হৃদয় নামের আধার

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

জানিস মীমপু কি হয়েছে? উত্তেজিত কণ্ঠে এসে বলল রুমা।

মীমঃ কী? এত উত্তেজিত কেন তুই?

রুমাঃ আরে আজকে যে গেলাম না জুঁই এর ভাই এর বিয়েতে? গিয়ে দেখি কনে কে জানো?

মীমঃ কে?

রুমাঃ আরে তোমার কলেজের বান্ধবী টুম্পা আপু! আমিতো দেখে পুরা বেকুব বনে গেছি! ঊনার না তোমাদের এক ক্লাসমেটের সাথে অ্যাফেয়ার ছিল? খালি যে গল্প করত আর ছবি দেখাত? উহ! কেমন পাগল পাগল ভালোবাসা! মনে আছে তোমার? Arrange Marriage এরকথা শুনে কেমন নাক সিঁটকাতো? বলত চিনি না জানি না এমন মানুষকে বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারি না?

এই আপু চুপ কেন তুমি, বল না! মনে নাই তোমার? জুঁই এর ভাইয়ের তো হুট করে বিয়ে হল জানি।মেয়েকে নাকি খালি একবার দেখছে শুনছি! আমি তো কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছি না।

আচ্ছা আপু মানুষ কিভাবে পারে এভাবে একজনের সাথে প্রেম করে পরে আবার অন্যকে বিয়ে করতে? ও মীম্পু! বলো না!

মীমঃ আচ্ছা বাবা থাম এখন! এভাবে বলে না মানুষকে নিয়ে।ভুল তো আমাদের সবারই হয় তাই না! কারো বেশী, কারো কম!

রুমাঃ হুম! কিন্তু এত যে গদগদ ভালোবাসা, সেটার কি হবে!

মীম অল্পক্ষণ চুপ করে থাকল। টুম্পা্র যে আজ বিয়ে সেটা ভুলেই গিয়েছিল ও।। দাওয়াত যে পায় নি তা না। রীতিমত কার্ড ছাপানো হয়েছে গায়ে হলুদ ও বিয়েতে। হিন্দী সিরিয়ালের আদতে নাচ গান হবে দেখে যায় নি মীম। আর বিয়েটা ইফতেখারের সাথে কেন হচ্ছে না এটাও জানতে চায় নি ও। ফ্রেন্ডদের এসব সম্পর্কের ব্যাপারে আর কথা বলে না ও। কুরআনের একটা আয়াতের তাফসীর পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও। আয়াতটা ছিলো-

“যারা পছন্দ করে যে,ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার লাভ করুক,নিঃসন্দেহে ইহাকাল ও পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ্ জানেন,তোমরা জানো না”।[সূরা আন-নূর; ২৪:১৯]

তাফসীরে ছিলো যে আমরা যদি একটা পাপের ব্যাপারে খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে থাকি তাহলে পরোক্ষভাবে সেটাকে উৎসাহিত করা হয়, একটা হারাম কাজ করার সময় মানুষের মাঝে যে স্বাভাবিক পাপবোধ থাকে, সেটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই নিজেরা না করলেও বিয়ের আগের সম্পর্কগুলো নিয়ে আমরা হাল্কা হাস্যরস বা হাসি ঠাট্টা করি তাহলে আমরা নিজের অজান্তেই তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো যারা পছন্দ করে যে অশ্লীলতা, ব্যাভিচার এগুলোর প্রসার ঘটুক। আর তাছাড়া এটা এক ধরণের গোপন ব্যাপার অনুসন্ধান যেটা সূরা হুজুরাতে দ্ব্যর্থহীণ ভাষায় না করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেনঃ

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (৪৯:১২)

আর একটা ব্যাপার হল ইফতেখারের সাথেই যে টুম্পার প্রথম সম্পর্ক তা তো নয়! সেই স্কুলে থাকতে ও প্রেম করেছে এলাকার এক বড় ভাইয়ের সাথে। সে কী প্রেম! ইন্টার পরীক্ষার সময় জানা গেল সেই ভাই মোটামুটি নিয়মিত ফেনসিডিল খান।তিন বছর প্রেম করেও সেটা বুঝতে পারে নি টুম্পা। তারপর সে কষ্ট ভুলতেই কী না কে জানে, আরো দুজনের সাথে ঘুরাঘুরি করেছে! শেষে ভার্সিটি ২য় বর্ষে উঠে থিতু হয়েছিল ওদের ক্লাসমেট ইফতেখারের সাথে। কাছের বন্ধু হওয়াতে এসবই জানে মীম। একবার মনে হল বলে রুমাকে বলে ফেলে যে এটা ওর জন্য কোনো ব্যাপার না, সব সম্পর্কের সময়ই এমন গদগদ ভাব করে ও, তারপর সেটা ছেড়ে আরো একটাতে জড়াতে দ্বিধাও করে না। কিন্তু সূরা হুজুরাতের ঐ আয়াতটার কথা ভেবেই চুপ করে গেলো কারণ এটা এক ধরণের ধারণা। হতেই তো পারে যে মীমের ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিলো না, কিন্তু একান্ত নিরুপায় হয়েই এখানে বিয়ে করেছে! আর সবচেয়ে বড় কথা-
মানুষের পাপের কথা গোপন করার সওয়াব অনেক!

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

কোনো ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষ গোপন রাখলে, আল্লাহ্‌ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। ( মুসলিম ২৬৯৯)

তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিৎ হবে মনে করল না মীম!

কিন্তু রুমা, ওর এই বছর পাঁচেকের ছোট মামাতো বোনটা একদমই নাছোরবান্দা! ও আপু! কিছু বলছ না কেন?

মীমঃ হুম! আসলেই শুনতে চাস এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য?

রুমাঃ আরে! শুনতে চাই বলেই তো বসে আছি!

মীমঃ আমি ব্যাপারটা দেখি ইসলামিক সাইকোলোজির দিক থেকে! এই রিলেটেড কয়েকটা কোর্স করার পর থেকে আমার মাথায় এটা ঢুকসে। আমাদের হার্টটা হল একটা পাত্রের মত। এটা কখনো ফাঁকা থাকে না, বুঝলি? এটা কে যদি ‘ঠিক’ অনুভূতি দিয়ে ভর্তি না করা হয়, তবে এটা ভর্তি হবে ‘ভুল’ অনুভূতি দিয়ে। ছোটবেলা থেকে আমাদের কখনো জীবনের উদ্দেশ্য শিখানো হয় না, আল্লাহকে চেনানো হয় না তাই আমাদের হৃদয়টা আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ না থেকে এসব ইমোশোন দিয়ে পূর্ণ থাকে। অনেকে দেখবি বলে টাইম কাটানোর জন্য প্রেম করে। আসলে বয়সের চাহিদার জন্য তার মনটা কারো প্রশংসা শুনতে চায়, কারো সাথে গভীর রাতে কথা বলতে চায়………এইসব শুন্যতার জন্য মানুষ একটা ছুটে গেলেও আরেকটা প্রেম না করে থাকতে পারে না।

তারপর অনেক মেলামেশা করেও যখন বনিবনা হয় না, তখন জীবন নিয়ে একটা Gambling খেলার মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়।ধুম করে একজনকে বিয়ে করে ফেলতে দ্বিধা করে না! ভালোবাসার কথা গুলো যে বলে,সেগুলো যে মিথ্যামিথ্যি বলে তা না, কিন্তু একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে আরেকটাতে না জড়িয়ে থাকতে পারে না হৃদয়ের পাত্রটাকে ভরানোর জন্য! তবে ভুল জিনিস দিয়ে ভরায় বলেই শান্তি পায় না, বুঝলি? কারণ আল্লাহ বলেছেনঃ

”জেনে রাখো, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায় ।”( ১৩:২৮)

রুমাঃ ইস কী অন্যরকম করে সব কিছু ব্যাখ্যা কর আপু তুমি! এইজন্যই তো কোনো ঘটনা ঘটলে আমি সেটা নিয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গী জানতে চাই! জানো তুমি আমার মনের মাঝে অনেক দিন ধরে কিলবিল করা একটা প্রশ্নের উত্তর দিলা!


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন