ইসলামের প্রথম নারী নার্স

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

মমত্ববোধ এবং সেবা করার প্রবণতা নারীদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। যুগে যুগেই নারীরা মা, স্ত্রী, কন্যা কিংবা বোন হিসেবে পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের নিবিড় যত্ন এবং পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রেখে এসেছেন। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে আহত সৈন্যদের সেবা-শুশ্রুষা করার জন্য শুধু মমত্ববোধ থাকলেই হয় না, প্রয়োজন হয় সাহসিকতা ও উপস্থিত বুদ্ধির। রুফায়দা আল আসলামিয়া ছিলেন এমনই একজন সাহসী ও মমতাময়ী নারী যিনি বহু যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা-শুশ্রুষা করে ইসলামের প্রথম নারী সেবিকা হিসেবে সম্মানিতা হয়েছিলেন।

রুফায়দা বিনতে সাদ মদিনার খাজরাজ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বনি আসলাম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে রুফায়দা আল-আসলামিয়া নামেও ডাকা হত। মদীনাবাসীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র আনসার মহিলা যিনি মদীনায় রাসূল (সাঃ) এর আগমনের দিন তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।

রুফায়দার বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত চিকিৎসক। তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। মদিনায় যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন রুফায়দা রাসুল (সাঃ)এর মসজিদের পাশে তাবু স্থাপন করেন এবং অসুস্থ ব্যাক্তিদের সেবা প্রদান শুরু করেন। তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে নারী সেবিকাদের একটি দল তৈরি করেন। বদর, উহুদ, খন্দক, খাইবার এবং অন্যান্য অনেক যুদ্ধে তিনি তাঁর সেবিকা দলসহ স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন এবং আহত সৈন্যদের শুশ্রুষা করেছিলেন।

তিনি যুদ্ধের মযদানে তাঁবু স্থাপন করতেন। তাঁবুতে আহতদের ড্রেসিংয়ের জন্য ব্যান্ডেজ, বিশেষ খাবার এবং জরুরী অপারেশান করার যন্ত্রপাতিও থাকতো। রুক্ষ মরুর প্রচন্ড গরম, ঝড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আহত, মুমূর্ষ সৈন্যরা এই তাঁবুতে আশ্রয় নিতেন এবং রুফায়দাসহ অন্যান্য সেবিকাদের নিবিড় যত্ন ও পরিচর্যায় সুস্থতা লাভ করতেন।

খন্দকের যুদ্ধের সময় সাদ বিন মুয়াজ গুরুতরভাবে আহত হলে মহানবী (সা) তাঁকে রুফায়দার তাবুতে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন। তিনি সাবধানতার সাথে সাদ (রাঃ)এর কাঁধ থেকে তীর বের করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর তাবু হাসপাতালে সাদকে একাধিকবার দেখতে যান।

খায়বার যুদ্ধে রুফায়দা ও তার স্বেচ্ছাসেবক দল যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসা ও নার্সিংএর কাজ এত দক্ষতার সাথে করেছিলেন যে তার স্বীকৃতিস্বরুপ এবং সম্মাননা হিসাবে রাসুল (সাঃ) গণীমতের মালের একটা অংশ রুফায়দা এর জন্য বরাদ্দ করেছিলেন এবং এর পরিমাণ ছিল যুদ্ধরত সৈনিকদের অংশের সমতুল্য।

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সামরিক হাসপাতালেন গোড়াপত্তন হয় একজন মুসলিম নারীর দ্বারা এবং তিনি হলেন রুফায়দা বিনতে সাদ। এখানে উল্লেখ্য যে, রুফায়দা সহ তার দলের সেবিকারা সবাই সঠিকভাবে পর্দা মেনে চলতেন এবং নিজেদের সম্মান, সম্ভ্রম বজায় রেখেই আহত সৈন্যদের সেবা করতেন ।

রুফায়দা ছিলেন দয়ালু এবং সহানুভুতিশীল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি সাধারণ অসুস্থ মানুষদের কাছে গিয়ে তাদের চিকিৎসা করতেন।পদ্ধতিগত চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁর কোমল আচরণ রোগীদের অন্তরে প্রশান্তির প্রলেপ দিত এবং আরোগ্য লাভকে তরান্বিত করতো। তিনি অভাবী, এতিম এবং প্রতিবন্ধী মুসলিমদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করতেন।
বর্তমান বিশ্বে নার্সিং একটি মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্সদের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। আর এই মহান পেশার অগ্রদূত হিসেবে রুফায়দা আল আসলামিয়া আজও স্মরণীয় হয়েছেন।

তথ্যসূত্র:
www.idealmuslimah.com/personalities/sahaabiyaat/1490-rufaydah-al-aslamiyah.html?fbclid=IwAR2FIkwlBAsR15FAdhed3v3qQTCh7apzaQ6lr9H_ELOAiitbG53UFyBIMuY

https://en.wikipedia.org/wiki/Rufaida_Al-Aslamia?fbclid=IwAR3UVBtTIm5LEYRoV2Dl_YiMuH9lzxQ0kArFwpwQetr-CxF5mZK2ZHyh5aU

https://www.theindependentbd.com/magazine/details/170486/Rufaidah:-An-ever-shining-star-the-first-muslim-nurse-?fbclid=IwAR13ntM8QVgqdT-C5HPoiwgl_nzifdcR9HyFwKtIgiNaS1XZFzrsUADa0NA


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন