ইহুদীদের সাথে Interaction নিয়ে জানার প্রয়োজনীয়তা

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

আজকের পর্ব থেকে আমরা ইহুদীদের সাথে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর Interaction এর আদ্যপান্ত নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।

অনেকের মনে হতে পারে যে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদীদের সাথে কী করেছিলেন সেগুলো অনেক জটিল রাজনৈতিক বিষয় –এটা জেনে আমার কি লাভ? মানে আমি আদার ব্যাপারী, জাহাজের খবর নিয়ে কী করবো এই ধরনের চিন্তা আসতে পারে।

তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, কেউ যদি একদম শতভাগ মন দিয়ে সংসার করা গৃহিণীও হয়, তারও রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে এই তথ্যগুলা জানা দরকার। নাহলে আল্লাহ মাফ করুক আমাদের ঘরে, আমাদেরই অজান্তে গড়ে উঠবে এমন সব ফ্রাংকেনস্টাইন, যাদের সামাল দেয়া কঠিন হবে। কয়েকটা কেসস্টাডির সাহায্যে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি। কাহিনীগুলো বাস্তব ঘটনার ছায়া অবলম্বনে লিখিত।

কেস স্টাডি ১:

১১ বছর বয়েসী আনাস একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে, বাংলাদেশের চিরাচরিত রক্ষণশীল, ধার্মিক পরিবেশে তার বেড়ে ওঠা। একদিন সে বাসায় ফিরে মাকে বললো, ”মা, আমাদের স্কুলে ‘তোমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব’ সম্পর্কে লিখে নিয়ে যেতে বলেছে, আমি কার কথা লিখবো?”

আনাসের মা একজন গৃহিণী, ইতিহাসে অনার্স শেষ করেছেন, স্বাভাবিকভাবেই তার মাথায় এলো রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, এভাবেই তো সারাজীবন রচনা লিখে এসেছেন উনি! ছেলেকেও তাই বললেন, ”আমাদের নবীজীর কথা লিখবে বাবা, উনিই তো আমাদের আদর্শ!”

ছেলে নবীজীকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলো ইন্টারনেটে। প্রথমেই পেলো একটা ডকুমেন্টারী, যেটাতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একজন রক্ত পিপাসু (আস্তাগফিরুল্লাহ) হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যিনি বনু কুরাইজার শত শত ইহুদীকে হত্যা করেছিলেন। সেটা দেখে আনাস খুবই দ্বিধান্বিত হয়ে গেলো, মা এমন একজনকে প্রিয় ব্যক্তিত্ব লিখতে বলছেন কেন?

মা’র কাছে জানতে চাইলো যে, কেন আমাদের নবীজী এভাবে ইহুদীদের হত্যা করেছিলেন?

ছেলের মুখে এহেন অদ্ভূত প্রশ্ন শুনে মা অবাক হয়ে গেলেন। নবীজী সম্পর্কে এমন কথা তো তিনি কখনোই শোনেন নাই!

কেস স্টাডি ২:

”মা, Anti-Semitic মানে কী?
”মানে?”
আজকে Joshua ক্লাসে বলছিলো! আমি মুসলিম শুনে ক্লাসে সবার সামনে সে বলে বসলো, ”তুমি সেই Prophet কে Follow করো, যে আমাদের বিরুদ্ধে Holocaust এর শুরু করেছিলো? তোমরা সবাই তো Anti-Semitic! ”

”মা, আমি আর এই স্কুলে যাবো না মা। চলো আমরা আমাদের পুরাতন শহরে ফিরে যাই। আমি Joshua র কথা কিছুই বুঝতে পারিনি, কোনো উত্তরও দিতে পারি নাই। ক্লাসের সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো, আমার খুব খারাপ লাগছিলো!
ছেলের কথা শুনে নাজিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। মাত্রই USA তে নতুন শহরে Move করেছেন, এমনিতেই সামনে ক্রিসমাস, মাত্র হ্যালোউইনের প্যারা গেলো। এগুলো থেকে পাবলিক স্কুলে পড়ুয়া ছেলেকে কিভাবে বাঁচাবেন ভাবতেই জান শেষ, এখন আবার নতুন কোন উপদ্রব হাজির হলো! এসব শব্দ তো উনি কস্মিনকালেও শোনেন নাই!

ছেলেকে কোনোমতে বুঝিয়ে নাজিয়া দ্বারস্থ হলেন রুনা আপার, আগের শহরে উনি হালাকা নিতেন শুনেছিলেন। অমায়িক মানুষ, নাজিয়া সংসার সামলে এসব ক্লাসে যাওয়ার সময় করতে পারতেন না, হালকা আত্মবিশ্বাস ছিলো যে ইসলাম নিয়ে নতুন করে জানার কিছু নেই উনার, আজকে এই মুহুর্তে সেই আত্মবিশ্বাসে দারুণভাবে চির ধরেছে যে!

উপোরক্ত কেস স্টাডি দুটি থেকে কী বুঝলাম?

প্রসংঙ্গ ক্রমে বলে রাখি যে Anti-Semitism, Holocaust denial এই টার্মগুলোর সাথে আমাদের সবার পরিচিতি থাকা দরকার। আমাদের জানা দরকার যে ইহুদীরা এই শব্দগুলোর একটা নিজস্ব সংজ্ঞা দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে যা অনেকসময়ই সত্য থেকে অনেক দূরে। এন্টি-সেমিটিজমের সংজ্ঞায় অক্সফোর্ড বলছে, “Hatred of Jews; unfair treatment of Jews”। সহজ ভাষায়, ইহুদীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাদের ঘৃণা করা, এবং তাদের সাথে অন্যায় আচরণ করা হল এন্টি-সেমিটিজম, এবং যারা এরূপ আচরণ করে তাদের বলা হইয় এন্টি-সেমাইট।

অথচ আমরা কি জানি যে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের বংশধররা সবাই সেমাইট, মানে আরবরাও? তাহলে মুসলিমরা কিভাবে anti-Semitic হতে পারে?

যারা ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইটা পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই এই মনোভাবের উৎস বুঝতে পেরেছেন- নিজেদের একমাত্র chosen people বা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের বৈধ/ গ্রহণযোগ্য বংশধর ভাবা। খেয়াল করলে দেখবো যে এতদিন পাশাপাশি থেকেও মদীনার ইহুদীরা কিন্তু আওস ও খাযরাজ গোত্রকে তাওহীদের দাওয়াত দেয় নাই। কেন? ঐ একই চিন্তা! হিদায়াতের ব্যাপারটাকে পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা। অন্যদের সাথে শেয়ার করলে যদি ওরাও একই কাতারে চলে আসে!

Holocaust কী সেটা নিশ্চয়ই আমরা সবাই জানি, ২য় বিশ্ব যুদ্ধ এর সময় ইহুদীদের উপর যে প্রচন্ড অত্যাচার হয়েছিল, হাজার হাজার ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল সেটাকে Holocaust বলে। ইসলাম বিদ্বেষীদের বক্তব্য হচ্ছে anti-Semitism প্রচার করার মাধ্যমে রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বীজ বপন করেছিলেন, তারপর প্রমাণ হিসেবে তারা বলতে থাকে ইহুদী গ্রোত্র গুলোর সাথে উনি কী কী করেছিলেন ইত্যাদি।

রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর এই অংশগুলো জানার গুরুত্বটা কি বুঝতে পারছি এখন?

তবে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত জানতে কেন আগ্রহী হয়েছিলাম সেটা একটু শেয়ার করি। আমি ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করার পর সব কিছুতে যখন শুনতাম যে এগুলা ইহুদী নাসারাদের চক্রান্ত, ওরা ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি, মিডিয়া সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, অনেক ক্ষমতাধর ইত্যাদি, তখন আমি নিজের মাঝে একটা হালকা বিরক্তি অনুভব করতাম।
আমার মনে হতো যে, আচ্ছা রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় কি ইহুদীরা ছিল না?
তখন কি ওরা খুব ভালো মানুষ টাইপ ছিল?

