৫ম পর্বের অতিথি পরিচিতি
এবারের পর্বের ১ম অতিথি, সুমাইয়া, আমাদের সমাজের তথাকথিত স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী স্রেফ ‘HSC pass’. অথচ যে কোনো একটা বিষয় বিভিন্ন angle থেকে দেখে একটা wholistic perspective দিতে পারার দারুণ ক্ষমতা তার।
সুমাইয়ার জীবনের গল্প একদিক দেখতে গেলে কিছুটা হতাশাজনক। এত ব্রিলিয়ান্ট একটা মেয়ে, অথচ তার কিনা এখনও ইউনিভার্সিটি লেভেলের কোনো ডিগ্রি নাই, তিন বাচ্চা নিয়ে ‘ঘরে বসে ‘ আছে! ঠিক আরেক লেন্স দিয়ে দেখলেই সুমাইয়ার জীবন দারুণ fascinating একটা অভিজ্ঞতা। সেই লেন্সটাই promote করতে চেয়েছি আমরা।
একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। সুমাইয়ার তিন বাচ্চাকেই দুনিয়াতে আনার জন্য ওকে রীতিমত বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রেগন্যান্সিতে ওর Hyperemesis gravidarum হয়, মানে তীব্র বমি (দিনে সর্বোচ্চ ৩০বারের অভিজ্ঞতা আছে), ওজন কমে যাওয়া ( ১ম Trimester এ ১৩ কেজি পর্যন্ত)। ও প্রথম ৫ মাস বিছানায় পরে যায় একদম। হসপিটালে ভর্তি হওয়া, বাসায় IV ফ্লুইড নেয়া এগুলো ওর গর্ভকালীন সময়ের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। সাথে ছিল আরেক শারীরিক অসুস্থতা যাতে কিছুদিন পরপরই ওর গলা বন্ধ হয়ে যেত, চিকিৎসা ছিল ভয়েস রেস্ট। সেই মেয়েটা যখন একজন উস্তাদের কাছ থেকে Ijaazah নিয়েছে Riwaayah of Hafs from Aasim, tareeq Shaatibi এর উপর, Variant readings of the Qur’aan ( 10টা) এর উপর কোর্স শেষ করছে, এখন আবার এক দশকের বেশি সময় পরে arabic এ অনার্স শুরু করেছে তখন ওর passion টা কি অনুভব করতে পারছি আমরা?
সুমাইয়া ওর জীবনের নিয়ামত, ওর আগ্রহের ফিল্ড এগুলো চিনতে একটু দেরিই করে ফেলেছিল। ওর সেই ভুলগুলোর সুবিধাভোগী হতে চাই আমরা। ওর জীবনের গল্প থেকে শিখতে চাই যে কিভাবে কৃতজ্ঞ চিত্তে নিজের ভুলগুলো নিয়ে কথা বলতে হয়। মানে যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, তবে….অমুক অমুক বিষয়গুলো আগে বুঝলে হয়তো চলার পথে হোচট আরও কম খেতাম। সেই গল্প শুনে কিছু বোনের জীবন যদি মসৃণ হয় তবেই সেটাই বা কম পাওয়া কী!
এই পর্বের ২য় অতিথি মাহসিনা মমতাজ মারিয়া ’এডুকেশন এবং ট্রেনিং কনসালট্যান্ট’ হিসেবে অনলাইনে ও অফলাইনে মেয়েদের মাঝে কাজ করেন আলহামদুলিল্লাহ। এর আগে পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্ব নিয়ে।
সুমাইয়ার মতো মারিয়া আপুরও এইচএসসি পরীক্ষার পর পরই সংসার জীবন শুরু। কিন্তু বিয়ের পরের গল্পটা দুইজনের দুই রকম। মারিয়া আপুর পড়াশোনা নিয়ে কোনো সমস্যা হয় নাই আলহামদুলিল্লাহ, এ ব্যাপারে জীবন সঙ্গীর অবদান নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন আপু। কিন্তু মাতৃত্ব? সেটার স্বাদ পেতে আপুকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিয়ের পর দীর্ঘ ১১ বছর, আলহামদুলিল্লাহ!
আপুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম সেই সময়ের অনুভূতি। আপুর বক্তব্য কী ছিল শুনবেন?
”বড়দের কথা শুনে মনে হতো খুব দুশ্চিন্তা মনে হয় করা উচিত, কিন্তু আমাদের কোনো দুশিন্তা আসতো না। পারিবারিক চাপে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, তারপর সব যখন বন্ধ করেছি, তারও ৫ বছর পর মা হতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর এক বিশেষ মিরাক্যল সেটা আমার জন্য। মানুষের কথা শুনে হয়তো মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করেছি, কিন্তু ঐটুকুই। তারপর ডুবে গেছি নিজের কাজে।”
জীবনটা এমনই। কিছু প্রাপ্তি, কিছু অপ্রাপ্তি। জীবনে পাওয়া, না পাওয়ার হিসাব যদি মিলাতে চাই, হিসাব মিলাতে মিলাতেই মালাকুল মওত (মৃত্যুর ফেরেশতা) চলে আসবে, কিছু আর করা হবে না। জীবনটা আসলে একটা ডেডলাইন। টিক টিক করে সময় চলে যাচ্ছে। সঞ্চয় গড়তে হবে আখিরাত এর জন্য। এখনই।
মারিয়া আপুর নিজের জীবনের গল্প ছাড়াও ভান্ডারে আছে দারুণ দারুণ সব কেস স্টাডি। আমরা উনার অভিজ্ঞতা থেকে সমৃদ্ধ হতে চেয়েছি।
আমরা মেয়েরা আজকাল নানা ধরনের স্ট্রাগল এর মধ্যে দিয়ে যাই। কেউ সন্তান নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, কেউ বাচ্চা হচ্ছে না বলে। কেউ ঘরে থাকা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে, কেউ ঘর, বাহির সামলাতে গিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলছে। আমরা– যে জীবনের যেই অবস্থানেই আছি না কেন, আমার মনে হয় যে আমাদের দরকার একটা Empathatic Ear যে আমাদের ইতিবাচক কথা বলবে, আমাদের দুর্বলতা গুলো নয়, বরং শক্তিগুলোর উপর ফোকাস করবে। একজন ‘কনসালট্যান্ট’ হিসেবে মারিয়া আপু এই কাজাটই করেন।