু
আনহু ব্যতীত আর কারও সাহস নেই। তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথা বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তির ব্যাপারে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন: ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোনা সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোনো দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা চুরি করত তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম”। (সহীহ বুখারী ৬/৫১৩)

এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, কোন ক্ষেত্রে সুপারিশ জায়েজ নয়।

• বিচারক কর্তৃক শরীয়তের বিধান জারি হয়ে যাওয়ার পর শাস্তিপ্রাপ্ত কে রক্ষার জন্য সুপারিশ নিষিদ্ধ। যেমন—উরওয়া ইবনে যোবায়ের থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা যুবায়র ইবনুল আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “তোমরা শরীয়াত নির্ধারিত শাস্তির ব্যাপারে
ততক্ষণ পর্যন্ত সুপারিশ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষয়টি বিচারক বা শাসকের দরবারে না পৌঁছায়। সুতরাং যখন বিষয়টি শাসক বা বিচারকের দরবারে পৌঁছবে তখন তোমরা আর সেই ব্যাপারে সুপারিশ করবে না”। (বায়হাকী ৮/৩৩৩)


কিন্তু বর্তমান সমাজে ব্যবস্থায় দেখা যায়, শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রকৃত আসামী যে কী না একদম সর্বোচ্চ আদালতেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, সেও রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আইনের নাগাল থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। সুপারিশের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজকাল খুব সাধারণ বিচার ব্যবস্থায়ও অত্যন্ত দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা সৃষ্টি হয়, ভুক্তভোগী বাদী প্রকৃত বিচার লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে এই ব্যবস্থা সমাজে প্রচলিত অন্যায়-অত্যাচারকে প্রতিহত করতে পারেই না বরং প্রহসনমূলক’ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। জনগণ ক্রমান্বয়ে আস্থা হারায় প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর।

সুপারিশ করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

প্রথমত: সুপারিশ করার বিনিময়ে কোনো উপহার বা সুযোগ -সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না। হযরত আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন-

”কোনো ব্যক্তি যদি কারও বিষয়ে কোনো সুপারিশ করে, অত:পর তার জন্য এই সুপারিশের বিনিময়ে কিছু উপহার প্রেরণ করা হয় এবং তিনি সেই উপহার গ্রহণ করেন তাহলে সে যেন সুদ খাওয়ার বিরাট দ্বার উন্মোচন করলো।” ( আবু দাউদ শরীফ )

দ্বিতীয়ত: সুপারিশকারি ও যার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে তাদের উভয়কেই মনে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সুপারিশকৃত বিষয়ের সাফল্য সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত। কারণ , চাকুরি, পদোন্নতি, আয় বৃদ্ধি, ন্যায়-বিচার পাওয়া—–এসব ধরনের রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ।

 সুপারিশকারি কেবল চেষ্টা করতে পারেন কিন্তু আল্টিমেটলি এসব কিছু পাওয়া নির্ভর করছে আল্লাহর সম্মতির উপর। তাই সুপারিশ করার পর যদি কাঙ্খিত সাফল্য না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে সুপারিশকারিকে দোষারোপ করাও অনুচিত।


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন