জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো—জন্ম যেখানেই হোক না কেন কর্মদক্ষতারগুণে একজন নারী হয়ে উঠতে পারেন শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্রী। লুবনা ছিলেন এমনই একজন নারী যিনি কৃতদাসী হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীকালে নিজ মেধা ও যোগ্যতার গুণে আন্দালুসিয়ান রাজসভার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।
দশম শতকে জন্মগ্রহণকারী লুবনা সুলতান তৃতীয় আবদ আল-রাহমানের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন, সুলতানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রের প্রধান সচিব হিসেবেও কাজ করেন। অভিজাত পরিবারের সদস্য না হওয়া স্বত্বেও একজন নারীকে রাষ্ট্রীয় এত গুরুত্বপূর্ন পদের দায়িত্ব প্রদান ছিল তাঁর দক্ষতার প্র্রতি আস্থার বহি:প্রকাশ।
তিনি রাজদরবারের পাঠাগারও দেখাশুনা করতেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল প্রায় ৫০০,০০০ বই। পাঠাগারের বই সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি কায়রো, দামাস্কাস ও বাগদাদে সফর করেছিলেন। তাঁর পাঠাগারটি তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত পাঠাগারগুলো মাঝে অন্যতম ছিল।
তিনি ছিলেন একজন ভালো অনুবাদক। ইউক্লিড ও আর্কিমিডিসসহ বিখ্যাত অনেক ব্যক্তিবর্গের গুরুত্বপূর্ণ লেখা তিনি অনুবাদ করেছিলেন। মূল লেখার সাথে তিনি নিজস্ব ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করতেন। এ থেকেই বোঝা যায় তার জ্ঞানের পরিধি।
গণিতের প্রতি ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। তিনি গণিত এতটাই পছন্দ করতেন যে, আন্দালুসিয়ার পথেঘাটে চলতে ফিরতে থাকা ছোট বাচ্চাদের তিনি গণিতের মূলনীতি ও গুণ করা শেখাতেন। এ থেকেই বোঝা যায়, তিনি বিষয়টি কী পরিমাণ আনন্দ নিয়ে করতেন! এছাড়াও তিনি ছিলেন কবি, দর্শনিক ও ক্যালিগ্রাফার।
তাঁর বিবিধ গুণাবলীর স্বীকৃতি দিয়ে প্রখ্যাত আন্দুলুসিয়ান আলেম ইবনে বাসকুওয়ালের বলেন, “লুবনা লেখালেখি, ব্যকরণ ও কাব্যরচনায় পারদর্শী ছিলেন। গণিতে তাঁর সুগভীর জ্ঞান ছিল একইসাথে তিনি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও সুদক্ষ ছিলেন। রাজদরবারে তাঁর মতো জ্ঞানী আর কোনো নারী ছিলেন না।”
এককথায় সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া লুবনা ছিলেন “সেল্ফ মেইড উইমেন “ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবকে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় মনে করেন তাদের জন্য লুবনা হতে পারেন অনুপ্রেরণার উৎস।
অনুবাদক : শারিকা হাসান
মূললিঙ্ক :
https://www.truth-seeker.info/jewels-of-islam/prominent-muslim-woman-lubna-cordoba