যে কোনো বিষয়ের জ্ঞানকেই কিভাবে উম্মাহর কল্যাণে কাজে লাগানো যায় (পর্ব-১)

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

প্রশ্ন: “যে কোনো ফিল্ডের জ্ঞানই আমাদের সত্য চিনতে বা উম্মাহর কল্যাণে অবদান রাখতে সাহায্য করতে পারে” আপনি কি এই কথার সাথে একমত? আপনার নিজের জীবন থেকে উদাহরণ দিন।

উত্তর: যে কোনো ফিল্ডের জ্ঞানই আমাদের সত্য চিনতে বা উম্মাহর কল্যাণে অবদান রাখতে সাহায্য করতে পারে—–আমি এই কথাটির সাথে আমি একমত।

কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

“পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন ” (সূরা আলাকঃ ১)

আল্লাহ চান আমরা পড়ি। শিক্ষা লাভ করি ।


একটু চিন্তা করলে সহজেই আমরা বুঝতে পারি, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই কোনো না কোনো শিক্ষা প্রয়োজন৷ সেটা হতে পারে যে কোনো ফিল্ডের। অথচ আমরা পরিপূর্ণ না জেনে, না বুঝে কতই না সহজে শিক্ষাকে দ্বীনি এবং দুনিয়াবী দুই ভাগে ভাগ করে ফেলি! আল্লাহ চাইলে যে কোনো ফিল্ড থেকেই আমরা দ্বীনের খেদমত করতে পারি৷ তার জন্য দরকার কোরআন এবং সংশ্লিষ্ট সেক্টর দুটো নিয়েই পরিপূর্ণ জ্ঞান।

ব্যক্তিজীবনে আমি ইন্জিনিয়ারিং ফিল্ডের ছাত্রী। আমি যখন প্রথম দ্বীনের বুঝ পাই তখন আমার ধারণা ছিলো আমার সেক্টর দ্বীনের উপযোগী নয়। পরিচিত কিছু ধার্মিক মহল থেকে জানতেও পারি আমি শুধু দুনিয়াবী পড়ার পিছনে সময় নষ্ট করে যাচ্ছি, যা কিনা ইসলামের খেদমতে কাজে আসবে না৷ হতাশ হই। কোনদিকে যাবো, কোন ফিল্ডে পড়া সুইচ করবো, কি করবো, কিভাবে দ্বীনের খেদমত করবো এত এত চিন্তায় যখন দিশেহারা…. সেই দিশেহারা সময় গুলোতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ল্যাবে যাবার পর একদিন হঠাৎ করেই বুঝতে পারি এই যে কত কত মেশিন, কত রকম সূক্ষ যন্ত্রপাতি, কত কিছু তৈরি করা হচ্ছে বিশ্বে প্রতিদিন এই মেশিনগুলো ব্যবহার করে। যা কিনা মানুষের জন্য অপরিহার্য, যেসব জিনিস প্রোপার ইউটিলাইজ করে কত সহজেই না দ্বীনের খেদমতে মানুষ অংশ নিতে পারেন আলহামদুলিল্লাহ। বুঝতে পারি আল্লাহর খেদমত শুধু নির্দিষ্ট কিছুতে সীমাবদ্ধ নয়। আরও বুঝতে পারি খেদমত করার জন্য দরকার যে কোনো সংশ্লিষ্ট ফিল্ড নিয়ে পুরোপুরি জ্ঞান।

• একটু মনোযোগ দিয়ে চারপাশে তাকালে আমরা দেখতে পাই মানুষের জীবনে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এর ব্যবহার৷ কিভাবে মানুষ এসব ডিভাইস ইউজ করে দ্বীন শিক্ষা নিচ্ছেন/দিচ্ছেন , দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছেন। সর্বোপরি দ্বীনের খেদমত করছেন।দ্বীনের খেদমত করার নিয়তে এগুলো ম্যানুফেকচারের পিছনে আমরা কাজ করে যেতে পারি।

• অনুরূপভাবে প্রতিদিন বহুল ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বালতি, মগ কিংবা এই প্রকার জিনিসগুলো আমরা পবিত্র হবার কাজে (গোসল, অযু, নাজাসাত দূরীকরণ ইত্যাদি) ব্যবহার করে থাকি৷ পরিচ্ছন্নতা –যা কিনা আামাদের মুসলিমদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। নিয়ত বিশুদ্ধ রেখে এগুলো উৎপাদনের মাধ্যমেও আমরা দ্বীনের খেদমত করতে পারি৷ এবং এই কাজগুলোর দ্বারা দ্বীনের খেদমত এবং জীবনের অনেক কিছু সহজ করে দিয়ে উম্মাহের কল্যাণ করার জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ইন্জিনিয়ার।

• .IPE তে আামাদের যেসকল মেজর কোর্স করানো হয় তার মাঝে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমি। এখান থেকে আমরা জানতে পারি বর্তমান সময়ে একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড় করানো থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ ভাবে চালানোর জন্য কিভাবে সুদকে পুঁজি করে কাজ করা হয়। কিভাবে ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করে সুদের জালে আটকে যায় মানুষ। সুদকে নরমালাইজ করে তৈরি হচ্ছে বড় বড় ব্যবসায়িক খাত। IPE তে পড়ে আমি অনেক সহজেই মানুষকে সুদভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রি বা ব্যবসা সম্পর্কে সচেতন করতে পারি এবং সুদমুক্ত ব্যবসা বা ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয়তা, অপরিহার্যতা এবং কিভাবে সুদমুক্ত ব্যবসায়িক খাত দাড় করানো যায় এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারি।
.
• ইসলামিক ইতিহাস থেকে আমরা জানি দাউদ(আঃ) লোহা, বর্ম ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতেন মেটাল বা ধাতু ব্যবহার করে৷ বর্তমানে যেটা মেটাল ফরমেশন বা মেটাল ডিফরমেশন হিসেবে আমরা পড়ে থাকি। যেটা IPE ডিসিপ্লিনের একটি মেজর বিষয়।
.
• আমরা যত ধরনের মেশিন চালাই সবকিছুর পিছনে কাজ করে কিছু ইকোয়েশন বা ফর্মুলা। একটু ডিপলি বলতে চাইলে ইন্জিনিয়ারিং এ ব্যবহৃত বেশিরভাগ ইকোয়েশন বা টার্মগুলোই এপ্লাইড ফিজিক্স এর রূপভেদ। আমরা যারা সাইন্সের স্টুডেন্ট তারা জানি, টাইম ট্রাভেল তখনই পসিবল যখন লাইটের স্পিডে কেউ ট্রাভেল করবে। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মীরাজের ঘটনার সাথে আমরা বিষয়টির যোগসুত্র স্থাপন করতে পারি এবং জানতে পারি কিভাবে ইন্জিনিয়ারিং বা ফিজিক্স থেকে আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পাওয়া যায়।
.
• IE দের আরেকটি কাজের ক্ষেত্র হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে ডেভেলপ করা। কিভাবে শ্রমিকদের সাথে ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এথিক্সকে মেইনটেইন করতে হবে, কিভাবে টাইমকে ইউটিলাইজ করে সব কাজের মাঝে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে হবে, গুটিকতক শ্রমিক বা মানুষকে নিয়ে না ভেবে সর্বোপরি সবার জন্য উপযুক্ত এমন ভাবে কাজ করে যেতে হবে। কোরআন এবং হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি ইসলাম একটি সামাজিক ধর্ম যা ব্যাক্তিবিশেষের আগে সামাজিক সুবিধা নিয়ে বেশি ভাবে।


কোরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ

“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যেন আমানতসমূহ যাদের, তাদেরকে অর্পণ করো এবং এরই যে, যখন তোমরা মানুষের মধ্যে ফয়সালা করো তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে ফয়সালা করো। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তোমাদেরকে কতোই উৎকৃষ্ট উপদেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব শুনেন, দেখেন।” (সুরা নিসা ৫৮)

এছাড়া আরও কিছু আয়াত ও হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি ইসলাম এটিকেট বা এথিক্সকে কতটা ইম্পর্টেন্স দিয়েছে। যা কিনা আমার ফিল্ডের সাথে মিলাতে পারি। এর থেকে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি এবং উম্মাহের কল্যানে কাজ করতে পারি।
.
• এছাড়া ইন্জিনিয়ারিং এর অন্যান্য ফিল্ড থেকে আমরা কোরআনের আয়াতের সাথে মিলিয়ে ভূমিকম্প, পৃথিবীর গতি, বিভিন্ন জিনিসের স্ট্রাকচার ইত্যাদি নিয়ে জানতে পারি।
.
সবশেষে বলতে চাই, যখন একজন মানুষের মধ্যে কোন একটা ফিল্ড নিয়ে পুরোপুরি জ্ঞান থাকবে তখন সে খুব সহজেই বুঝবে কোনটা মানব সৃষ্টি আর কোনটা আল্লাহর নিয়ামত। তখন সে বুঝতে পারবে ইসলামের ক্ষেত্র কত বড়, জানতে পারবো কোন ফিল্ডই সত্যকে চিনতে বা উম্মাহের কল্যাণে বাধা হতে পারে না৷ 


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন