সূরা হাশরের উপর এই লেখাটার রোডম্যাপ যখন ঠিক করি তখন ভেবেছিলাম যে, সীরাহ পড়ার মেথোডলজিটা লিখেই ইহুদীদের সাথে রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের Interaction নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় চলে যাবো। কিন্তু গত সপ্তাহে আমি আমার শহরে একটা Inter Faith Program এ অংশ নিয়েছিলাম। সেখানকার অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনে হলো যে ,আমি যদি ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ বা Freedom of Religion কনসেপ্টটা ব্যাখ্যা না করি তাহলে যতই সীরাহ পড়ার মেথোডলজি বলি আর ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য দেই না কেন ইহুদীদের সাথে রাসূল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘটনাগুলো নিয়ে দ্বিধা পুরোপুরি দূর হবে না। ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’র এই কনসেপ্টটা ক্লিয়ার হলে ইসলাম নিয়ে কমন যেসব সংশয়ের কথা বলছিলাম সেগুলোর সবগুলোই মোটামুটি ক্লিয়ার হবে ইনশাল্লাহ।
এজন্য সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে যে, ইসলামে ধর্মীয় স্বাধীনতার কনসেপ্ট আর আমাদের বর্তমান সময়ে প্রচলিত Freedom of Religion এক না। আজকাল ধর্মীয় স্বাধীনতা মানে বুঝায় সব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, তবে সেটার কারণ হচ্ছে সব ধর্মই সত্য, একই গন্তব্যের পথে বিভিন্ন রাস্তা ইত্যাদি। এমন মতবাদ প্রচার হতে দেখা যায় যে মানুষের যেমন নিজের গায়ের রঙের উপর হাত নেই, ধর্মের উপরেও হাত নেই। ধর্ম একটা স্পর্শকাতর বিষয়, এটা নিয়ে পাবলিকলি কথা বলা অনুচিত ইত্যাদি। আমাদের খুব স্পষ্ট করে বুঝতে হবে যে ইসলাম কখনোই এমন মতবাদ সমর্থন করে না। আল্লাহ দ্ব্যর্থহীণ ভাষায় ঘোষণা দিচ্ছেন যে,
আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম (৩:১৯)।
অন্যদিকে এটাও বলা হচ্ছে যে,
দ্বীনের মধ্যে কোনো জবরদস্তির অবকাশ নেই। (২:২৫৬)
ব্যাপারটা কি একটু Contradictory মনে হচ্ছে? আসলে সূরা বাক্বারার ২৫৬ আয়াতের পরের অংশেই উত্তর দেয়া আছে- জবরদস্তির কোনো অবকাশ নেই কারণ সরল পথ বক্রতা থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এই আয়াতের যে ব্যাপারটা আমার অসাধারণ লাগে সেটা হচ্ছে এটা আয়াতুল কুরসীর পরের আয়াত। মানে আল্লাহ তার বৈশিষ্ট্যসমূহ বিস্তারিত বলার পর জানিয়ে দিচ্ছেন যে এটা নিয়ে জোর করার কিছু নাই। আসলে আল্লাহর জন্য শোভনও না যে কাউকে Force করে ইসলাম গ্রহণ করাতে হবে। আচ্ছা যা কিছু চমৎকার, মারাত্মক সুন্দর সেটার সাথে পরিচিত হবার পর কি কাউকে বল প্রয়োগ করতে হয়?
তাই ইসলামে ’ধর্মীয় স্বাধীনতা’র মানে হচ্ছে ইসলামকে সত্য হিসেবে গ্রহণ না করার স্বাধীনতা। কিন্তু তাই বলে আপনার এই স্বাধীনতা থাকবে না যে আপনি প্রচার করে বেড়াবেন সব ধর্মই সত্যি।
এখন কেউ যদি নিশ্চিত না থাকে কোনটা সত্য, তাহলে?
এধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল ইসলামে খুবই উৎসাহিত করা হয়। ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন করার, রিসার্চ করার, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে বেছে নেয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা আপনার থাকবে। মানে একটা ইসলামী রাষ্ট্রে ইসলাম থাকবে শাসন ক্ষমতায়, সেটা অনুযায়ী মূল শাসন ব্যবস্থা চলবে, ইসলাম যে সত্য সেটা বোঝার জন্য/ বোঝানোর জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষা, দাওয়াতী কাজ সবই চলবে, কিন্তু যেটা হবে না সেটা হচ্ছে জোর করে ধরে ধরে ধর্মান্তরিতকরণ।
আপনি যদি ইসলাম গ্রহণ করতে না চান, fine, আপনার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে আপনার এলাকার মাঝে আপনার ধর্মীর আচার সম্পন্ন করার। মানে অন্য ধর্মালম্বীদের একটা নিজস্ব Teritorry থাকবে যেটা হবে একেবারেই আলাদা। যদি কোনো সহিংসতার আশংকা থাকে তাহলে একজন মুসলিম পুলিশ পূজা মণ্ডপ প্রতিরক্ষা করতে পারবে কিন্তু কখনোই শারদীয় শুভেচ্ছা জানাবে না বা সব ধর্মই সত্য টাইপ বাণী প্রচার করবে না! In fact একটা ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা এমন কিছু সুবিধা ভোগ করে যেটা আধুনিক রাষ্ট্রে Freedom of Religion এর ধ্বজাধারীরা করে না। যেমন চাইলেই মুসলিমরা এখন কোনো পশ্চিমা দেশে নিজেদের এলাকায় শরীয়া আইন অনুযায়ী চালাতে পারবে না। কিন্তু একটা ইসলামী রাষ্ট্রে চাইলে ইহুদী/ ক্রিস্টানরা তাদের আইন অনুযায়ী চলতে পারবে, তাদের নিজস্ব এলাকায়।
মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে এই যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা টেনে দেয়া হয়, সেটার জন্যই মুসলিম ড্রেস কোডের একটা শর্ত হচ্ছে এমন ড্রেস পরা যাবে না যেটা পরলে তাকে অমুসলিম মনে হবে। পোশাক যেহেতু তখন তাকওয়া না বরং পরিচয়ের স্মারক, তাই আমার মনে হয় কালচারাল কারণেই মানুষ ইসলামিক ড্রেস কোড পরিধান করতে উৎসাহিত হবে, তাদের জোর করতে হবে না।
এতটুকু পড়ার পর অনেকেরই হয়তো মনে হচ্ছে যে ধর্মের ভিত্তিতে এভাবে আলাদা Teritorry থাকার ব্যাপারটাই আপত্তিকর। এমনটা মনে করার পূর্ণ স্বাধীনতা আপনার আছে, তবে আমার কাছে ব্যাপারটা খুবই যৌক্তিক লাগে। আমি নিজে যেহেতু এখন USA তে আছি তাই জানি যে এখানে সিটিজেন/ গ্রীন কার্ড হোল্ডারদের সাথে Non-Immigrant দের সুযোগ সুবিধার কী আকাশ পাতাল পার্থক্য! ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রছাত্রীদের মাঝে একটা কমন কালচার হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড বা বন্ধু মহলের থেকে ঋণ নিয়ে গ্রীন কার্ডের জন্য এপ্লাই করা। এটা এক ধরণের ইনভেস্টমেন্ট। কারণ গ্রীন কার্ড থাকলেই চাকরির বাজার, বেতন অন্যান্য সুযোগ সুবিধার অবারিত দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। তখন যে টাকা খরচ হয়েছে তা সুদে মুলে উঠে আসে।
তাহলে ব্যাপারটা কী হল? Differential Treatment হচ্ছে নাগরিকত্বের ভিত্তিতে। এটা শুধু পশ্চিমা দেশে না, সব দেশেই সত্যি। পশ্চিমা দেশগুলোতে তাও একাধিক উপায়ে নাগরিকত্ব অর্জনের সুযোগ আছে, মুসলিম দেশ গুলোতে এমন সুযোগ নেই বললেই চলে (মালয়শিয়া আর তুরষ্কে 2nd home করার সুযোগ আছে, তবে অনেক অনেক Expensive সেটা)।
এখন কোনটা বেশী অন্যায়? আমার হাতে নাই এমন কিছুর (নাগরিকত্ব) ভিত্তিতে Differential Treatment করা নাকি নিয়ন্ত্রণে আছে (কোন ধর্ম অনুসরণ করবো) এমন কিছুর ভিত্তিতে?
আমার কাছে মনে হয় এমন যদি একটা পরিবেশ থাকে যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বোঝানো হয় কেন ইসলাম সত্যি, অথচ ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো চাপ নেই, তাহলে ধর্মের ভিত্তিতে Differential Treatment এর মাঝে কোনো অন্যায় নেই। আমি যে কম সুযোগ সুবিধা পাবো, সেটা My Choice!
আর সেই অর্থে Differential Treatment খুব বেশী আছে তাও না। জিযিয়া কর দিতে হয়, কিন্তু তার বিনিময়ে অমুসলিমদেরকে জিহাদে অংশ নিতে হয় না, বরং ওদের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব মুসলিমদের উপর ন্যস্ত হয়। কিছু টাকার বিনিময়ে এমন সুবিধা পাওয়া গেলে বিরাট পাওয়া আমার কাছে।
আপনার কাছে?
এখানে উল্লেখ্য যে মুসলিম শাসনাধীনে বসবাসরত কোনো অমুসলিম কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো বিষোদ্গার করতে পারবে না, মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বহিঃশত্রুদের সাথে কোনো ষড়যন্ত্র বা যোগসাজশও করতে পারবে না। তাহলে সেটা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল হবে, যেটার শাস্তি আজও সব দেশেই মৃত্যুদণ্ড। ইসলামের বিরোধীতাকারীরা অনেক সময় এটা বলে বেড়ায় যে, ইসলাম এতটাই অসহিষ্ণু যে এখানে Apostacy (ইসলাম ত্যাগ) র শাস্তি মাত্রই মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু ব্যাপারটা এমন Black & White নয়।
ইসলামে ঢোকার জন্য যেমন বাধ্যবাধকতা নেই, বের হওয়ার জন্যও থাকার কথা না। কিন্তু বের হয়ে যাওয়ার সময় কিছু ব্যাপার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে- সে কি ইসলামকে কোনো ভুল বোঝার কারণে ছেড়ে যাচ্ছে নাকি, সে ইসলাম ছেড়ে যাচ্ছে কোনো Vested Interest এর কারণে নাকি (আমি মুসলিম ছিলাম, তারপর ছেড়ে দিয়েছি, এটা ইসলামকে হেনস্থা করার কৌশল হিসেবে প্রচার করছে নাকি), প্রকাশ্যে ইসলামকে আক্রমণ করছে নাকি ইত্যাদি।
আজকাল আমরা যখন কোনো কোম্পানির ইমেইল আনসাবস্ক্রাইব করি বা সফটওয়্যার আনইন্সটল করি তখন ওরাও তো জানতে চায় যে কেন? What went wrong, তাই না? তাহলে ইসলাম যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় তখন জানতে চাইবে না কেন কেউ তার নাগরিকত্ব (ইসলাম) ত্যাগ করছে? সেটা কে Lack of Freedom of Religion হিসেবে উপস্থাপন করার সুযোগ নাই। বর্তমান বিশ্বে কারা Freedom of citizenship দেয় বলুন তো? আমরা দিচ্ছি রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশের নাগরিকত্ব?
আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি যে এই ছোট ছোট রাষ্ট্রের ব্যাপারটা কিন্তু একদম নতুন। আমরা আমাদের পরিচিত সকল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভের সময়কাল খেয়াল করলে দেখবো যে প্রায় সবগুলোই ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে। তার আগ পর্যন্ত একটা বিশাল অঞ্চল কোনো সাম্রাজ্যের অধীনে/ তাদের মনোনীত আঞ্চলিক শাসক/ গভর্নরের দ্বারা শাসিত হত। আমাদের সময়ে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মত কিছুটা। তখন নাগরিকত্বের কন্সেপ্টটা ছিলো মূলত ধর্ম ভিত্তিক।
আপনারা যদি ’শিকড়ের সন্ধানে’ বইটা পড়েন তাহলে দেখবেন যে কিভাবে সম্রাট কন্সট্যান্টাইনের ক্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ ছিলো রীতিমত গেম চেঞ্জার, তখন একেশ্বরবাদীদের কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। অনেক মুফাসসিরদের মতে সূরা বুরুজের কাহিনী এই সময়ের। আবার সূরা কাহফে গুহাবাসীদের যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সেখানেও শাসকের সাথে বিরোধিতার কারণ কিন্তু আদতে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। স্রেফ মূর্তিপূজা না করার জন্য মৃত্যুদণ্ড দিতে চেয়েছিল ব্যাপারটা এরকম না। বরং শাসকের ধর্মের থেকে ভিন্ন কোনো ধর্মের প্রতি আনুগত্য তাদের Loyalty কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো যেটা আমাদের সময়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতই অপরাধ।
আর একটা বিষয় হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোকে আমরা যেরকম ধর্মহীন ভাবি, তেমনটা মোটেই না কিন্তু, অন্তত আমার অভিজ্ঞতায়। আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট হিসেবে দেখেছি কিভাবে এরা বাইবেলের দাওয়াত দেয় একদম বাসায় এসে, কিছুটা আমাদের দেশের তাবলীগ স্টাইলে। এখানে একদম রাস্তার মোড়ে মোড়ে অসংখ্য চার্চ বললে অত্যুক্তি হবে না। দেখা যায় সবচেয়ে সুন্দর বিল্ডিংটা কোনো চার্চ। সেখান থেকে ফ্রি পিজা, ফ্রি আসবাব পত্র, আরও কত কিছু যে ওরা করে মানুষকে চার্চমুখী করতে…… লাইব্রেরীর সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে বাইবেল হাতে নিয়ে। আমি ওদের আন্তরিকতা দেখলে রীতিমত লজ্জা পেয়ে যাই, আমার মনে হয় আমরা মুসলিমরা যদি এর দশ ভাগের এক ভাগ এফোর্টও দিতাম তাহলে এতদিনে অবস্থার অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হতো। তবে আমরা অন্যকে দাওয়াত দিবো কী, নিজেরাইতো তো স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলি। এইজন্যই আমি নির্লজ্জের মত ’শিকড়ের সন্ধানে ’বইটার মার্কেটিং করি
যাই হোক, একটা ইসলামী রাষ্ট্রে Freedom of Religion এর কনসেপ্টটা যদি ক্লিয়ার হয় তাহলে নিচের বিষয়গুলো আমরা অটোমেটিক্যালী বুঝবো ইনশাল্লাহ-
১) সাহাবীরা কেন Offensive জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রসার করেছিলেন- কারণ উনারা বিশ্বাস করতেন যে ইসলামের বাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং তৎকালীন সময়ে সাম্রাজ্য বিস্তারের উপায় এটাই ছিলো। আগেই বলেছি, যুদ্ধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মানবিক নিয়ম বেধে দিয়েছে ইসলাম (যেমন নারী ও শিশুদের হত্যা করা যাবে না, অযথা গাছও কাটা যাবে না! এই নিয়মগুলো সেই সময় হিসেবে রীতিমত অভাবনীয় ছিলো)। আমাদের সময়ে এভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার কালচার না, তাই আমরা এটা করবো না। হিসাব সহজ।
২) কেন একটা একজন মুসলিম মেয়ে ইহুদী বা ক্রিস্টান ছেলেকে বিয়ে করতে পারে না? যখন আপনি বিশ্বাস করবেন যে ইসলামই একমাত্র সত্য তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি চাইবেন যে পরবর্তী প্রজন্ম মুসলিম হিসেবে বড় হোক। এখন বাস্তবতা হচ্ছে যে কোনো পিতৃতান্ত্রিক সমাজে সন্তানরা বাবার ধর্মেই বেড়ে ওঠে। যেহেতু বিয়ের পর সাধারণত মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে এসে ওঠে তাই মেয়েরা স্বামীর পরিবারের কালচার দ্বারা প্রভাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক। আর মুসলিমদের পরিবেশ চাক্ষুস দেখে আহলে কিতাবদের কেউ ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জানবে, কোনো ভুল ধারণা থাকলে ভাঙবে ইত্যাদি আশা তো করাই যায়। পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে যেভাবে কাছাকাছি আসা যায়, সেটা অন্যভাবে কমই আসা যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে বহুবিবাহ আগেকার সময়ে সামাজিক প্রয়োজন ছিলো কিছুটা তৎকালীন গোত্র প্রথার কারণে। বিভিন্ন গোত্রের সাথে রাজনৈতিক, সামাজিক সম্প্রীতি, কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা হত এভাবে। আজকের সময়ে এটা প্রযোজ্য না হলেও দাওয়াহর একটা কার্যকরী কৌশল ও আহলে কিতাবদের প্রতি ইসলামের সহিষ্ণুতার প্রকাশ হিসেবে আজো এটা প্রয়োগ করা যেতে পারে (অবশ্যই শর্তগুলো মেনে)
তবে হ্যাঁ, বাবা মুসলিম হলেই যে ছেলে মেয়েরা মুসলিম হয়ে বড় হবে এই নিশ্চয়তা কে দিতে পারে! মায়ের ব্যক্তিত্ব বেশী শক্তিশালী হলে ছেলে -মেয়েরা মায়ের ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যায়। কিন্তু ওই যে আগে বলেছিলাম Optimal Solution এর কথা? ইসলামের নিয়মগুলোর মাধ্যমে সবসময় শতভাগ সাফল্য আসবে এমন না ব্যাপারটা, কিন্তু মানুষ অন্য আর যা কিছু নিয়ম বানাবে, নিশ্চিতভাবেই তার চেয়ে বেশী কল্যাণ নিয়ে আসবে।
সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই- বর্তমান সময়ের তথাকথিত Freedom of Religion কন্সেপ্টের উদ্দেশ্য যদি হয় সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, তাহলে ইসলামের সেটা নিয়ে কোনো তত্ত্ব কথা কপচানোর দরকার নেই, ইসলাম সেটার উদাহরণ বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছে। এক ফিলিস্তিনের ইতিহাস কেউ পড়লেই দেখবে যে একমাত্র মুসলিম শাসনামলেই এখানে মুসলিম, ক্রিস্টান, ইহুদীরা শান্তিপূর্ণভাবে সম্মানের সাথে বসবাস করেছে। আর কোনো শাসনামলে এমনটা হয় নাই, বিশেষ করে ক্রিস্টান ক্রুসেডদের বর্বরতার ইতিহাস স্রেফ গা শিউরে ওঠার মত। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জেরুজালেম শাসনাধীনে আসার পর ধর্মীয় সহিষ্ণুতার যে প্রকাশ দেখিয়েছে, ৭ম শতাব্দীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেটা ছিলো এককথায় অভাবনীয়!
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইহুদীদের Interaction এর বিস্তারিত জানার জন্য আমরা এখন সম্ভবত তৈরি ইনশাল্লাহ। আগামী পর্ব থেকে চলে যাবো আমাদের মূল টপিকে।
বিঃদ্রঃ ১. ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন shorturl.at/giCG4
২. আমার ‘ শিকড়ের সন্ধানে’ বইতে আমি অত চিন্তাভাবনা না করেই ‘প্যালেস্টাইন’ শব্দটা ব্যবহার করেছি। এখন ফিলিস্তিনের ইতিহাসের উপর একটা কোর্স করতে গিয়ে জানলাম যে এই নামটা ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সময় থেকে ওদের ব্যবহার করা। সুন্নাহ হচ্ছে ‘ বায়তুল মাক্বসিদ’ ব্যবহার করা। আমাদের ইন্সট্রাক্টর এটাকে Occupation of mind এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরলেন। খুব ইচ্ছা করছে বইটা একদম সম্পাদনা করে সব জায়গায় বায়তুল মাক্বদিস ব্যবহার করি। সম্ভব হবে নাকি জানি না, কিন্তু আপনাদের সুযোগ পেয়ে জানিয়ে রাখলাম আর কী!