আমি আগ্রহী হলাম উনার সময়ের ইহুদীদের নিয়ে জানার ব্যাপারে। আমি অবাক হয়ে জানলাম যে, তখনকার ইহুদীদের আর আজকের এদের মাঝে খুব বিশাল কোনো পার্থক্য নেই! আজ যেমন আমি এই ফেসবুক চালাচ্ছি জুকারবার্গ ভাইয়ের অবদানে, তখনকার ইহুদীরাও শীর্ষ ব্যবসায়ী ছিল, ওদের দূর্গ নির্মাণের নিজস্ব প্রযুক্তি ছিল!

তাহলে নবীজী ওদের যেভাবে হ্যান্ডেল করেছিলেন সেটা আমরা কেন পারছি না? এই আত্মজিজ্ঞাসার উত্তর আমি অনেকটাই পেয়েছি ’শিকড়ের সন্ধানে’ লিখতে গিয়ে। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করানোর অভ্যাসটাও তখন থেকেই আত্মস্থ করার চেষ্টা করছি।

যাই হোক, আমরা বিচ্ছিন্নভাবে এগুলো নিয়ে জানবো না, মানে শুধু বনু কুরাইজার ঘটনাটা পড়বো না বরং রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ইহুদীদের interaction এর একদম গোড়া থেকে শুরু করবো ইনশাআল্লাহ্

ইহুদীদের সাথে Interaction এর সূচনা :

আমরা হয়তোবা জানি যে, ইহুদীদের সাথে রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সরাসরি interaction শুরু হয় মদিনাতে হিজরতের পরে। তার আগে ছিল পরোক্ষ যোগাযোগ। কিভাবে কেউ বলতে পারবেন?

’সূরা কাহফ’ এর উপর সিরিজটা পড়লে বুঝবেন যে, ইহুদীরা ছিল কুরাইশদের পরামর্শ দাতা। জুলকারনাইন, কাহফবাসী, রুহ এসব টপিক নিয়ে প্রশ্ন করার যোগ্যতাই কুরাইশদের ছিল না, মদীনার ইহুদীরাই ওদের শিখিয়ে পড়িয়ে দিতো।

আচ্ছা আমরা কি কখনো ভেবেছি যে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে কেন হিজরত করলেন? অন্য কোথাও না কেন? মদীনাবাসী যে উনাকে নিরাপত্তা দিতে সানন্দে রাজি হয়েছিল সেটার পিছনে ইহুদীদের পরোক্ষ একটা ভূমিকা ছিল– সেটা কি আমরা জানি?
আচ্ছা আমরা কি জানি যে, মদীনাতে ইহুদীরা কবে থেকে অবস্থান করছে? এত জায়গা থাকতে মদিনাতেই বা কেন? মদীনা এবং খায়বার ছাড়া আরবের আর কোনো জায়গাতে ইহুদী ছিল না! ইয়েমেনে কিছু ছিল, কিন্তু সেটা ছিল দক্ষিণ দিকে!

এ ব্যাপারে আসলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায় না। তবে অনেক ধরনের থিওরী আছে যেখান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ইহুদীরা জানত এই অঞ্চলে নবী আসবেন, তাই ওরা এখানে বসত গড়েছিল। সালমান আল ফারসির ঘটনা থেকেও আমরা এমনটাই বুঝতে পারি।

মদীনার ইহুদীরা ছিল তিনটা গোত্রে বিভক্ত। আমি পাঠকদের অনুরোধ করবো এদের নাম মুখস্থ করে ফেলতে। রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ওদের যে ঝামেলা হয়েছিলো সেটার সময়ক্রম অনুসারে গোত্রগুলো ছিল-
১) বনু কাইনুকা
২) বনু নাদির
৩) বনু কুরাইযা

আর মদীনার আরবদের ছিল দুইটা গোত্র- ‘আওস’ ও ’খাজরাজ’। এই দুটো গোত্র ছিল একমাত্র গোত্র যারা ইহুদীদের প্রতিবেশী হওয়ার বদৌলতে একত্ববাদী ধর্ম, নবী, কিতাব— এসব কনসেপ্টের সাথে পরিচিত ছিল, অন্যান্য আরবদের কাছে যেগুলো ছিল একদম অজানা বিষয়। আওস ও খাযরাজ এর আরবরা ইহুদীদেরকে উন্নত সভ্যতার অধিকারী ভাবতো কারণ তারা শিক্ষিত ছিল। ইহুদীরা নিজেরাও এগুলো নিয়ে গর্ব বোধ করতো, তাদের মাঝে যুদ্ধের সময় বলতো যে, ”এটা মাত্রই কিছু সময়ের ব্যাপার যে আমরা তোমাদেরকে হারিয়ে দেবো। আমরা আমাদের নবীর জন্য অপেক্ষা করছি, সে আসলেই সব কিছুর ফয়সালা হয়ে যাবে।”
সূরা বাকারার ৮৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাদের এই বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ইহুদীদের সাথে পূর্ব যোগাযোগের কারণেই যখন মদীনাবাসীকে নবীজী নবুয়্যতের দাওয়াত দিলেন তখন ব্যাপারগুলো বোঝা এবং গ্রহণ করা ওদের জন্য সহজ ছিল।

আরও একটা ব্যাপার হচ্ছে ,আওস ও খাজরাজ দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মাঝে দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। এই যুদ্ধে খাজরাজ গোত্রের মিত্র ছিল বনু কাইনুকা। আর আওস গোত্রের মিত্র ছিল বনু কুরাইজা ও বনু নাদির। মিত্রতা মানে ওরা যুদ্ধের সময় অর্থায়ন করতো। এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে ইহুদীরা মদীনাবাসীর মাঝে যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে খুবই আগ্রহী ছিল। কেন, কেউ আন্দাজ করতে পারবেন?

তৎকালীন ইহুদীদের একটা মূল ব্যবসা ছিলো অস্ত্র ব্যবসা। ওরা আওস ও খাযরাজ গোত্রের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতো। যুদ্ধ না চললে ওদের এই ব্যবসা মার খাবে যে!

আচ্ছা এই তথ্যটা কি চেনা চেনা লাগে? আপনারা এখনকার ইসরাইলের অন্যতম বড় অস্ত্রক্রেতা কে জানেন?

যাই হোক, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ছিল খাজরাজ গোত্রের নেতা। যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত মদীনাবাসী তাকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে ফেলেছিল প্রায়। এমন সময়ে রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থেকে দাওয়াত পায় ওরা। তাই এভাবে হঠাৎ রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই দেখেছিল উড়ে এসে জুড়ে বসা হিসেবে, মন থেকে উনাকে কখনোই গ্রহণ করতে পারে নাই।

এই পটভূমি জানা সূরা হাশর বোঝার জন্য খুবই জরুরি!

মদীনাতে হিজরতের পর রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহলে একটা কেমন সমাজের মুখোমুখি হয়েছিলেন? একটি multi religion, multi-cultural, diverse society। এই বিষয়টা আমাদের জন্য বোঝাটা খুবই জরুরী কারণ বর্তমানে আমরা সবাই কম বেশি এমন সমাজে বাস করি। মদীনায় আসার পর উনি প্রথম কাজ কী করলেন?

হ্যাঁ, ‘মদীনা সনদ ’এর চুক্তি সাক্ষর করা। ’মদীনা সনদ’ নিয়ে যেহেতু প্রায়ই নানা ধরনের কথা হয়, এটার মূল বক্তব্য জানা আমাদের জন্য খুবই দরকার।

এই সনদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিলো যে ,এটা রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে de facto political leader হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, মানে এখন উনার যথেষ্ট সংখ্যক অনুসারী আছে ,তাই উনি একটা সংবিধান রচনার ক্ষমতা রাখেন।

মদীনার সনদে রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূলত সবগুলো গোত্রের সাথে Code of conduct ফাইনাল করেছিলেন। এখানে দুইটা ব্যাপার ছিলো-
১) ধর্মীয় দিক
২) মদীনা রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক দিক
ধর্মীয় দিক থেকে গোত্রগুলোকে পূর্ণ ধর্মীয় ও অন্যান্য স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিলো। গোত্রগুলো তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো নিজেরাই ফয়সালা করবে যদি না স্বত: প্রণোদিত হয়ে তারা রাসূল (সা:)এর কাছে আসে।

কিন্তু কোনো বহি:শত্রু যদি মদীনা আক্রমণ করে তাহলে মদীনার সবগুলো গোত্র একত্রিত হয়ে মদিনাকে রক্ষা করবে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোনো বহি:শত্রুকে সাহায্য করা যাবে না, তাহলে সেটা চুক্তি ভঙ্গের নামান্তর হবে। মানে গত সপ্তাহে ইসলামিক রাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতার যে তাত্ত্বিক দিক আমরা তুলে ধরেছি সেটার প্রথম প্রায়োগিক রূপ ছিলো ’মদীনা সনদ’, যদিও মক্কা বিজয়ের পর ফিকহে কিছু পরিবর্তন আসে। জিযিয়া করের বিষয়টা, মক্কা ,মদীনাতে অমুসলিম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারগুলো স্বাভাবিকভাবেই তখন ছিলো না।

শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়াই নয়, রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম দিকে ইহুদীদেরকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে treat করেছিলেন। আমাদের আজকের পরিভাষায় মদীনা তখন ছিল ইসলামিক রাষ্ট্র, মুসলিম প্রধান দেশ আর ইহুদীরা সে দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। তবুও তাদের সাথে মদীনার অন্যান্য নাগরিকদের মতোই সদাচরণ করা হতো।
তবে হ্যাঁ, আগেও যেটা বলেছি যে কোনো গোত্রকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়ার অর্থ কিন্তু এটা না যে তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হবে না, বরং তাকে দাওয়াত গ্রহণ না করার স্বাধীনতা দেয়া হবে। যে স্বাধীনতা দেয়া হবে না সেটা হলো- দেশের বিরুদ্ধে বহিঃশত্রুদের সাথে কোনো ধরনের আঁতাত করা।

প্রাথমিকভাবে রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝে একটা প্রবণতা ছিল ওদেরকে বোঝানোর যে, উনারা একই আল্লাহর দিকে ডাকছেন, ওদের সাথে সাদৃশ্য গুলো তুলে ধরতেন। সূরা বাকারার ৪০ থেকে ১৪১ নং আয়াতগুলো পড়লে বোঝা যাবে যে কিভাবে নানান angle থেকে ওদের দাওয়াত দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। উনি ইহুদীদের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী ছিলেন, যে ওরা ইসলাম গ্রহণ করবে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ আসে, যেটার কথা ১৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে। আর এই ঘটনার পর থেকেই মুসলিম ও ইহুদী- যে দুটো আলাদা জাতি সেটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে।’ শিকড়ের সন্ধানে’ বইতে আমি এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

এখন দুইটা পৃথক জাতি সত্ত্বার মাঝে দ্বীন পালন নিয়ে মতভেদ তো হতেই পারে, কিন্তু সেটা কি এমন কিছু যে একটা গোত্রের সবাইকে হত্যা এবং বাকি গোত্রদের নির্বাসনে পাঠাতে হবে?

এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পরবতী পর্বগুলোতে জানবো ইনশাআল্লাহ।


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন