দাসপ্রথার বিভিন্ন দিক (পর্ব-২)

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

প্রশ্ন:

ক) ইসলাম কেন দাসপ্রথাকে একবারে বিলুপ্ত করে দিলো না যেভাবে মদ্যপান বা রিবাকে নিষিদ্ধ করেছে?

খ) দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার ইসলামি উপায় এর সাথে তুলনা করুন আরো একটি উপায় এর যেখানে কলমের এক খোঁচায় দাসদের মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। কোনটার ফলাফল কি ছিল?

উত্তর:

ক) আজ এমন একটা সময়ে আমরা কথা বলতে যাচ্ছি দাসপ্রথা নিয়ে, যখন বিশ্ব সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে চূড়ান্ত উৎকর্ষের যুগে এবং আমরা বিশ্ববাসীরা ব্যক্তি-স্বাধীনতা, ব্যক্তি-অধিকার চরমভাবে উপভোগ করছি বা উপভোগ করছি বলে মনে করছি।


কিন্তু দাস প্রথা বা দাসত্ব নিয়ে কোন কথা বলার আগে যে কথাটা আলোচনার দাবি রাখে তা হল ‘স্বাধীনতা’ বা ‘freedom’। স্বাধীনতা কাকে বলে তাই-ই কি আমরা জানি? স্বাধীনতা বলি বা এর ঠিক বিপরীতে দাসত্বই বলি, একে সংজ্ঞায়িত করা ভীষণ শক্ত কাজ, এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। এ নিয়ে নানা মনীষীর নানান মত সমাজে প্রচলিত।

ইউরোপকে আধুনিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিক্ষার মাধ্যমে আলোকিত করতে যার অবদান অনস্বীকার্য-সেই বিখ্যাত দার্শনিক ‘রুশো’ মানুষের স্বাধীনতার স্বরূপ নিয়ে বলেছেন “Man is born in chains, but everywhere he thinks himself free.” প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনোভাবে, ব্যক্তি বা সমাজের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকেই অন্তত খাদ্য অন্বেষণের জন্য অর্থ উপার্জন করতে বা কাজ করতে বাধ্য। তাই সমাজে আমরা দেখি প্রত্যেক মানুষই হয় অর্থ-বিত্ত, রং-রুপ-জৌলুস অথবা ক্ষমতা বা অন্য কিছুর দাসত্বে শৃংখলিত।

বর্তমান চূড়ান্ত সভ্যতার যুগে এসেও সভ্যতার তথাকথিত ধারক ও বাহক জনগোষ্ঠী কর্তৃক সমতা ও ভ্রাতৃত্বের চকমকে বুলির আড়ালে মানবতাকে লাঞ্ছিত হতে দেখে আমাদের প্রাণ কেঁদে ওঠে।

তাই মানুষের স্বাধীনতা কোথায়? এর সমাধান আসলে অন্য কোথাও-অসীম জ্ঞানের অধিকারী মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর দাসত্ব করবার জন্য। তাই দুনিয়ার এইসব তুচ্ছ দাসত্ব থেকে মনটাকে মুক্ত-স্বাধীন করে নিয়ে যদি সেই রবের দাসত্ব করা যায়, যিনি সকল ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক, তবে এটাই স্বাধীনতা, এটাই সত্যি কারের সাফল্য।


ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে দাসত্বের সবগুলো উৎস রহিত করেছে, কেবলমাত্র একটি উৎস (শরীয়ত সম্মত যুদ্ধ) ব্যতীত। ইসলাম মদ,জুয়া, রিবা প্রভৃতির ন্যায় সামাজিক ব্যাধি সমূলে উৎখাত করেছে এবং কোন প্রেক্ষাপটে বা কোন ভাবেই এগুলোর আর ফিরে আসার সুযোগ নাই। কিন্তু দাসপ্রথা এইভাবে বিলীন করা হয়নি। তার পেছনে যে প্রাজ্ঞতা আছে তা আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই বুঝি। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো-
i. আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ii. রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
iii. আত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি
iv. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং
v. শর’য়ী দৃষ্টিভঙ্গি

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামপূর্ব যুগ থেকে বিশ্বের সকল শাসন ব্যবস্থায় এই দাসপ্রথা এমনভাবে চলে এসেছে যা ছিল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রয়োজন। যা কেউ অপছন্দ করত না এবং তা পরিবর্তন করার সম্ভাব্যতার ব্যাপারে চিন্তা করাও কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব ছিল না। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে দাসত্ব নিষিদ্ধ। যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখছি বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাসত্বের প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু নিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানি না। দাসপ্রথা একেবারে বিলুপ্ত না হওয়ায় যুদ্ধ-বিগ্রহ হলে সেই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে মুসলিমদের বিচার-বিবেচনার পথ খোলা রইল।

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

মুসলিম নেতা তথা ইমাম, যুদ্ধবন্দীদের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে যে চার ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন তার একটি হল তাদের দাস-দাসী বানানো। এক্ষেত্রে ইমাম তাঁর হিকমাহ ব্যবহার করে সেই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সংকট মাথায় রেখে সার্বিক কল্যাণ লক্ষ্য করবেন। যুদ্ধবন্দীদের সাথে সেই অবস্থায় সামঞ্জস্যপূর্ণ মূল নীতির উপর ভিত্তি করে আচরণ করবেন এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান গ্রহণ করবেন।
এমতাবস্থায় যখন মুসলিমরা সুসংগঠিত ও শক্তিশালী অবস্থায় থাকবে এবং দেখা যাবে যে শত্রুরা আমাদের যুদ্ধবন্দীদের দাস-দাসী হিসেবে গ্রহণ করছে তখন রাজনৈতিক সমতা বিধানের কৌশল হিসেবে মুসলিম নেতাও শত্রুপক্ষের যুদ্ধবন্দীদের দাস-দাসী হিসেবে গ্রহণ করবেন যেন পরস্পরের আচরণ সমান সমান হয়।

আত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি

মানবতার এক অন্ধকার সময়ে ইসলাম এসে দাসপ্রথাকে দীর্ঘ সময় ধরে এমনভাবে সমতা ও ভ্রাতৃত্বের বিচারে সমন্বয় করে যেন জনগণ ইসলামের প্রকৃত বাস্তবতায় জীবন ও মানুষের ব্যাপারে সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন অনুধাবন করে।
সবচেয়ে জরুরি বিষয় ছিল দাস-দাসী কর্তৃক নিজেদের মানবিক সম্মানের তাৎপর্য এবং মানবিক মর্যাদা ও সম্মানের অধিকার উপভোগ ও উপলব্ধি করা। নিজেদের এমন আত্মিক উন্নয়ন ঘটানো যখন তারা অপমান অসম্মান থেকে তাদের স্বাধীনতা দাবি করতে পারে, দাবি করতে পারে নিজেদের মুক্তি।
ইসলাম তাদের অন্তরীণ এবং বাহ্যিক সবদিক থেকেই মুক্তির পথ অবারিত করেছে।
আভ্যন্তরীণ দিক হলো স্বাধীনতার মত নেয়ামত সম্পর্কে এবং যেকোন মূল্যে তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা-সাধনার ব্যাপারে খুব গভীর থেকে তার অনুভূতি জাগ্রত করা।
আর বাহ্যিক দিক হল এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য শরীয়ত সম্মত উপায় সমূহ উদ্ভাবন করা।
এই লক্ষ্যে ইসলাম দাস-দাসীর সাথে ব্যবহার এবং তার চারিত্রিক, সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার ব্যাপারে পরিপূর্ণ নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছে।
হাদীসে এসেছে “তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তাই খেতে দাও যা তুমি নিজে খাও, তাকে তাই পরতে দাও যা তুমি নিজে পরিধান করো।” (সহি বুখারী)

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের চেয়ে সামগ্রিক সামাজিক কল্যাণ কে বেশি গুরুত্ব দেয়। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় দাসত্ব প্রথার উপস্থিতি সমাজকে জাতিগত বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যবাদ ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রবাহ থেকে পবিত্র রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।


উদাহরণস্বরূপ যদি কোন ব্যক্তি অতিরিক্ত মোহরের কারণে কোন স্বাধীন নারীকে বিয়ে করতে অক্ষম হয় তখন সে কোন দাসীকে বিয়ে করবে অথবা ক্রয়সূত্রে তার মালিক হবে। যাতে সে বৈধ উপায়ে তার স্বভাবগত চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং বৈধ মালিকানার মাধ্যমে সে নিজেকে পাপ মুক্ত রাখতে পারে।


আল্লাহ তা’আলা বলেন – “আর তোমাদের মধ্যে কারও মুক্ত ঈমানদার নারী বিয়ের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; কাজেই তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতি ক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দিবে ন্যায় সঙ্গত ভাবে। তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নয় ও উপপতি গ্রহণকারীনিও নয়। অতঃপর বিবাহিতা হওয়ার পর যদি তারা ব্যভিচার করে, তবে তাদের শাস্তি মুক্ত নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে এগুলো তাদের জন্য; আর ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য মঙ্গল। আল্লাহ ক্ষমা পরায়ন, পরম দয়ালু। আল্লাহ ইচ্ছে করেন তোমাদের কাছে বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান। আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তারা চায় যে তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও।”(সূরা আন-নিসা ২৫-২৭)

শর’য়ী দৃষ্টিভঙ্গি

বস্তুত দাসত্বের বিষয়টি বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে একটি ক্রমধারা অবলম্বন, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবিধান করার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের মহত্বই প্রকাশ করে। আর এই ক্রমধারা অবলম্বনের মাধ্যমে সময় ও কালের প্রসারতায় ইসলামের বৈশিষ্ট্যাবলীর ব্যাপকতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত দীনের বৈশিষ্ট্যসমূহ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।

সুতরাং ইসলাম যুদ্ধবন্দীদের কে দাস-দাসী বানানোর ধারাকে বাতিল করেনি আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, সামাজিক ও শরীয়তের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে। আর এসব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ সুবহানুয়াতায়ালা মানবতার জন্যই শাসনব্যবস্থা ও বিধি-বিধান প্রবর্তন করেছেন। তিনি ব্যক্তির বাস্তব অবস্থা, সমাজের ক্রমবিকাশ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, শরীয়তের তাৎপর্য এবং জাতিসমূহের অবস্থাদি… ইত্যাদি সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই অবগত। তিনি সেই অবস্থা সম্পর্কেও জানেন যখন সমকালীন অবস্থা কিংবা তাৎক্ষণিক কোনো প্রয়োজন বা চাহিদার দোহাই দিয়ে এই ব্যবস্থাকে বাতিল করা কিংবা পরিবর্তন করার দাবি উঠবে।
তাই আল্লাহ তাআলা যদি মনে করতেন যে মদ পান হারাম করার ব্যাপারে একবারে বিধান জারি করলেই তা বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে, তাহলে তিনি তা হারাম করতে কয়েক বছর সময় নিতেন না। আর যদি তিনি জানতেন যে দাসত্ব প্রথা বাতিল করার মাধ্যমে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে শেষ করে দেয়ার জন্য একটা নির্দেশ জারি করলেই যথেষ্ট, তাহলে তিনি সেই প্রথাকে শেষ করার ক্ষেত্রে সেখানে থেমে থাকতেন না।


কিন্তু আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।
আল কুরআনের ভাষায়-“যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি সূক্ষদর্শী, সম্যক অবহিত”। (সূরা মুলক: ১৪)

খ)  ইসলাম এমন একটা সময় এসেছে, যখন দাসপ্রথা তথা দাসত্বের শিকড় সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল। দাসরা ছিল সমাজের অর্থনৈতিক চাকাকে গতিশীল রাখার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এতদসত্ত্বেও দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন শাসন ব্যবস্থায় দাসদেরকে মানুষ বলেই বিবেচনা করা হতো না। ইসলাম এসে দাসত্বের একটি বাদে সকল উৎসকে বাতিল করে এবং দাস মুক্তির পথগুলোকে উন্মুক্ত করে। ব্যাপারটা এমন যে, যদি বলি, দাসপ্রথা একটি নদী যেখানে পানির উৎস শুধুমাত্র একটি ঝর্ণা যা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে; আর এই নদীর পানি বেরিয়ে যাবার জন্য অনেক প্রশস্ত পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে; সময়ের পরিক্রমায় তাই নদীর পানি ক্রমশ শুকিয়ে গেছে। ইসলামে ঠিক এমনিভাবে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন নিয়ম কানুন প্রবর্তনের মাধ্যমে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে।


সমাজের গভীরে প্রোথিত এই ব্যবস্থাকে এক ঝটকায় নিষিদ্ধ করে দিলে তার ভয়াবহ প্রভাব মনিব ও দাস উভয়কেই গ্রাস করতো। কারণ মনে রাখতে হবে সমাজে মনিব এবং দাস উভয়ই উভয়ের প্রতি নির্ভরশীল ছিল। তাই তাদেরকে প্রথমে সুযোগ দেয়া হয়েছে আত্মনির্ভরশীল হতে।
সমাজে দাসদের মানবিক মর্যাদা উন্নতকরণ এবং অধিকার ও আচরণবিধি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম তাদের হৃদয়ের গভীর থেকে শক্তিশালী হবার মাধ্যমে মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে।


বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন “তোমরা আদমের সন্তান। আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। আর তাকওয়ার মানদন্ড ব্যতীত অনারবের উপর আরবের, আরবের উপর অনারবের, শ্বেতাঙ্গের উপর কৃষ্ণাঙ্গের, কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই।”


হাদিসে আরও বলা হয়েছে-
* “তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তাই খেতে দাও যা তুমি নিজে খাও, তাকে তাই পরতে দাও যা তুমি নিজে পরিধান করো”।
* “কেউ রাগান্বিত হয়ে দাস কে প্রহার করলে সে আপনা-আপনি মুক্ত হয়ে যাবে”।

ইসলাম তথা আল্লাহ প্রদত্ত শাসনব্যবস্থা মানুষকে স্বাধীনতা লাভে অনুপ্রাণিত করে এবং তা লাভের জন্য উপায়সমূহ ঠিক করে দেয়; অতঃপর তাদেরকে তা প্রদান করে ওই মুহূর্তে, যখন তারা নিজেরাই দাবি করে।

অপরদিকে মানব রচিত শাসনব্যবস্থা ব্যাপারসমূহকে জটিলতা ও সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। যা শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় বয়ে আনে। যেমনটা আমরা দেখি ‘আব্রাহাম লিংকন’এর আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দাসপ্রথা নিষিদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায়। হঠাৎ একদিন আইন পাস হলো যে কাল থেকে দাস প্রথা নিষিদ্ধ। এতে করে মনিব এবং দাস উভয়েই অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় দেখা যায় এই আইন বাস্তবায়নের পর আমেরিকাকে এর চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তার মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হলো-


* চার বছর ব্যাপী গৃহযুদ্ধ, যার ফল অহেতুক প্রাণহানি ও হয়রানি।
* এই যুদ্ধে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এবং আরও অর্ধ মিলিয়ন মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে।
* যে সব দাসকে মুক্ত করে দেয়া হয়, পরবর্তী এক বছরের মধ্যে তার অন্তত ২৫% মানুষ ক্ষুধায় মারা যায়।

আইনের মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত করা হয় ঠিকই কিন্তু তাদের মর্যাদা বা জীবনমান উন্নয়নের কোন ফলপ্রসূ উদ্যোগ দেখা যায় না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা অমানবিক আচরণ দাসদের মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে এবং মনিবশ্রেণী মানবিক মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়, যার উগ্র প্রমাণ হিসেবে আমরা আজও দেখি সাদা-কালো জাতিগত বিভেদ (Racism)। বর্তমানেও এর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় ‘Black life matters’ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার মাধ্যমে।


এইসব ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, আব্রাহাম লিনকন যে আইন জারি করেছেন, সে আইনের ব্যাপারে মানুষের অন্তরে কোন আবেদন তৈরি হয়নি। মানুষের মর্যাদা বাড়েনি। তাই আমরা বুঝতে পারি, মানব প্রকৃতির ব্যাপারে ইসলামের উপলব্ধি এবং বিচক্ষণতা কত গভীর। তাই ইসলাম এই সমস্যা নিরসনের ব্যাপারে সর্বোত্তম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন