কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে অপূর্ব মেলবন্ধন হিসেবে সূরা হাশর (পর্ব-৩ ও পর্ব-৪)

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

পর্ব ৩

আল্লাহ যে আমাদের অনুভূতির উপরে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন, সেটা আল্লাহর একটা সৈন্য যা আমাদের পক্ষে বা বিপক্ষে ব্যবহৃত হতে পারে— কুরআনে এটার অনেক উদাহরণ আছে। যেমনঃ

১) ‘প্রশান্তি’ সৃষ্টির কথা আছে বদরের যুদ্ধের প্রাক্কালে (৮:১১)
২) হুদায়বিয়ার সন্ধির পর। সন্ধির কিছু Clause মুসলিমদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে অপমানজনক লাগলেও সেটা নিয়ে সৃষ্ট ক্ষোভ, হতাশা ইত্যাদি দূর করে দেয়ার কথা আল্লাহ বলেছেন। (৪৮:৪)
৩) হুনাইনের যুদ্ধে প্রথমে নিজেদের সংখ্যাধিক্যের উপর ভরসা করেছিলো তখন কাফিররা যুদ্ধে জিতে যাচ্ছিলো প্রায়। যারা অটল ছিলেন, তাদের মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। (৯:২৫-২৬)
৪) গুহাবাসী যখন রাজ্যের প্রধানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আল্লাহর একত্ববাদ ঘোষণা দিচ্ছিলো তখন আল্লাহ তাদের অন্তর দৃঢ় করে দিয়েছিলেন (১৮:১৪)
৫) মুসাকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে যখন উনার মা খুব বিচলিত বোধ করছিলেন, তখন আল্লাহ তার অন্তর শান্ত করে দিয়েছিলেন (২৮:১০)
৬) মুসা আলাইহিস সালাম যখন ফিরাউনকে দাওয়াত দিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন/ অস্বস্তি বোধ করছিলেন তখন আল্লাহ তার বক্ষ প্রশস্ত করার দুআ ক্ববুল করেন (২০:২৫)
৭) নবীজীর কথাও আল্লাহ বলেছেন বক্ষ প্রশস্ত করে দেয়ার কথা (৯৪:১)
৮) অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কারও ভয় অনুভব না করা যদিও প্রতিপক্ষ খুবই শক্তিশালী হয় (৩:১৭৩-৭৪)

এইসব আলোচনার সারাংশ আসলে নিচের হাদীসটি-
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সমস্ত অন্তর আল্লাহর আঙ্গুল সমূহের দুই আঙ্গুলের মধ্যে একটি অন্তরের ন্যায় অবস্থিত। তিনি নিজের আঙ্গুলগুলোর দ্বারা তা যেভাবে ইচ্ছা ঘুরিয়ে থাকেন।’

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার ‘ইবাদাত ও আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দাও।’’ [সহীহ : মুসলিম ৪৭৯৮, আহমাদ ৬৫৬৯, সহীহাহ্ ১৬৮৯, সহীহ আল জামি‘ ২১৪২]

এই যে কন্সেপ্টটা আমরা শিখলাম, আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সেটার প্রয়োগ কী? কিছু মাথায় আসছে কি?

আমার মনে হয় এই বিষয়টা মন থেকে উপলব্ধি করতে পারলে জীবনের প্রতি মূহুর্তে এটার প্রয়োগ সম্ভব। যেমন, একাধিক হাদীসে সহজতার দুআ করার কথা বলা হয়েছে। কোনো কাজ সহজ হয়ে যাওয়ার মানে কি? কাজটা বদলে যাওয়া? নাহ, আমাদের মনে এমন অনুভূতির সৃষ্টি হওয়া যাতে কাজটা কঠিন না লাগে।

শুধু এরকম ব্যক্তিজীবনে নয়, মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমাদের বর্তমান করুণ অবস্থা বুঝতেও এই কন্সেপ্টটা খুবই সহায়ক। আমার ’জীবন্ত কুরআন’ কোর্সে একটা এসাইনমেন্ট আমি প্রায়ই দেই- অন্তরের অবস্থা যে বিজয়ের একটা নিয়ামক সেটা কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা কিভাবে জানতে পারি। ’শিকড়ের সন্ধানে’ বইয়ের ৮৪ পৃষ্ঠায় এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত নিচের হাদীসটা খুবই প্রাসঙ্গিক মুসলিমদের বর্তমান দশা বুঝতে-
রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ অদূর ভবিষ্যতে অন্য জাতির লোকেরা তোমাদের উপর বিজয়ী হবে, যেমন খাদ্য গ্রহণকারী বড় পাত্রের দিকে আসে। তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে, ”আমাদের সংখ্যা কি কম হবে?” তিনি বলেন, ”না, বরং সে সময় তোমরা সংখ্যায় অধিক হবে। কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে সমুদ্রের ফেনার মত। আল্লাহ্‌ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দূর করে দেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে অলসতার সৃষ্টি করে দেবেন।” তখন জনৈক সাহাবী বলেন, “ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! অলসতার সৃষ্টি কেন হবে?” তিনি বলেন,” দুনিয়ার মহব্বত ও মুত্যু ভয়ের জন্য।” (সুনান আবু দাঊদ, ৪২৪৭, সহীহ)

আচ্ছা আমরা মুসলিমরা কি অমুসলিম পরাশক্তিদের ভয় পাই নাকি ওরা আমাদেরকে ভয় পায়?

উত্তরটা মনে হয় আমরা সবাই জানি। কারণটা কি পরিষ্কার এখন?

এই যে দুনিয়ার খ্যাতি, অর্থ এগুলোর প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ, এগুলোর কারণে আমরা দ্বীন ইসলামকে কিভাবে টুকরা টুকরা করে ফেলেছি তা হয়তো নিজেরা টেরও পাই না। নতুন কেউ যখন ইসলাম প্র্যাকটিস করতে শুরু করে তখন কী যে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে এই গালাগালি, কাঁদা ছুড়াছুড়ির কালচারে! তাইতো নিচের আয়াতটা খুব গভীর লাগে আমার কাছে যেখানে আল্লাহ পরোক্ষভাবে জানাচ্ছেন যে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরে থাকতে হলে অন্তরগুলো জুড়ে থাকা খুবই জরুরি-

”আর তোমরা সবে মিলে আল্লাহ্‌র রশি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, আর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, আর স্মরণ করো তোমাদের উপরে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, যথা তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, তারপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে সম্প্রীতি ঘটালেন, কাজেই তাঁর অনুগ্রহে তোমরা হলে ভাই-ভাই। আর তোমরা ছিলে এক আগুনের গর্তের কিনারে, তারপর তিনি তোমাদের তা থেকে বাঁচালেনএইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশাবলী সুস্পষ্ট করেন যেন তোমরা পথের দিশা পাও।” (৩:১০৩)

আবার আল্লাহর একটা শাস্তি হলো অন্তরে সীলমোহর মেরে দেয়া। আল্লাহ যখন কারো অন্তর তালাবদ্ধ করে দেন তখন সে সত্যকে সত্য হিসেবে উপলব্ধি করতে পারে না, নিজের ভুলগুলো সংশোধনের কোনো চেষ্টা চালায় না। এগুলোর সমাধান কী?

একটা তো হচ্ছে আগে যে দুআর কথা উল্লেখ করলাম সেটা পড়া, সাথে সূরা আলইমরানের ৮ নং আয়াতের দুআটা। সামষ্টিকভাবে অন্য ভাইদের জন্যও দুআ শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেটা আমাদের সূরা হাশরেরই দুআ।

হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রবর্তী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।” (৫৯:১০)

এতদিনে আমরা নিশ্চয়ই জানি যে আরবী কুরআনই কুরআন এবং বাংলা অনুবাদ কখনোই পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে না। এই অর্থ পড়ে হয়তো মনে হবে এখানে হিংসা বিদ্বেষ বোঝায় এমন কোনো শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু না এখানে যে শব্দটা আছে তা হল غِلًّا , যেটা আসলে যে কোনো প্রান্তিক অনুভূতি হতে পারে, নেতিবাচক বা ইতিবাচক। যেমন? আমরা যদি কাউকে একদমই সহ্য না করতে পারি তাহলে সেটা যেমন غِلًّا, একইভাবে কারো অন্ধ ভক্ত, অমুক কোনো ভুলই করতে পারে না এমন ভাবি, তাহলেও সেটাও কিন্তু غِلًّا এর একটা রূপ। এখন আমরা চারদিকে যে Warning/ Canceling Culture দেখি (অমুক পথভ্রষ্ট, তাদের লেকচার শোনা যাবে না, অমুক এই কথা বলেছে অতএব তার অন্য কোনো লেকচার বা কাজই আর অনুসরণ করা যাবে না) তা আসলে সেলিব্রেটি কালচারেরই আরেক রূপ। এগুলোর মাঝে আমি প্রচণ্ড ‘আমিত্ব’ খুঁজে পাই যেটার সার কথা হচ্ছে আমি যাকে অনুসরণ করি, আমার শাইখ, আমার দল এরাই শ্রেষ্ঠ। আর এটা একদম ইহদীদের স্বভাব, বনী ইসরাইলের কেউ না হওয়াই নবীজির একমাত্র দোষ ছিলো যে কারণে উনার নবুয়্যতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও ওরা উনার বিরোধিতা করছিলো।

এই সমস্যার সমাধান কী? এই দুআতেই আছে মিলিওন ডলার টিপস- অন্যকে নিজেদের চেয়ে উন্নত মুসলিম ভাবা। দেখবেন দুআতে বলা আছে যারা আমাদের চেয়ে ঈমানে অগ্রগামী। এই অগ্রগামীতা কিন্তু শুধু সময়ের দিক থেকে না, কোয়ালিটির দিক থেকেও। এভাবে কি ভাবি আমরা?

পর্ব ৪

গত পর্বে যেভাবে চিন্তা করার কথা বলেছিলাম সেভাবে কি আদৌ চিন্তা করি আমরা? যদি ভাবতাম তাহলে আমাদের অন্তরগুলো হয়তো আসলেই জুড়ে যেত। আর আমাদের মধ্যে যদি একতা থাকতো তাহলে কী হত? আল্লাহ তার অন্যান্য সকল সৃষ্টি দিয়ে আমাদের সাহায্য করতেন যেমনটা আল্লাহ বলেছেন সূরা ফাতহ তে:

”আর মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহর। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।” (৪৮:৭)

সাহাবীদেরকে সাহায্য করার অসংখ্য ঘটনা আছে, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জীবনের দুটো ঘটনা বিশেষভাবে আমার খুব পছন্দ। একটা হচ্ছে বদরের যুদ্ধের সময় আরেকটা আহযাবের। বদরের যুদ্ধের কথা ভাবলেই আমাদের মনে হয় ওহ ফেরেশতা নেমে এসেছিলো।

অথচ এটা ছিলো অনেকগুলো সাহায্যের একটা মাত্র। আমার যেটা খুব ভালো লাগে সেটা হচ্ছে বদরের যুদ্ধের আগের রাতে বৃষ্টি হওয়া। সূরা আনফালের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন-

”স্মরণ কর, যখন তিনি তাঁর পক্ষ থেকে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন, আর তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করেন, তোমাদের হৃদয়সমূহ দৃঢ় রাখেন এবং এর মাধ্যমে তোমাদের পা- সমূহ স্থির রাখেন।” (৮:১১)

মজার ব্যাপার হচ্ছে বৃষ্টির পরিমাণটা দুই পক্ষে ভিন্ন ছিলো। আর এর ফলে গোটা সমরাঙ্গনের চেহারাই পাল্টে যায়। কুরাইশ সৈন্যরা যে জায়গাটি দখল করেছিল তাতে বৃষ্টি হয় খুবই তীব্র এবং সারা মাঠ জুড়ে কাদা হয়ে গিয়ে চলাচলই দুস্কর হয়ে পড়ে। ওদের এত সৈন্য বা ঘোড়া সব অকেজো হয়ে পড়ে। আর যেখানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম অবস্থান করছিলেন, সেখানে বালুর কারণে এমনিতে চলাচল করা ছিল দুস্কর। বৃষ্টি এখানে অল্প হয়। যাতে সমস্ত বালুকে বসিয়ে দিয়ে মাঠকে অতি সমতল ও আরামদায়ক করে দেয়া হয়। কী অসাধারণ তাই না?


বিভিন্ন দুর্বিনীত জাতিদের শাস্তি দেয়ার জন্য নানা সৃষ্টিকে ব্যবহার করার কথা তো আমাদের সবার জানাই। নূহ আলাইহিস সালামের জন্য অতি বর্ষণ (পানি), আ’দ জাতির জন্য ঝঞ্জা বিক্ষুব্দ বাতাস, সামূদ জাতির জন্য মহানাদ আর ভূমিকম্প এগুলোর কথা বহুবার কুরআনে এসেছে। আহযাবের যুদ্ধের সময়ের ব্যাপারটা আমার বিশেষ ভালো লাগে। দিনের পর দিন পরীখার দুইপাশে যখন দুই পক্ষ স্রেফ অবরোধ করেই কাটিয়ে দিচ্ছিলো, অচলাবস্থাটা সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছিলো তখন মক্কার কুরাইশদের পালাতে বাধ্য হয় ঝড়ের কারণে। এক রাতের ভেতর দৃশ্যপট আমূল বদলে যায় যেটার কথা সূরা আহযাবের ৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে।

যাই হোক, ফিরে আসছি সূরা হাশর নিয়ে আমাদের প্রশ্নব্যাংকের উত্তর নিয়ে। কথায় কথায় কিন্তু আমি ৪ নং প্রশ্ন পর্যন্ত উত্তর দিয়ে ফেলেছি।

৫ নং প্রশ্নটা কী ছিলো মনে আছে?

৫) সূরা হাশরের ৬ নং আয়াতে আল্লাহ একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্বলিত নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন, কী সেটা? নিজেদের জীবনে এটার কোনো উদাহরণ পাই আমরা?

উত্তরঃ ৬ নং আয়াতে ফা’ই মানে বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদের কথা বলা হয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায় এমন নিয়ামত যেগুলো আমরা কোনো চেষ্টা বা পরিশ্রম ছাড়াই পেয়ে গেছি। আমার নিজের জীবনে এমন অজস্র নিয়ামত আছে। প্রথমেই মনে পড়ছে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ, সুস্থ হয়ে আলহামদুলিল্লাহ। এগুলোতে আমাদের কার কী হাত আছে বলেন! আবার এই যে লেখালেখি একটা নেশার মত, সেটাও পুরাই আল্লাহর রহমত!

চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এইধরণের নিয়ামতগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলো জন্য নিয়মিত শোকর করা। আমি যখন প্রথম সূরা রাহমান পড়েছিলাম তখন এই ব্যাপারটা আমার খুব অবাক লাগছিলো। আল্লাহ চাঁদ, সূর্য, সাগর এগুলোর কথা উল্লেখ করে বলছেন যে তার কোন নিয়ামতকে আমরা অস্বীকার করবো। এইসব বিষয়কে নিয়ামত হিসেবে চিন্তাই তো করি নাই কখনো, তাই না! আবার সূরা মুলকের শেষ আয়াতে বলছেন যে সব পানি যদি ভূগর্ভের তলদেশে চলে যেত তাহলে কী করার ছিলো।

এভাবে কি ভেবেছি কখনো? আমি অন্তত ভাবি নাই এই কোভিড আসার আগ পর্যন্ত। কোভিড এসে আমাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কী অগণিত নিয়ামতের মাঝে আমরা ডুবে ছিলাম/ আছি!

এর পরের প্রশ্ন ছিলো ৭ নং আয়াত নিয়ে।

৬) সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটা উদ্দেশ্য জানতে পারি, কী সেটা?

উত্তরঃ সম্পদ যেন শুধু সমাজের একটা শ্রেণীর মাঝেই আবর্তিত না হয়-এটাই একটা কল্যাণকর অর্থব্যবস্থার উদ্দেশ্য। অর্থনীতি নিয়ে বিগত কয়েক বছরের পড়াশোনায় আমি দেখি নাই যে প্রচলিত ( অনেকসময় ইসলামী অর্থনীতিতেও) ব্যবস্থায় এটাকে সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বরং অনেক বেশী জোর দেয়া হয় অর্থনৈতিক growth এর উপর। বর্তমান ফিয়াট মানি ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত যে Exponential Growth of Money হয় সেটার সাথে তাল মিলাতেই Real Economy তেও Economic Growth এর কথা বলে আমরা গলা ফাটিয়ে ফেলেছি, এটার Sustainabality নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা হচ্ছে না। আমি আমার Money Myth শীর্ষক কোর্সে এটা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। সুদের উপর নিষেধাজ্ঞা ও যাকাতের প্রভাবও এই Law of circulation দিয়ে অনেক সহজে বোঝা যায়।

৭) সূরা হাশরের ৯ নং আয়াতে একটা মানবীয় দুর্বলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেটা আনসারদের নেই বলা হয়েছে। কী সেটা? আমাদের দেশে কি কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গত কয়েক বছরে?

উত্তরঃ এখানে যে মানবীয় দুর্বলতার কথা বলা হচ্ছে তা হল নিজে অভাবের মধ্যে থাকলে অন্যকে দিতে না চাওয়া। এই বৈশিষ্ট্য থেকে আনসাররা মুক্ত ছিলেন। আমরা জানি যে মুহাজিররা কিভাবে সব কিছু ছেঁড়ে একদম কপর্দকহীণ অবস্থায় মদীনায় হিজরত করেছিলেন আর আনসাররা তাদের কী অসামান্য সহযোগিতাই না করেছিল! এখন যখন মদীনার অর্থ ব্যবস্থায় বিশাল Inflow হল তখন প্রথমেই আল্লাহ সেগুলো মুহাজিরদের সেখান থেকে অংশ দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আর এতে আনসাররা কোনো আপত্তি তোলেন নাই।

আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে অনুরূপ পরিস্থিতিতে আমরা পড়েছি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে। মানবিক দিক থেকে ওদের সাহায্য করার ফলে স্থানীয় অপরাধ কত বেড়ে গেছে, পরিবেশ কত নষ্ট হচ্ছে এমন রিপোর্ট প্রায়শই মিডিয়াতে দেখা যায়। অবশ্যই ওদের মাঝে ভালো মন্দ সব ধরণের মানুষই আছে তারপর যে Ethnic Cleansing এর স্বীকার ওরা হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে মুসলিম ভাই হিসেবে আমাদের আচরণ আরো সহমর্মী হওয়া উচিৎ ছিলো বলে আমার বিশ্বাস।

৮) সূরা হাশরের ১০ নং আয়াতে একটা দুআর কথা বলা হয়েছে। এমন কোনো পরিস্থিতির উদাহরণ দেন যখন আমাদের এই দুআ পড়ার দরকার হতে পারে।

উত্তরঃ এই দুআর কথা আসলে আগেই বিস্তারিত উল্লেখ করেছি।


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন