বুক রিভিউ : “শিকড়ের সন্ধানে”
লেখিকা : হামিদা মুবাশ্বেরা
লিখেছেন- ফাইজা তাবাস্সুম, শিক্ষাথী, LLM, Bangladesh University of professionals (BUP)
যে কোনো বৃক্ষের জন্য যেমন শিকড় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেমনি প্রতিটি মুসলিমের জন্যও তার আত্মপরিচয় , অস্তিত্বের ধারাবাহিক ক্রম জানাটা খুব জরুরি। শিকড়ের যত্ন না নিলে যেমন বৃক্ষের সবুজ পাতারা রঙ হারিয়ে ঝরে পড়ে, ডাল-পালা রুক্ষ,শীর্ণ হয়ে যায় , একসময় চরম মূল্যবান বৃক্ষও তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে তেমনি আমরা জন্মসূত্রে মুসলিমরাও যেন নিজেদের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদাসীন হয়ে এক ভুলের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমাদের চিন্তাভাবনার যে অসুখগুলো প্যারাসিটামলেই সেরে যাওয়ার কথা ছিল তা যেন সঠিক চিকিৎসার অভাবে ক্যান্সার পর্যন্ত পৌঁছে আমাদের অস্তিত্বকেই সংকটাপন্ন করে তুলছে।
কিন্তু এমনটাতো হওয়ার কথা ছিল না !!! মহান আল্লাহ তো তাঁর সর্বশেষ্ঠ নবীর উম্মতদের সঠিক পথে চলার জন্য গাইডলাইন হিসেবে কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখেছেন। পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের জীবন, তাদের সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন। তবে কেন আজ আমাদের এই দিকভ্রান্ত অবস্থা?? কেন আমাদের রিচুয়ালসগুলো সব করাপ্টেড? ভাবনাগুলো সব শেইপড? বিশ্বাসের নামে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের সাথে কেন আমাদের নিত্য চলাফেরা?
এর অন্যতম কারণ বোধহয় এটাই যে, আরবী ভাষায় নাজিলকৃত কুরআনের বক্তব্য আমাদের মতো বাংলা ভাষাভাষীদের মর্মমূলে গিয়ে পৌঁছতে পারেনি। ছোটোবেলায় মায়ের মুখে,বাবার মুখে,কখনো হুজুরদের মুখে, কখনো ইসলাম শিক্ষা বইয়ের পাতায় আমরা গল্পাকারে নবী ও রাসূলগনের যেসব ঘটনা শুনে এসেছি, সেগুলো আমাদের কাছে মিথোলজির মতো একটা কৃত্তিম ভাব সৃষ্টি করেই পালিয়েছে, হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেনি।
হামিদা মুবাশ্বেরাও বোধহয় একই ধরনের উপলব্ধি থেকে নানামুখী ব্যস্ততার মাঝেও নিজস্ব আত্মপরিচয় অন্বেষণের তাগিদে মুসলিম হিসেবে তাঁর শিকড়ের সন্ধান করতে বেড়িয়েছিলেন। আত্মানুসন্ধানের এই পথে ঠিক যে জায়গাগুলোতে তিনি নিজে আটকে গিয়েছিলেন, সেই জায়গাগুলোতে যেন অন্য কেউ হোঁচট খেয়ে না পড়ে , বাঁধা পেয়ে পথ চলার উৎসাহটা হারিয়ে না ফেলে তাই তিনি তার অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইতে।
জীবনের যেই বাঁকে এসে আমরা ভাবতে শুরু করি “what is my destination?” যেখানে দাঁড়িয়ে অন্যের দেয়া মিথ্যে প্রবোধগুলোকে অর্থহীন মনে হয়, সেই ভঙ্গুর সময়ে যেন ভুলের চোরাবালিতে ডুবে যেতে না হয়, নিজের না পাওয়াগুলো- ব্যর্থতাগুলো যেন আমাদের উপর রাজত্ব গড়ে নিতে না পারে সেজন্য মুসলিম হিসেবে নিজের শেকড়ের উপলব্ধি হতে পারে আমাদের অর্থবহভাবে বেঁচে থাকার প্রধান রসদ। আর ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইটি আমাদের সেই কাজকে সহজ করে দিবে ইনশাআল্লাহ। বইটি পড়তে পড়তে নিজেদের মনের মধ্যে যুদ্ধ-বিবাদে লিপ্ত অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সাজানো হয়েছে বলে এই বই মুসলমানদের উত্থান পতনের ক্রম বুঝতে সহায়ক হবে। আজকের বাস্তবতার নিরিখেও কুরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক তা পাঠকরা উপলব্ধি করতে পারবে। যে কোনো সময়ের, যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য এটি প্রাসঙ্গিক এবং সুখপাঠ্য একটি বই ‘শিকড়ের সন্ধানে।’