বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে নিপার। রিয়াদ চলে যাওয়ার পর গত এক বছর বুকে পাথর বেঁধে একেকটা দিন পার করেছে,ভেঙ্গে পড়ে নি, কিন্তু আজ কান্নার বাঁধটা আজ বুঝি আর ঠেকাতে পারছে না…জায়নামাযে সিজদায় কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে!
গিয়েছিল মোহাম্মাদপুরে একটা কাজে। যেখানে গিয়েছিল সেখান থেকে পপিদের বাসা একদম কাছেই, শুক্রবার বলে নিশ্চিত ছিল বাসাতেই আছে। বেশ কিছু দিন যোগাযোগ নেই, কিন্তু খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিপা আর পপির। তাই ভেবেছিল ওদের বাসায় গিয়ে চমকে দেবে, একসাথে কিছু নির্ভার সময় কাটাবে। কিন্তু এ কী!
পপিদের বাসার সামনে গিয়ে দেখে গেট খোলা, উৎসব উৎসব ভাব।একটু অবাক হয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখে ওর ভার্সিটির সব ফ্রেন্ডরা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে কলকল করছে। কিন্তু ওকে রুমে ঢুকতে দেখেই সবাই কেমন যেন চুপ মেরে গেল! এ কী! পপি বিছানার উপর বধু বেশে বসা! আজকে পপির বিয়ে! আর নিপাকে জানায় নি? নিজের চোখে বিশ্বাস হচ্ছিল না……একটু হতভম্বের মত বিছানায় গিয়ে বসতেই ফ্যাকাশে হাসি দিল পপি। খুব অপ্রস্তুত লাগছিল নিপার।
হঠাৎ কানে আসল তীব্র একটা কণ্ঠ-
ও কেন এসেছে? কে ওকে আসতে বলেছে?????নিজের স্বামীকে বিয়ের ছ মাসের মাঝে খাইসে, শিক্ষা হয়নি? এখন এই কুফা মেয়েটা কেন এসেছে আমার মেয়ের বিয়ের দিন????
মাথাটা ঘুরে উঠতে ধরেও সামলে নিল নিপা। এটা পপির মায়ের কণ্ঠ না? ঊনিই কি সেই যে নিপাকে এত আদর করতেন বলে পপি হিংসায় মারা যেত?
একটা মানুষ কি কখনো অশুভ হতে পারে? আসছি বলে ফোন রেখে গাজীপুরে রিয়াদের বাসটা যে খাদে পড়ে স্পট ডেড হল ও, সেটা কি নিপার দোষ ছিল? এভাবে একজনকে একটা মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা কি শিরক নয়? জীবন মৃত্যুর মালিক কি আল্লাহ নন?
হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে একটু থমকে গেল নিপা। এই বিষয়গুলা কি স্ক্রাকচারডভাবে দ্বীন শিক্ষা শুরু করার আগে ও জানত? ওরাতো কেউ দ্বীন শিক্ষা করছে না ওর মত। তাহলে ওরা কিভাবে জানবে এগুলা? জানানোর দায়িত্ব কি ওরই ছিল না?
চোখের পানি মুছে সুস্থির হল নিপা। কেঁদেতো কোনো লাভ নেই! কাজ করতে হবে, অনেক কাজ! প্রিয় মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দিতে হবে তাওহীদের অমিয় বাণী। ও আজ যে কষ্ট পেয়েছে, আর কাউকে যেন এই কষ্ট পেতে না হয়!!