Call এসেছে . . . .

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

১.
নুসরাত মেসেঞ্জারে ঢুকেছিল একটা কাজে। স্ক্রল করে যেতে যেতে হঠাৎ রূপার একটা মেসেজ দেখে আঁতকে উঠলো! এই মেসেজ টা এক সপ্তাহ আগে সে দেখে “সিন” (Seen) করে রেখেছে। ভেবেছিলো পরে রিপ্লাই দিবে কিন্তু নানা ব্যস্ততায় আর রিপ্লাই দেওয়া হয়নি। পরে অন্যান্য মেসেজের ভিড়ে রূপার মেসেজটা হারিয়ে যায়। পরে সে নিজেও বেমালুম ভুলে গেছে এটার কথা!
নুসরাত আর একটা সেকেন্ডও দেরি না করে তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দেওয়া শুরু করলো, “দেরি করে রিপ্লাই দিবার জন্যে অনেক দুঃখিত দোস্ত …” – আল্লাহই জানে রূপা কি ভাবলো! দেখেও তো মেসেজ ইগনোর করার মেয়ে নুসরাত না।
২.
ভাইয়ার সাথে বসে গল্প করছিলো আয়িশা। হঠাৎ ভাইয়ার ফোন বাজতে শুরু করলো।. “ভ্রম ভ্রুম” করে ভাইব্রেশনে দেওয়া ভাইয়ার ফোনটা বেজেই যাচ্ছে ,তো বেজেই যাচ্ছে, কিন্তু সে তো আর তার ফোন খুঁজে পায় না!! ভাইটাকে নিয়ে আর পারি না, কোথায় যে ফোন রেখে দিয়ে আর খেয়াল রাখে না!
ঘরের দৃশ্য তখন দেখার মতন! ভাইয়া হন্যে হয়ে ফোন খুঁজতে খুঁজতে বিছানা, বালিশ, কম্বল, চাদর সব উল্টে ফেলে দিচ্ছে। ফোন যে কিসের নিচে আছে কে জানে। ছটফট করতে করতে একবার নিচে দেখছে, টেবিলের উপরের সব জিনিস ঠাস ঠুস্ ফেলে দিচ্ছে – “আরেহ ধ্যাত্তিরি! ফোন টা গেলো কই?” এই করতে করতে ফোন বাজতে বাজতে বন্ধই হয়ে গেলো।
“দরকারি কোনো ফোন হতে পারে, তোর ভাবীর কিছু লাগতে পারে ধ্যাৎ! …” – বিড়বিড় করে বলতে বলতে চেয়ারের উপর ফালানো কোটের পকেটে হাত দিতেই ফোনটা পেয়ে গেল!
সাথে সাথেই বউয়ের ফোন ব্যাক করে বললো, “এই, কি খবর? স্যরি ফোন ধরতে পারি নাই, ঐযে খুঁজে পাচ্ছিলাম না বুঝছো …”
৩.
সামিয়ার সামনে টার্ম ফাইনাল। অকুল পাথরের মতন এই সিলেবাসের কোনো কুল-কিনারা নেই। ফাইনাল প্রজেক্ট টা শেষ করতে একসাথে সব বন্ধুরা মিলে পড়াশোনা করতে বসেছে। রূপা, নুসরাত, আয়িশা – সবাই পড়াশোনায় মগ্ন। এর মধ্যেই কাছের একটা মসজিদ থেকে ভেসে আসলো মুয়াজ্জিনের আযান – “আল্লাহু আকবার … আল্লাহু আকবার …”! এতো সুন্দর মায়া লাগে আযানের ডাকটা শুনে!
মুহূর্তেই সামিয়ার টার্ম ফাইনালের টেনশানটা যেন একটু কমে আসলো। আযান শেষ হতে হতেই সে চেয়ার থেকে উঠে গেলো, “নামাজ পড়তে কমন রুমে যাচ্ছি, আমার সাথে কে যাবে?”
রূপা কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো, “হায়রে হুজুরনী! আযান তো মাত্র শেষ হলো! এখনই কিসের নামাজ? পাঁচটা মিনিট তো যেতে দিবি নাকি?!”
নুসরাত এর মধ্যে বলে দিলো, “তোরা যা নামাজে, আমার এখনো অনেক রিভিশান দেওয়া বাকি, আমি বাসায় গিয়ে নামাজ পড়ে নিবো নে!”
সামিয়া বললো, “বাসায় গিয়ে পরে নিবি ? নুসরাত তুই এক ঘন্টা পরে রওনা দিলে তোর বাসায় যেতে কমসে কম ৪০ মিনিটের জ্যামে বসে থাকতে হবে! তোর মাগরিবের ওয়াক্ত কি তখনো থাকবে?” রূপা কি জানি বলতে নিচ্ছিলো, এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠলো, কথা থামিয়ে সে ফোন ধরলো!

সামিয়া কমন রুমের দিকে হাঁটা দিতে যাবে, তখন আয়িশা বললো, “সামি, দাঁড়া দাঁড়া! আমি আসছি, তোর সাথে নামাজ পড়বো!” সামিয়ার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক!
আয়িশা বলতে থাকলো, “দেখ আমাদের প্রিয় কেউ আমাদেরকে কল করলে, আমরা সাথে সাথে রেস্পন্স করি. কোনো কারণে তখনই ধরতে না পারলে অস্থির লাগতে থাকে! ফার্স্ট চান্স পাওয়ার সাথে সাথে কল ব্যাক করি! যাদেরকে ভালোবাসি তাদের মেসেজের রিপ্লাই দিতে দেরি হচ্ছে – এমন পরিস্থিতিও টেনশন শুরু হয়ে যায়! রিপ্লাই দিয়ে তারপর শান্তি! আর এখানে?
এখানে তো আল্লাহ আমাকে কল করছেন! আল্লাহ স্বয়ং আমাকে ডাকছেন! আর আমার কোনো ভাবনা নেই? একটুও তাড়া নেই আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার? কোনোভাবে নামাজ পড়লে পড়লাম, না পড়লে না পড়লাম – এটা আমার কেমন আল্লাহর প্রতি রেস্পেক্ট? যে আল্লাহ আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, আমাকে সবচেয়ে বেশি দেখ-ভাল করলেন, তিনি ডাকছেন নামাজের দিকে, কল্যাণের দিকে আর আমি এভাবে সেটা ইগনোর করবো? আমি তো আমার প্রিয় কাউকে এভাবে ইগনোর করার কথা ভাবতে পারিনা! তাহলে আল্লাহকে নিয়ে সেটা কিভাবে ভাবি বল তো?”
“ওয়াও আয়িশা! প্রিচ গার্ল প্রিচ (Preach)!” সামিয়া রীতিমতো হাততালি দেওয়া শুরু করলো!
কি জানি আয়িশার কথা আর কেউ শুনেছে কি না কে জানে – তবে একটু পরে দেখা গেলো সুর সুর করে কমন রুমে নুসরাত আর রূপা ঢুকছে! আলহামদুলিল্লাহ!

সবাই মিলে মাগরিবের নামাজটা শেষ করে এবার আবার যার যার কাজে ফিরে যাবার পালা!

● “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি প্রিয় ? তিনি বলেন-সময় মত সালাত আদায় করা. [বুখারি:৪৯৬]
● “সালাত আল্লাহর নৈকট্য ও উচ্চ-মর্যাদা লাভের উপকরণ। সাওবান (রা:) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে এমন আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন: “তুমি বেশি করে আল্লাহর জন্য সেজদা-সালাত আদায় করতে থাক, কারণ তোমার প্রতিটি সেজদার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ মাপ করবেন।”
[মুসলিম:৭৩৫]

“সালাত একজন মুসলমানের মনোবল চাঙ্গা করে এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে তার জন্য ইহকালীন জীবনের কষ্ট ক্লেশ এবং জাগতিক সকল প্রকার বিপদ আপদ মোকাবিলা করা সহজ হয়। আল্লাহ বলেন: “এবং তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্যই তা কঠিন কিন্তু বিনীতগণের জন্যে নয়। যারা ধারণা করে যে নিশ্চয় তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে এবং তারা তারই দিকে প্রতিগমন করবে।”
[সুরা বাকারাহ : ৪৫,৪৬]

● সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তাতে হয় সে মুক্তি পাবে অথবা ধ্বংস হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে।”
[তিরমিযি:২৭৮]

ইয়া রব! আমাদেরকে তাওফিক দিন, সালাত কায়েম করার এবং আপনার হক আদায় করার! আমিন

লাস্ট পয়েন্টগুলির রেফারেন্স: https://www.quraneralo.com/importance-of-salah-in-islam/


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন