ফেসবুকের হোম পেইজ এ একবার চোখ বুলাতেই একটা নিউজে চোখ আটকে গেল সুমির। এ কী! নীলার প্রোফাইলে সবাই Rest in Peace লিখছে কেন?
তাড়াতাড়ি করে মিতুকে ফোন দিল ও।
সুমিঃ এই নীলার কী হয়েছে রে?
মিতুঃ তুই জানিস না?
সুমিঃ নাতো, কী জানব?
মিতুঃ ও তো লাইফ সাপোর্টে ছিল তিন দিন, গতকাল রাতে মারা গেছে।
সুমিঃ ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিঊন। কিভাবে? কী হয়েছিল?
মিতুঃ কিছুই নারে! সামান্য ডেঙ্গু। কিন্তু ব্রেনে ভাইরাল আক্রমণ করেছিল, ভর্তি হওয়ার দিন রাতেই একদম হঠাৎ কোমায় চলে যায়।
সুমিঃ এতো কিছু ঘটে গেছে, কিচ্ছু জানি না আমি!
মিতুঃ কেউই জানে নারে! আমিও গতকাল শুনেছি যে কোমায়, তার কিছুক্ষণ পরেই শুনি যে নাই ও। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মিতু।
সুমিরও গলা রুদ্ধ হয়ে এল।
ওরা একসাথে স্কুলে পড়েছে ১০ বছর। সুমি ইসলামে আসার পর সুস্পষ্টভাবে এড়িয়ে চলত নীলা, অনেকদিন তাই যোগাযোগ ছিল না।
নীলার ফেসবুক প্রোফাইলে যেতেই ভয়ে কেঁপে উঠল সুমির সারা শরীর। জ্বলজ্বল করছে ওর হাসি মাখা ছবি। দুর্দান্ত সুন্দরী ছিল, একেকটা ছবি একেক স্টাইলের। শখানেক লাইক, হট, সেক্সি ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষিত। About এ বড় বড় করে লেখা In a relationship with………..বয়ফ্রেণ্ডের সাথে এমন সব ভঙ্গিতে ছবি দিয়ে ভর্তি যে তাকানো যায় না! ওর ছবি হোমপেইজ থেকে হাইড করে রাখতে হয়েছিল এইজন্য!
ও আল্লাহ! এইগুলা সব যে এখন ওর বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে! ওর কানের কাছে ভেসে উঠল কদিন আগেই পড়া একটা হাদীস-
“আমার সমগ্র উম্মাহ্ নিরাপদ, কেবল তারা ব্যতীত যারা কিনা তাদের পাপ নিয়ে দম্ভ করে বেড়ায়। তাদের কেউ যখন কোন কুকর্ম করে রাতে ঘুমাতে যায় এবং আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর সে বলতে থাকে, “এই শোন, আমি না কাল রাতে এই এই (কুকর্ম) করেছি”। সে যখন ঘুমাতে যায়, আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, আর সকালে ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহ্ যা গোপন রেখেছিলেন তা সে লোকজনের কাছে প্রকাশ করে বেড়ায়”। [সহীহ আল বুখারী]
আল্লাহ! ফেসবুক যে এখন আমাদের পাপের বিজ্ঞাপন দেয়ার জায়গা হয়ে গেছে। যত মানুষ এখন ওর প্রোফাইলে যাবে ওর পাপের সাক্ষী যে আরো বাড়বে………
হতবিহবল সুমির মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি আসল। ওর পরিচিত শখানেক বোনদের একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে। ও ওদের বলল যে সবাই যেন নীলার ফেসবুক প্রোফাইলটার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে। গণহারে এতজন রিপোর্ট করতে থাকলে হয়ত ব্লক হয়ে যাবে ওর প্রোফাইলটা।
জীবনকে পূর্ণ মাত্রায় উপভোগে ব্যস্ত ওর এই ছোট্টবেলার বন্ধুটার জন্য এটা করা সুমির কাছে দায়িত্ব মনে হল।আল্লাহর অশেষ রহমতে দু-একদিনের মাঝেই প্রোফাইলটা ব্লক করিয়ে দিতে পারল!
সেইসাথে ছোট্টবেলার বন্ধুটার জন্য খুব করে দুআ করতে থাকলো। ও তো আমাদের আর সবার মতই মৃত্যুকে খুব দূরের কিছু ভেবেছিলো। ও এই যে ফেসবুকে এসব ছবি দিয়ে বেড়াতো, এতে আমাদের দায়ও কি এড়ানো যায়, যারা লাইক দিয়েছে, কমেন্ট দিয়ে প্রশংসা করেছে-ভাবছিলো সুমি। প্রশংসা পেতে কার না ভালো লাগে! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুরআন খুলে সূরা নূর বের করলো সুমি। উল্টাতে উল্টাতে চোখে পড়লো নিচের আয়াতটা-
যারা পছন্দ করে যে,ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার লাভ করুক,নিঃসন্দেহে ইহাকাল ও পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [সূরা আন-নূর (২৪):১৯]
এটাকেই খুঁজছিলো ও। তারপর খুঁজে বের করলো সূরা যুমারের আয়াতটা যেটা একদম মন প্রশান্ত করে দেয়-
হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। [ সূরা যুমার (৩৯):৫৩]
মনে মনে আরো একবার তাওবা করলো নিজের অতীতের গুনাহগুলোর জন্য, দুআ করলো সবার জন্য যাতে আল্লাহ আর কাউকে এভাবে অপ্রস্তুত অবস্থায় তাঁর কাছে ফিরিয়ে না নিয়ে যান, আমীন।