ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-সামারকান্দি : সিরিয়ার একজন বিশিষ্ট নারী আইনজ্ঞ

লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-সামারকান্দি ছিলেন দ্বাদশ শতাব্দীতে সিরিয়ার একজন বিশিষ্ট নারী আইনজ্ঞ এবং ফতোয়াবিদ। ইসলামি বিষয়ে কেউ ফতোয়া প্রদান করতে চাইলে তাঁকে অবশ্যই কুরআন ,হাদীস এবং যে মাজহাবের উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিতে আগ্রহী সেই মাজহাবের মূলনীতি সম্পর্কে পান্ডিত্য অর্জন করতে হয়। সেইসাথে তাঁকে সমসাময়িক বিশ্বের সমস্যার ধরন এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। আর এসবকিছু বিবেচনায় রেখে ফতোয়া প্রদান করতে পারা নি:সন্দেহে বিচক্ষণতার কাজ। ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-সামারকান্দি এই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজটি পারদর্শিতার সাথে করতে সক্ষম ছিলেন।

ফাতিমার বাবা আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ আল সামারকান্দি ছিলেন বিখ্যাত আইনজ্ঞ। বাবার কাছ থেকে তিনি অাইনসহ বিবিধ বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করেন । পরবর্তীকালে তাঁর বাবা যখন ইসলামিক ফতোয়া প্রদান করতেন তখন তিনি মেয়ের সাথে পরামর্শ করে নিতেন। ফাতিমা নিজ হাতে বাবাকে ফতোয়া লিখে দিতেন।
হাদিসের ব্যাখ্যা প্রদান এবং ফতোয়া নির্ধারণে দক্ষতার কারণে ফাতিমা এতটাই সুপরিচিতি লাভ করেন যে, ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাসক নূর আল দীন ফাতিমাকে তাঁর ব্যক্তিগত পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত করেন।

অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য সুখ্যাত ফাতিমার কাছে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের অনেকে বিয়ের পয়গাম পাঠালেও পিতা এবং কন্যা বিয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন আল কাসানীকে, যিনি নিজেও ছিলেন ফিকহশাস্ত্রের একজন বিশিষ্ট আলেম এবং তাঁর পিতার সুযোগ্য ছাত্র। তিনি ফাতিমার পিতার রচিত বিখ্যাত কিতাব ‘তুহফাতুল ফুকাহা’-এর উপর ভিত্তি করে একটি ব্যখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন যার নাম ছিল আল-বাদায়েউস সানায়ে’। এই গ্রন্থটি পিতা এবং কন্যার এত পছন্দ হয়েছিল যে, তাঁরা এটিকে ফাতিমার বিয়ের মোহর হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

বিয়ের অল্প কিছুকাল পরেই ফাতিমা এবং কাসানী দম্পত্তি বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়ে পড়েন। অবশেষে তারা আলেপ্পো শহরে থিতু হন এবং সেখানেই তাঁরা বিশিষ্ট আলেম হিসেবে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করতেন। কাসানীর এক ছাত্র বর্ণনা করেন,“ মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা আল-কাসানীকে জটিল জটিল প্রশ্ন করতেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হতেন। ফিরে এসে তিনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর বিশদভাবে আলোচনা করতেন। এরকম ঘটনা প্রায়শই ঘটত। অবশেষে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ইমাম আল-কাসানী বাড়িতে যেতেন তাঁর স্ত্রী ফাতিমাকে প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞাসা করার জন্য এবং প্রশ্নের সমাধান নিয়ে ফিরে আসতেন। “
কোন একটি ফতোয়া জারি করতে গিয়ে যখন তাঁর স্বামীর সন্দেহ হত অথবা ভুল হত তখন তিনি ফাতিমার মতামত জানতে চাইতেন। ফাতিমা সেটা সংশোধন করে সঠিক রায় দিতেন এবং সেই সাথে ভুলের কারণটাও ব্যাখ্যা করে দিতেন। স্ত্রীর প্রতি কাসানী এতটাই উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন যে, কোন বৈধ ফতোয়া প্রথমে ফাতিমা স্বাক্ষর না দেওয়া পর্যন্ত তিনি স্বাক্ষর করতেন না।

এভাবেই প্রথমে কন্যা এবং পরবর্তীতে স্ত্রী হিসেবে ফাতিমা সামারকান্দি তাঁর সুচিন্তিত মতামত দিয়ে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্পূর্ণ অবদান রেখেছেন। সেইসাথে এটাও প্রমাণ করেছেন যে, মুসলিম নারীরা যদি তাদের মাহরামদের কাছ থেকে ( এ ক্ষেত্রে বাবা এবং স্বামী) প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং উপযুক্ত সম্মান পায় তবে ফতোয়া প্রদানের মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে।

অনুবাদ: তানজিলা শারমিন
তথ্যসূত্র:
https://archive.is/…/how-islam-empowered-women…/…
https://www.islamreligion.com/…/women-scholars-in…/


লেখাটি শেয়ার করতে পারেন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *